Mafia Boss- Season- 3

Married To The Dark King-  Mafia Boss- Season 3 !! Part- 12

রোয়েন চলে যেতেই দরজা লাগিয়ে খাটে শরীর এলিয়ে দিলো রুহী।চোখ জোড়া শুধু শুধু ভিজে আসছিলো ওর।না চাইতে ও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো রুহী।সারারাত ভরে কেঁদেছে রুহী।লোকটা যেমনই হোক মা বাবা নিয়ে কথা বলা উচিৎ হয়নি।সারারাত দেয়ালে পিঠ ঠেঁকিয়ে বসে কেঁদেছিলো রুহী।
অপরদিকে রোয়েন ইজি চেয়ারে বসে শেম্পেইন গিলছিলো।চোখজোড়া বারবার ভিজে আসছে ওর। মা থাকলে ওর লাইফটা হয়ত আর ও ভালো হতো।রোয়েনের চোখজোড়ার সামনে ভেসে উঠে সেই ভয়ানক কাল রাত।
পাঁচ বছরের বাচ্চাটা দরজার পিছনে লুকিয়ে আছে।পুরো শরীর কাঁপছে ওর।বারবার চোখ মুচছে।মায়ের চিৎকার শুনতে পাচ্ছে বাচ্চাটা।বাবা মারছে এতোটুকু বুঝতে পারছিলো বাচ্চাটা।প্রায় প্রত্যেক রাতেই মা কে মারতো বাবা।সেদিন রাতে মা বাচ্চাটাকে বুকে নিয়ে শুয়ে আছে।তার ঠোঁট কেঁটে আছে।শরীরের জায়গায় জায়গায় চামড়া ফেঁটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে মায়ের।মা ও সাতমাসের প্রেগন্যন্ট তারপর ও নির্দয় স্বামীর মনে কোন প্রকারের মায়া জাগেনি।সারারাত মায়ের ওপর চলতো অমানবিক অত্যাচার।শুধু মার নয় এই অবস্থায় মাকে প্রতিনিয়ত ধর্ষিত হতে হয়েছিলো স্বামী নামক জানোয়ারের কাছে।
সোনা বাবা ঘুমাস না কেন?বাচ্চাটার কপালে চুমো এঁকে বলে উঠলো মা।
মা চলো আমরা কোথা ও চলে যাই।বাচ্চাটা বলে উঠলো।কারন সে নিজে ও মায়ের কষ্ট সহ্য করতে পারছিলোনা।
কই যাবো বাবা?যাওয়ার তো কোন জায়গা নেই।কান্নার সুরে বললেন মা।
মা কেঁদো না।আমার ভালো লাগছেনা।নানুর কাছে চলো।
নানু নানা আমাকে মেনে নিবেনা সোনা।কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন মা।
কেন মেনে নিবেনা?প্রশ্ন করে উঠলো বাচ্চাটা।
মা কিছু বলতে পারলেননা।শুধু চোখের পানি ফেলা ছাড়া কিছুই বলার নেই।কলেজ লাইফের প্রেম,তারপর পালিয়ে বিয়ে।বাবা মা কখনোই মেনে নেইনি বিয়েটাকে।ভালোবাসার মানুষটার জন্য বাবা মায়ের বিরুদ্ধে যেতে ও বাঁধেনি মায়ের।একটা বছর সংসার ভালোই চলছিলো।হঠাৎ সব যেন শেষ হয়ে যেতে লাগলো।বাবার মদ খেয়ে ঘরে ফিরা,মায়ের গায়ে হাত তোলা সব বেড়েই চলছিলো।
বাচ্চাটি মায়ের মুখে রুপকথার রাজা রানীর গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লো।
গভীর রাতে
এই শুনছিস!!!বাবার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো মায়ের।
কি হলো?ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যাবার জোগাড় মায়ের।
আমার সাথে আয়।স্ত্রীর হাত টেনে ধরলেন লোকটা।
বাবু ঘুমাচ্ছে।উঠে যাবে ও।আল্লাহর দোহায় এখন কিছু করবেননা।পেটার বাবুটার ও তো কষ্ট হবে।বলে উঠলেন মা।
চুপ থাক এখন তোরে বেশি দরকার আমার।চল।
