I AM YOUR VILLAIN LOVER

I AM YOUR VILLAIN LOVER !! Part- 07

মেঘের পিছু পিছু বর্ষাও নিচে এসে দেখে আহসান চৌধুরী একদম রেডি হয়ে বসে আছেন ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে নিয়ে। বর্ষা আহসান চৌধুরীকে সালাম দিয়ে বললো

— আসসালামু আলাইকুম, কোথায় যাচ্ছো তুমি চাচ্চু তাও আবার এত সকাল সকাল?

— ওয়ালাই কুমুসসালাম, বর্ষা মামনি আমি আজকে বিজনেসের কাজে দেশের বাইরে যাচ্ছি। তিন মাস পর ফিরবো হয়তো। তুই কিন্তু এতদিন আমার মেঘকে ছেরে কোথাও যাবিনা বুঝলি। যখন বাবার বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা হবে মেঘকে নিয়ে চলে যাবি আবার ওর সাথেই চলে আসবি। আর না হলে তোর আব্বু আম্মুকেই ডেকে নিবি এখানে। আমি বিদেশ থেকে ফিরলে তারপর বাবার বাড়ি যাবি তার আগে নয় বুঝলি বর্ষা মা? আর আমি আশরাফকে ফোন করে সব বলে দিয়েছি।

আহসান চৌধুরীর কথা শুনে ঠোট উল্টে বাচ্চাদের মতো মুখ করে বর্ষা বললো

— কিন্তু চাচ্চু এই এতগুলো দিন আমি এখানে একা থাকবো?

— পাগলি মেয়ে তুই একা কোথায় মেঘ তো আছে। স্বামী পাশে থাকতে আবার একা হয় নাকি। আর শোন এখন থেকে আমায় আব্বু ডাকবি কোনো চাচ্চু ডাক নয়।

আহসান চৌধুরীর কথা শুনে বর্ষা মনে মনে বললো

— ঐ বজ্জাত খাটাশ হনুমান কুম্ভভুতটা আমার স্বামী না শত্রু। আমার জীবনটা শুকনো বাঁশপাতা বানাতে বিয়ে করেছে উনি আমায়। এর কাছে আমি এই তিনটি মাস কি করে থাকবো। হে আল্লাহ প্লিজ হেল্প মি।মনে মনে

— কি হলো রে বর্ষা মা কিছু বলছিস না যে?

বর্ষা কিছু বলার আগেই মেঘ বলে উঠলো

— ও আর কি বলবে আব্বু তুমি নিশ্চিন্তে বিজনেসের কাজে যাও ওকে দেখার জন্যে আমি আছি। আর আমায় দেখার জন্যে ও আছে। তুমি যা বলছো সব মেনে নিয়েছে ও, কি আমি ঠিক বলছি না বর্ষা?(বর্ষার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে)

— হ্যা হ্যা চাচ্চু উনি ঠিকি বলছে। তুমি যাও আমি এখানেই থাকবো তুমি না ফেরা পর্যন্ত।

তারপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে মেঘ আর বর্ষার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন আহসান চৌধুরী। মেঘ ওনাকে এগিয়ে দিয়ে আসতে সাথে গেলো। ওরা চলে যেতেই বর্ষা গিয়ে টিভি চালিয়ে কার্টুন দেখতে লাগলো।

কার্টুন দেখতে দেখতে হঠাৎ টিভি বন্ধ হয়ে গেলো। বর্ষা অবাক হয়ে সুইচ টিপে চেক করতে লাগলো টিভিটা কেনো বন্ধ হলো। তখনি বর্ষার পিছন থেকে মেঘ বলে উঠলো

— চেক করে কোনো লাভ হবে না আমি টিভির লাইনটা বন্ধ করে দিয়েছি। আমি ওপরে যাচ্ছি ভালো ভাবে ফ্রেশ হতে, এসে যেনো দেখি টেবিলে আমার ব্রেকফাস্ট রেডি করে রাখা হয়েছে।

কথাটা বলেই ওপরে চলে যেতে নিলো মেঘ আর ওমনি বর্ষা রেগে গিয়ে বলে উঠলো

— ঐ কুম্ভভুত তুই আমার টিভি বন্ধ করলি কেনো? আর ব্রেকফাস্ট তো কাজের লোকেরা বানিয়েই রাখছে টেবিলে চোখে দেখিসনি ব্যাটা হনুমান।ওগুলো গিয়ে গেল না আমার টিভিটা ক্যান বন্ধ করলি?

