Childhood marriage 2 !! লেখাঃ সানজিদা সেতু [ Season- 2 ]
Childhood marriage 2
সায়নঃ না কিছুতেই না,তোমরা যা বলছো তা কিছুতেই হতে পারে না
মাঃ কেন হতে পারে না খোকা?
সায়নঃ এটা তুমি বলছো মা!বাবার মত কি তুমিও পাগল হয়ে গেলে?
বাবাঃ সায়ন!মুখ সামলে কথা বল,বাবার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটুকুও কি ভুলে গেছো?
মাঃ এসব কি ধরণের কথা খোকা! আমরা কি তোমাকে সেই শিক্ষা দিয়েছি?
সায়নঃ তো আর কি বলব মা?তোমরা যা শুরু করেছো তাতেতো মনে হচ্ছে সত্যি সত্যিই তোমাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে
বাবাঃ সায়ন!
সায়নঃ থেমে গেলে কেন বাবা?হাতটা যখন তুলেই ফেলেছো তাহলে থাপ্পড়টা দিয়েই দাও।তবে একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো আমাকে মেরে ফেললেও তোমাদের এই পাগলামীতে আমি কিছুতেই সাথ দিব না
বাবাঃ সায়ন…সায়ন…কোথায় যাচ্ছো?আমার কথা কিন্তু এখনও শেষ হয়্নি…সায়ন…সায়ন…
মাঃ সায়নের বাবা,তুমি একটু শান্ত হও প্লিজ,তুমি কোন চিন্তা কর না,ওকে আমি বুঝিয়ে বলছি (Childhood marriage 2)
বাবাঃ হ্যাঁ হ্যাঁ তাই কর,ওকে বোঝাও যে বিয়েটাতো ওকে করতেই হবে,আজ হোক বা কাল আর এটা ও যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ওর জন্য ততই ভাল হবে
(সায়নের রুমে)
সায়নঃ কি,বাবা-মা পেয়েছেটা কি?ওদের যখন যা ইচ্ছে হবে আমাকে তাই করতে হবে!এটা কি মগের মুল্লুক নাকি?আমার লাইফ,আমার বিয়ে আর ডিসিশনটা নেবে ওরা!নাহ এ কিছুতেই হতে পারে না
মাঃ একা একা কি বিড়বিড় করছিস বাবা?
সায়নঃ মা প্লিজ বিয়ের ব্যপারে আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না
মাঃ কিন্তু বাবা,মেয়েটা না অনেক ভাল
সায়নঃ উফ মা,তোমরা কেন বুঝতে চাইছো না আমি এখন বিয়ে করব না,সো মেয়েটা ভাল কি মন্দ সেটা নিয়ে আমার কোনই মাথাব্যথা নেই
মাঃ কিন্তু খোকা তোর বাবাতো ছোঁয়ার বাবার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ
সায়নঃ তো আমি কি বাবাকে বলেছিলাম এই রাবিশ প্রতিজ্ঞাটা করতে?
মাঃ সায়ন!!!
সায়নঃ সরি মা বাট আমি বিয়েটা করতে পারব না
মাঃ কিন্তু কেন বাবা?মেয়েটাকে আমাদের সবার এত পছন্দ আর তুইওতো বলেছিলি মেয়েটা অনেক সুন্দর
সায়নঃ হ্যাঁ বলেছিলাম কিন্তু কাউকে সুন্দর বললেই যে বিয়ে করতে হবে এটা কোন ডিকশনারীতে লেখা আছে?
মাঃ প্রবলেমটা কি বলবিতো
সায়নঃ সেটাও কি আমাকেই বলে দিতে হবে!কেন তোমরা বুঝতে পারছো না?এতটা অবুঝ তোমরা কবে থেকে হয়ে গেলে!
দাদীঃ কি হয়েছে বৌমা?
মাঃ আরে মা,আপনি আবার এই অসুস্থ শরীর নিয়ে এখানে আসতে গেলেন কেন?কিছু লাগলে আমাকে বলতেন
দাদীঃ কিছু লাগবে না বৌমা,কিন্তু তোমরা আমার দাদুভাইটার উপর এত রেগে আছো কেন বলতো
মাঃ দেখেন না মা,আপনার নাতি কিছুতেই বিয়েতে রাজি হচ্ছে না
দাদীঃ কেন রে দাদুভাই,তোর কি মেয়েটাকে পছন্দ হয়নি?
সায়নঃ ঠিক তা না আসলে…
দাদীঃ তার মানে পছন্দ হয়েছে?