না প্লিজ এখন না।বাচ্চাটাকে ঘুমোতে দিন।মা হাত জোড় করে বললেন।বেশি বাচ্চা বাচ্চা করছিস না?দাঁড়া বলে বাবা তার পাঁচ বছরের ছেলেটিকে উঠিয়ে আছাড় দিলো।দেয়ালে লেগে কপাল ফেঁটে যায় ছেলেটার।
রোয়েন কপালে হাত দিয়ে সোজা হয়ে বসে পড়ে।সেই যন্ত্রনা আজ দ্বিগুন কষ্ট দিচ্ছে।উঠে বারান্দার দিকে পা বাঁড়ালো রোয়েন।
মাকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে গেলো বাবা।তারপর খুব জোরে দরজা লাগানোর শব্দ হলো।বাচ্চাটা শুনতে পাচ্ছে মায়ের চিৎকার।বাবার ভিতরের নরপশুটা জেগে উঠেছে।
পরদিন মা কোলে করে ছেলেটাকে খাটে শুইয়ে দিলো।মা চলো চলে যাই কোথাও।ভালো লাগছেনা আর।
যাবো।মলিন হেসে বললেন মা।চল তোকে স্কুলের জন্য রেডি করিয়ে দেই।নিজের হাতে ছেলেকে ব্রাশ করিয়ে দিলেন।স্কুলের জামা পড়িয়ে স্কুলে পাঠিয়ে দিলেন মা।ছেলেটি ভাবতেই পারেনি ঐদিনের পর থেকে মায়ের সাথে দেখা হবেনা আর।স্কুল থেকে নানা বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হলো।নানা ভীষন আদর করতেন। মেয়ের ওপর যতো রাগই থাকুকনা কেন নাতি কে ভীষন ভালোবাসতেন নানা।নানি ছিলোনা।
নানাকে মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই কথা ঘুরিয়ে নিতেন।বাচ্চাটা বুঝে গিয়েছিলো নানা এখনো নায়ের ওপর রাগ।একদিন সাহস করে বাবার অত্যাচারের কথা নানাকে খুলে বললো বাচ্চাটা।নানা কেঁদে দিলেন।যেমনই হোক বড় মেয়েকে ভালবাসতেন ভীষন।একদিন ঠিক করলেন মেয়েকে নিয়ে ঘরে ফিরবেন তিনি।বেরিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু ফিরলেন লাশ হয়ে।
বাবা এসে জোর করে বাচ্চা ছেলেটিকে অনাথ আশ্রমে দিয়ে দিলেন।সেখান থেকে বড় মামা নিয়ে এলেন ছেলেটিকে যখন তার ১০বছর।মামা অস্ট্রিয়া থেকে এসে বোন আর বোনের ছেলের খবর শুনতে পান।বোনের খবর না পেয়ে ছেলেটাকে নিজের সাথে নিয়ে যান অস্ট্রিয়ায়।সেখানকার নামকরা স্কুলে ভর্তি হয় ছেলেটা।বেশকিছু বছর পর যখন ছেলেটা ডাক্তারি করে ঘরে ফিরে জানতে পারে মামা আর নেই।ক্যান্সার জীবন কেড়ে নিয়েছে ওনার।সেখানে আর থাকতে পারেনি ছেলেটা বাংলাদেশে চলে এলো।বাবা কে খুঁজতে লাগলো হন্য হয়ে।কিন্তু বাবার ওপর প্রতিশোধ নেয়া সহজ ছিলোনা।কারন তিনি সাধারন কেউ ছিলেননা।
তাই ছেলেটা নিজোর ডাক্তারি পেশা ছেড়ে মাফিয়ার জীবনকে আপন করে নিলো।বাথরুমে বসে বাচ্চাদের মতো জোরে জোরে কাঁদছে রোয়েন।মা!!! মা কই তুৃমি?তোমার ছেলের কাছে চলে আসো মা।আজ তোমার ছেলে অনেক অসহায় মা।চিৎকার করে কাঁদছিলো রোয়েন।
যাকে বুকে আঁকড়ে বাঁচতে চেয়েছে সেই ছেড়ে চলে গিয়েছে।ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে রুহীর রুমে এলো রোয়েন।রুমটা আজ খালি।বুকটা খালি লাগছে।বুকের এককোনে খাঁ খাঁ করে উঠলো।
