Childhood marriage

Childhood marriage 3 !! Part- 15

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে,তাসনিয়া সেই যে ঘুমিয়েছে এখনও ঘুম ভাঙ্গেনি,ঘুম ভাঙলো দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে।হ্যাঁ সায়নই নক করছে,আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসলো তাসনিয়া,ঘুম ঘুম চোখে দরজার দিকে এগিয়ে গেল
তাসনিয়াঃ হ্যাঁ আসছি
সায়নঃ দরজা খুলতে হবে না,সন্ধ্যা প্রায় হয়েই এসেছে তুমি বরং একেবারে রেডি হয়ে নিচে এসো
তাসনিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে আসছি
সায়নঃ আর শোন
তাসনিয়াঃ জ্বি?
সায়নঃ চেয়ারের উপর শপিং ব্যাগে একটা ড্রেস রাখা আছে,ওটা একটু ট্রাই করে দেখবে?It’s a request যদি তোমার কোন অসুবিধা না থাকে…
(সায়ন চলে গেল,তাসনিয়া শপিং ব্যাগটা হাতে নিয়েই ওয়াশরুমে ঢুকলো)

স্বচ্ছ সাদা আর গাঢ় নীলের কম্বিনেশন,ড্রেসটা যেন ওর জন্যই তৈরি।বিস্ময়ে হতবাক সায়নের সামনে দিয়ে যখন তাসনিয়া সিঁড়ি ভেঙ্গে নেমে আসলো,কিছুক্ষণের জন্য সায়নের কাছে মনে হলো সময়টা যেন ওখানেই থেমে গেছে,সম্বিৎ ফিরলো তাসনিয়ার কণ্ঠে
তাসনিয়াঃ হ্যালো…এই যে…শুনতে পাচ্ছেন?
সায়নঃ (চমকে উঠে)ও হ্যাঁ কি যেন বলছিলে?
তাসনিয়াঃ বলছি আমরা কখন রওনা দিব?সন্ধ্যেতো হয়েই গেছে,আর কতক্ষণ?
সায়নঃ বেশি না আর ঘণ্টা খানেক,কিন্তু তার আগে…আমার সঙ্গে এসো…
সায়নের কথা মতোই তাসনিয়া ওর পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করলো,গন্তব্যে পৌঁছতেই অবাক হয়ে গেল।দিঘীর ধার ঘেঁষে থাকা ফুল বাগানটার ঠিক একপাশে একটা টেবিল আর দুটো চেয়ার আর মাঝখানে সুগন্ধি ক্যাণ্ডেল মিটিমিটি জ্বলছে,বাগানের ফুল গাছগুলোকে রঙ বেরঙের লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে,সেগুলো বিভিন্ন প্যাটার্নে জ্বলছে আর নিভছে,সব মিলিয়ে স্বপ্নালু এক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।
তাসনিয়ার অবাক দৃষ্টির ঘোর কাটলো সায়ন,চেয়ার টেনে ওকে বসতে ইশারা করলো।তাসনিয়া বসে পড়তেই সায়ন ইশারায় কাকে যেন ডাকলো,প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সকালের সেই লোকটা ডিনার নিয়ে এসে হাজির।
তাসনিয়াঃ এ..সব আপনি!
সায়নঃ তাছাড়া আর কে করবে?আপনিতো ঘুমে বেহুঁশ তাই বাধ্য হয়ে এই অধমকেই…
তাসনিয়াঃ আ..আসলে আমি…
সায়নঃ It’s okay,this servant is always at your service mam…
(কিছুক্ষণ পর)
তাসনিয়াঃ চলুন উঠা যাক
সায়নঃ কেন?
তাসনিয়াঃ কেন মানে!খাওয়া দাওয়াতো শেষ,রওনা দিতে হবে না?
সায়নঃ হ্যাঁ তাতো হবেই বাট তার আগে একটা কাজ বাঁকি আছে
তাসনিয়াঃ আবার কি?
সায়নঃ ওয়েট…মিউজিক সিস্টেমটা অন করে দিলাম,রোমান্টিক একটা সঙ বেজে উঠলো,শেন ওয়ার্ডসের নো প্রমিসেস,আমার খুব ফেভারিট একটা গান তাই প্লে লিস্টে এটাই রেখেছিলাম
তাসনিয়াঃ শেন ওয়ার্ডসের এই গানটা আমারও অনেক পছন্দ কিন্তু এই মুহূর্তে ওটা আর ভালো লাগছে না কারণ উনি ঠিক কি করতে চাইছেন আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি
সায়নঃ তাসনিয়ার সামনে গিয়ে ওর দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।May I?
তাসনিয়াঃ সরি,এমন রোমাণ্টিক কোন সঙে একসাথে ডান্স করার মতো ক্লোজ আমরা এখনও হইনি
সায়নঃ ওর কথাটা বুকে যেন কাঁটার মতো বিঁধলো,অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম,মিউজিক প্লেয়ার অফ করে দিলাম।ইটস ওকে,আমারই ভুল,এতো তাড়াতাড়ি এসব…এনি ওয়ে অনেস্টলি এনসার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ,এখন চলো যাওয়া যাক
ওরা যখন তাসনিয়ার বাসার সামনে পৌঁছলো,তখন রাত প্রায় গভীর হয়ে এসেছে।বাইক থামতেই তাসনিয়া ঝট করে নেমে পড়ল আর নেমেই সোজা বাসার দিকে পা বাড়ালো
সায়নঃ আ..তাসনিয়া…
তাসনিয়াঃ থমকে দাঁড়ালাম।জ্বি?
সায়নঃ একটা কথা বলা হয়নি,তোমাকে না আজকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে, আমার দেয়া গিফটটা একসেপ্ট করার জন্য ধন্যবাদ
তাসনিয়াঃ এমন কিছু শুনবো এক্সপেক্ট করিনি তাই জবাবে কিছুই বলতে পারলাম না
সায়নঃ তোমাকে কিন্তু বাঙালী পোশাকেই বেশি মানায়,কেন যে সবসময় ওয়েস্টার্ন গেটাপে থাকো!মাঝে মাঝে একটু বাঙালী মেয়েদের মতো শাড়ি চুড়ি আর কপালে ছোট্ট একটা টিপ পরেই দেখো,আমি শিওর নিজেকে নিজেই চিনতে পারবে না…
(তাসনিয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সায়ন চলে গেল,তাসনিয়া কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে ওদিকেই তাকিয়ে থাকলো তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বাসার দিকে পা বাড়ালো)

