Childhood marriage

Childhood marriage ! Part- 09

ঘড়িতে রাত ১২টা ছুঁই ছুঁই করছে,নিজের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সায়ন।দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না সেটা নিয়ে আকাশ-পাতাল চিন্তা করছে।হ্যাঁ,ঠিকই ধরেছেন সায়ন হাজার চেষ্টা করেও এই বিয়েটা আটকাতে পারেনি আর আজকে ওদের বাসররাত,রুমের ভেতরে সায়নের খাটের উপর ছোঁয়া বসে আছে আর তাই সায়ন ভেতরে যেতে ভয় পাচ্ছে।
সায়ন : কি করব,ভেতরে যাব?কিন্তু ভেতরে তো ছোঁয়া তাহলে…
ধুর ছাই,আমার বাড়ি আমার ঘর সবকিছুই আমার তাহলে আমি কেন বাইরে থাকব!আমি ভেতরে যাব যাবই যাব…
ছোঁয়া : লম্বা ঘোমটা টেনে উনার খাটের উপর বসে ছিলাম,মনের মধ্যে হাজারটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ পেলাম,তারমানে উনি এসেছেন।হার্টবিট বেড়ে গেল,ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে,এতদিন উনাকে যত খারাপই ভাবি না কেন এখনতো উনি আমার স্বামী তাই উনাকেই আমার সবকিছু উজাড় করে দিয়ে ভালোবাসতে হবে।মনে মনে এসব হিসাব মিলাচ্ছি আর উনার জন্য ওয়েট করছি…
সায়ন : মেয়েটা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে,দেখেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল।Hey get up…
ছোঁয়া : (অবাক হয়ে)জ্বি?
সায়ন : ইংরেজি বোঝ না নাকি?তোমাকে দাঁড়াতে বলেছি
ছোঁয়া : ভয়ে ভয়ে উঠে দাঁড়ালাম
সায়ন : একটা বালিশ আর কাঁথা ওর দিকে ছুড়ে দিয়ে বললাম,নিজের জন্য একটা জায়গা দেখে শুয়ে পড়।একদম আমাকে বিরক্ত করতে আসবে না…
ছোঁয়া : মা..ম…মানে!!
সায়ন : মানেটা খুব পরিষ্কার,এই বিয়েটা আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে হয়েছে।বিয়েটা ভাঙ্গার অনেক চেষ্টা করেছি বাট পারিনি।আর হ্যাঁ এতে তোমার কোন দোষ নেই,আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি সো তোমাকে তার জায়গায় বসাতে পারব না।কথাগুলো নিজের মাথায় ভালভাবে ঢুকিয়ে নাও আর ফারদার আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না।বোঝাতে পেরেছি?

ছোঁয়া : কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে উনি আমার দিকে তাকালেন।আমার বুকের ভেতরটায় মোচড় দিয়ে উঠল,কে যেন বার বার হাতুড়ি পেটাচ্ছে কি বলব কিছুই বুঝতে পারছি না…
সায়ন : কি হল কথা বলছ না কেন?আমি কি বোঝাতে পেরেছি নাকি আবারও বলতে হবে?
ছোঁয়া : না না আর বলতে হবে না,আমি বুঝতে পেরেছি
সায়ন : দ্যাটস বেটার।এখন নিজের রাস্তা দেখতো,আমি অনেক টায়ার্ড তাই ঘুমাব…
ছোঁয়া : উনি কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পড়লেন,আমি এখনও বালিশ আর কাঁথা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না…
সায়ন : কি হল এখনও দাঁড়িয়ে আছো কেন?রাততো আর কম হল না,চুপচাপ শুয়ে পড়
ছোঁয়া : জ্বি..
সায়ন : আর হ্যাঁ লাইটটা অফ করে দিও,আলোতে আবার আমার ঘুম আসে না…
ছোঁয়া : জ্বি।আর দেরি না করে ঘরের এক কোণে বিছানা করে নিলাম,তারপর লাইটটা অফ করে দিয়েই চুপচাপ শুয়ে পড়লাম…
শুয়ে শুয়ে নিজের অদ্দিষ্টের কথা ভাবছি আর চোখের জল ফেলছি।বিয়ে কি জিনিস সেটাই যখন বুঝতাম না তখন আমার বিয়ে হয়েছে,বাবাকে হারানোর পর মা-বোনকেও ছাড়তে হয়েছে।যাদেরকে বাবা-মার আসনে বসিয়েছিলাম,তারাও নিজেদের স্বার্থেই আমাকে ইউজ করেছে,তাদের ঘরের বৌ বানিয়েছে।যাকে দুচোখে সহ্য করতে পারতাম না,সত্যিটা জানার পর তাকেই নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে মনে প্রাণে স্বামী বলে স্বীকার করে নিয়েছি,এই দুদিনে নিজের অজান্তেই তাকে ভালোবেসে ফেলেছি অথচ সেই স্বামী আজ আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে অস্বীকার জানাচ্ছে!শুধু তাই নয় যে রাতে তার ভালোবাসায় ভেসে যাওয়ার কথা সেরাতে তার মুখে অন্যকোন মেয়ের কথা শুনতে হচ্ছে!শুনতে হচ্ছে সে অন্য কাউকে ভালোবাসে….😪😪