সায়নঃ হ্যাঁ কিন্তু আমি এখন বিয়ে করতে পারব না (Childhood marriage 2)
দাদীঃ কিন্তু কেন?
সায়নঃ তোমরা কেন বুঝতে পারছো না আমি এখনও অনেক ছোট,সবেমাত্র ক্লাস নাইনে উঠলাম আর যেই মেয়ের সাথে তোমরা আমার বিয়ে ঠিক করেছো সেতো আরো ছোট,শুনেছি এবার ক্লাস সিক্সে উঠেছে।এত অল্প বয়সে তোমরা আমাদের বিয়ের কথা ভাবলে কিভাবে!
দাদীঃ তোর দাদুর সাথে যখন আমার বিয়ে হয় তখন আমি ক্লাস টু তে পড়তাম আর তোর দাদু এইটে
সায়নঃ সেটা অন্য যুগ ছিল,এখনকার সাথে তার আকাশ-পাতাল ব্যবধান
মাঃ আমি মানছি যে আমরা অনেক তাড়াহুড়ো করে ফেলছি কিন্তু তুই একবার আমাদের দিকটাওতো ভেবে দেখ।আশরাফ ভাইয়ের অবস্থা খুবই খারাপ,ডক্টররা বলে দিয়েছে আর কোন আশা নেই।মরার আগে উনি মেয়ের বিয়েটা দেখে যেতে চান বলতে পারিস এটাই উনার শেষ ইচ্ছা…
সায়নঃ এইটা কোন ধরণের ইচ্ছা?আরে ভাই তুই মরবি মর,আমাদের জীবনটা নষ্ট করার জন্যে কেন উঠে পড়ে লেগেছিস?
মাঃ সায়ন…
(সায়নকে থাপ্পড় মেরে দিল)
সায়নঃ (অবাক হয়ে)মা…তুমি আমার গায়ে হাত তুললে!
মাঃ বেশ করেছি,তোকে আদর দিয়ে দিয়ে যে মাথায় তুলে ফেলেছি সেটা যদি আগে বুঝতে পারতাম…একটা মানুষ মরতে বসেছে আর তুই!ছি ছি ছি আমার ভাবতেও অবাক লাগছে যে তুই আমার পেটের সন্তান…
(সায়ন রেগে মেগে বেরিয়ে গেল)
দাদীঃ বৌমা,তুমি একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেললে নাতো?
মাঃ আপনি একথা বলছেন মা!আপনি দেখলেন না আপনার নাতি দিন দিন কেমন বেয়াদপ হয়ে যাচ্ছে,এখনও যদি ওকে একটু শাসন না করি তাহলেতো সবকিছুই হাতের বাইরে চলে যাবে…
(কিছুক্ষণ পরে)
বাবাঃ সায়নের মা,তুমি আর মন খারাপ করে থেকো না।এতেতো তোমার কোন দোষ নেই
মাঃ না গো সব দোষ আমার,ছেলেটাকে যদি আগে থেকেই একট আধটু শাসন করতাম তাহলে হয়তো এই দিনটা আর দেখতে হত না
বাবাঃ সে যা হবার হয়েছে কিন্তু এখন আশরাফকে কি বলব তাই ভাবছি
মাঃ আমি বলি কি ভাইসাহেবকে এখনই কিছু বলার দরকার নেই,এমনিতেই উনার যে অবস্থা তার উপর যদি এমন একটা খবর শোনেন তাহলে আরো কষ্ট পাবেন
বাবাঃ ঠিকই বলেছো,ওকে কিছু বলা যাবে না
মাঃ আর তাছাড়া আমাদের হাতে এখনও সময় আছে,ছেলেটাকে আরো একটু সময় দেয়া দরকার।আসলে এত ছোট বয়সে এত্ত বড় একটা ডিসিশন…
বাবাঃ আমি জানি আসমা,ছেলেটার সাথে আমরা অন্যায় করছি,আমাদের ইচ্ছেটা অর উপর চাপিয়ে দিচ্ছি কিন্তু কি করব বল আমিও যে নিরুপায়,আমার সামনে যে আর কোন রাস্তা খোলা নেই
মাঃ আমি জানি তুমি এসব ইচ্ছে করে করছো না।আমি জানি অন্য কোন উপায় থাকলে তুমি কখনই এতটা কঠোর হতে না
বাবাঃ আমাকে প্লিজ ভুল বুঝো না
মাঃ কখনও না।আচ্ছা আশরাফ ভাই কি সত্যিই…(Childhood marriage 2)
বাবাঃ (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)হুম
মাঃ আমাদের হাতে আর কত সময় আছে?
