Childhood marriage 3 !! Part- 18
সারা রাত হসপিটালেই ছিলেন মিসেস আসমা চৌধুরী,ভোরে ফজরের নামাজ আগে করেই বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছেন।সায়ন সম্পর্কে সব তথ্যই তিনি জানতে পেরেছেন সিকিউরিটি টিমের হেড শাহেদের কাছ থেকে।সায়নের মা তিনি তাই খুব ভালো করেই জানেন ছেলেকে এভাবে আটকে রাখা যাবে না তাই সকাল হওয়ার আগেই ছুটে এসেছেন।
সায়নের ঘরের দরজা খুলতেই চমকে উঠলেন মিসেস চৌধুরী,সায়ন তখন জানালা দিয়ে নিচে নামবার প্ল্যানিং করতে ব্যস্ত
মাঃ এসব কি হচ্ছে?খোকা!তুই এসব…
সায়নঃ কি হচ্ছে তাতো দেখতেই পাচ্ছো,আমি এই বিয়েটা করতে পারব না তাই পালিয়ে যাচ্ছি
মাঃ পারবি না মানে!সবকিছু অ্যারেঞ্জ হয়ে গেছে,ইনভাইটেশন কার্ড পর্যন্ত বিলি করা শেষ আর তুই এখন বলছিস বিয়ে করতে পারবি না!
সায়নঃ তো আর কি করব?আমি কি বলেছিলাম আমাকে কোন কিছু না জানিয়েই এতকিছু করতে?
মাঃ এমন কাজ করিস না খোকা,সিচুয়েশনটা একটু বোঝার চেষ্টা কর।কত গণ্যমান্য লোকজনকে ইনভাইট করা হয়েছে,এখন তুই যদি বিয়েটা না করিস তাহলে পুরো বিজনেস কমিউনিটির সামনে…
সায়নঃ মা প্লিজ,তুমি আর উল্টো পাল্টা বুঝিয়ে আমার ব্রেইন ওয়াশ করার চেষ্টা করো না।আমি আমার ডিসিশন নিয়ে নিয়ে নিয়েছি
মাঃ তো আর কি করব?ছেলে যদি অবুঝের মতো একটা কাজ করে তো মাকেইতো সব সামলাতে হবে।তুই একটু বোঝার চেষ্টাতো কর…
সায়নঃ কি বুঝবো?এতে আর বোঝার কি আছে?তোমরা যা করেছো আর এখন যা করছো সেগুলো কি ঠিক করছো?
মাঃ আমি মানছি আমরা কাজটা ঠিক করিনি কিন্তু যা করেছি সবই তোদের ভালোর জন্য আর বিশ্বাস কর এটাই সবার জন্য ভালো
সায়নঃ আর আমার ভালোটা?সেটা তোমরা একবারও ভাববে না!
মাঃ ভাবছি বলেই বলছি সবকিছু মেনে নে
সায়নঃ ইম্পসিবল,তোমাদের ভুল ডিসিশনের জন্য আমি আমার লাইফটা শেষ করতে পারবো না।আমি যাচ্ছি…
মাঃ সায়ন…বাবা যাস না,আমার কথাটা একবার শোন…সায়ন…তুই যদি আর এক পাও বাড়াস তাহলে আমি জানবো আমি একটা অকৃতজ্ঞ ছেলেকে জন্ম দিয়েছি
সায়নঃ মা!তুমি এমন একটা কথা বলতে পারলে!
মাঃ হ্যাঁ পারলাম কারণ তুই আমাকে বলতে বাধ্য করছিস।তোর বাবা হসপিটালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে,অপারেশনটা আপাতত সাকসেসফুল হলেও ডক্টর সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে বেশি স্ট্রেস নিলে যেকোন সময় সিরিয়াস কিছু হয়ে যেতে পারে
সায়নঃ কিহ!আমাকেতো তুমি এসব…
মাঃ নিজের অজান্তেই ছোঁয়া আমাদের পুত্রবধূতো হতে পেরেছে কিন্তু তোর বউ হতে পারেনি।উনি চান মরার আগে ছোঁয়াকে তোর বউরূপে দেখে যেতে
সায়নঃ কিন্তু মা…
মাঃ তুই বিয়েতে রাজি না হলে উনি এই ধাক্কাটা সহ্য করতে পারবেন না আর আমি এটা কিছুতেই হতে দিতে পারিনা।বিয়েতো তোমাকে করতেই হবে আর তার জন্য যা করতে হয় আমি করবো।দরকার হলে হাত-পা বেঁধে হলেও…
সায়নঃ মা!