হাইটকে বরাবরই একটু ভয় পায় তাসনিয়া কিন্তু সায়ন যেদিন ওকে একটা এ্যামিউজমেন্ট পার্কে নিয়ে গেল সেদিন ও ওর এই ভয়টাও ভুলে গেল!রোলার কোস্টার,নাগরদোলা আর অক্টোপাসের মতো হাইট রিলেটেড রাইডগুলোতে দিব্যি ইনজয় করতে লাগলো যদিও মাঝে মাঝে ভয়ে চোখ বন্ধ করে সায়নের হাত শক্ত করে চেপে ধরছিল।
দেখতে দেখতে এভাবেই কেটে গেছে পাঁচ পাঁচটি দিন,এই পাঁচ দিনে সায়নকে যেন নতুন করে চিনেছে তাসনিয়া,শুধু সায়নকেই নয় নিজেকেও যেন নতুনরূপে চিনেছে ও।সায়নের সাথে থাকলে যেন নিজেকেই ভুলে যায়,সময়টা যেন ওখানেই থেমে যায়।
আজ ওদের এই কনট্র‍্যাক্ট রিলেশনশিপের ষষ্ঠ দিন,সায়ন ওকে আজ নিজের বাসাতেই নিয়ে এসেছে।মাঝারী সাইজের অ্যাপার্টমেন্ট,তিনটা বেডরুম আর একটা ড্রয়িংরুম।এখানে ওখানে এলোমেলো ভাবে জামা কাপড় আর অন্যান্য জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,গোছ গাছের ধারে কাছেও নেই,দেখলেই বোঝা যায় এখানে যারা থাকে তারা সবাই ছেলে।ব্যতিক্রম বলতে সায়নের রুমটা,একদম পরিপাটি করে সাজানো যেন যেখানে যা রাখা আছে সবকিছু একদম মেপে মেপে রাখা।এসে থেকেই সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখছে তাসনিয়া আর যত দেখছে ততই কনফিউজড হয়ে যাচ্ছে,ওর ভাবনায় ছেদ ঘটলো সায়নের কণ্ঠে
সায়নঃ এই যে ম্যাডাম,কি দেখছো?
তাসনিয়াঃ ও কিছু না,আচ্ছা আপনি আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন যে?
সায়নঃ ওই যে সেদিন তুমি যা যা খেতে চেয়েছিলে ওগুলো নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াবো তাই,বলাতো যায় না কালকের পর যদি তোমাকে কখনও এভাবে খাওয়ানোর সুযোগ না পাই…

