Childhood marriage

Childhood marriage 3 !! Part- 17

সিটি হসপিটাল…
ইমার্জেন্সি গেটের সামনে কালো রঙের একটা গাড়ি এসে থামলো,কালো কোট পরা দুজন লোক হাত মুখ আর চোখ বাঁধা অবস্থায় সায়নকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনলো।তারপর খানিক বাদেই ওর সব বাঁধন খুলে দিলো,ছাড়া পেতেই সায়ন অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো লোকগুলোর দিকে আর ওকে ধরে নিয়ে লোকগুলো ততক্ষণে ভয়ে মাথা নিচু করে ফেলেছে
সায়নঃ এসবের মানে কি?You stupid rascals,তোমাদেরতো আমি…এক্ষুণি আমার ফেরত যাওয়ার ব্যবস্থা করো
– সরি স্যার,আমরা তা করতে পারব না,আমাদের অর্ডার দেওয়া হয়েছিল আপনাকে যেভাবেই হোক এখানে নিয়ে আসার
– Order my foot…দেখো ভালোই ভালোই বলছি আমাকে যেতে দাও নাহলে কিন্তু…
(হঠাৎই চুপ হয়ে গেল সায়ন কারণ ওর চোখ পড়েছে হসপিটালের এন্ট্রি গেটের দিকে)
সায়নঃ এ..এটাতো…তোমরা আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছো?সব ঠিক আছেতো?
– না মানে স্যার,বড় স্যার এখানে…কাল উনার একটা হার্ট সার্জারী হয়েছে
সায়নঃ হোয়াট!বাবা ঠিক আছেনতো?এর জন্যই তোমরা আমাকে এভাবে…আমাকে বললেইতো পারতে…
– বললে আপনি আসতেন না কারণ এর আগে বেশ কয়েকবার আপনাকে বাসায় আনার জন্য বড় স্যার নিজের অসুস্থতার মিথ্যা নাটক করে ধরা পড়েছেন তাই…
সায়নঃ যাই হোক বাবা এখন কোথায়?
– ভি আই পি ওয়ার্ড,রুম নাম্বার ৩০২

মহসিন সাহেবের জ্ঞান ফিরেছে ভোরের দিকে কিন্তু ঔষধের প্রভাবে এখনও ঘুমাচ্ছেন।মিসেস আসমা চৌধুরী বেডের পাশেই একটা চেয়ারে বসে আছেন,সায়ন ঘরে ঢুকেই মায়ের দিকে ছুটে গেল
মাঃ একি খোকা,তুই এখানে?
সায়নঃ আগে বলো বাবা কেমন আছে আর তোমরা কেউ আমাকে কিছু জানাওনি কেন?একবার খবরতো দিতে পারতে
মাঃ চেষ্টাতো করেছিলাম কিন্তু তুই কি আমাদের কারো ফোন রিসিভ করিস?
সায়নঃ যাই হোক বাবা এখন কেমন আছেন বলো,ডক্টর কি বলেছেন?
মাঃ এখন ভালোই আছেন তবে অবস্থা খুব বেশি ভালো না,বেশি স্ট্রেস নিতে নিষেধ করেছেন,এতে হিতে বিপরীত হতে পারে
সায়নঃ থ্যাঙ্ক গড,আমিতো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম
মাঃ যাই হোক,তোর আর এখানে থেকে কাজ নেই,বরং বাসায়…
সায়নঃ তোমরা এখানে,বাবার এই অবস্থা আর আমি বাড়ি যাবো!
মাঃ হ্যাঁ যাবে কারণ ওখানে তোমার জন্য এর চেয়েও ইম্পর্টেন্ট একটা কাজ আছে
সায়নঃ কিন্তু মা…
মাঃ শাহেদ…শাহেদ…
(কালো কোট পরা লোকগুলোর একজন ছুটে আসলো)
– ইয়েস ম্যাডাম?
মাঃ সায়নকে বাসায় নিয়ে যাও
– জ্বি ম্যাডাম
মাঃ আর হ্যাঁ তোমাকে যা যা বলেছিলাম তার যেন কোন নড়চড় না হয়,মনে থাকবেতো?
– জ্বি ম্যাডাম,স্যার প্লিজ…
সায়নঃ কিন্তু আমি কেন?
মাঃ বাসায় গেলেই সব বুঝতে পারবে।কোনকিছু বুঝতে না পারলে আমার জন্য অপেক্ষা করো,আমি পরে তোমার সাথে ওসব ব্যাপারে কথা বলব
সায়নঃ হ্যাঁ কিন্তু…
মাঃ আর কোন কিন্তু না,শাহেদ…
– স্যার প্লিজ,আর কথা না বাড়িয়ে আমাদের সাথে চলুন নাহলে কিন্তু আমরা আবারও জোর করতে বাধ্য হবো
সায়নঃ তা আর লাগবে না,আমি একাই যাচ্ছি।দেখি কি এমন ইম্পর্টেন্ট কাজ বাঁকি আছে যার জন্য আমাকে এভাবে…

