Childhood marriage

Childhood marriage 3 !! Part- 32

ছোঁয়াঃ এখন সবাই বলছে আপনার সাথে আমার…এখন হুট করে সবকিছু ভুলে আপনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নেওয়াটা আমার পক্ষে…আসলে বিয়েটাই যখন মনে পড়ছে না তখন…আমি চাই যতদিন না আমি মন থেকে আপনাকে মেনে নিতে পারছি ততদিন…
সায়নঃ এই জন্যই কি তুমি আমার রুমে না গিয়ে এই রুমে…
ছোঁয়াঃ হুম
সায়নঃ Okay তুমি যা চাও তাই হবে,যতদিন না তুমি নিজে থেকে চাইবে কেউ তোমাকে ফোর্স করবে না
ছোঁয়াঃ থ্যাঙ্কস
সায়নঃ আর হ্যাঁ এই চাবিটা রাখো
ছোঁয়াঃ এটা…
সায়নঃ আমাদের বেডরুমের চাবি,তুমি ছিলে না তাই লাস্ট এক বছর তালাবদ্ধ ছিল।আমি ছাড়া কারো পারমিশন নেই ওখানে ঢোকার
ছোঁয়াঃ তাহলে আমাকে কেন…আমি এই চাবি নিয়ে কি করব?
সায়নঃ ওটাতো তোমারও রুম,তাই তোমার যদি কখনও যেতে ইচ্ছে হয় তখন নাহয়…
ছোঁয়াঃ এমন ভাবে বলছেন যেন রুমটা এখনও তালাবদ্ধই থাকবে!
সায়নঃ যদি বলি তাই?

ছোঁয়াঃ (অবাক হয়ে)তাহলে আপনি?আপনি কোথায় থাকবেন?
সায়নঃ এ বাড়িতে কি রুমের অভাব আছে?আমি নাহয় কোন একটা গেস্টরুমে…
ছোঁয়াঃ নিজের রুম ছেড়ে আপনি গেস্টরুমে থাকবেন!কিন্তু কেন?
সায়নঃ কি করব বলো এতদিন ধরে রুমটাতো তোমার জন্যই সাজিয়েছিলাম,তাই তুমি ছাড়া ওখানে একা…
ছোঁয়াঃ দে..দ..দেখুন আপনি কিন্তু আমাকে…
সায়নঃ তোমার গিল্টি ফিল করার কোন কারণ নেই,You should take your time.একটা বছর যখন তোমার জন্য অপেক্ষা করতে পেরেছি আরও কিছুটা সময় নাহয় অপেক্ষা করবো।ফিরেতো তোমাকে আসতেই হবে আমার কাছে,আজ নাহয় কাল…
(সায়ন চলে গেল,ছোঁয়া নির্বাক চোখে কিছুক্ষণ সেদিকেই তাকিয়ে থাকলো তারপর আনমনেই বলে উঠলো..)
ছোঁয়াঃ অদ্ভূত মানুষতো!এমনও মানুষ হয়!আচ্ছা উনি কি সত্যিই সেই সায়ন?সেই রাগী,বদমেজাজি,সবার সাথে রুড বিহেভ করা বাবা-মায়ের অবাধ্য সেই ছেলেটা যাকে আমি ছেলেবেলায় চিনতাম?আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছে না…