বর্ষার কথা শুনে থেমে গেলো মেঘ। তারপর বর্ষার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে ডেভিল হেসে ওপরে চলে গেলো। একটু পরেই অনেকগুলো টাকা হাতে করে নিচে নেমে এসে বাসার সব কাজের লোকদের ডাকতে আরম্ভ করলো। বাসার সব কাজের লোকরা সামনে এসে দাড়াতেই মেঘ সবার উদ্যেশে বললো

— তোমাদের সবার দুই মাসের ছুটি। আর এই দুই মাস তোমাদের কাজও করতে হবে না। এই নাও সবার দুই মাসের অগ্রিম বেতন। তোমরা এখনি সবাই যে যার বাড়ি চলে যাও।

মেঘের কথা শুনে সবাই অনেক খুশি হয়ে টাকাগুলো নিলো। তারপর একজন কাজের মহিলা বললো

— কিন্তু ছোট স্যার আমরা সবাই চলে গেলে বাসার কাজ কামগুলো করবে কেডা?

— সেটা তোমাদের ভাবতে হবে না। তোমরা চলে যাও দুমাস পর এসো। আর হ্যা যাওয়ার আগে আজকে সকালে যে সব রান্না করেছো সব নিয়ে যেও।

কথাটা বলেই সবাইকে টাকা দিয়ে ওপরে চলে গেলো মেঘ। কাজের লোকগুলো খুশি হয়ে যে যার মতো ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে চলে গেলো। শুধু গেইটম্যান আর মালি থাকলো। বর্ষা এতক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে অবাক হয়ে এসব দেখছিলো। সবাই চলে যেতেই বর্ষা ওপরে চলে গেলো মেঘের কাছে। মেঘ কেবলি ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্যে পা বারিয়েছে তখনি বর্ষা গিয়ে বললো

— ঐ কুম্ভভুত তুই কাজের সব লোকগুলোকে ছুটি দিলি ক্যান? এখন বাসার এই এত কাজ গুলো কে করবে?

বর্ষার কথা শুনে থেমে গেলো মেঘ। তারপর বর্ষার দিকে না তাকিয়েই বললো

— আজ থেকে বাসার সব কাজ তুই করবি।

— কিইইইই আমি কি তোর চাকর নাকি যে আমি কাজ করবো? আমি কিচ্ছু করবো না।

বর্ষা কথাটা বলতেই মেঘ বর্ষার কাছে এগিয়ে গিয়ে বর্ষার এক হাত মুচড়ে ধরে পিছনে ঘুরিয়ে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে রাগি গলায় বললো

— কি বললি তুই? সাহস থাকলে আর একবার বলে দেখ তোর জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো আমি। আজ এই মুহুর্ত থেকে আমি যা বলবো তুই তাই করবি। আর আমার কথার অবাধ্য হওয়ার চেষ্টা করবি তো তুই ভাবতেও পারবি না আমি তোর কি হাল করবো। আর ভুল করেও আমায় আর এই তুই তুই করে কথা বলার চেষ্টা করবি না। আমায় আপনি করে বলবি বুঝলি?

কথাটা বলে বর্ষার হাত ছেরে দিতেই বর্ষা মেঘের দিকে ঘুরে চিৎকার করে বলে উঠলো

— আমি কোনো কথা শুনবো না তোর কুম্ভভুত তোর সাহস হয় কি,,,,,

আর বলতে পারলো না বর্ষা তার আগেই সজোরে একটা থাপ্পর মেরে দিলো মেঘ ওর গালে। থাপ্পড় খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে মুখ থুবড়ে ফ্লোরে গিয়ে পরলো বর্ষা। বর্ষা পরে যেতেই মেঘ দৌড়ে গিয়ে বর্ষার চুলের মুঠি ধরে নিজের দিকে বর্ষার মুখটা উচু করে ধরে দাতে দাত চেপে বললো

— ঐ আমার কথা কি কানে যায় না তোর? নাকি তুই আমাকে সেই এক বছর আগের মেঘ ভাবছিস? তাহলে শুনে রাখ, এক বছর আগে তুই যে হাসি খুশি শান্ত মেঘকে জানতিস তাকে তুই সেদিন নিজে হাতে খুন করেছিস। আর এখন তোর সামনে যে মেঘ চৌধুরী দাড়িয়ে আছে সে হলো হিংশ্র। তাই আমার সাথে কথা বলতে খুব সাবধান নইলে তুই ভাবতেও পারবি না, আমি তোর কি হাল করবো।

কথাগুলো বলেই বর্ষার চুল ঝাড়ি মেরে ছেরে দিলো মেঘ। তারপর ওয়াশরুমে যেতে যেতে বললো

— আমি ফ্রেশ হয়ে এসে যেনো নিচে টেবিলে আমার ব্রেকফাস্ট রেডি দেখি। নইলে আমার কথা অমান্য করার ফল খুব খারাপ হবে।

কথাটা বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে ঠাশ করে দরজা লাগিয়ে দিলো মেঘ। বর্ষা গালে হাত দিয়ে নিচ থেকে উঠে দাড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলে গেলো। আজকে সত্যিই ওর কাছে মেঘকে অচেনা লাগছে। যে মেঘ কখনো ওর গায়ে হাত তোলা তো দুরের কথা কখনো ওকে কেউ বাজে কোনো কথা বললে তার অবস্থা খারাপ করে দিতো। আর আজ কিনা সেই মেঘ ওকে এভাবে মারলো। কথাগুলো ভাবতেই শুধু কান্না পাচ্ছে বর্ষার।