চৌধুরী ম্যানসন…
ড্র‍য়িংরুমে পা রাখতেই সায়ন দেখলো কোট টাই পরা একজন বসে আছে,ভালো করে একটু খেয়াল করতেই মানুষটাকে চিনে ফেললো।
সায়নঃ আরে,উকিল চাচা আপনি?বাবাকে দেখতে এসেছেন বুঝি?কিন্তু উনিতো এখনও হসপিটালে…
উকিলঃ জানি,আমি আসলে তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম
সায়নঃ আমার জন্য!কিন্তু কেন?
উকিলঃ এই যে এটার জন্য
সায়নঃ কি এটা
(কালো রঙের ফাইলটা খুলতে খুলতেই রহমান সাহেব উত্তর দিলেন)
উকিলঃ উইল,কিছুদিন আগেই মহসিন আমাকে এটা রেডি করতে বলেছিল
সায়নঃ উইল!বাবা কি তবে আগেই…কি আছে ওটাতে?
উকিলঃ নাও তুমি নিজেই পড়ে দেখো
সায়নঃ না না চাচা পড়তে হবে না,আপনিতো জানেনই ওটাতে কি লেখা আছে।আপনিই নাহয় বলে দিন
উকিলঃ বেশ,তবে তাই বলছি।তোমার বাবার অবর্তমানে তার সমস্ত সম্পত্তির মালিক হবে তোমরা দুজন,তুমি আর তোমার স্ত্রী ছোঁয়া।ছোঁয়া মাকে আমি আগেই সব বুঝিয়ে দিয়েছি,তুমি ছিলে না তাই…
সায়নঃ (চমকে উঠে)ছোঁয়া!আপনার নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হচ্ছে চাচা,আমিতো এখনও বিয়েই করিনি তাহলে…
উকিলঃ আমি জানতাম তুমি এ কথায় বলবে,তোমরাতো তখন অনেক ছোট তাই না জানাটা অস্বাভাবিক কিছু না বাট এটাই সত্যি
সায়নঃ আমি বিয়ে করেছি আর আমিই জানি না!কেমনে সম্ভব?
উকিলঃ হ্যাঁ তোমরা জানো না কারণ তোমাদের কিছু জানতে দেয়া হয়নি
সায়নঃ মানে?
উকিলঃ আসলে তোমরা তখন নাবালক ছিলে তাই গতানুগতিক ধারায় বিয়েটা হয়নি।তবে অভিভাবকদের সম্মতিতে আইনগতভাবেই সবকিছু হয়েছে আর তোমাদের ম্যারেজ এগ্রিমেন্টটাও আমিই তৈরী করেছিলাম
সায়নঃ ম্যারেজ এগ্রিমেন্ট?
উকিলঃ আসলে এই টাইপের বিয়ে আইনত বৈধ হলেও ধর্মমতেতো সম্ভব হয়নি কারণ ওই বয়সে তোমরাতো বিয়ে জিনিসটাই বুঝতে না তাই এই এগ্রিমেন্ট
সায়নঃ কি আছে ওটাতে?

উকিলঃ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়েটা সম্পন্ন করতে হবে
সায়নঃ অসম্ভব এটা কিছুতেই সম্ভব নয়
উকিলঃ ছোঁয়ার বয়স এখন ১৮ পেরিয়ে ১৯ এ পা দিয়েছে,তোমারও ২১ হয়েছে কয়েকমাস আগে তাই তুমি মানো বা না মানো লিগালি তোমরা এখন হাজবেণ্ড-ওয়াইফ।এখন শুধু ধর্মমতে বিয়েটা হয়ে গেলেই…
সায়নঃ This is totally crazy.বললেই হলো,আমি এসব বিয়ে টিয়ে করতে পারবো না
উকিলঃ তাহলে আর কি,উইলের শর্ত অনুযায়ী সবকিছু ট্রাস্টের নামে চলে যাবে
সায়নঃ হোয়াট!বাবার কি মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?এসবের কোন মানে হয়…
উকিলঃ সেসব আমি জানিনা কিন্তু শর্ত অনুযায়ী দুদিনের মধ্যে যদি বিয়েটা না হয় তাহলে কিন্তু…
সায়নঃ কিহ দুদিন!I can’t believe this.He has gone completely insane…
উকিলঃ সে তুমি যা ইচ্ছে ভাবতে পারো তবে বিয়েটা যদি না হয় তাহলে সত্যি সত্যিই কিন্তু সবকিছু ট্রাস্টের নামে চলে যাবে
সায়নঃ সে যেখানে যায় যাক,আমার কিছু যায় আসে না।কি ভেবেছে বাবা?সম্পত্তির লোভে উনি যা বলবেন,আমি তাই করব!কক্ষণও না,সম্পত্তির লোভ না আমার কোনদিন ছিল আর না কোনদিন হবে
উকিলঃ আরে সায়ন বাবা,কোথায় যাচ্ছো?আমার কথাতো এখনও শেষ হয়নি
সায়নঃ আর কিছু শোনার দরকার নেই আমার,আর এক মুহূর্তও এখানে থাকবো না,এক্ষুণি ফিরে যাবো
(সোজা মেইন গেটের দিকে এগিয়ে গেল সায়ন কিন্তু রাস্তা আটকে দাঁড়ালো বাবার বডিগার্ড বাহিনী)
সায়নঃ Move..get away from my way
– সরি স্যার,আপনার বাড়ি থেকে বেরোনো নিষেধ আছে
সায়নঃ হোয়াট!কে নিষেধ করেছে শুনি?
– ম্যাডাম
সায়নঃ কিহ মা!
– জ্বি,উনি এটাও বলে দিয়েছেন সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে…
সায়নঃ তোমরা সবাই পাগল হয়ে গেছো,এখন আমার রাস্তা ছাড়ো নাহলে কিন্তু…
– (মুচকি হেসে)Sorry for the action sir,guys take strike now…
(শাহেদের বলার সাথে সাথে দুজন সায়নকে জোর করে ধরে ভেতরের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো)
সায়নঃ হোয়াট দ্য…এসবের মানে কি?খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু..ছাড়ো বলছি…I said leave me right now…
(সায়নের কোন কথা কানে না তুলে ওকে দোতলায় নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে তালাবদ্ধ করে দেয়া হলো)
সায়নঃ দরজা খোল বলছি নাহলে কিন্তু আমি কাউকে ছেড়ে দিব না
– সরি স্যার,এখন থেকে আপনাকে এই ঘরেই থাকতে হবে,ঘরের বাইরে এক পাও রাখতে পারবেন না
সায়নঃ মানে কি!আমার ঘরে আমাকেই বন্দী করে রাখা!বলি এটা কি মগের মুল্লুক নাকি?
– সে আপনি যা ইচ্ছে হয় ভাবতে পারেন,আমরা জাস্ট অর্ডার ফলো করছি,আমাদের হাতে কিছুই নেই…
সায়নঃ যাও যাও,তোমাদের কিছুই করতে হবে না,যা করার আমিই করব।কি ভেবেছো এভাবে আমাকে আটকে রাখা যাবে?কক্ষণও না,আমিতো এখান থেকে বের হবোই,এই বিয়ে আমি কিছুতেই করব না…

সন্ধ্যা পেরিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে,বাইরে অন্ধকার আস্তে আস্তে গাঢ়ো হচ্ছে।সায়ন এখনও নিজের রুমে ননস্টপ পায়চারি করে যাচ্ছে
সায়নঃ এদিকে আমি ঘরবন্দী হয়ে আছি আর ওদিকে তাসনিয়া হয়তো…আরে,ওর কথাতো ভুলেই গিয়েছিলাম!সকালের পর থেকে ওর সাথে আর কোন কনট্যাক্টই হয়নি,মেয়েটা হয়তো আমার জন্য ওয়েট করে করে…
ঝটপট ফোনটা হাতে নিলো সায়ন আর তখনই স্ক্রিনের উপর জ্বলজ্বল করে উঠলো একটা নাম,তাসনিয়া।ঝটপট মেসেজটা ওপেন করলো সায়ন…
“সরি,সামনাসামনি আপনাকে আমার ডিসিশনটা জানাতে পারলাম না।আপনার প্রস্তাব মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়,চলার পথে আমাদের অনেকের সাথেই পরিচয় হয়,পথ শেষে আবার সব ভুলেও যাই,আপনার আর আমার পরিচয়টাও হয়তো তাই।মি.নোবেলম্যান আর মিস ড্রামা কুইনের পথচলা এখানেই শেষ,সায়ন আর তাসনিয়া হয়ে এই পথে একসাথে এগিয়ে যাওয়া আর সম্ভব নয়,এখান থেকেই আমাদের রাস্তা আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
ভালো থাকবেন আর আশা করি শর্ত অনুযায়ী এই সাত দিনের কথা একেবারে ভুলে যাবেন আর আমাকেও আর কক্ষনও এই বিষয়ে বিরক্ত করবেন না…”
সায়নঃ মেসেজটা পড়েই ধপ করে বসে পড়লাম,নিশ্চয়ই ওখুব রেগে আছে আর তাই রাগের মাথায় এই রকম একটা মেসেজ…নাহ এক্ষুনি ওকে একবার সরি বলতে হবে।ঝটপট ওর নাম্বারে ডায়াল করলাম কিন্তু একি,নাম্বার আনরিচেবল!এখন কি করব?কি করে ওর সাথে কনট্যাক্ট করব?

সবে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে,মাঝে মাঝেই দুই একটা ভোরের পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে,বাড়ি ভর্তি লোকের বেশিরভাগই এখনও ঘুমাচ্ছে।ট্রাভেল ব্যাগটা কাঁধে চাপিয়ে জানালার দিকে এগিয়ে গেলো সায়ন,গ্লাস সরিয়ে একটা রশি নামিয়ে দিল।
সায়নঃ ব্যাস,এবার এটা ধরে একবার নেমে পড়তে পারলেই হলো,তারপর আর আমাকে পায় কে…
ট্রাভেল ব্যাগটা দড়ির সাথে বেঁধে নিচে নামিয়ে দিল সায়ন,সবে দড়িটা ধরে নামতে যাবে তখনই দরজাটা খুলে গেল…
চলবে…