“আপনার মতো নর পশুর সাথে থাকা দূরের কথা আপনার চেহারা ও দেখতে চাইনা।বেরিয়ে যান।নিজের বাবা নেই তো সেজন্য আমাকে আমার বাবা মার কাছ থেকে দূরে সরাতে চাইছেন।নিজের বাবা মা থাকলে কখনো এমন করতে পারতেননা”রুহীর বলা কথা গুলো মনে পড়তেই বুকটা জ্বলে উঠলো।পাশের ফুলদানিটাকে খুব জোরে আছাড় দিলো।কাঁচের ফুলদানিটা গুড়া গুড়া হয়ে গেলো।এ যেন রোয়েনের হৃদয় ভাঙ্গার প্রতিচ্ছবি।সেখানে রুহীর স্মৃতি জমে আছে।আর থাকতে পারলোনা সেই রুমটাতে।বেরিয়ে এসে নিজের রুমে চলে এলো রোয়েন।
পরদিন সকাল রুহী ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে এলো।আজিজ রায়হান আর রুপন্তী বসে আছে নাস্তা নিয়ে।
রুহীর চোখ মুখ ফোলা।সারারাত কান্নার ফলাফল।বাবা মা কই?প্রশ্ন করে উঠলো রুহী।
তোর নানার বাড়ি।চায়ের কাপে চুমক দিয়ে বললেন আজিজ রায়হান।
ওহ।টেবিলে বসলো রুহী।
কাল কি বলেছিলি স্যারকে?আজিজ রায়হান সিরিয়াস ভাবে রুহীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন।
ক কই ক কি বললাম।ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলো রুহী।
বলিস নি কিছু?ওনি তো কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলেন।আর তুই বলছিস কিছু বলিসনি?রুহী এমন কেন তুই? আমার মেয়ে এমন ছিলোনা।এমন কেন হয়ে গেলি তুই?ধমকে উঠলেন আজিজ রায়হান।
রোয়েন কান্না করেছে।ভাবতেই ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো রুহীর।অজান্তেই ভীষন কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। নাহল এই কঠিন হৃদয়ের মানুষটা কি কাঁদে।
বাবার ধমকে আর থামতে পারলোনা রুহী।কেঁদে দিলো।বাবা এমন করছো কেন আপুর সাথে?আপু প্লিজ কাঁদবিনা।বোনকে জড়িয়ে বলতে লাগলো রুপন্তী।তোদের এসব নাটক ভালো লাগেনা।নাস্তা করে কলেজে চলে যা।বলেই চলে গেলেন আজিজ রায়হান অফিসের উদ্দেশ্যে।
কাঁদতে কাঁদতে হিঁচকি উঠে গেছে রুহীর।
আপি ভাইয়া এভাবে কথা গুলো না বললে ও পারতি।জানিস কিভাবে কাঁদতে কাঁদতে চলে গিয়েছিলো?
বোনের মুখে লোকটার সাপোর্ট শুনে আর স্থির থাকতে পারলোনা রুহী।আমার বাসা আমার বাবা আমার বোন আর পক্ষ নিচ্ছিস ঐ লোকটার।যে কিনা এভাবে মানুষ খুন করে।সে একজন খুনি বুঝেছিস?হি ইজ আ কিলার।সে নরপশু,জানোয়ার।আমি তাকে পছন্দ করিনা।কথাটা বলেই কেমন যেন চুপ হয়ে গেলো। বুকের ভিতর কেমন করে উঠলো ওর।এতক্ষন চিৎকার করে কথা গুলো বলছিলো তবু ও এই কথাটি পুরো শেষ করতে পারেনি।কিছু একটা আটকে দিয়েছিলো ওকে।সে খুন করেছিলো কেন আপু?তোমার জন্য?আজ সে নরপশু কেন তোমার জন্য। চিৎকার করে বলে উঠলো রুপন্তী।আমার জন্য সে মাফিয়া হয়নি।আস্তে কথাটা বলল রুহী।
নিশ্চয়ই কোন কারন আছে।বলে উঠলো রুপন্তী।রুহীর চোখের কোনা ভিজে এলো।
চল কলেজে যাবো।বোনের দিকে না তাকিয়ে রাগী গলায় কথা গুলি বলে হন হন করে রুমে চলে গেলো রুহী।
চলবে