বাবাঃ বেশি সময় নেই,যখন তখন খবর আসতে পারে
মাঃ বল কি! আর এই জন্যেই তুমি রত তাড়াহুড়ো করছো?
বাবাঃ হুম।তুমিতো জানো ছোঁয়ার জন্মের পরপরই আশরাফকে আমি কথা দিয়েছিলাম যে ওর মেয়েকে আমি আমার ছেলের বউ করব।আজ আমার বন্ধুর এই শেষ সময়ে ও আমাকে কিছু না বললেও আমি জানি ও ছোঁয়াকে বধুবেশে দেখে যেতে চায় তাই যত তাড়াতড়ি সম্ভব…
মাঃ আমি বুঝতে পারছি,তুমি কোন চিন্তা কর না যেভাবেই হোক সায়নকে আমি রাজি করাবোই
বাবাঃ করতে পারলেতো ভাল তবে একটা কথা শুনে রাখো এই বিয়েতো হবেই তোমার ছেলে রাজি হোক বা না হোক
(সন্ধ্যায়)
বাবাঃ আসমা,সায়ন কি এখনও বাড়ি ফেরেনি?
মাঃ না মানে…
বাবাঃ আর মানে মানে করতে হবে না আমার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে।রহিম…রহিম…
রহিমঃ জ্বি চাচাজান?
বাবাঃ তোর সায়ন ভাইজানকে যেখান থেকে পারিস খুঁজে নিয়ে আয়
রহিমঃ জ্বি চাচাজান,এক্ষুণি যাচ্ছি
(তক্ষুণি ফুলি,বাড়ির কাজের মেয়েটা ছুটতে ছুটতে আসলো)
ফুলিঃ চাচাজান…চাচাজান…
বাবাঃ কিরে ফুলি কি হয়েছে?
ফুলিঃ চাচাজান,খবর শুনছেন?
মাঃ কি খবররে ফুলি?
ফুলিঃ আশরাফ চাচার অবস্থা নাকি খুব খারাপ,সেই বিকাল থেইকা নাকি ফিট হইয়া রইছে।খানিক আগে নাকি জ্ঞান ফিরছে কিন্তু কাইরেই নাকি চিনবার পারতাছে না
মাঃ বলিস কি!
বাবাঃ আমি এক্ষুণি রওনা দিচ্ছি,আসমা তুমি বরং মাকে নিয়ে আস্তে আস্তে আসো
মাঃ আচ্ছা ঠিক আছে
বাবাঃ আর ফুলি
ফুলিঃ জ্বি চাচাজান?
বাবাঃরহিম সায়নকে নিয়ে ফিরলে যেভাবেই পারিস ওকে ঐ বাড়িতে নিয়ে আসবি।যেতে না চাইলে জোর করে নিয়ে আসবি ঠিক আছে?
ফুলিঃ জ্বি চাচাজান
(ছোঁয়াদের বাড়িতে)
বাবাঃ আশরাফ…আমাকে চিনতে পারছিস?
আশরাফঃ কে?
বাবাঃ চিনতে পারছিস না?আমি মহসিন,তোর দোস্ত
আশরাফঃ দোস্ত তুই এসেছিস?আমিতো ভাবলাম তোর সাথে আর দেখাই হবে না
বাবাঃ আর একবার এমন কথা বললে না থাপ্পড় দিয়ে তোর বাবার নাম ভুলিয়ে দিব
আশরাফঃ সেটাতো আমি এখনই ভুলে গেছি
বাবাঃ আচ্ছা শোন,এখন ঝটপট উঠে বসতো,আমাদের এখন অনেক কাজ বাঁকি আছে
আশরাফঃ শুধু শুধু মিথ্যে কেন বলছিস বলতো,আমি জানি আমার হাতে আর বেশি সময় নেই
বাবাঃ কে বলেছে?শোন আর একটু পরেই সায়ন আর ছোঁয়ার বিয়ে।আমরা বন্ধু থেকে বেয়াই হয়ে যাব তাই বলছি অনেক কাজ বাকি তাড়াতাড়ি উঠে বসতো দুই বন্ধু মিলে সব গুছিয়ে নেই কি বলিস?
আশরাফঃ বিয়ে মানে?
বাবাঃ বিয়ে মানে বিয়ে,কেন তুই চাস না তোর মেয়েকে আমার বাড়ির বউ হয়ে যেতে দেখতে?
