Childhood marriage 3 !! Part- 36
সায়নঃ মানে!কি যা-তা বলছেন?আর আমি কেন আপনার কথা বিশ্বাস করব?
(অন্যপাশ থেকে মৃদু হাসির শব্দ শোনা গেল)
– জানতাম আপনি এ কথাই বলবেন,আপনাকে একটা ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়েছি।আমি হোল্ড করছি,একবার চেক করে দেখুন তাহলেই সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে
সায়নঃ ভিডিওটা অন করতেই গায়ের সমস্ত রক্ত হিম হয়ে গেল।দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা একটা হোটেল রুম,বিছানায় ছোঁয়া শুয়ে আছে,ঘুমাচ্ছে।হ্যা..হ্যালো…
– হ্যাঁ বলুন,এবার বিশ্বাস হলো তো?
সায়নঃ কে আপনি?আর কি করেছেন ওর সাথে?
– তেমন কিছুই না,জাস্ট কড়া একটা ঘুমের ডোজ।তবে হ্যাঁ আমার কথামতো কাজ না করলে কিন্তু অনেককিছুই করতে পারি।ওই যে রুমটা দেখলেন না,ওটার বাইরেই কিন্তু আমার দুজন লোক পাহারায় আছে,আপনার বউ যেই লেভেলের সুন্দরী তাতে…নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কি বলতে চাইছি?
সায়নঃ ওর যদি কিছু হয়,তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে…
– সেটাতো আপনার উপর ডিপেণ্ড করছে,এখন আপনিই ডিসাইড করুন কি করবেন…
সায়নঃ শুনুন..হ্যালো..হ্যালো…Shit..damn it…
(সায়নকে আচমকা ওয়ালের সাথে ঘুষি দিতে দেখে ছুটে আসলো রাকিব)
রাকিবঃ আরেহ,কি করলি এটা!দেখ কতখানি কেটে গেছে,চল ড্রেসিং করে দেই
সায়নঃ ওসবের একদম সময় নেই,আমাকে এক্ষুণি যেতে হবে
রাকিবঃ সে নাহয় যাবি কিন্তু তোর হাতের অবস্থাটাতো একবার দেখ…
সায়নঃ ছোঁয়া কিডন্যাপ হয়ে গেছে রাকিব
(কথাটা কানে যেতেই স্তব্ধ হয়ে গেল রাকিব)
সায়নঃ মেসেজের ঠিকানায় টাইমলি না পৌঁছাতে পারলে ওরা ওকে…
রাকিবঃ তুই একটু শান্ত হয়ে বোস,একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা কর দেখবি কোন না কোন উপায় ঠিক বের হয়ে যাবে।চিন্তা করিস না আমরা থাকতে ছোঁয়ার কোন ক্ষতি আমরা হতে দিব না…
(রাত ঠিক ২টা)
দশ তলা হোটেলের নবম তলার একটা রুম,রুমের বাইরে ষণ্ডা মার্কা দুজন লোক দাঁড়িয়ে আছে,পোশাক আশাক দেখেই বোঝা যাচ্ছে বডিগার্ড বা সিকিউরিটি এজেন্সির লোক।হঠাৎই রুমের দরজাটা খুলে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক বেরিয়ে আসলেন,লোকটাকে দেখেই বাইরের লোকগুলো মাথা নিচু করে ফেললো
– ও যেন এই ঘর থেকে বেরোতে না পারে।কাল সকালে ফ্লাইটে আমরা নিউইয়র্ক ফিরে যাচ্ছি,ওকে নিয়ে আসার দ্বায়িত্ব কিন্তু তোমাদের।আর এই কাজে যেন কোন ভুল না হয়
– ওকে স্যার তাই হবে
ওদিকে ঘরের ভেতরের দৃশ্যটা কিন্তু একদম আলাদা।বেডে হেলান দিয়ে ফ্লোরে হাত পা চগড়িয়ে বসে আছে রিয়া।উস্কো খুশকো চুল,চোখের দৃষ্টি এলোমেলো।হাতে থাকা কাগজগুলো কুচি কুচি করে ছিড়ে দূরে ছুড়ে ফেলে দিল তারপর সেই ছেড়া টুকরো গুলোর দিকে তাকিয়ে পুরো অপ্রকৃতিস্থদের মতো করে হাসতে লাগলো
রিয়াঃ মিসেস..তাসনিয়া মাহবুব ছোঁয়া..কি ভেবেছো?একবার বেঁচেছো বলে রোজই…ইম্পসিবল,তোমাকে কি এতো সহজে ছেড়ে দিব!আমার আর সায়নের মাঝে যে আসবে তাকেতো আমি…
কথা বলতে বলতেই হাতে থাকা ছোঁয়ার ছবিটা সামনে রাখলো রিয়া,তারপর একটা ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি ছবিটাকে আঘাত করতে লাগলো আর তার সাথে সেই অট্টহাসি যা শুনলে যে কারো শরীরের রক্ত হিম হয়ে যাবে…
কানের কাছে তীব্র সাইরেনের শব্দ আর মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা,মনে হচ্ছে যেন মাথার উপর কেউ ননস্টপ সাম্বা ডান্স করছে।এমনই সব অসহ্য যন্ত্রণার মাঝেই চোখ মেলে তাকালো ছোঁয়া,তীব্র আলোকচ্ছটা যেন তীরের মতো এসে বিঁধছে দুচোখে তাই আবারও চোখ বন্ধ করে ফেললো।খানিক বাদেই মনে হলো অবস্থা একটু সহনীয় তাই আবারও চোখ মেলে তাকালো কিন্তু দুর্বলতার জন্য উঠে বসতে পারলো না।তখনই পরিচিত একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পেল
সায়নঃ গুড মর্নিং..এখন কেমন লাগছে?