সকালে কারো দরজা নক করার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল,ইশ রে এত বেলা করে ঘুমালাম!আসলে সারারাত প্রায় নির্ঘুম কাটিয়ে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই হয়তো ঘুম ভাঙতে দেরি হয়েছে।যাই হোক তাড়াতাড়ি হাত চালাই,কাউকে বুঝতে দেওয়া যাবে না আমাদের মধ্যে কাল রাতে ঠিক কি কি হয়েছে।বালিশ-কাঁথা গুছিয়ে বিছানায় রাখতে যাব তখনই সায়নের দিকে চোখ পড়ল।ঘুমন্ত মুখটা কি নিষ্পাপ লাগছে!আবারও ওর প্রেমে পড়ে গেলাম,খুব ইচ্ছে করছে একটা ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিতে।ওর দিকে একটু এগিয়ে যেতেই দরজায় আবারও টোকা পড়ল,আমি সম্বিৎ ফিরে পেলাম।ঝটপট উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম,সায়নের কয়েকজন ফ্রেণ্ড আর কাজিন দাঁড়িয়ে আছে।আমাকে দেখেই মুচকি মুচকি হাসছে…
১ম জন : কি ভাবি,এতক্ষণে ঘুম ভাঙল!
২য় জন : আমাদের ভাইয়া কি সারারাত ঘুমাতে দেয়নি নাকি?
৩য় জন : দেয় যে নি সেটাতো দেখতেই পাচ্ছিস,দেখছিস না ভাবির চোখদুটো কেমন বসে গেছে…
৪র্থ জন : কোথায় বসে গেছে?আমিতো দেখছি ফুলে গেছে
১ম জন : যাই হোক,ভাবি ভাইয়া কই এখনও উঠেনি?
ছোঁয়া : না মানে উনিতো এখনও ঘুমাচ্ছেন
৩য় জন : দেখলি,বলেছিলাম না সারারাত দুজনের কেউই ঘুমায়নি তাই…
২য় জন : তা ভাবি সারারাত জেগে জেগে কি করলেন?
৪র্থ জন : কি আর করবে,বাসররাতে যা করার তাই করেছে…
(সবাই একসাথে হেসে উঠল)