(পরদিন)
সূর্যটা ঠিক মাঝ আকাশে,ঘড়ি না দেখেই যে কেউ বলে দিতে পারবে দুপুর হয়ে গেছে।ছোঁয়া নিজের রুমেই আছে,অনেক্ষণ ধরেই হন্যে হয়ে কি জানি খুঁজছে।হঠাৎ দরজায় নক,তারপরই এক গাল হেসে ভেতরে ঢুকলো সায়ন
সায়নঃ এগুলো খুঁজছিলে?
(সায়নের হাতের জামা-কাপড়ের দিকে একবার চোখ পড়তেই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো ছোঁয়া)
ছোঁয়াঃ এ..এগুলো…
সায়নঃ ওভাবে কি দেখছো?এগুলো তোমারই কাপড় ম্যাডাম
ছোঁয়াঃ কিন্তু আমিতো এসব পরি না,আমিতো জিন্স,টপস…
সায়নঃ পরতে বাট বিয়ের আগে,এখন এসবই পরো
ছোঁয়াঃ রিয়েলি!ঠিক আছে তাহলে এগুলোই দিন,আমি শাওয়ার নিব আসলে শরীরটা কেমন ম্যাজম্যাজ করছে মনে হচ্ছে যেন অনেক দিন শাওয়ার নেইনি
সায়নঃ অনেক দিনতো বটেই,এক বছরেরও বেশি (বিড়বিড় করে)
ছোঁয়াঃ কিছু বললেন?
সায়নঃ কই নাতো,শাওয়ার নিবে বলছিলে না?চলো…
(ছোঁয়া কিছু বলার আগেই সায়ন ওকে কোলে তুলে নিল,তারপর সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে ওকে বাথটাবে নামিয়ে দিল)
ছোঁয়াঃ এ..একি,বসে পড়লেন যে!আপনিও কি আমার সঙ্গে…
সায়নঃ (দুষ্টুমির হাসি হেসে)আইডিয়াটা কিন্তু মন্দ না,তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে…
ছোঁয়াঃ (ভয়ে ভয়ে)মা..ম..মানে!
সায়নঃ (মুচকি হেসে)ভয় পেও না,তোমার চুলে শ্যাম্পু করে দিব শুধু আর কিচ্ছু না
ছোঁয়াঃ শ…স..শ্যাম্পু!না না..ও আমি একাই পারবো
সায়নঃ চুপটি করে বসে থাকো নাহলে কিন্তু পুরো গোসলটাই নিজ হাতে করিয়ে দিব
ছোঁয়াঃ (আর কথা না বাড়ানোই ভালো,উনি যা বলছেন তাই করি নাহলে হয়তো সত্যি সত্যিই…উনাকে বিশ্বাস নেই) না না ঠিক আছে,এই আমি চুপ করলাম,করুন আপনার যা ইচ্ছে…
(কিছুক্ষণ পর)
শ্যাম্পু পর্ব শেষ করেই উঠে দাঁড়ালো সায়ন,ছোঁয়া তখনও মাথা নিচু করে চুপটি করে বসে আছে।চলে যেতে নিয়েও আবার ফিরে এলো সায়ন,তারপর হুট করেই ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে গেলো,ওকে এতো কাছে আসতে দেখে ছোঁয়া ভয়েই চোখ বন্ধ করে ফেললো
সায়নঃ (মুচকি হেসে)তুমি মন থেকে মেনে না নেওয়া পর্যন্ত কিছুই করব না ট্রাস্ট মি,আমি বাইরেই আছি কোন কিছু লাগলে জাস্ট একবার আওয়াজ দেবে…
ছোঁয়াঃ হঠাৎ উনার কথাগুলো কানে আসতেই চমকে উঠলাম,পরক্ষণেই লজ্জায় চোখ মুখ লাল হয়ে গেল।ছি!উনার সম্পর্কে কিসব উল্টোপাল্টা ভাবছিলাম!লজ্জায় আর চোখ খুললাম না,উনি চলে যাওয়ার পর খুললাম।দরজাটা ভেতর থেকে লক করা উচিত কিন্তু আমি করলাম না,কি দরকার?উনার যদি কিছু করারই হতো তাহলেতো এতক্ষণে…
সায়ন কিন্তু ওর কথা রেখেছে,ছোঁয়ার উপর কোন কর্তৃত্ত খাটানোর চেষ্টাও করেনি তবে ওর যত্নের ব্যাপারে কিন্তু কোন কম্প্রোমাইজ করেনি।ছোঁয়ার সম্মতি থাক বা না থাক ওর সকল প্র‍য়োজন,সেবা-যত্ন সবকিছুর দ্বায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে,অন্য কাউকে এর মাঝে আসতেই দেয়নি এমনকি ছোঁয়াকেও না।ওকে নিজ হাতে খাইয়ে দেওয়া,টাইমলি ঔষধ খাওয়ানো,সকাল-বিকাল হাত ধরে হাঁটতে নিয়ে যাওয়া,বিছানার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া,মাঝে মাঝে গল্পের বই পড়ে শোনানো সব দ্বায়িত্বই সায়নের।ছোঁয়াও এসবে অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে তাই শুরুর দিকে আপত্তি করলেও এখন আর ওসবের ধারেকাছেও যায় না।