মাঃ ছোট থেকে আজ পর্যন্ত তোর কাছে আমি কিছুই চাইনি কিন্তু আজ চাইছি,মা হিসেবে তোর কাছে আমার এই একটাই দাবি,আর কক্ষণও কোন কিছু চাইবো না।এখন তুমিই ভেবে দেখো কি করবে,আমার আর কিছুই বলার নেই…
সায়নঃ ভাবাভাবির কি কোন অপশন তোমরা আমার জন্য খোলা রেখেছো?আমিতো ভাবতেই পারছি না তোমরা আমার সাথে এসব…(মনে মনে)
মাঃ আমি আসছি,ভাববার জন্য তোমার কাছে শুধু আজকের দিনটা আছে।আশা করি যা ডিসিশন নেবে ভেবেচিন্তেই নেবে
সায়নঃ মা আরেকটা কথা…
মাঃ কি?
সায়নঃ ছোঁয়া কি এসব আগে থেকেই জানতো?
মাঃ আগে থেকে কিভাবে জানবে?ওতো তখন তোর থেকেও অনেক ছোট।তোরই মতো ওকেও কালকেই সবকিছু জানানো হয়েছে
সায়নঃ সব শুনে ওর রিয়্যাকশনটা কি?আই মিন ওর কোন পিছুটান নেইতো?
মাঃ আমি জানিনা ওর কোন পিছুটান আছে কিনা কিন্তু এটা জানি আমাদের খুশির জন্য ও সবকিছু করতে পারে
সায়নঃ কিন্তু তাই বলে তোমরা ওকে একবার জিজ্ঞেস করবে না ও এই বিয়েতে রাজি আছে কিনা!
মাঃ করেছিতো,ওর জবাবটা জানতে চাস?
সায়নঃ কি বলেছে ও?
মাঃ বলেছে আমাদের ইচ্ছেই ওর ইচ্ছে,আমারা যা ভালো মনে করব ও তাতেই রাজি শুধু সময়টা জানিয়ে দিলেই হবে
সায়নঃ হোয়াট রাবিশ!চেনা নেই জানা নেই,আমাকে একবার দেখেনি পর্যন্ত,এমন বোকামি কেউ করে!
মাঃ সে তুই যা ইচ্ছে ভাবতে পারিস কিন্তু ছোঁয়া এমনই,আজ পর্যন্ত আমাদের কোন সিদ্ধান্তে ও আপত্তি করেনি আএ ভবিষ্যতেও করবে না
সায়নঃ কিন্তু তাই বলে…
মাঃ আর হ্যাঁ এখন থেকে তোমার ঘরের দরজা খোলায় থাকবে,এর পরেও যদি তুমি চলে যেতে চাও তাহলে জানালা দিয়ে নয় সদর দরজা দিয়েই যেও,কেউ তোমাকে আটকাবে না…
পুরো বাড়ি মেহমানে ভর্তি,ইণ্ডাষ্ট্রিয়ালিস্ট মহসিন চৌধুরীর একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা জাকজমকতো একটু হবেই।মহসিন সাহেবের অবস্থা আগের থেকে একটু ভালো তাই কিছুক্ষণ আগেই উনাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে যদিও সাথে একজন নার্সও এসেছে সারাক্ষণ উনার খেয়াল রাখার জন্য।আপাতত উনি নিজের রুমেই আছেন,কমপ্লিট বেডরেস্টে।
নাহ সায়ন পারেনি মায়ের বাঁধা উপেক্ষা করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে,নিজের ইচ্ছেকে জলাঞ্জলি দিয়ে বাবা মায়ের মুখ রাখতে চুপচাপ বর সেজে আসরে বসে আছে।
কাজী সাহেব বিয়ে পড়াচ্ছেন,ছোঁয়ার সম্মতি নেওয়া শেষে এখন সায়নের রুমে এসেছেন।
– কাজী সাহেব,পাত্রীর সম্মতিতো পেয়েই গেছেন তাহলে এখন আর দেরি কেন শুরু করুন…
কাজীঃ হ্যাঁ হ্যাঁ করছি,চন্দ্রবাটী নিবাসী মৃত আশরাফুল আলম সিদ্দিকীর…
সায়নঃ কবুল…
কাজীঃ (অবাক হয়ে)জ্বি জনাব?আমিতো এখনও…
সায়নঃ লাগবে না
কাজীঃ মানে?ঠিক বুঝলাম না…
সায়নঃ মানে পাত্রীর নাম,ঠিকানা সবই আমি জানি,সবকিছু জেনে শুনেই বিয়ের আসরে বসেছি।তাই ঘটা করে এসব ঘোষণা করে সময় নষ্ট করার কোন দরকার নেই,আপনি বরং সরাসরি ক্লাইম্যাক্সে আসুন
কাজীঃ কিন্তু…
সায়নঃ কোন কিন্তু নেই,যা বলছি চুপচাপ তাই করেন।এমনিতেও এই ঝামেলা যত তাড়াতাড়ি শেষ হবে আমার জন্য ততই ভালো।নিন আর সময় নষ্ট করবেন না,সোজা পয়েন্টে আসুন
কাজীঃ ঠিক আছে,তাহলে তাই হোক।আপনি যদি এই বিয়েতে সম্মত থাকেন তাহলে বলুন কবুল…
সায়নঃ কবুল…কবুল…কবুল…
কাজীঃ আলহামদুলিল্লাহ,বিবাহ সম্পন্ন হলো।আসুন আমরা সবাই নব দম্পতির সুখী জীবনের জন্য মোনাজাত করি…
মারুফঃ হ্যালো…হ্যাঁ বলো
লোপাঃ বলো মানে!এই যে মি. সেই যে গেলেন তারপর থেকে আর কোন খোঁজ খবর নেই!বলি আপনার যে একটা গার্লফ্রেন্ড আছে সেই খেয়াল আছে?