ছোঁয়া : আমি কি বলব কিছুই বুঝতে পারছি না,চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি
১ম জন : তা ভাবি বেড়ালটা কে আগে মেরেছে,তুমি নাকি ভাইয়া?
ছোঁয়া : আমি অসহায় চোখে ওদের দিকে তাকালাম তখনই কাকিয়ার গলা শুনতে পেলাম
কাকিয়া : দেখিতো তোরা একটু সর।সকাল সকাল আমার মেয়েটাকে জ্বালাতন শুরু করেছিস!তোদের আর আক্কেল হবে না দেখছি…
ছোঁয়া : কাকিয়াকে দেখে একটু সাহস পাচ্ছি,জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেললাম
কাকিয়া : কি রে মা,ঠিকমত ঘুম হয়েছেতো?
১ম জন : ঘুম!আন্টি তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?বাসররাতে কেউ ঘুমায় নাকি?
(সবাই আবারও শব্দ করে হেসে উঠল)
কাকিয়া : শশশশ্ এই তোরা এবার যা তো,আমার বৌমার সাথে আমার একটু কথা আছে
২য় জন : হ্যাঁ হ্যাঁ বৌমার সাথেইতো কথা বলবে আমরা তোমার কে…
(সবাই চলে গেল)
ছোঁয়া :আমি এখনও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি,তখনই মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেলাম।তাকিয়ে দেখলম কাকিয়া…
কাকিয়া : কি রে মা,আমাদের উপর খুব রেগে আছিস তাইনা?
ছোঁয়া :….
কাকিয়া : দেখ মা,আমি জানি হুট করে এসব মেনে নেওয়া তোর পক্ষে খুবই কষ্টকর কিন্তু কি করবি বল মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়েছিস তাই এসব মেনে নিতেই হবে
ছোঁয়া : অসহায় চোখে কাকিয়ার দিকে তাকালাম
কাকিয়া : জানিস মা,তুই যখন খুব ছোট সবে হাঁটতে শিখেছিস তখন থেকেই আমার খুব ইচ্ছে ছিল তোকে ছেলের বৌ বানাব।তার ঠিক বছর দুয়েক পরেই আমার ইচ্ছেটা পূরণ হয়েছে ঠিকই কিন্তু এভাবে পূরণ হোক আমি কখনই চাইনি…
ছোঁয়া :….
কাকিয়া : তোর বয়স তখন বছর চারেক হবে,হঠাৎ করেই তোর বাবা….
আশরাফ ভাইজান মারা যাওয়ার পর আমাদের দুজনেরই ইচ্ছে ছিল তোকে আমাদের কাছে নিয়ে এসে রাখব কিন্তু তোর মা কিছুতেই রাজি হলেন না আর তাছাড়া…
ছোঁয়া : তাছাড়া?
কাকিয়া : তাছাড়া তখন তোকে রাখতে পারলেও পরে মানুষ নানা রকম কথা শোনাতো।বুঝিসই তো একি বাড়িতে জোয়ান ছেলে-মেয়ে…
তাই আমরা সবাই মিলে অনেক ভেবে-চিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম
ছোঁয়া : তাহলে এত বছর আমাকে এসব বল নি কেন?
কাকিয়া : শুধু তোকে আর সায়নকেই না,কাউকেই কিছু জানাইনি আমরা।সবার থেকেই ব্যাপারটা লুকিয়ে রেখেছিলাম
ছোঁয়া : কিন্তু কেন?
কাকিয়া : কারণ বাল্যবিবাহের কথা জানতে পারলে সর্বনাশ হয়ে যেত,আমাদের দেশে যে বাল্যবিবাহ দণ্ডনীয় অপরাধ আর তাছাড়া তোরা দুজনেই তখন অনেক ছোট।ব্যাপারটা জানতে পারলে তোদের দুজনেরই অবুঝ মনে এর একটা ছাপ পড়ত তাই…
আমাদের ভুল বুঝিস না মা,তোদের দুজনের ভালর জন্যই আমরা…
ছোঁয়া : আচ্ছা কাকিয়া
কাকিয়া : কাকিয়া কি রে পাগলী,এখনতো অন্তত মা বলে ডাক…
ছোঁয়া : মা!!!
কাকিয়া : তা নয়তো কি সায়নের মাতো তোরও মা তাইনা?
ছোঁয়া : আচ্ছা মা
মা : তা আমার পাগল ছেলেটা কই?
ছোঁয়া : উনিতো এখনও ঘুমাচ্ছেন
মা : আচ্ছা ও তোর সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করেনি তো?
ছোঁয়া : (যা করেছে আমি কাউকে বলতে পারব না)না মা উনি একটুও খারাপ ব্যবহার করেন নি
মা : (মুচকি হেসে)আমি সবই বুঝি রে মা
ছোঁয়া :….
মা : মা রে আমার ছেলেটা একটু রাগী,ও বাইরে শক্ত হলেও ভেতরটা অনেক নরম।আমি জানি তুই পারবি ওর মন জয় করতে
ছোঁয়া :…
মা : আমার ছেলেটাকে নিজের মত করে গড়ে নিস মা…
ছোঁয়া : হ্যাঁ মা,উনার মন জয় করতে যা যা করার লাগে সবই আমি করব।ডিয়ার হাজবেণ্ড গেট রেডি,দেখ এই ওয়াইফ তার হাজবেণ্ডকে পাওয়ার জন্য ঠিক কি কি করতে পারে…