কেটে গেছে আরও দুটি মাস,ছোঁয়া এখন সম্পূর্ণ সুস্থ তবে স্মৃতি ফিরে আসার স্বপ্নটা এখনও অধরায় থেকে গেছে।ছোঁয়া এখনও এই রুমেই আছে আর সায়ন দোতলার একটা গেস্টরুমে,ওদের বেডরুমটা এখনও তালাবদ্ধ।
মাঝে মাঝেই গভীর রাতে কারো গিটারের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় ছোঁয়ার,বাইরে আসতেই চোখে পড়ে রুমটাতে আলো জ্বলছে আর তারসাথে কারো গানের সুর।ছোঁয়া জানে এটা সায়ন ছাড়া আর কেউ না,উনি প্রায়ই এমন করেন,রুমটাতে গিয়ে দরজা বন্ধ করে কিছুক্ষণ গান করেন তারপর আবার সেই নিস্তব্ধ নিরবতা।হঠাৎ একসময় নিরবতা ভেঙ্গে চুপচাপ বেরিয়ে আসেন আর এসেই আবারো তালাবদ্ধ করে দেন।ছোঁয়ার খুব ইচ্ছে করে উনার পাশে বসে গান শুনতে,উনি এতক্ষণ ওখানে কি করেন জানতে কিন্তু অজানা কোন কারণে নিজেকে সামলে নেয়,সায়নের দেয়া চাবিটা হাতে তুলে নেয় আবার ড্রয়ারে রেখে দেয়।
অলমোস্ট দেড় বছর পর ক্যাম্পাসে ফিরেছে ছোঁয়া,সায়নই গতকাল ওকে রেখে গেছে।লোপা আর বৃষ্টির সাথে ওর শেয়ার অ্যাপার্টমেন্ট,এই শহর,ক্যাম্পাস সবকিছুই ওর কাছে একেবারে অচেনা লাগছে।অনেক ভয় আর জড়তা নিয়েই ক্লাসরুমে ঢুকলো ছোঁয়া,ঢুকতেই মনে হলে সবাই অবাক চোখে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে!কারো দিকে না তাকিয়ে ফাঁকা একটা সিট দেখে চুপচাপ বসে পড়লো,কোথা থেকে একটা ছেলে এসে ঝপ করে ওর পাশের সিটেই বসে পড়লো
আকাশঃ হাই!আকাশ,নামতো সুনাহি হোগা?
ছোঁয়াঃ মা..ম..মানে?
আকাশঃ মানে আমি আকাশ,উপরের ওই আকাশ না কিন্তু,আমার নামই আকাশ
ছোঁয়াঃ ওহ
আকাশঃ ওহ কি!কেউ কিছু বললে তার রিভার্স রিয়্যাকশন দেয়া উচিত তাইনা?এটাতো মিনিমাম কার্টেসি,একটা বাচ্চাও জানে
ছোঁয়াঃ মানে!
আকাশঃ মানে,এই ওয়ার্ডটা কি তোমার সিগনেচার টোন?আই মিন তোমাকে যাই বলছি রিপ্লেতে শুধু মানে মানেই করছোতো তাই বলছিলাম আরকি
ছোঁয়াঃ ঠিক বুঝলাম না
আকাশঃ ইয়ার আকাশ,ছেড়ে দে এই মেয়ে এভাবে বুঝবে না,ডিরেক্ট এ্যাকশন নিতে হবে।ওকে ফাইন আবার প্রথম থেকে শুরু করি,হাই!আমার নাম আকাশ তুমি?
ছোঁয়াঃ ওহ হাই আমি তাসনিয়া
আকাশঃ থ্যাঙ্ক গড শেষমেশ বোঝাতে পেরেছি।তোমাকেতো আগে কখনও দেখিনি,ড্রপ আউট নাকি অন্য ব্যাপার?
ছোঁয়াঃ ড্রপ আউট আসলে…