বর্ষা চোখ মুছে কিচেনে চলে গেলো। তারপর ভাবতে লাগলো কি বানাবে ব্রেকফাস্ট এর জন্যে। ও তো কোনো রান্নাই জানেনা। বাসায় থাকতে শখ করে আম্মুর সাথে কয়েক রকমের পিঠা বানাতো শুধু আর নুডুলস রান্না করেছে কয়েকবার। নুডুলস এর কথা মনে পরতেই হাসি ফুটে উঠলো বর্ষার মুখে। বর্ষা নুডুলস রান্না করবে বলে মনস্থির করলো।
,
,
কিছুক্ষণ পর মেঘ ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এসে দেখলো বর্ষা টেবিলে খাবার ঢেকে রেখে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। মেঘ বাকা হেসে টেবিলের কাছে এসে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো

— জলদি খাবার বার খুব খুধা লেগেছে আমার।

মেঘের কথা শুনে মেঘের সামনে খাবারের প্লেটটার ঢাকনা শরিয়ে এগিয়ে দিতেই মেঘ মুখ লাল করে বলে উঠলো

— What is this?

— দিস ইজ জ্যামপাউরুটি,

— এগুলো কি ব্রেকফাস্ট হলো? আমি এসব খাইনা। আমার ব্রেকফাস্ট কই?

মেঘকে রেগে যেতে দেখে বর্ষা বাচ্চাদের মতো মুখ করে হাত মচড়াতে মচড়াতে বললো

— তুই, মানে আপনি তো তারাতারি ব্রেকফাস্ট রেডি করতে বলেছেন তাই আমি এসব ছারা এত তারাতারি আর কিছু পাইনি। নুডুলস রান্না করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সারা কিচেন খুজেও সব জোগার করতে পারলাম না। কোনো কাজের লোকও নাই যে তাদের জিগ্যেস করবো।

— কোনো কথা শুনতে চাই না আমি। আমি এসব খাবো না। তুই এখুনি গিয়ে আমার জন্যে পরোটা আলু ভাজি আর ডিমের অমলেট বানিয়ে আন জলদি।

— কিন্তু আমি তো এসব কিছুই বানাতে পারিনা(কাদো কাদো ভাব করে)

— তুই কিচেনে এসব বানাতে যাবি নাকি আমি তোকে নিয়ে অমলেট করবো?

মেঘের রাগি গলায় এমন কথা শুনেই বর্ষা এক প্রকার দৌড় দিলো কিচেনে। আর মনে মনে মেঘের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলো

— ব্যাটা রাক্ষস কুম্ভভুত হনুমান লাল চিকা হলুদ ডাইনাসর, তাল গাছের এনাকন্ডার খালু ইচ্ছা তো করছে তোরে বিষ খাইয়ে মারি। আমাকে তুই পেয়েছিস কি আমি তোর চাকর। হারামি তোর বউ তোকে কোনো দিন ভালবাসবে না দেখেনিস। এই বর্ষার বদদোয়া কখনো মিথ্যে হয়না ব্যাটা খাটাশ একটা।

গালগালি দিতে দিতে কিচেনে চলে গেলো বর্ষা। কিন্তু এখন পরোটা বানাবে কি করে? তারপর আবার আলু ভাজি। উফ বর্ষার এখন পাগল হওয়ার উপক্রম।কেনো যে আম্মুর কাছ থেকে কখনো রান্নাটা শিখলো না সেটা ভেবেই আফসোস হচ্ছে বর্ষার। বর্ষা ময়দা নিলো একটা বাসনে তারপর তার মাঝে পানি ঢেলে দিয়ে ময়দা মাখতে মাখতে বললো

— সব দোষ ঐ শয়তান কিডন্যাপারটার। ঐ শয়তানটা যদি সেদিন আমায় কিডন্যাপ না করতো তাহলে আজকে আর আমার এই খচ্চরটার বউ হয়ে জীবনটা বাঁশপাতা করতে হতো না। হারামি কিডন্যাপার তোকে আমি অভিশাপ দিলাম তোর ওপর যেনো কাক পটি করে দেয়। ওপর থেকে যেনো গাছের ডাল ভেঙে পরে তোর মাথায়। তোর সবগুলো বাচ্চা কাচ্চা যেনো ল্যাংটা হয়ে জম্ম নেয়। হুমম মিলিয়ে নিস ব্যাটা শয়তান কিডন্যাপার।এই বর্ষার কথা কখনো মিস যায় না।

এসব ভুলভাল বকবক করতে করতে ময়দা মাখছে বর্ষা। ময়দায় একবার পানি বেশি হচ্ছে তো একবার শক্ত হয়ে যাচ্ছে। এমন করতে করতে দুই কেজি ময়দা মেখে ফেলেছে বর্ষা,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *