Love Right ! Part- 14
ইশু চলে গেলে নীল লম্বা হয়ে খাটে শুয়ে পড়লো।আজকের ঘটনাটা মনে পড়তেই ওর হাসি চলে এলো।নিশুর পাগলামি গুলোর কথা মনে করেই ও আপন মনে হাসছে।কিন্তু একটুপরই আবার মেজাজ বিগড়ে গেলো।….নিশু?…নিশু?..নিশু??কেন ভাবছে ওকে নিয়ে?…যাকে ভুলতে এতগুলো দিন বিদেশে পড়েছিলো সেই সর্বনাশী আবার ওর মনে এসে খুঁটি গেড়ে বসছে?
ও চোখটা বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু চোখ বন্ধ করতেই মনে হলো নিশুর বলা কথাটা ওর কানে বাজছে…..Because it’s #Love_Right❤💕💕!
উফফফ….এই মেয়ে ওকে সত্যি সত্যি পাগল করে দিবে।
পরেরদিন সকালে নীল একেবারে রেডি হয়ে নিচে নেমে এসেছে।আজকে তাড়াতাড়ি বেরোতে কালকের মিটিংটা লারা আজকে সকাল দশটায় নিয়ে এসছে।ও ডাইনিং টেবিলে বসতেই ইলারা বেগম একেবারে ওর মুখোমুখি এসে বসলো।ইশু একটু দূরে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে।
নীল:কিছু বলবে মা?
ইলারা বেগম:হ্যাঁ!..তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে?
নীল:ঠিক আছে বলো।
ইলারা বেগম কোন ভনিতা না করে সরাসরি বললেন…নিশুর ঠিকানাটা দে!
নীল ভ্রু কুঁচকে ইশুর দিকে তাকালো।ইশু হাসছে।এই মেয়ে বেশি বেড়েছে।
নীল ইলারা বেগমের দিকে তাকিয়ে চেহারাটা যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললো…আমি ওর ঠিকানা জানি না।
ইশু তাড়াতাড়ি করে বলে উঠলো….মিথ্যে কথা মা!…ভাইয়া কালকে নিজে ইশুকে ড্রপ করে দিয়েছিলো।
নীল:😐
ইলারা বেগম:তাই নাকি?…কি রে?
নীল ইশুর দিকে তাকিয়ে ধমকের সুরে বললো…খাম্বার মত এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে যা কফি নিয়ে আয়!…অসভ্য,বাদঁর মেয়ে!
ইশু ওকে একটা ভেংচি কেটে রান্নাঘরে চলে গেলো।
অবশেষে অনেক কষ্টে ইলারা বেগম নীলের কাছ থেকে নিশুর ঠিকানা আদায় করে নিলেন।
ইলারা বেগম নীলের দিকে তাকিয়ে বললেন…তোর বাপেরও বাপ আমি!
নীল হতাশ হয়ে বললো….নারীশক্তি বলে কথা!
ও বেরিয়ে গেলে ইশু আর ইলারা বেগম হাসিতে ফেটে পড়লো।
ইলারা বেগম:আমার ছেলেটা বড্ড পাগল!
নীল সবে লিফটে উঠবে এমন সময় দেখলো নিশু সিঁড়ি বেয়ে উঠছে।নীল মনে মনে ভাবছে কালকের ঘটনায় নিশচই ভীষণ ভয় পেয়েছে তা না হলে লিফট থাকতে ছয়তলা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে যাবে কেন?
ওকে উঠতে দেখেই নিশু এক দৌঁড়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো।
নীল:??
নিশু:কিছু না!
নীল:এভাবে দৌঁড় দিলে কেন?
নিশু:লিফট বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো তাই!
নীল:তো?…পরে উঠা যেত না?….পড়ে তো হাত পা ভাঙতে যেভাবে দৌড়াচ্ছিলে।
নীল জানে নিশু ওকে দেখেই লিফটে উঠেছে।ভয়ে একা উঠে নি।তাই ও ইচ্ছে করেই এসব বলছে।
নিশু:যেত…কিন্তু আমি তো তোমার সাথে উঠতে চাই!