ছোঁয়া : রুমে গেলাম,সায়ন এখনও ঘুমাচ্ছে।দাঁড়াও পতিদেব,তোমার ঘুম ছুটাচ্ছি…
জানালার পর্দাগুলো আস্তে আস্তে সরিয়ে দিলাম
সায়ন : সবে তাসনিয়াকে নিয়ে একটা স্বপ্ন দেখছিলাম তখনই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।ঐ গাধীটা জানালার পর্দা সরিয়ে দিয়েছে,আলো এসে চোখে পড়ছে তাই ঘুম ভেঙ্গে গেছে।ইচ্ছে করছে গাধীটাকে ধরে দুইটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেই…
ছোঁয়া : Good morning.অনেক বেলা হয়ে গেছে,এবারতো উঠুন…
সায়ন : How dare you to wake me up?just get lost…
ছোঁয়া : আমি চলে যাব বাট তার আগে আপনি…
সায়ন : Just shut up.এখান থেকে যাও বলছি…
ছোঁয়া : আমিতো শুধু আপনাকে…
সায়ন : I said get lost…
ছোঁয়া : উনার কথা শুনে খুব খারাপ লাগছে কিন্তু তবুও কিছু বললাম না,চুপচাপ ওখান থেকে চলে আসলাম তারপর জামা-কাপড় নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলাম…

ছোঁয়া : গোসল শেষে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলাম,আজ বৌভাত তাই মেরুণ রঙ্গের একটা শাড়ি পরেছি।পুরো শাড়িতে গোল্ডেন জরি আর স্টোনের কাজ করা।রুমে ঢুকে দেখি উনি এখনও ঘুমাচ্ছেন,মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসলো।উনার কাছে গিয়ে চুলটে কয়েকবার টাওয়েল দিয়ে আস্তে আস্তে ঝাড়লাম,চুলের পানি উনার চোখে মুখে পড়তেই উনার ঘুম ভেঙ্গে গেল।উনাকে নড়াচড়া করতে দেখে ঝটপট ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে আসলাম তারপর কিছুই হয়নি এমনভাবে চুল মুছতে লাগলাম…
সায়ন : ঠিক কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানিনা,হঠাৎ চোখে পানির ছিটা পড়ায় ঘুম ভেঙ্গে গেল।রাগে রাগে চোখ মেলে তাকালম কিন্তু কিছু্ক্ষণ পরেই আমার সব রাগ পানি হয়ে গেল।
এ আমি কি দেখছি!ছোঁয়া আমার দিকে পেছন ফিরে একমনে চুল মুছছে কিন্তু আয়নাকে ওর প্রতিচ্ছবিটা আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।অপূর্ব সুন্দর লাগছে ওকে,ইচ্ছে করছে ওর দিকে ছুটে গিয়ে একবার ওকে ছুয়ে দেই…
ছোঁয়া : আয়নার দিকে একবার চোখ পড়তেইতো আমি অবাক,উনি একমনে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি ঝটপট চোখ সরিয়ে নিলাম,নাহলে আবার উনি লজ্জা পেয়ে যাবেন তারপর নিজের মত করে সাজতে লাগলাম
সায়ন : ও সাজছে,খুব হালকা সাজ কিন্তু তবুও অপূর্ব সুন্দর লাগছে ওকে।একটা একটা জিনিস ট্রাই করছে আর ওর সৌন্দর্য্য যেন আরো বহুগুণে ফুটে উঠছে।টানা টানা চোখে গাঢ় কাজল,ঠোঁটে হালকা গোলাপী লিপস্টিক,কপালে ছোট্ট একটা টিপ,কানে ঝুমকো দুল আর নাকে ছোট্ট একটা স্টোন বসানো নাকফুল।মনে হচ্ছে যেন স্বর্গের কোন অপ্সরী নেমে এসেছে আমার সামনে,আমি ধীরে ধীরে ওর মাঝে হারিয়ে যাচ্ছি,কোন এক অদৃশ্য শক্তি যেন আমাকে ওর দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে,আমি হাজার চেষ্টা করেও নিজেকে দূরে সরাতে পারছি না…

To be continued….