ছোঁয়াঃ আমি..কোথায়..?
সায়নঃ কোথায় আবার হসপিটালে,তোমরা মেয়েরা কেন যে খাওয়া দাওয়ায় এতো অনিয়ম করো কে জানে?এখন বোঝ ঠেলা,প্রেশার লো হয়ে কি একটা কাণ্ড করে বসলে বলতো…
ছোঁয়াঃ কিন্তু আমিতো পার্লারে ছিলাম তারপর…তারপরতো আর কিছু মনে পড়ছে না…
সায়নঃ তারপর আপনি সেন্সলেস হয়ে গেলেন আর আমার ছোটাছুটি শুরু হলো
ছোঁয়াঃ সত্যি?কিন্তু আমিতো…
সায়নঃ থাক,অনেক হয়েছে আর কিছু ভাবতে হবে না।আমি খাবার আর মেডিসিন নিয়ে আসছি,খেয়ে রেস্ট নেবে কেমন?
ছোঁয়াঃ কিন্তু…
সায়নঃ আর কোন কিন্তু না,এরপর থেকে যদি খাওয়া দাওয়ায় কোন অনিয়ম করেছো তাহলে কিন্তু খবর আছে…
(ঘণ্টা খানেক পর)
ছোঁয়া আবারও ঘুমিয়ে পড়েছে,এ সবই হচ্ছে ওকে দেওয়া ড্রাগসের সাইড ইফেক্ট আর এই ইফেক্টটা নাকি আরও দুই চার দিন থাকবে।সায়ন এখনও ওর পাশেই আছে,ওর হাতে হাত রেখে বেডের পাশেই একটা চেয়ারে বসে আছে।তখনই দরজায় কেউ নক করলো,রাকিবকে বাইরে থাকতে ইশারা করেই উঠে দাঁড়ালো সায়ন
রাকিবঃ কি রে,ভাবীর কি অবস্থা?ঘুম ভেঙ্গেছে?
সায়নঃ হ্যাঁ ওই ঘণ্টা খানেক আগে,এখন অনেকটা ভালো তবে ডক্টর বলেছে ইফেক্টটা কাটিয়ে উঠতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে
রাকিবঃ যাক বাবা,তবুও ভালো
সায়নঃ যাক গে ওদিকের খবর বল,কাজটার কতদূর?
রাকিবঃ ও হ্যাঁ সব খোঁজ খবর নেওয়া হয়ে গেছে।বলেছিলাম না,এজেন্সিটা সেই এ্যাক্টিভ?
সায়নঃ বকবক না করে কাজের কথাটা সেরে ফেল
রাকিবঃ ওকে…মিস রিয়া রিদওয়ান খান,বড় ঘরের বিগড়ে যাওয়া উত্তরাধিকারীর একেবারে পারফেক্ট এক্সামপল।জন্মের সময়ই মা মারা যান,তারপর থেকেই একা,বাবার মাত্রাতিরিক্ত আদরে ওর পার্সোনালিটি হয়ে উঠেছে রীতিমতো জেদী,একগুঁয়ে আর প্রচণ্ড রকমের বদমেজাজী
সায়নঃ আরে এসবইতো আমরা আগে থেকেই জানি,নতুন কিছু থাকলে বল নাহলে…
রাকিবঃ একটা খুব ভয়ংকর ব্যাপার জানতে পেরেছি।মাত্র বারো বছর বয়সে এক দোকানদারকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল আর তার জন্য টানা দু বছর রিহ্যাবে সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্টও নিয়েছে
সায়নঃ (চমকে উঠে)বলিস কি!কারণটা কি জানতে পেরেছিস?
রাকিবঃ তেমন কিছুই না,জাস্ট একটা টেডি বিয়ার
সায়নঃ (অবাক হয়ে)মানে!ঠিক কি বলতে চাইছিস ক্লিয়ার করে বলবি?
রাকিবঃ না শব্দটা শুনতে পারতো না ও,একবার যেই জিনিস পছন্দ হবে সেটা ওর চাই ই চাই।সেদিন শপিংমলে একটা টেডিবিয়ার পছন্দ করেছিল রিয়া কিন্তু সেটা আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।দোকানদার ওকে অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু ম্যাডাম কিছুতেই রাজি হলেন না!এক পর্যায়ে একটা ফ্লাওয়ার ভাস তুলে…
সায়নঃ বলিস কি!এতো সাংঘাতিক ব্যাপার!তারপর কি হলো?
