Childhood marriage ! Part- 14
#পর্ব-১৪
(সকালে)
ছোঁয়া : ভোরের দিকে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।শরীরটা কেমন যেন ম্যাজ ম্যাজ করছে কিন্তু অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছে।আজানের শব্দ কানে আসতেই আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে পড়লাম,নিজের দিকে তাকাতেই লজ্জায় চোখ-মুখ লাল হয়ে গেল।উনার দিকে ফিরে তাকালাম,ভাগ্যিস উনি এখনও ঘুমাচ্ছেন নাহলেতো আমি…
ঝটপট উঠে পড়লাম,ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়েই,ফজরের নামাজ আদায় করে নিলাম।তারপর আবারও উনার পাশে এসে বসলাম,উনার ঘুমন্ত মুখটা কি সুন্দর লাগছে!রাতের কথা মনে পড়তেই সূক্ষ্ম একটা হাসির রেখো ফুটে উউঠল ঠোঁটে,আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিলাম উনার কপালে তারপর উনার পাশেই শুয়ে পড়লাম।কখন যে ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসলো বুঝতেই পারলাম না…
সায়ন : পাখির কিচিরমিচির ডাক শুনে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।মাথাটা প্রচণ্ড ভারি ভারি লাগছে তাই চোখ খুলতে পারছি না,তখনই মনে হল শুধু মাথাটা না বুকটাও ভারি ভারি লাগছে।মনে হচ্ছে ভারি কিছু চাপা দেওয়া হয়েছে,অনেক কষ্টে চোখ মেলে তাকালাম কিন্তু একি!
এই মেয়ে আমার বুকের উপর কেন?আর ও এখানে কেন?ওরতো পাশের রুমে থাকার কথা…
আচ্ছা কাল রাতে এখানে কি কিছু…
কথাটা মনে পড়তেই নিজের দিকে তাকালাম,ওহ্ নো!যা ভয় পাচ্ছিলাম তাই হয়েছে।কিন্তু কিভাবে?আমিতো এভাবে…তাহলে কি ও আমাকে ইনফ্লুয়েন্স করেছে?দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা…
ছোঁয়া…ছোঁয়া…
(কিন্তু ছোঁয়া তখন গভীর ঘুমে মঘ্ন,ওর কানে কোন কথায় ঢুকছে না)
সায়ন : (দাঁতে দাঁত চেপে)ছোঁয়া…
উফ!আমার ঘুম হারাম করে দিয়ে এখন শান্তি করে ঘুমানো হচ্ছে😡দাঁড়াও তোমার ঘুম ছোটাচ্ছি…
এক ঝটকায় ওকে বুক থেকে সরিয়ে দিলাম তারপর উঠে বসে আরো জোরে জোরে ওকে ডাকতে লাগলাম
ছোঁয়া : হঠাৎই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল,তখনই শুনলাম উনি আমার নাম ধরে চেঁচাচ্ছেন!মনে হচ্ছে খুব রেগে আছেন।ভয়ে ভয়ে চোখ মেলে তাকালাম,উনার চোখের দিকে তাকাতেই ভয়ে গলা শুকিয়ে আসলো।রাগে চোখদুটো লাল টকটক করছে,আমি একবার তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলাম,মাথা নিচু করে বসে আছি
সায়ন : How dare you?
ছোঁয়া : জ্বি?
সায়ন : এমন ভাব দেখাচ্ছো যেন ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে পারো না অথচ পেটে পেটে…
ছোঁয়া : আ..আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আপনি কি বলছেন…
সায়ন : বুঝতে পারছো না তাইনা?একদম নাটক করবে না বুঝেছো?
ছোঁয়া : উনি আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন?আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না কিন্তু আমার খুব খারাপ লাগছে…
সায়ন : কি হল কথা বলছো না কেন?
ছোঁয়া : আ..আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি না,আপনি এমন কেন করছেন আমার সাথে?
সায়ন : তো কি করব আপনার সাথে?মাথায় তুলে নাচবো?You know what..তোমার মত মেয়েরা এটাই ডিজার্ভ করে।আমার আহেই বোঝা উচিত ছিল তুমি কেমন,একটা ছেলেকে নিজের মায়াজালে কিভাবে জড়াতে হয় তা তোমাদের মত মেয়েরা খুব ভাল করেই জানে…
ছোঁয়া : কি যা-তা বলছেন!আপনার মাথা ঠিক আছেতো?