নীল:কেন?
নিশু:কেন আবার?…একা উঠতে ভয় লাগে তাই!…তুমি কি ভেবেছিলে?
নীল:থাক!… না বলি।
নিশু:কেন?
নীল:বলবো?
নিশু:বলো।
নীল ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো…আমি ভেবেছিলাম তোমার হিসু পেয়েছে তাই ওভাবে দৌঁড়াচ্ছিলে।
নিশু:😮ছিহ!
নীল একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো…আমি কিন্তু বলতে চাই নি।তুমিই জোর করেছিলে।
নিশু কিছু বলার আগেই লিফটের দরজা খুলে গেলো।নীল চোখে সানগ্লাসটা দিয়ে প্যান্টের পকেটে একটা হাত ঢুকিয়ে নির্বিকারভাবে বেরিয়ে গেলো।নিশু কিছু বলতে না পেরে রাগে ফুঁসছে।
মিটিং শেষ করে দুজনে বেরিয়ে এলো।
নীল:মিস নিশিতা?
নিশু:জ্বি স্যার?
নীল:আপনি একটু আমার রুমে আসুন।
নিশু:ওকে স্যার।
নীল:আর হ্যাঁ…সাথে কফি নিয়ে আসবেন উইদাউট সুগার।
নিশু:জ্বি স্যার!
লারা:কি ব্যাপার নিশু?…মুড অফ কেন?..স্যার ঝাড়ি দিয়েছে নাকি?
নিশু আসল কথাটা চেপে গেলো।
নিশু:তাছাড়া উনি আর কি পারেন বলতো?
লারা:এভাবে বলো না।
নিশু:সাধুভাষায় বলবো?
ওর কথা শুনে লারা হাসি চলে এলো।
লারা:ইউ আর সো সুইট!
নিশু একটা মুচকি হাসি দিতেই দুজনে একসঙ্গে হেসে দিলো।
লারাই প্রথম হাসি থামিয়ে বললো…যাও!…কি বলে শুনে এসো।তা না হলে রেগে বোম হয়ে যাবে।
নিশু:উফফফ…কথা বলতে বলতে ভুলেই গেছিলাম!
নিশু তাড়াতাড়ি নীলের কেবিনে ঢুকলো।
নীল একমনে ফাইল দেখছে।ওকে ঢুকতে দেখেই মুখ তুলে তাকালো।
নীল:You are ten minutes late!…That means you have to work extra one hour as your punishment!
নিশু হাবার মত তাকিয়ে আছে নীলের দিকে।
নীল:আমার কফি কোথায়?
নিশু:(ইশস!…ভুলে গেছি!)..আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি স্যার!
নীল:সাথে স্টোর রুমের চাবিটাও নিয়ে যাও।ফাইলগুলো বের করে কাজ শুরু করে দাও।
নিশু:(তোরে আমি বদদোয়া দিলাম…তোর কপালে নিশু পাগলি ছাড়া আর কেউ জুটবে না।)
নীল:কি হলো?
নিশু বেরিয়ে যেতেই নীল ফাইলটা রেখে দিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
অনেক্ষন হয়ে গেলো নিশুকে কফি নিয়ে আসতে না দেখে নীল বেরোলো চেক করে আসার জন্য।স্টোর রুমেই নিশচই কাজ শুরু করে দিয়েছে।ও করিডোর আসতে কানে আওয়াজ এলো নিশু আয়াতের সাথে কথা বলছে।
নিশু:হ্যাঁ..ফিরতে দেরী হবে আমি ভেবেছিলাম তোমাকে বলবো আমাকে নিতে আসতে।…কিন্তু তুমি তো ঢাকার বাইরে।
আয়াত:হুট করেই কাজ পড়ে গেছে।….যাই হোক তুমি বরং দুদিনে কাজ শেষ করার কথা বলে দেখো।
নিশু:হুম!…দেখি!
নীলের রেগে নিজের কেবিনে চলে গেলো।এদিকে নিশু সকালের ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।কফিতে প্রায় দশবারো চামচ চিনি মিশিয়ে এনেছে।
নীল কফি মুখে দিয়ে ওর দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে বললো…এগুলো কি?
নিশু:কেন কফি?(অবাক হওয়ায় ভান করে)
নীল:তুমি কফি বানিয়েছো না শরবত বানিয়েছো?
নিশু:আমার যতদূর মনে পড়ে কফিই তো বানালাম।
নীল রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে কফির মগটাই আছাড় মেরে ভেঙে ফেললো।নিমিষেই নিশুর মুখটা কালো হয়ে গেলো।নীল এমন কিছু করবে ও ভাবতেই পারে নি।
নীল:আগেই বলেছিলাম…ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট!..এটা অফিস!..এখানে কাজ করার জন্য তোমাকে রাখা হয়েছে…নিজের খেয়াল খুশি মত চলার জন্য নয়।
নিশুর চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে।নীল হাতের মুঠো শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে।নিশু বেরিয়ে গেলে ও রাগে টেবিলে দিলো এক ঘুষি।…কি করেছে ও?
নিশু স্টোর রুম থেকে ফাইলগুলো একে একে সব বের করলো।নীলের রুম থেকে বেরিয়ে অনেক্ষন কেদেঁছে ও।তারপর অনেকটা অভিমান নিয়েই পুরোনো সব ফাইল বের করে কাজ শুরু করে দিলো।লারা হেল্প করতে চেয়েছিলো কিন্তু নিশু রাজি হয়নি।
অফিস আওয়ারও শেষ সবাই বেরিয়ে যাচ্ছে।লারা এসে ওকে চাবি দিয়ে গেলো।
নিশু:কিসের চাবি এটা?
লারা:তোমার কাজ শেষ হলে রুমের তালা মেরে দিয়ো।
নিশু অভিমানে কিচ্ছু বললো না।আজকেই ও সব কাজ শেষ করবে যেভাবেই হোক।
রাত প্রায় এগারোটা নিশুর কাজ শেষ।অনেক তাড়াতাড়িই সেরে ফেলেছে ও।কিন্তু কাজের চাপে ও খেয়ালই করে নি পুরো অফিস ফাঁকা।স্টোর রুম ছাড়া সব অন্ধকার।ওর পুরো গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো ভয়ে।ভয়ে,অভিমানে ওর বুক চেপে কান্না আসছে।এদিকে চার্জ না থাকার কারনে ফোনটাও সুইচড অফ হয়ে গেছে।ও চেপে কান্না করতে করতেই স্টোর রুম থেকে বেরোলো।সামনে এগোতেই ওর ভয়ে বুক কাপঁছে।পুরো অফিসে ও একা।ভাবতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।এবার চিৎকার করে কাদঁতে ইচ্চা করছে।
ও স্টোর রুম পেরোতেই ওর পুরো শরীর জুড়ে এক শীতল রক্তের স্রোত বয়ে গেলো।কাঁচের গ্লাসের ফাঁক দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে নীল ওর রুমে বসে কাজ করছে।নিশু বুঝতে বাকি রইলো না নীল কেন বসে আছে?নীল ফাইলটা রেখে উঠে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে বিষন্ন মনে।
নিশু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না…ছুটে গিয়ে নীলকে জড়িয়ে ধরলো।পুরো অফিসে শুধু ওরা দুজন।নীল ওর জন্যই বসে ছিলো।আচমকা জড়িয়ে ধরাতে নীল ভয় পেয়ে গেছে।ও নিশুর দুকাধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো….কি হলো নিশু ভয় পেয়েছো?
নিশু ওকে জড়িয়ে ধরে কাদঁছে।নীলের সহ্য হচ্ছে না।একে কষ্ট দিয়েও নীলের শান্তি নেই।ওর মনে হচ্ছে হ্নদপিন্ডে কেউ ছুরি বসিয়ে দিয়েছে।নিজেকে সামাল দেওয়ার জন্য ও অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকালো।
নিশু ওকে আরো বেশি করে জাপটে ধরে বললো…কথা বলো নীল!…প্লিজ কথা বলো!..আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
নীল:(আমাকে আর কত পোড়াবে নিশু?….আমি সহ্য করতে পারি না)
নিশু:কি হলো??
নীল:অনেক রাত হয়েছে চলো বাসায় ফিরবে।
নিশু ওর বুকে মাথা দিয়ে কেঁদেই চলেছ।ওর কান্না দেখে নীল আর ওকে সরিয়ে দিতে পারলো না।
অনেক্ষন পর নিশুর কান্না থামলো।
নীল ওকে ছেড়ে দিয়ে ঠান্ডা গলায় বললো…তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও!…আমি হাতের কাজটা সেরে ফেলি!…তারপর তোমাকে পৌঁছে দেবো।
নিশুর রাগ উঠে গেলো।
নিশু:তাই নাকি তুমি কাজের জন্য বসে ছিলে?….মিথ্যেবাদী!
নীল:তো কেন বসে ছিলাম?
নিশু:কেন আবার আমার জন্য!
নীল:মোটেও না।
নিশু:মোটেও হ্যাঁ।
নীল কিছুতেইস্বীকার করতে রাজি নয় যে ও নিশুর জন্য বসে ছিলো।নিশুও ছাড়ার পাত্রি নয়।
ও বিরক্ত হয়ে গিয়ে টেবিলের ওপর ফাইলগুলো খুলে দেখলো সব গুলো গত কালকের ফাইল কমপ্লিট করা।নীল শুধু শুধু ওকে কাজের বাহানা দিচ্ছে।
নিশু:তারমানে নীলাস হাসান অফিসে বসে বসে কালকের ফাইল দেখছিলেন?(শয়তানি হাসি দিয়ে)
ধরা খেয়ে নীল অন্যদিকে তাকিয়ে আছে চুপ করে।নিশু ইচ্ছে করে ওর সাথে মজা শুরু করে দিলো।ও নীলের কাছে গিয়ে ওর মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বললো..কি করবে বলো?আমার মত মেয়েকে ভালো না বেসে উপায় আছে?
নীল কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না।
নিশু:তুমি তো দেখছি আমার প্রেমে একেবারে হাবুডুবু খাচ্ছো?😁
নীল:😐(শুরু হয়ে গেছে এর বাঁদরামি!…একেবারে মাথায় উঠিয়ে ফেলেছি!)…বাজে বকবে না।আমাদের দেরী হয়ে যাচ্ছে।
নিশু:হুম!..ঠিক বলেছো বিয়েটা আরো আগেই করা উচিৎ ছিলো আমাদের।
নীল বিরক্ত হয়ে বললো…তুমি এখানে দাঁড়িয়ে যা ইচ্ছা করো আমি গেলাম।
ও হাঁটা শুরু করে দিলো।কিন্তু আস্তে আস্তে হাঁটছে।নিশু ঠায় দাঁড়িয়ে হাসছে ওর কান্ড দেখে।ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীল আবার ফেরত আসলো।
নীল:কি সমস্যা?…আসছো না কেন?
নিশু:😁তুমি ফিরে এলে কেন?
নীল দাঁতেদাঁত চেপে বললো…আল্লাহ যে আমার শান্তি দেন নি সেজন্য।
নিশু:রাগ করে না জান!
নীল:এবার কিন্তু সত্যিই চলে যাবো।
নিশু ওকে আর রাগালো না।এমনিতেই অনেক ধৈর্য্য ধরেছে বেচারা😂!