আশরাফঃ কেন চাইব না?আমার মেয়েটা তোর বাড়ির বউ হয়ে যাবে এটাইতো আমার সবচেয়ে বড় চাওয়া
বাবাঃ ব্যাস তাহলে আর কোন কথা নেই,ভাবীসাব এক্ষুনি সব ব্যবস্থা শুরু করেন আপনার মেয়ের জামাই এলো বলে।
(সায়নের বাড়িতে)
সায়নঃ What is this রহিম ভাই?করছোটা কি!ছাড় বলছি নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি
রহিমঃ আপনের যা ইচ্ছে হয় আপনে পরে কইরেন কিন্তু এখন আমার লগে ঐ বাড়িত চলেন
সায়নঃ কিছুতেই না
রহিমঃ দেখেন ভাইজান আমারে আপনে জোর করতে বাধ্য কইরেন না
সায়নঃ তুমি এসব কেন করছো রহিম ভাই?
রহিমঃ চাচাজানের আদেশ
সায়নঃ উফ!অসহ্য তোমার চাচাজানকে গিয়ে বল আমি কিছুতেই ও বাড়িতে যাব না
রহিমঃ ফুলি…
ফুলিঃ আইতাছি…
সায়নঃ আবার ফুলিকে ডাকছো কেন?
রহিমঃ আইলেই দেখবার পাইবেন
ফুলিঃ কইছিলাম না,ভাইজান কিছুতেই রাজি হইব না।তাইতো আগের থেইকাই সবকিছু রেডি কইরা রাখছিলাম।এই লন ধরেন
সায়নঃ আরে…এটা কি!রহিম ভাই,ফুলি তোমাদের কি মাথার ঠিক আছে?
রহিমঃ মাথাতো আপনের খারাপ হইছে
সায়নঃ মানে?
রহিমঃ মানে দেখতেইতো পাইতাছেন ফুলি দড়ি আনছে তাও জিগাইতাছেন এইডা কি!
সায়নঃ দড়ি দিয়ে কি করবে তোমরা?Don’t tell me তোমরা আমাকে…
রহিমঃ ঠিকই ধরছেন,যা ভাবতাছেন আমরা তাই করুম।ওই ফুলি তাড়াতাড়ি কর নাইলে কিন্তু ভাইজান আবার ভাইগা যাইব
সায়নঃ করছোটা কি,আমাকে এভাবে বাঁধার মানেটা কি?ছাড় বলছি নাহলে কিন্তু একদম ভাল হবে না
ফুলিঃ আহ ভাইজান চুপ কইরা খাড়ানতো,নাইলে কিন্তু আপনেরই লাগব
সায়নঃ Are you guys gone crazy?আমারতো মনে হচ্ছে তোমাদের সাথে সাথে আমিও পাগল হয়ে যাচ্ছি
রহিমঃ ভাইজান আপনে না একটু বেশিই কথা কন,একটু চুপ কইরা থাকতে পারেন না?
সায়নঃ এর জন্যে কিন্তু তোমাদের পস্তাতে হবে,এখনও সময় আছে ভালই ভালই আমাকে ছেড়ে দাও বলছি
রহিমঃ হেইডাতো হইব না,চাচাজান কইছে যেমনে পারি আপনেরে ঐ বাড়িত নিয়া যাওন লাগব তাই…
সায়নঃ তাই তোমরা আমাকে বেঁধে নিয়ে যাবে!
রহিমঃ আপনেতো আর এমনে এমনে যাবেন না তাই…
সায়নঃ আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাদের সাথে যাব কিন্তু তার আগে আমার বাঁধনটা খুলে দিতে হবে
রহিমঃ খুইলা দিলে আপনে যদি আবার ভাইগা যান…
সায়নঃ বললামতো পালাবো না,তোমাদের সাথেই যাব।এবারতো খুলে দাও প্লিজ…
ফুলিঃ রহিম ভাই খুইলেন না,ভাইজান ভাইগা গেলে কিন্তু খালুজান আমাগো আর আস্ত রাখব না
সায়নঃ আরে বাবা বললামতো পালাবো না,একবার ভেবে দেখ এভাবে আমাকে বেঁধে নিয়ে গেলে সবাই কেমন হাসাহাসি করবে…
রহিমঃ কথাটাতো ঠিকই কইছেন,তাতে চাচাজানেরও মান-সম্মানের প্রশ্ন
সায়নঃ তাই বলছি খুলে দাও
রহিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে দিতাছি,তয় আমরা কিন্তু আপনের লগে লগেই থাকুম,ভুলেও পালানোর চিন্তা করবেন না,তাইলে কিন্তু আবার বান্ধুম…
সায়নঃ আচ্ছা তাই হবে
চলবে…
এক পলকে দেখে নিন সহজে গল্প খুঁজে পাওয়ার সুবিধার্থে দেওয়া হল