রাকিবঃ কি আবার হবে,রিদওয়ান সাহেব নিজ ক্ষমতায় সবকিছু ধামাচাপা দিয়ে দিলেন।তারপর বছর দুয়েক মেয়ের ট্রিটমেন্ট করালেন ব্যাস এটুকুই…
সায়নঃ মনেতো হচ্ছে ট্রিটমেন্টে কোন কাজই হয়নি বরং বয়স বাড়ার সাথে সাথে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে
রাকিবঃ ঠিক বলেছিস,She is a total psycho,you better be careful.তোকে যখন ওর একবার পছন্দ হয়েছে,এতো সহজে ছাড়বে না…
সায়নঃ সে আর বলতে…তার জন্যইতো…
(তখনই সায়নের ফোনটা বেজে উঠলো)
সায়নঃ হ্যালো…
– আমার দেওয়া কথামতো আমি রিয়াকে নিয়ে চলে যাচ্ছি,আশা করি তুমিও তোমার কথা রাখবে
সায়নঃ ডোন্ট ওয়ারি,পুলিশ এখনও কিছু জানেনা আর জানানোর কোন ইচ্ছেও আমার নেই
– Thank you…thank you so much বাবা
সায়নঃ আপনি বয়স্ক মানুষ তাই এ যাত্রায় আপনার কথাই মেনে নিচ্ছি তবে ভাববেন না একবার ছেড়ে দিয়েছি বলে বারবার একই কাজ করব।নেক্সট টাইম যদি আপনার মেয়ে আমার স্ত্রীর কোন ক্ষতি করার চেষ্টাও করে তাহলে কিন্তু আমি ওকে ছাড়বো না
– তা আর হবে না বাবা,ওকে আটকানোর দ্বায়িত্ব আমার
সায়নঃ আর সেটা কিভাবে করবেন সেটা আপনিই বুঝুন…
(ফোনটা নামিয়ে রাখলো সায়ন)
রাকিবঃ রিয়ার বাবা?
সায়নঃ হুম
রাকিবঃ দেখ সায়ন,আমার না এখনও মনে হচ্ছে তুই ভুল করছিস।এ্যাটলিস্ট একটা পুলিশ কমপ্লেন করা উচিত ছিল
সায়নঃ দেখ সেকেণ্ড চান্স পাওয়ার অধিকার সবারই আছে।আর তাছাড়া বয়স্ক একটা মানুষ এতো করে যখন রিকুয়েষ্ট করছে তখন…
রাকিবঃ কিন্তু তাই বলে…
সায়নঃ দেখ রাকিব,কমপ্লেন করিনি বলে যে কখনোই করব না তাতো না।ওর বিরুদ্ধে সব এভিডেন্স এখনও আমার কাছেই আছে,প্রয়োজন পড়লে…
রাকিবঃ কিন্তু তবুও…
সায়নঃ আরেকটা কথা,ছোঁয়া কিন্তু এসবের কিছুই জানে না,আর কিছু জানুক তাও আমি চাই না
রাকিবঃ কিন্তু কেন?
সায়নঃ দেখ এমনিতেই ও সবে এতো বড় একটা ট্রমা থেকে উঠেছে,এখনও সবকিছু মেনে নিতে পারেনি,মানিয়ে নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।তার উপর যদি এসব জানতে পারে…
রাকিবঃ ঠিক আছে তুই যা চাইছিস তাই হবে কিন্তু তোকে কিন্তু ওর সিকিউরিটির প্রপার অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে হবে
সায়নঃ হুম সেটাই ভাবছি
রাকিবঃ আচ্ছা একটা কথা বলতো,এমন কিছু যে হবে,তুই কি আগে থেকেই জানতি?
সায়নঃ কিছুটা আঁচ করেছিলাম বটে,তবে ঘটনা যে এতো তাড়াতাড়িই ঘটে যাবে ভাবতেও পারিনি
রাকিবঃ ও..তার জন্যই বুঝি ওই জিপিএস ট্র্যাকারটা…
সায়নঃ হুম..ছোঁয়াকে দেওয়া নেকলেসটায় আমিই ওটা সেট করেছিলাম যাতে দরকার পড়লে ওকে ট্র্যাক করতে পারি
রাকিবঃ শালা তোর বুদ্ধি আছে বলতেই হয়
সায়নঃ তবে প্রবলেমটা হচ্ছে,নেক্সট টাইম হয়তো এই ট্রিকটা আর কাজে দেবে না
রাকিবঃ কেন বলতো…
সায়নঃ এতোক্ষণে হয়তো রিয়া ঠিক আৃচ করে ফেলেছে তাই…
রাকিবঃ তাহলে এখন কি করবি?
সায়নঃ নতুন কোন উপায় খুঁজে বের করতে হবে কিন্তু সেটা যে কি সেটাই বুঝতে পারছি না…
চলবে…