আকাশঃ কেন?পড়াশোনা ভালো লাগে না?
ছোঁয়াঃ না আসলে…
আকাশঃ ঠিক ধরেছিলাম,তা কয়টাতে ফেল মেরেছো?
(ছোঁয়া কিছু বলার আগেই ক্লাসে ঢুকলেন মিস তানিশা ইসলাম ওরফে তানি ম্যাম,ওদের নতুন লেকচারার।ইনাকে ছোঁয়া চেনে,গতকালই সায়ন পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল,উনার নাকি ক্লোজ ফ্রেণ্ড।ক্লাসের সবার মতো আকাশ আর ছোঁয়াও উঠে দাঁড়ালো)
তানিঃ সিট ডাউন,আমি কিন্তু এখন তোমাদের ক্লাস নিতে আসিনি,এসেছি একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে।তাসনিয়া মাহবুব?
(ভয়ে ভয়ে ছোঁয়া উঠে দাঁড়ালো)
তানিঃ তোমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।ওর নাম তাসনিয়া,৪৪ ব্যাচের স্টুডেন্ট ছিল বাট আনফরচুনেটলি একটা অ্যাক্সিডেন্টের জন্য ড্রপ আউট হয়ে গেছে।এখন থেকে ও তোমাদের ব্যাচমেট,আশা করি তোমরা সবাই ওকে তাড়াতাড়ি সবার সাথে মানিয়ে নিতে হেল্প করবে
(ম্যাম চলে যেতেই ক্লাসে একটা মৃদু গুঞ্জন উঠলো,বেশ কয়েকজন ওর দিকে এগিয়ে আসলো পরিচিত হতে)
আকাশঃ সরি
ছোঁয়াঃ কেন?
আকাশঃ ওই যে,না জেনেই উল্টোপাল্টা কথা বললাম,আসলে আমি না এমনই একটু বেশি কথা বলি
জেরিনঃ একটু না অনেক বেশি কথা বলিস তুই।হাই আমি জেরিন আর ও হচ্ছে তিয়াশা
ছোঁয়াঃ আমি তাসনিয়া
তিয়াশাঃ আচ্ছা তোমাকে কি আপু বলে ডাকতে হবে?আসলে তুমিতো আমাদের সিনিয়র ব্যাচের তাই…
ছোঁয়াঃ আরে না না,ওসব বলতে হবে না।এখনতো আমরা ক্লাসমেট তাই তোমরা আমাকে নাম ধরেই ডেকো কেমন?
আকাশঃ চিন্তা করো না,তোমার নোটস বা ক্লাস লেকচারের দরকার হলে এই যে জেরিনকে দেখছো,ও তোমাকে হেল্প করবে
জেরিনঃ আমার হয়ে তুই কেন ওকালতি করছিস?পারলে তুইই দে না…
আকাশঃ তোরাতো জানিসই,আমাকে দিয়ে ওসব পড়াশোনা হয় না তাই…
তিয়াশাঃ ঠিক আছে ঠিক আছে,এসব ছোটো খাটো ব্যাপার নিয়ে আর ভেজাল করিস না,তাসনিয়া তুমি কিছু মনে করো না ওরা আসলে এমনই,সবসময়ই টম এণ্ড জেরির মতো ঝগড়া করে।তোমার যে কোন দরকারে আমাদের বলবে কেমন?
ছোঁয়াঃ ঠিক আছে

তানিঃ হ্যাল্লো জানেমান…
সায়নঃ ফাযলামি রাখ,আগে বল কাজটা ঠিকঠাকমতো করতে পেরেছিসতো?
তানিঃ Everything is done boss
সায়নঃ থ্যাঙ্কস দোস্ত,ওর দিকে একটু খেয়াল রাখিস প্লিজ…
তানিঃ সে আর তোকে বলতে হবে না,আমিতো আছিই আর তোর কথামতো রাকিবকেও ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিব ঠিক আছে?
সায়নঃ হুম ঠিক আছে
তানিঃ আচ্ছা আমার ব্যাপারটা নাহয় বুঝলাম কিন্তু তুই আবার এসবের মধ্যে রাকিবকে টানছিস কেন সেটাইতো বুঝতে পারছি না
সায়নঃ টানছি কি আর সাধে?আমারতো চিন্তা ওই রিয়া মেয়েটাকে নিয়ে,খোঁজ নিয়ে দেখেছি বেশ পাওয়ারফুল আর জেদী।আমাকে কি এতো সহজে ছেড়ে দেবে?ভয়তো একটাই,আমাকে শাস্তি দিতে আবার ছোঁয়ার কোন ক্ষতি করে না বসে (মনে মনে)
তানিঃ কি রে চুপ করে গেলি যে!
সায়নঃ ও কিছু না,তোকে ওসব পরে বলবো এখন রাখছি
চলবে…