Childhood marriage

Childhood marriage ! Part- 23

#পর্ব-২৩
ছোঁয়া : বাবা-মা চলে গেছেন আজ ১৫ দিন পেরিয়ে গেছে,উনারা যাওয়ার পরদিনই ফুলি এসে হাজির হয়েছে।বাড়ির সব কাজ এখন ফুলিই করে,আমার কাজ শুধু রান্না করা আর উনার সেবা-যত্ন করা।রান্নাটাও ফুলিই করতে চেয়েছিল কিন্তু আমি রাজি হইনি কারণ ডক্টর উনার জন্য যেই ডায়েট চার্ট করে দিয়েছেন সেভাবে ও রান্না করতে পারবে কিনা আমার সন্দেহ আছে।যাই হোক বাবা-মা যাওয়ার পর থেকে উনার অত্যাচার আরও বেড়ে গেছে,খাওয়া নিয়ে ঝামেলা,শোয়া নিয়ে ঝামেলাতো আছেই আরও বিভিন্ন বাহানায় আমাকে অতিষ্ট করে ফেলেছেন।উনার শরীর এখন আগের থেকে অনেক ভাল,বলতে গেলে এখন প্রায় সুস্থ হয়েই গেছেন কিন্তু তবুও আমি মুখে তুলে খাইয়ে না দিলে খাবেন না,এত্তবড় বিছানা পড়ে আছে তবুও আমার গাঁ-ঘেষে,আমার কোলে মাথা রেখে,আমাকে জড়িয়ে না ধরলে তার ঘুম হবে না।নিজ হাতে গোসল করিয়ে না দিলে করেন না,ঔষধ না খাওয়ালে নিজ হাতে কখনই খাবেন না…

উনি এখন একা একাই হাঁটতে পারেন কিন্তু তবুও আমাকেই তাকে হাঁটতে নিয়ে যেতে হয়,তখন আমার কাঁধে ভর করে আস্তে আস্তে হাঁটেন অথচ আমি যখন কিচেনে কাজ করি তখন কারণে অকারণে একা একাই কিচেনে এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেন,আমার চুলের মধ্যে নাক ডুবিয়ে বসে থাকেন।নিষেধ করলেতো শোনেনই না উল্টো অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন!গালে,ঘাড়ে,চোখে,মুখে এলোপাথাড়ি কিস করতে থাকেন আর শুড়শুড়ি দেন।বাবা-মা থাকতেতো একটু চক্ষুলজ্জার ভয় ছিল কিন্তু এখনতো তাও নেই তাই যেখানে সেখানেই এসব অসভ্যতামি শুরু করে দেন,আমিতো সবসময়ই ভয়ে ভয়ে থাকি না জানি কখন ফুলি আমাদেরকে এভাবে দেখে ফেল।মাঝে মাঝে ভাবি খুব কড়া ভাবে উনাকে বকাবকি করব কিন্তু উনার অসুস্থতার কথা চিন্তা করে কিছুই বলতে পারিনা!
তবে আর বেশিদিন না,উনি এখন প্রায় সুস্থ তাই আর কয়েকদিন পরেই আমি বাড়ি চলে যাব।তখন দেখব ওই বেটা এনাকণ্ডা কাকে জ্বালাতন করে…

সায়ন : অাজ ১৫ দিন হল বাবা-মা চলে গেছেন।দিনগুলো খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে আর আমার স্বপ্নগুলো আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে আসছে।ভেবেছিলাম আমি সুস্থ হতে হতে ছোঁয়ার রাগ ভাঙ্গিয়ে ফেলব কিন্তু কাজটা এখনও করে উঠতে পারিনি,ছোঁয়া এখনও আমাকে ক্ষমা করতে পারেনি।এটাই হয়তো আমার কাছে শেষ সুযোগ কিন্তু আর হয়তো খুব বেশিদিন সুযোগটা পাব না,আমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলেই ও চলে যাবে।আমার সুস্থ হওয়ার তেমন কোন ইচ্ছাই ছিল না কিন্তু ছোঁয়ার সেবা-যত্নে এই কয়দিনেই প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছি।একটা করে দিন পেরিয়ে যাচ্ছে আর আমার মনজুড়ে হতাশা ভর করছে,মনে হচ্ছে আমি হয়তো আমার ছোঁয়াকে চিরতরে হারিয়ে ফেলব।ওর মান ভাঙ্গানোর কোন উপায়ই খু্ঁজে পাচ্ছি না,এতদিন অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু আমার সব চেষ্টা ও ধুলিস্মাৎ করে দিয়েছে।মাঝে মাঝে ওর উপর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে,এত জেদী কেন ও…?