মারুফঃ কি করব বলো,ছোট খালা সবসময় সায়নকে চোখে চোখে রাখতে বলেছিল আর তুমিতো জানো সায়ন কেমন ঘাড়ত্যাড়া…
লোপাঃ বিয়েটা তাহলে হয়েই গেল?
সায়নঃ হুম হলো কোন রকমে
লোপাঃ বউটাকে দেখেছো?কেমন হয়েছে?আমাদের তাসনিয়ার থেকেও কি সুন্দর?
মারুফঃ উহু দেখিনি এখনও,সায়নকে সামলাতেইতো হিমশিম খেয়ে গেছি ওসবেরার সময় কই?
লোপাঃ আমার না সায়ন ভাইয়ের জন্য খুব খারাপ লাগছে,উনি কিন্তু সত্যি সত্যিই তাসনিয়াকে…
মারুফঃ তবে একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে,শুরু হওয়ার আগেই এসব কিছু…
লোপাঃ তা যা বলেছো,যদি ওরা সত্যি সত্যিই রিলেশনশিপে জড়িয়ে পড়তো তাহলে কিন্তু ব্যপারটা আরও বেশি খারাপ হয়ে যেতো
মারুফঃ বাই দ্য ওয়ে,তাসনিয়ার কি খবর?ও ঠিক আছেতো?
লোপাঃ কি জানি,ওর বাবা অসুস্থ বলে সেদিন যে বাড়ি গেল তারপর থেকেতো ওর সাথে কোন যোগাযোগই হচ্ছে না।না নিজে কোন কনট্যাক্ট করছে,না আমাদের কারো ফোন রিসিভ করছে
মারুফঃ তারমানেতো ও সায়নের বিয়ের ব্যপারটাও জানে না
লোপাঃ হুম।আচ্ছা বাদ দাও ওদের কথা,আমার না তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।একবার ভিডিও কল দেবে প্লিজ?
মারুফঃ এখন?ইম্পসিবল
লোপাঃ প্লিজ প্লিজ প্লিজ…
মারুফঃ আচ্ছা ঠিক আছে দিচ্ছি কিন্তু এখনতো রাত তুমিতো ঠিকমতো দেখতে পাবে না
লোপাঃ সে আমি বুঝবো
মারুফঃ বাড়ি ভর্তি লোক তাই বাগানের দিকে গিয়েছিলাম,লোপার জন্য সদর দরজার সামনে চলে গেলাম,ওখানে বেশ কয়েকটা লাইট জ্বলছে তাই।লোপার নাম্বার ডায়াল করলাম,হ্যালো ডিয়ার…এবার খুশিতো?
লোপাঃ এ..এ আমি কি দেখছি?এই গেটটাতো..আর তার পাশের ফোয়ারাটা… আচ্ছা আমার কোন ভুল হচ্ছে নাতো?(মনে মনে)
মারুফঃ হ্যালো…এই যে ম্যাডাম,কি এতো ভাবছো বলতো…
লোপাঃ এ..এই তুমি কোথায় বলোতো?
মারুফঃ কোথায় আবার?সায়নদের বাড়ির সদর দরজার সামনে
লোপাঃ তবে কি আমার ধারণায় ঠিক?ব্যপারটাতো দেখতে হচ্ছে…(মনে মনে)
মারুফঃ এই যে…আবার কোথায় হারিয়ে গেলে?