সায়ন : এতদিন ছিল না কিন্তু এখন সব ঠিক আছে।আজ যা করছি তা আমার অনেক আগেই করে ফেলা উচিত ছিল
ছোঁয়া : কেন?কি করেছি আমি?আমিতো কিঝুই বুঝতে পারছি না…
সায়ন : বুঝেও যদি বুঝতে না চাও তাহলে বোঝানোর সাধ্য আর আমার নেই।আসলে সব দোষ আমার,তোমার আসল জায়গাটা আমার আগেই দেখিয়ে দেয়া উচিত ছিল কিন্তু…
ছোঁয়া : চুপচাপ চোখের জল ফেলছিলাম,কোন কথাই বলতে পারছি না
সায়ন : তোমাকে কিছু বলা না বলা সমান,তাতে তোমার মত থার্ডক্লাস মেয়ের কোন কিছু যায় আসে না।So just forget it…
ছোঁয়া : এবারে প্রচণ্ড রাগ উঠে গেল,উনি একের পর এক কটু কথা শুনিয়ে যাচ্ছেন অথচ করণটা বলছেন না!দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,”নাহ্ আপনি যাবেন না,আমার অপরাধটা কি না বলে আপনি যেতে পারবেন না”
সায়ন : ওর কথা শুনে থমকে দাঁড়ালাম,একবার ওর দিকে তাকিয়েই আবার হাঁটতে শুরু করলাম
ছোঁয়া : উনে চলে যাচ্ছেন দেখে এবার জেদ চেপে গেল,ছুটে গিয়ে উনার হাত চেপে ধরলাম
সায়ন : Stop this useless drama ok?and let me go…
ছোঁয়া : উনার কলার চেপে ধরে বললাম,”কি বলেছি শুনতে পাননি?আমার অপরাধটা কি না বলে আপনি এখান থেকে যেতে পারবেন না…”
সায়ন : ওর সাহস দেখে অবাক হয়ে গেছি,এক ঝটকায় ওকে সরিয়ে দিলাম।মেয়েটা ছুটে গিয়ে একটু দূরে ছিটকে পড়ল…
“কি কর নি তাই বল,আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে…
How dare you to touch me like that!you made me to involve physically with you.you forced me to become intimate with you…
ছোঁয়া : চুপ করুন প্লিজ আমি আর শুনতে পারছি না…
সায়ন : বাহ্ নাটকতো ভালই পারো,শোনো আমার সামনে একদম এসব ড্রামা করতে আসবে না
ছোঁয়া : শাট আপ!কি করেছি আমি?কখন থেকে যা নয় তা বলে যাচ্ছেন আমাকে!সেই বিয়ের দিন থেকে আমার সাথে খারাপ বিহেভ করে যাচ্ছেন আপনি,আমি কখনও কিছু বলেছি?এতই যখন প্রবলেম ছিল আপনার তখন বিয়েটা কেন করলেন?সবাইকে নিষেধ করে দিতেন…নাকি কাউকে বলার সাহস নেই বলে কাপুরুষের মত আমার উপর নিজের পুরুষত্ব খাটাচ্ছেন?
সায়ন : ছোঁয়া😡(আর রাগ কনট্রোল করতে না পেরে ওকে একটা থাপ্পড় দিলাম)
ছোঁয়া : উনার থাপ্পড়টা এতটা জোরে ছিল যে সহ্য করতে পারলাম না,সোজা গিয়ে টেবিলের উপর পড়লাম।এক কোণায় লেগে কপালে অনেকখানি কেটে গেল কিন্তু আমি কোন শব্দই করলাম না,নিরবে শুধু চোখের পানি ফেলছি
সায়ন : How dare you call me like that!
ছোঁয়া : তো কি করব?কান খুলে শুনে রাখুন কাল রাতে আমি না,আপনিই আমার কাছে এসেছিলেন।আমিতো সেই বিয়ের দিন থেকেই আপনাকে পুরোপুরি স্বামী বলে মেনে নিয়েছি আর তাই আপনার ডাকে আর দূরে সরে যেতে পারিনি…
সায়ন : What!আমি তোমার কাছে…Impossible…wait wait infact it is possible in case if you force me.নিশ্চয় তুমি কোন কায়দায় আমাকে ইনফ্লুয়েন্স করেছো তা নাহলে…আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল তুমি কেমন কোয়ালিটির মেয়ে,তোমার মত মেয়েরা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সবকিছু করতে পারে।আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম and I will regret for this throughout my entire life…
ছোঁয়া : আমি আপনাকে ফোর্স করেছি!আপনি একথা বলতে পারলেন!ঠিক আছে আপনার ভালোবাসার ডাকে সাড়া দেওয়াটা যদি দোষের হয়ে থাকে তাহলে আমি আমার দোষ স্বীকার করে নিচ্ছি।আপনি আমার স্বামী তাই আপনি যখন আমাকে ভালোবেসে কাছে ডাকলেন…
সায়ন : ভালোবাসা my foot.I just hate you,I hate your face,your touch and everything that is related to you.So please do me a favour stay away from me…
ছোঁয়া : এসব কি বলছেন?আপনি আমার স্বামী…
সায়ন : স্বামী!আমি তোমাকে কখনই স্ত্রীর অধিকার দেইনি সো আমাকে স্বামী বলে ভাবতে গেলে কোন সাহসে?নাকি হ্যাণ্ডসাম ছেলে দেখলেই তোমার…
এর চেয়ে বেশি কিছু বলার সামর্থ্য আমার নেই,যদি বিন্দুমাত্র লজ্জা শরম থেকে থাকে তাহলে আমার থেকে দূরে সরে থাকবে।তোমার মত দুশ্চরিত্রা মেয়ের মুখও আমি দর্শন করতে চাই না…”
কথাগুলো বলেই বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে,ঐ মেয়ের মুখদর্শন করতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে…
ছোঁয়া : উনি বেরিয়ে গেলেন,আমি কিছুই বলতে পারলাম না।এই পরিস্থিতিতে আমার কান্না করা উচিত কিন্তু চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানিও বের হচ্ছে না,মনে হচ্ছে সব পানি শুকিয়ে গেছে।অধিক শোকে নাকি মানুষ পাথর হয়ে যায়,এখন মনে হচ্ছে কথাটা পুরোপুরি সত্যি।
উনার বলা শেষের কথাগুলো এখনও কানে বাজছে,উনি আমার চরিত্র তুলে কথা বলেছেন!আর যাই বলুন না কেন আমার চরিত্র তুলে কেউ কথা বললে আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারব না।
জীবনে প্রথমবার শুনতে হল আমি দুশ্চরিত্রা তাও আবার উনার মুখে!
আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না,কানের কাছে বার বার একটা কথাই বাজছে,”তোমার মত দুশ্চরিত্রা মেয়ের মুখও আমি দর্শন করতে চাই না…”
বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম,পায়ে মনে হয় একটু ব্যাথা পেয়েছি।হাঁটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে,কপালের কাঁটা জায়গাটা থেকে এখনও রক্ত পড়ছে কিন্তু এখন ওসব ভাববার সময় নেই।বুকের বামপাশে যে আঘাত লেগেছে তার কাছে এসব বাহ্যিক আঘাত কিছুই না…
কোন রকমে নিজের রুমে আসলাম,রুমের এককোণায় ব্যাগটা পড়ে ছিল।কোন রকমে বোরখাটা পরেই ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম,কোথায় যাব জানিনা কিন্তু এটা জানি যে উনাকে আর এই মুখ দেখাতে পারব না।যেভাবেই হোক উনার থেকে দূরে যেতেই হবে…
।
অনেক্ষণ ধরে রাস্তা ধরে হাঁটছি,এই শহরের তেমন কিছুইতো আমি চিনিনা তাই কোথায় যাব কি করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।ফুটপাথ ধরে আনমনে হেঁটে যাচ্ছি,ঠিক তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠল।কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলাম…
ছোঁয়া : হে…হ্যালো
লোপা : কি খবর ম্যাডাম?কেমন আছেন আপনি?
ছোঁয়া :…..
লোপা : তা ম্যাডাম ফার্স্ট নাইট কেমন কাটলো?ভালই কেটেছে হয়তো,নাহলে কি আমাকে ভুলে যেতে পারতি?
ছোঁয়া : ন..ন..না মানে আমি আ..আসলে…
লোপা : তাসু…তোর কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন?সব ঠিক আছে তো?
ছোঁয়া : স..সব ঠিক আছে
লোপা : না ঠিক নেই,কিছু একটাতো হয়েছেই।কি হয়েছে আমাকে বল প্লিজ…
ছোঁয়া : বললামতো কি..কিছু হয়নি
লোপা : এই এক মিনিট এক মিনিট,কোথায় আছিস তুই?
ছোঁয়া : কো..কোথায় আবার?বাসায়…
লোপা : মিথ্যে কেন বলছিস তাসু?
ছোঁয়া : কই নাতো
লোপা : তুই বাসায় নেই,বাইরে কোথাও আছিস
ছোঁয়া : কই…
লোপা : চুপ একদম চুপ,এখন সত্যি করে বলতো কি হয়েছে?আর হ্যাঁ একদম মিথ্যা বলার চেষ্টা করবি না
ছোঁয়া : আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না,কান্না করে দিলাম
লোপা : শশশ্ চুপ,কান্না করে না বেবি,আচ্ছা এখন চোখ মোছ আর আমার কথা মন দিয়ে শোন
ছোঁয়া : হুম
লোপা : তোকে কিছু বলতে হবে না,শুধু বল তুই এখন কোথায় আছিস?
ছোঁয়া : আ..আমিতো জানিনা
লোপা : কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখ
ছোঁয়া : একজনকে জিজ্ঞেস করে ওকে জানিয়ে দিলাম
লোপা : আচ্ছা তুই ওখানেই দাঁড়া,আমি মারুফকে পাঠাচ্ছি…
।
ছোঁয়া : ঘণ্টাখানেক পর মারুফ ভাইয়া আসলো আমাকে নিয়ে যেতে।কোথায় যাচ্ছি,কেন যাচ্ছি,এরপর কি করব,কোথায় যাব,সবাইকে কি জবাব দিব কিছুই মাথায় আসছে না।এক অজানা অচেনা পথে,অনিশ্চিত জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি…
To be continued…