(কয়েকদিন পর)
ফুলি: আপামণি আইজকা এতগুলান রান্না করতাছো যে,কেউ কি আইবো?
ছোঁয়া : হ্যাঁ ওই ফুপা-ফুপু,মারুফ ভাইয়া আর তোর ভাইয়ার কয়েকজন বন্ধুকে দাওয়াত করেছি
ফুলি : হঠাৎ কইরা সবাইরে দাওয়াত করতে গেলা কেন?তুমিতো এইসব একেবারেই পছন্দ কর না
ছোঁয়া : পরশুতো চলেই যাব তাই ভাবলাম যাওয়ার আগে একবার সবার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে যাই তাই…
ফুলি : এমন কইরা কথা কইতাছো যেন তুমি আর কখনই এই বাড়িত আইবা না
ছোঁয়া : ঠিকই বলেছিস,হয়তো আর কখনই আসা হবে না(মনে মনে)
ফুলি : তয় কামডা কিন্তু খুব ভাল করছ,আবার কবে সবার সাথে দেখা হইব তারতো ঠিক নাই…
ছোঁয়া : হয়েছে হয়েছে আর কথা না বলে ঝটপট হাত চালাতো,সবার আবার আসার সময় হয়ে গেল…

এদিকে নিজের রুমে অনেক্ষণ ধরেই এদিক-সেদিক পায়চারী করছে সায়ন,দেখেই বোঝা যাচ্ছে প্রচণ্ড রকমের অস্থিরতা কাজ করছে ওর মধ্যে…
সায়ন : আর সহ্য হচ্ছে না,কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না।একটু পরেই সব গেস্টরা চলে আসবে,একটু আগেই মারুফ ফোন দিয়ে বলল ছোঁয়ার জন্য টিকিট কনফার্ম করে ফেলেছে,আসার সময় নিয়ে আসবে।আমি ভাবতেও পারছি না কাল বাদ পরশু ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে,হাজার চেষ্টা করেও ওকে অাটকাতে পারলাম না..
গতকাল রাতেই ছোঁয়া জানিয়ে দিয়েছে ও আর আমার সাথে থাকতে চায় না,শুধুমাত্র বাবা-মা কষ্ট পাবে ভেবে আমার সাথে হ্যাপি থাকার নাটক করছে।তবে আর বেশিদিন এভাবে থাকতে পারবে না,খুব তাড়াতাড়িই নাকি আমাকে ছেড়ে পার্মানেন্টলি দূরে চলে যাবে।আমার থেকে ডিভোর্সও চেয়েছে!আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না মেয়েটার মাথায় চলছেটা কি…

এখন রাত ১২টা,ঘণ্টাখানেক আগেই সবাই চলে গেছে।ছোঁয়া এখনও রুমে আসেনি,ফুলিকে সাথে নিয়ে কিচেনে সবকিছু গোছগাছ করে নিচ্ছে আর আমি বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছি,ওর জন্যে ওয়েট করছি।অবশেষে অপেক্ষার অবসান হল,ম্যাডাম রুমে ঢুকলো…
ছোঁয়া : আপনি ঘুমাননি?
সায়ন : তোমার জন্য ওয়েট করছিলাম
ছোঁয়া : কেন?
সায়ন : এমনি…(কেন ওয়েট করছি তুমি জানো না?)
ছোঁয়া : জানিতো কেন ওয়েট করছেন(মনে মনে)
সায়ন : সারাদিন অনেক ধকল গেছে,এবার ঘুমিয়ে পড়…
ছোঁয়া : হুম

সায়ন : আবার নিচে ঘুমাচ্ছো কেন?
ছোঁয়া : কালতো চলেই যাব তাই আজ থেকেই নাহয় একা একা ঘুমানোর প্র্যাক্টিস করেন…
সায়ন : প্লিজ ছোঁয়া তুমি কি বোঝ না তোমাকে কতটা ভালোবাসি?
ছোঁয়া : অনেক রাত হয়ে গেছে,এখন ঘুমান প্লিজ আর আমাকেও ঘুমাতে দিন…
সায়ন : আচ্ছা তাই হবে,নিচে নেমে ওকে কোলে তুলে নিলাম
ছোঁয়া : এসব কি হচ্ছে?আবার অসভ্যতামি করছেন!নামিয়ে দিন বলছি…
সায়ন : ওকে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলাম,তারপর ওকে জড়িয়ে ধরেই শুয়ে পড়লাম
ছোঁয়া : এটা কিন্তু একদম ঠিক হচ্ছে না,আপনি কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি করছেন…
সায়ন : আরতো মাত্র একটা দিন,তারপরতো আমার থেকে দূরে সরেই যাবে তাই যতক্ষণ আমার কাছে আছো ততক্ষণতো তোমাকে একান্ত ভাবে কাছে পেতে দাও প্লিজ…
ছোঁয়া : কি বলব কিছুই বুঝতে পারছি না তাই চুপ করেই থাকলাম
সায়ন : না চাইতেও অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে,সারাজীবন তোমাকে এভাবেই কাছে পেতে চাই কিন্তু তুমিতো তা চাও না,আমার থেকে দূরে সরে যেতে চাও।তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমি কিছু করতে চাই না আর তাই যেটুকু সময় তোমাকে কাছে পাচ্ছি ততক্ষণ একটু আমার মত করে তোমাকে ভালোবাসতে দাও প্লিজ…
ছোঁয়া : উনার দিকে অবাক হয়ে তাকালাম,বলার মত কোন কথা খুঁজে পাচ্ছি না
সায়ন : প্লিজ ছোঁয়া…
ছোঁয়া : সম্মতিসূচকভাবে মাথা নাড়লাম
সায়ন : ওর সম্মতি পেয়ে ওকে আরো নিবীড়ভাবে বুকে জড়িয়ে নিলাম তারপর ওর চুলের মধ্যে নাক ডুবিয়ে দিলাম…
ছোঁয়া : আমার সম্মতি পেয়ে উনি যতটা খুশি হলেন,মনে হল যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন!উনাকে এমন খুশি হতে দেখে আমারও অনেক খুশি লাগছে,উনার বুকে মাথা রেখে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকলাম
(কিছু্ক্ষণ পর)
সায়ন : ছোঁয়া…
ছোঁয়া : হুম?
সায়ন : এখনও ঘুমাওনি?
ছোঁয়া : ঘুম আসছে না
সায়ন : কেন?
ছোঁয়া : জানিনা
সায়ন : আমি কিন্তু জানি
ছোঁয়া : কি?
সায়ন : কাল আমাকে ছেড়ে চলে যাবেতো সেই টেনশনেই…
ছোঁয়া : Stop talking nonsense
সায়ন : তুমি মানো আর না মানো আমি জানি এটাই সত্যি
ছোঁয়া : মোটেও না(সত্যি কথা বলতে উনাকে ছেড়ে যেতে হবে বলে একটুতো কষ্ট হচ্ছেই কিন্তু…)
সায়ন : একটা কথা বলবে?
ছোঁয়া : কি?
সায়ন :সত্যি চলে যাবে?

ছোঁয়া : হুম
সায়ন : না গেলে হয় না?
ছোঁয়া : আমরা অন্য প্রসঙ্গে কথা বলি?
সায়ন : আচ্ছা এখান থেকে গিয়ে কি করবে?
ছোঁয়া : সেটা নিয়ে অনেক টেনশনে আছি,বাবা-মা জানতে পারলে অনেক কষ্ট পাবে আর আমি কিছুতেই উনাদের কষ্ট দিতে চাই না।
সায়ন : তাহলে চলে যেতে চাইছো কেন?
ছোঁয়া : কারণ আমি আর আপনার সাথে থাকতে চাই না
সায়ন : কিন্তু কেন?আমিতো আমার ভুল বুঝতে পেরেছি আর সেই জন্যেতো আমি তোমাকে সরি বলেছি।বিলিভ মি আমি এখন তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।So please don’t leave me…
ছোঁয়া : দেখুন আমি ডিসিশন নিয়ে নিয়েছি আর সেটা চেঞ্জ হবে না
সায়ন : একটু ট্রাই করেতো দেখ…
ছোঁয়া : টপিক চেঞ্জ প্লিজ…
সায়ন : আচ্ছা ডিভোর্সের ব্যাপারে আরেকবার ভেবে দেখলে হয় না?
ছোঁয়া : না হয় না,I need to go away from you so…
সায়ন : So what?ডিভোর্সের কথা বাবা-মা জানলে কি হবে বুঝতে পারছো?
ছোঁয়া : এটার ব্যাপারটা নিয়ে অবশ্য আমিও বেশ চিন্তায় আছি।উনারা কখনই এটা মেনে নিতে পারবেন না..
সায়ন : তাহলে কি বাদ?
ছোঁয়া : বাদ কেন হবে?ওটার সলিউশন পরে ভেবে দেখব আপাতত কাজটাতো করে ফেলি
সায়ন : ইশ রে..এই মেয়েকে কনফার্ম ভূতে ধরেছে,ডিভোর্স ডিভোর্স করে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে!কেন বোঝে না যে ওর এসব কথায় আমার কতটা কষ্ট হচ্ছে…(মনে মনে)

ছোঁয়া : কি হল কিছু ভাবছেন?
সায়ন : আচ্ছা ডিভোর্সের পর কি করবে?
ছোঁয়া : কয়েকটা স্কলারশিপের জন্যে এ্যাপ্লাই করেছি,হয়ে গেলেতো ভালই হল কাউকে কিছুই বলা লাগবে না।চুপচাপ দেশের বাইরে চলে যাব প্রবলেম সল্ভড
সায়ন : আর যদি না হয়?
ছোঁয়া : তাহলে..অন্যকিছু ভাবতে হবে…
সায়ন : আমি একটা কথা বলি?
ছোঁয়া : কি?
সায়ন : ডিভোর্সের চিন্তাটা বাদ দাও
ছোঁয়া : আবার!!
সায়ন : আরে আমার কথাটাতো শোন তারপর নাহয় ভেবে দেখো
ছোঁয়া : আচ্ছা বলেন কি বলবেন
সায়ন : তোমাকে কোথাও যেতে হবে না,কাউকে কিছু বলতেও হবে না।তুমি তোমার মত আমি আমার মত…
ছোঁয়া : কিন্তু কিভাবে?
সায়ন : তুমিতো জানো আমি দশ বছর কানাডায় ছিলাম,ওখানে আমার একটা জবও আছে।ভাবছিলাম রেসিগনেশন দিয়ে দিব কিন্তু এখন ভাবছি আবার ফিরে যাব…
ছোঁয়া : কিন্তু কেন?

সায়ন : দেখ আমি আবার কানাডায় ফিরে যাব,ওখানে গিয়েই সেটেল্ড হয়ে যাব।তুমি তোমার মতই থাকবে কাউকে কিছু বলার দরকার নেই,কয়েক বছর পর আমি নিজেই সবাইকে জানিয়ে দিব যে আমি তোমাকে পছন্দ করি না,তোমাকে ডিভোর্স দিব
ছোঁয়া : তারপর?
সায়ন : তারপর আর কি?সবাই যা বলার আমাকেই বলবে,তোমাকে কিছুই বলবে না…
ছোঁয়া : কি বলব কিছুই বুঝতে পারছি না তাই চুপ করেই থাকলাম
সায়ন : কথাগুলো বলতে যে আমার কি পরিমাণ কষ্ট হয়েছে একমাত্র আমিই জানি।কিন্তু কিছুই করার নেই আমাকে যে যা ইচ্ছে হয় বলুক প্রবলেম নেই কিন্তু ছোঁয়ার দিকে কেউ আঙ্গুল তুলে কথা বলবে এটা আমি মেনে নিতে পারব না।ও চলে যেতে চায় যাক বাঁধা দিব না কিন্তু এর জন্যে ওকে কেউ দোষারোপ করুক,কটু কথা শোনাক এটা আমি মানতে পারব না।যা বলার আমাকেই বলুক…