Love Right

Love Right ! Part- 05

রুশার অনেক চেষ্টা করেছিলো যাতে নীল নিশুকে সাথে নিতে না পারে।কিন্তু কোন লাভ হলো না ওরা কিছুতেই নিয়ম ভাংবে না।তাই বাধ্য হয়ে ওকে তানিমের সাথেই যেতে হলো।
সারাটা রাস্তা নিশু মুখভার করে ছিলো।নীলের এখন খারাপ লাগছে।শুধু শুধু ওর জন্য বেচারির আনন্দটাই মাটি হয়ে গেলো।
নীল:নিশু?
নিশু চুপ করে আছে।ওর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।তবে এই প্রথম নীল ওকে নাম ধরে ডেকেছে তাই অনিচ্ছা সত্বেও ওর দিকে তাকালো।
নীল:সরি!
নিশু:ইটস ওকে!
নীল:জিজ্ঞেস করবে না কিসের জন্য?
নিশু:কিসের জন্য!
নীল ওর কোমরে আরেকটা চিমটি দিয়ে বললো..কালকে রাতে এভাবে চিমটি দেওয়ার জন্য!
নিশু:😮
নীল একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো…মুখটা বন্ধ করো মাছি ঢুকে যাবে তো?
নিশু:তুমি একটা লুচু!
নীল ওর পাশে আরেকটু ঘেষে বসে বললো…কি আর করবো বলো চোখের সামনে এরকম হটি বিউটিকে দেখলে কার মাথা ঠিক থাকে।নিশু গায়ের ওড়নাটা ভালোভাবে প্যাঁচিয়ে সরে বসলো।নীল শুধু হেসেই যাচ্ছে ওর কান্ড দেখে।
নিশু অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে।নীল ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো…কি হলো হটিনটি?
নিশু:তোমার সাথে আসাটাই আমার ভুল হয়েছে।এমন জানলে আমি আসতামই না!
নীল:আচ্ছা ঠিক আছে যাও আমি আর কিছু বলবো না!

একবাসে সিট না পেয়ে ওরা আলাদা আলাদা আসছে।জায়গাটা দূরে তাই কেউ দেরী করতে চাইলো না।যেতে যেতে এমনিতেই সন্ধ্যে হয় যাবে।কালকে সারাদিন ওখানে কাটিয়ে তারপর রাতে আবার ফিরবে সবাই।

ইশু আয়াতের কাধে মাথাটা দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।তানিম পেছন থেকে সব খেয়াল করছে।ওর মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে।তারওপর রুশাটা ওকে জ্বালিয়ে মারছে।নীল যে কি করে এই গায়েপড়া মেয়েটাকে সহ্য করে আল্লাহই জানে।

আয়াত:খারাপ লাগছে ইশু?
ইশু:না ঘুম পাচ্ছে!
আয়াত:তাহলে চোখবন্ধ করে একটা ঘুম দাও।কাছাকাছি আসলে আমি সজাগ করে দেবো।
ইশু:না!…আমি ঘুমাবো না!
আয়াত:এইমাত্র বললে ঘুম পাচ্ছে তাহলে ঘুমাবে না কেন?
ইশু:আমি ঘুমালে যদি তুমি উল্টোপাল্টা কিছু করে বসো?…পুরুষমানুষদের বিশ্বাস করতে নেই!
আয়াত:😐মাথা উঠাও!(ধমক দিয়ে)
ইশু:কেন?
আয়াত:উঠাও বলছি!
ইশু মাথা উঠাতেই আয়াত বললো এভাবেই বসে থাকবে।খবরদার যদি আমার কাধে মাথা রেখেছো!
ইশু ইচ্ছে করে ওকে রাগানোর জন্যই বলেছিলো।কিন্তু এখন আফসোস হচ্ছে।এদিকে ভীষণ ঘুমও আসছে।

নীল বসে বসে ফোনে কি দেখছিল।হঠাৎ নিশুর মাথাটা ওর কাধে পড়তেই তাকিয়ে দেখলো ঘুমিয়ে পড়েছে।নীল ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে নিশুর মাথাটা ঠিক করে দিলো।ওড়নাটাও গা থেকে সরে গেছে।তখন মহারানী কিভাবে প্যাঁচিয়ে রেখেছিলো আর এখন ঘুমের ঘোরে খবরও নেই যে ওড়নাটা গা থেকে সরে গেছে।নীল ওড়নাটা ভালো করে ওর গায়ে প্যাঁচিয়ে দিলো।তারপর পকেট থেকে টিস্যু বের করে ওর নাকের ওপর জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো মুছে দিলো।ঘুমের ঘোরেই নিশু ওর শার্ট আঁকড়ে ধরলো।নীল পকেট থেকে ফোন বের করে ওর কয়েকটা ছবি তুলে নিলো।

এদিকে ইশুও ঘুমিয়ে পড়েছে।ঘুমের ঘোরে কখন যে আয়াতের কাধে মাথাটা রেখে শুয়েছে ও বলতেই পারবে না।আয়াতও আর মাথাটা সরালো না।ঘুম নেই শুধু রুশার চোখে।বকবক করে তানিমের মাথাটা পাগল করে দিয়েছে।তানিম শেষে বিরক্ত হয়ে হেডফোনটা কানে গুঁজে চোখ বন্ধ করে রইলো।