লোপাঃ আচ্ছা শোন,তুমি আমাকে বাড়িটার পুরো ভিউটা দেখাতে পারবে?
মারুফঃ হ্যাঁ তাতো পারবোই কালইতো কয়েকটা ছবি তুললাম।কিন্তু কেন বলতো?কোন সমস্যা?
লোপাঃ বলছি তবে তার আগে আমাকে ছবিটা পাঠাও কুইক…
মারুফঃ মেয়েটা কি করতে চাইছে কিছুইতো বুঝছি না,যাই হোক দিতে যখন বলছি দিয়েই দেখি কি হয়।পুরো ভিউ আসে এমন দেখে একটা ছবি পাঠিয়ে দিলাম লোপাকে
লোপাঃ মারুফের পাঠানো ছবিটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।এটা কিভাবে সম্ভব?স্ক্রিনে মারুফের নামটা ভেসে উঠতেই রিসিভ করলাম।শোন অবিশ্বাস্য একটা কাণ্ড ঘটে গেছে,আমিতো নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছি না!এটা কিভাবে সম্ভব?
মারুফঃ আরে কি হয়েছে সেটাতো আগে বলবে…
লোপাঃ এ এই বাড়িটা আমি চিনি,তাসনিয়ার সাথে বেশ কয়েকবার গেছি ওখানে…
মারুফঃ হোয়াট!ইম্পসিবল,তোমার নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হচ্ছে,তুমি এখানে কিভাবে…
লোপাঃ আমার কোন ভুল হচ্ছে না,এই বাড়ি ওই ফোয়ারা আমার খুব ভালো করে মনে আছে।বাড়িটার দক্ষিণ দিকে একটা বড় পুকুর আছে তার পাশেই একটা দোলনা।ওখানে দুটো কদম গাছ আছে আর গাছটার গায়ে ছুরি দিয়ে কেটে আমার,তাসনিয়ার আর বৃষ্টির নাম লিখে রেখেছিলাম,ওটা এখনও অমনই থাকার কথা।তোমার বিশ্বাস না হলে মিলিয়ে দেখো…
মারুফঃ এক মিনিট,কি আশ্চর্য সবটাইতো মিলে যাচ্ছে!কদম গাছটার সামনে যেতেই চমকে উঠলাম,তাহলে কি…
লোপাঃ আমি বলছিতো আমি ওখানে গেছি,কিন্তু যদি তাই হয় তাহলেতো…কি হলো কিছুতো বলো…
মারুফঃ আচ্ছা লোপা,তাসনিয়ার কি অন্য কোন নাম আছে?
লোপাঃ ছোঁয়া কিন্তু ওই নামেতো ওকে শুধু বাড়ির লোকেরাই ডাকে
মারুফঃ থাক আর কিছু বলতে হবে না,যা বোঝার বুঝে গেছি এখন শুধু মিলিয়ে নেওয়ার পালা
লোপাঃ আরে কি বুঝলে আমাকেতো বলো,আমিতো পুরাই কনফিউজড
মারুফঃ একটু ওয়েট করো,আমি কনফার্ম হলেই তোমাকে সব জানাচ্ছি।জাস্ট ওয়েট ওকে…
লোপাঃ আরে আরে শুনুন…এই যা ফোনটাই কেটে দিলো!ধুর,আর ভাল্লাগে না…
মারুফঃ সোজা ছোট খালার রুমে চলে আসলাম,ড্র্যার খুলতেই যা খুঁজছিলাম পেয়েও গেলাম।সায়নদের ফ্যামিলি এ্যালবাম,খালা খালু ওয়ালে মানুষের ছবি টানানো পছন্দ করেন না তাই পুরো বাড়িতে ওদের কারো কোন ছবি নেই,যা আছে সব এই এ্যালবামে।কয়েক পাতা উল্টাতেই চমকে উঠলাম,এটাতো তাসনিয়া!সায়ন চলে যাওয়ার পর এই সাত বছরে আমিও এ বাড়িতে পা দেইনি তাই হয়তো তাসনিয়াকে চিনতে পারিনি।হঠাৎ সায়নের বিয়ের কার্ডটা চোখে পড়তেই খুলে ফেললাম,বরঃ মাহবুব হাসান সায়ন;কনেঃ তাসনিয়া আশরাফ ছোঁয়া!
চলবে…
#নোটঃ ব্যাস,তাসনিয়া আর ছোঁয়ার প্যাঁচটা শেষমেশ কাটতে পারলাম তাহলে।এখন এই সায়ন গাধাটা কবে জানবে সেটাই দেখার বিষয়।কেমন লাগছে জানাতে ভুলবেন না…