তাসনিয়াঃ ওহ
সায়নঃ আর তাছাড়া আমাদের দুজনের দুজনকে আরও একটু কাছ থেকে জানারওতো দরকার আছে তাইনা?
তাসনিয়াঃ উনার কথা শুনে একটু ভয় ভয় লাগছে,নিজের অজান্তেই একটা ঢোক গিলে ফেললাম।আসলে আমারই ভুল,আমার এখানে আসাটাই ঠিক হয়নি তাও আবার একা একা।অন্তত বৃষ্টি আর লোপাকে সাথেতো আনতে পারতাম,কেন যে একা একা এখানে আসতে গেলাম?(মনে মনে)
সায়নঃ ও হ্যালো…আবার কোথায় হারিয়ে গেলে?
তাসনিয়াঃ কো..ক..কোথাও না,আচ্ছা আপনি কি এখানে একাই থাকেন?
সায়নঃ পাগল নাকি!একা একা আবার কেউ বাস করতে পারে?
তাসনিয়াঃ তাহলে?
সায়নঃ আরে মারুফ আর রাকিবও থাকে আমার সাথে,ওদেরকেতো তুমি চেনো?
তাসনিয়াঃ হ্যাঁ তা চিনি কিন্তু উনাদের কাউকেতো…
সায়নঃ ওহ ওরা?ওরা কেউ নেই আই মিন আমি না বলা পর্যন্ত ওরা কেউ বাসায় ফিরবে না
তাসনিয়াঃ তারমানে আপনিই উনাদেরকে…
সায়নঃ অনেকটা অমনই তবে পুরোপুরি না
তাসনিয়াঃ মানে?ঠিক বুঝলাম না
সায়নঃ মানে রাকিবকে আমিই পাঠিয়েছি বাট মারুফ নিজের ইচ্ছেতেই গেছে,আফটার অল নতুন নতুন রিলেশন বলে কথা…
তাসনিয়াঃ ওহ
তাছাড়া আর কি করব,তুমি আসবে বলে কথা আর প্রাইভেসি বলেওতো একটা ব্যপার আছে না?
তাসনিয়াঃ প্রাইভেসি!
সায়নঃ কেন?ভয় পাচ্ছো?
তাসনিয়াঃ ভ..ভয়!আমি কেন ভয় পাবো?আপনি কি বাঘ না ভাল্লুক?
সায়নঃ সেতো একা একটা মেয়েকে এতোটা কাছে পেলে সব পুরুষ মানুষই হয়ে যায়
তাসনিয়াঃ দে..দেখুন আপনি কিন্তু শুধু শুধু আমাকে ভয় দেখাতে চাইছেন,তাতে কোন লাভ হবে না,আমি আপনাকে মোটেও ভয় পাই না
সায়নঃ ওহ আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম,তুমিতো আবার সবসময় পেপার স্প্রে সাথে নিয়ে ঘোরো।আজও নিশ্চয়ই নিয়ে এসেছো?
তাসনিয়াঃ না আনিনি কারণ আমি জানি আপনি আমার কোন ক্ষতি করবেন না
সায়নঃ করতেওতো পারি
তাসনিয়াঃ করার হলে অনেক আগেই করে ফেলতে পারতেন,সুযোগতো অনেকবারই পেয়েছেন…
সায়নঃ বুঝেছি,তোমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।আমি বরং কিচেনের দিকে যাই নাহলে আজকে আর খাওয়া লাগবে না

সায়ন কিচেনের দিকে চলে গেল,তাসনিয়া পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখতে লাগলো।সায়নের রুমের সাথেই একটা লাগোয়া বারান্দা,তাসনিয়া ওদিকটাতেই এগিয়ে গেল কিন্তু একটু পরেই চিৎকার দিয়ে কিচেনের দিকে ছুটলো
সায়নঃ কি হয়েছে?এভাবে চেঁচাচ্ছো কেন?
তাসনিয়াঃ আপনি একটু আমার সাথে আসুন প্লিজ,উনার হাত ধরে টানাটানি শুরু করলাম
সায়নঃ আরে কি আশ্চর্য!কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাকে?
(সায়নকে সোজা বারান্দাটায় নিয়ে আসলো তাসনিয়া,তারপর কর্ণারের দিকে ইশারা করলো।সবুজ রঙের একটা ঝুড়ি,তারমধ্যে ছোট্ট একটা খরগোশ!)
সায়নঃ কি হয়েছে?
তাসনিয়াঃ ওটা কুটুস তাই না?
সায়নঃ হুম
তাসনিয়াঃ ছুটে গিয়ে কুটুসকে কোলে তুলে নিলাম,ঠিক আগের মতই আদর করতে লাগলাম
সায়নঃ কুটুসকে পেয়ে মেয়েটা আবারও সেই আগের মতো পাগলামি শুরু করেছে,রীতিমতো বাচ্চাদের মতো লাফাচ্ছে!আরও বেশি মায়াবী লাগছে ওকে,চোখ ফেরাতে পারিছি না

তাসনিয়াঃ আমিতো ভেবেছিলাম ওকে বাসেই ফেলে এসেছি,আর কখনোই দেখতে পাবো না ওকে…আপনি ওকে এখানে নিয়ে এসেছেন তাইনা?
সায়নঃ তো আর কি করতাম?ওর মাতো ওকে ভুলে গিয়ে ফেলে চলে গেলো,তো মায়ের অবর্তমানে বাচ্চার দেখাশোনার দ্বায়িত্বতো বাবারই তাই…
তাসনিয়াঃ Thank you thank you thank you so…much.আপনি আসলেই…
সায়নঃ নিজের অজান্তেই ও আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়েছে,শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।জানি বুঝতে পারলেই আবারও দূরে সরে যাবে কিন্তু ততক্ষণে থাক না আমার বুকেই,এতোদিন ধরে যে এই বুকটা ওর জন্যই খালি করে রেখেছিলাম…
চলবে….