কাছাকাছি আসতে ইশু নিজেও সজাগ হয়ে গেলো।এতক্ষন আয়াতের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে ভাবতেই ও লজ্জা পেল।আয়াত হেডফোন কানে দিয়ে গান শুনতে।ওকে উঠতে দেখেই বললো….লজ্জা লাগছে না এতক্ষন আমার কাধের ওপর মাথা রেখে যে নির্লজ্জের মত ঘুমিয়েছিলে!….উফফ আমার কাধটাই ব্যথা হয়ে গেছে!
ইশুর গেলো মেজাজ খারাপ হয়ে।শুলে শুয়েছে আর কি তাই বলে এভাবে বলবে নাকি?
ইশু:খবিশ একটা!
আয়াত:কি বললে তুমি???….আমার কাধে মাথা রেখে আমাকেই খবিশ বলছো?
ইশু:উদ্ধার করেছেন আমাকে।আমার ঘাড়টাই ব্যথা করছে এটা কোন মানুষের কাধ হতে পারে?ইস্পাতের মত শক্ত!
আয়াত:অসভ্য মেয়ে!…মানুষের কাধ তো শক্তই হয়।
ইশু:মোটেও না।…এই দেখো আমার কাধ কত নরম!
আয়াত হাত দিতে গেলে ইশু ধমকে উঠলো….দেখতে বলেছি ধরতে বলি নি।এই জন্যই বলে পুরুষমানুষদের বিশ্বাস করতে নেই।সুযোগ পেলেই হয়েছে…
আয়াত হাত দুটো জোড় করে বললো….মাফচাই!আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।এবার ইস্তফা দেন।
ইশু:(ঠিক হয়েছে!)

।নিশু ঘুমাচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ ওদের বাস বিকট শব্দ করে থামতেই ও ভয়ে নীলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
ওকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে দেখে নীল বুঝতে পারলো যে আচমকা ঘুম ভেঙে যাওয়াতে বেচারি ভয় পেয়েছে।
নীল:মনে হচ্ছে বাসের টায়ার পাংচার হয়ে গেছে।
নিশু লজ্জায় ওকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসলো।

নীল নেমে গিয়ে দেখলো ড্রাইভার আর হেল্পার মিলে বাসের চাকা লাগানোর চেষ্টা করিছে।ও আবার উঠে এসে নিশুকে বললো….নামবে নাকি?ওদের আরো ঘন্টাখানেক লাগতে পারে!
নিশু নামবে কি না ভাবছে।পরে ভাবলো এতক্ষন বসে থেকে তো লাভ নেই।
ওরা হাটতে হাটতে অনেকদূর চলে এসেছে সেই খেয়ালই নেই ওদের।অন্ধকার হয়ে গেছে।হঠাৎ মেঘের গর্জনে দুজনেরই হুশঁ এলো।
নিশু:কোথায় আছি আমরা??(আতংকিত গলায়)
নীল:জানি না!
নিশু:ফিরবো কি করে?
নীল:চলো উলটো দিকে হাঁটা ধরি।দুজনে আবার উল্টো দিকের রাস্তা ধরে হাঁটা ধরলো।
নিশু:আমার ভয় লাগছে।
নীল:ভয় লাগলেও কিচ্ছু করার নেই!..চেষ্টা করে দেখতে হবে!
এর মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।আশেপাশে দোকানপাটও সব বন্ধ হয়ে গেছে।অন্ধকারে কিছু দেখাও যাচ্ছে না।ওরা কোনরকমে গিয়ে একটা দোকানের ছাউনির নিচে গিয়ে দাঁড়ালো।কিন্তু বৃষ্টির বেগ বাড়ছে আস্তে আস্তে।নিশু একেবারে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে।বৃষ্টির ছাটঁ এসে ওর গায়ে লাগছে।নীল এবার ওর পাশ থেকে সরে দুহাত নিশুর মাথার দুপাশে দিয়ে একেবারে ওর মুখোমুখি দাঁড়ালো যাতে নিশুর গায়ে বৃষ্টির ছাঁট না লাগে।ও একেবারে নিশুকে আড়াল করে দাঁড়িয়েছে।বৃষ্টির ফোটাগুলো সব ওর পিঠে পড়ছে।নিশু সেদিকে তাকিয়ে বললো…তুমি তো পুরো ভিজে যাচ্ছো??নীলও ওর দিকে চেয়ে আছে।হঠাৎ জোরে বাজ পড়তেই নিশু ওকে ঝাপটে ধরলো।ও এভাবে চেপে ধরাতে নীলের বুকে হাতুড়ি পেটাচ্ছে।ও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার যথাসম্ভব চেষ্টা করছে যাতে দূর্ঘটনাবশত কোন ভুল না হয়ে যায়।
নীল:কি করছো নিশু!…ছাড়ো প্লিজ!
নিশু ভয়ে কাপঁছে।নীল ওকে এভাবে কাপঁতে দেখে এবার একহাত দিয়ে ওর কাধ চেপে ধরলো।
নীল:আরে বাবা সামান্য বাজ পড়তেই কেউ এত ভয় পায় নাকি?…একটুপরই বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাবে!
নিশু কিছুটা শান্ত হতেই নীলকে ছেড়ে দিলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *