Childhood marriage

Childhood marriage 3 !! Part- 14

মূল শহর থেকে বেশ খানিকটা বাইরে চলে এসেছে ওরা,এদিকটায় রাস্তাঘাট অনেকটায় ফাঁকা।তাসনিয়া এখনও আগের মতোই জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে,ফাঁকা রাস্তা দেখেই আইডিয়াটা মাথায় আসলো সায়নের
সায়নঃ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসো নাহলে কিন্তু পড়ে যাবে
তাসনিয়াঃ লাগবে না,আমি এভাবেই ঠিক আছি
সায়নঃ আমি কিন্তু অনেক স্পিডে চালাই তাই বলছি…
তাসনিয়াঃ বললামতো লাগবে না,আরে আরে তাই বলে এতো জোরে!দেখুন আমার কিন্তু ভয় করছে…
সায়নঃ ভয় কিসের আমিতো আছি,তুমি শুধু শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকো তাহলেই হবে
তাসনিয়াঃ কি আর করার ইচ্ছে না থাকলেও উনাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলাম
সায়নঃ মুচকি হেসে স্পিডটা আরও একটু বাড়িয়ে দিলাম
তাসনিয়াঃ আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?শহর থেকেতো অনেক আগেই…
সায়নঃ ঠিকই ধরেছো,এটা শহরের বাইরে তবে খুব বেশি দূরে না
তাসনিয়াঃ লোপা আর মারুফ ভাইয়ার তো কোন নাম গন্ধও পাওয়া যাচ্ছে না!আচ্ছা উনারা আবার রাস্তা হারিয়ে ফেলেননিতো?
সায়নঃ ওদের নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না,আমার যতদূর ধারণা মারুফ এতক্ষণে সবকিছুই সেটেল করে ফেলেছে
তাসনিয়াঃ সেটেল মানে?আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন বলুনতো?
সায়নঃ কিছু না তবে এটা ধরে নাও ওরা আর আজকে এদিকে আসবে না
তাসনিয়াঃ কিহ!এ নিশ্চয়ই আপনারই প্ল্যান?
সায়নঃ তাছাড়া আর কি করতাম?আমার জিএফ যদি আমাদের ফার্স্ট ডেটে একটা এক্সট্রা লাগেজ নিয়ে আসে তাহলে আমাকেওতো ওটার থেকে পিছু ছাড়ানোর একটু উপায় খুঁজতেই হবে
তাসনিয়াঃ লা..লাগেজ!আপনি লোপাকে…
সায়নঃ ওকে সরি আর বলব না
তাসনিয়াঃ আর আমি কিন্তু মোটেও আপনার জিএফ টিএফ না
সায়নঃ এ্যা বললেই হলো!নেক্সট সাতদিনের জন্যতো তুমিই আমার জিএফ,পরের ব্যাপারটা নাহয় সময়ই বলে দেবে

বিশাল এরিয়ার উপর দ্বিতল বাংলো বাড়ি,চাইলেই আধুনিকতার ছোঁয়া লাগানো যেত কিন্তু এখানে তার খুব একটা দেখা মিলবে না।অনেকটা কুঠিবাড়ি স্টাইলে বানানো বাড়িটার ছাদটা অনেকটা কুঁড়েঘর সেপে গড়া,সেখানে ইট বালি আর সিমেন্টের বদলে ঠায় পেয়েছে পোড়ামাটির তৈরি টালি।বিশাল বারান্দা জুড়ে সারি করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ফুলের টব আর সেগুলোতে পরম যত্নে লাগানো হয়েছে অর্কিড আর বড় বড় গাছের মিনিয়েচার বনশায়।
সুইমিং পুলের বদলে রয়েছে বড় বড় দুটি দিঘী,দিঘীর জলে ভাসমান শাপলা আর পদ্ম,পাড় জুড়ে সুপারি আর নারিকেল গাছের সারি আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে বাড়ির সামনের বিশাল ফুলের বাগান।প্রবেশ দরজা থেকেই রাস্তার দুইপাশে ঝাউ আর পাতাবাহার গাছের সারি।কি নেই বাগানে?দেশি-বিদেশি মিলিয়ে কম করে হলেও প্রায় অর্ধশত প্রজাতির ফুলের গাছ আর সেগুলো খুব চিন্তাভাবনা করে থরে থরে সাজিয়ে লাগানো হয়েছে যা যে কাউকেই অভিভূত করতে যথেষ্ট।
সায়ন আর তাসনিয়াকে আসতে দেখেই দ্বায়িত্বে থাকা লোকটা ছুটে আসলো,বাংলোটা খুলে দিয়ে সালাম জানিয়ে বিদায় নিল
তাসনিয়াঃ এটা…
সায়নঃ আমার এক ফ্রেণ্ডের বাংলো বাড়ি,আঙ্কেল এটা পেয়েছিলেন উত্তরাধিকার সূত্রে তারপর প্রয়োজনমতো রিডিজাইন করেছেন।ওরা এটা ব্যবহার করে ভেকেশন হাউজ হিসেবে,আজ আমরাও তাই করব
তাসনিয়াঃ কিন্তু…
সায়নঃ কোন কিন্তু নেই,এখানকার সবই আমার পরিচিত,রাকিবের সাথে বেশ কয়েকবার এসেছি এখানে।তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি একটু আশপাশটা ঘুরে দেখি
(কিছুক্ষণ পর)
দিঘীর স্বচ্ছ জলে পা ডুবিয়ে বসে আছে তাসনিয়া আর সায়ন?ছিপ বরশি আর হুইল নিয়ে ওর পাশেই বসে আছে
তাসনিয়াঃ আচ্ছা আমরা এখন এখানে কি করছি বলবেন?
সায়নঃ খাবারের ব্যবস্থা
তাসনিয়াঃ মানে!আপনি এতকিছু করেছেন আর খাবার দাবারের ব্যবস্থা করেননক!
সায়নঃ আচ্ছা তুমি কখনও Man vs Wild দেখেছো?
তাসনিয়াঃ হ্যাঁ কিন্তু…
সায়নঃ আমার অনেকদিনের ইচ্ছে বেয়ার গ্রিলসের মতো সারভাইভাল টেকনিক এ্যাপ্লাই করার তাই…
তাসনিয়াঃ মানে!
সায়নঃ মানে…আমরা এখন মাছ ধরব আর তা দিয়েই হবে আমাদের খাবারের ব্যবস্থা
তাসনিয়াঃ আর যদি না ধরা পড়ে?
সায়নঃ খুব সিম্পল No fish,no feed..
তাসনিয়াঃ That’s crazy
সায়নঃ I know but আমি এমনই
তাসনিয়াঃ হায় আল্লাহ,এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম!দুপুর পেরিয়ে যাচ্ছে,ক্ষুধায় আমার পেটের মধ্যে ইঁদুর বাঁদুড় দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করেছে আর উনি আছেন উমার মাছ ধরা নিয়ে!

সায়নঃ মুচকি হেসে ওর দিকে টিফিনবক্সটা বাড়িয়ে দিলাম,এই নাও ধরো আর একা একা বিড়বিড় করা বন্ধ করো নাহলে আবার মানুষ পাগল ভেবে…
তাসনিয়াঃ কি এটা!ওমা এগুলোতো…
সায়নঃ স্যাণ্ডউইচ,তাড়াহুড়োয় এর থেকে বেশি কিছু বানাতে পারিনি
তাসনিয়াঃ এগুলো আপনি বানিয়েছেন!আপনি রান্না করতে পারেন?
সায়নঃ কি খেতে চাও একবার বলেই দেখো না,আমি পারি না এমন কিছুই নেই
তাসনিয়াঃ হুম..চিংড়ি মাছের মালাই কারি,ইলিশ পোলাও,গরুর কালাভুনা আর গাজরের হালুয়া ব্যস ওতেই হবে
সায়নঃ আপাতত এখানেতো এসব সম্ভাব না,তবে সুযোগ পেলে একদিন ঠিকই তোমাকে এসব…যাই হোক আজকের মতো ফিশফ্রাই করে খাওয়াবো।টাটকা মাছ,খেলেই বুঝবে কেমন টেস্ট,জীবনেও ভুলবে না
তাসনিয়াঃ আর ফিশ ফ্রাই,আপাতত এখান থেকে যেতে পারলে বাঁচি(বিড়বিড় করে)
সায়নঃ কিছু বললে?
তাসনিয়াঃ না কিছু না,আল্লাহই জানে লোপাটা আবার কি বিপদে পড়েছে
সায়নঃ ওকে নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে,আমি জানি মারুফ ওর ভালোই কেয়ার নিচ্ছে
তাসনিয়াঃ মানে?
সায়নঃ ও কিছু না তবে তোমাকে একটা ফ্রি পরামর্শ দেই,আজকে কি হলো দেখলেতো?নেক্সট টাইম আমাদের পারসোনাল ডেটে আশা করি অন্য কাউকে টেনে আনার চেষ্টা করবে না

তাসনিয়াঃ সে আর বলতে…
সায়নঃ বুঝতে পারছি ও প্রচণ্ড রকমে বিরক্ত কিন্তু এভাবেতো চলতে দেয়া যাবে না।হঠাৎ মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো,তাসনিয়া একবার ওদিকে দেখো ওটা কি…
তাসনিয়াঃ কি?চরম বিরক্তি নিয়ে উনি যেদিকে ইশারা করছেন ওদিকে তাকালাম।কোথায়?কি দেখাতে চাইছেন আমিতো কি..ছ…
সায়নঃ ও আর কিছু বলার আগেই ওর হাত ধরে পানিতে ঝাঁপ দিলাম
তাসনিয়াঃ আ..আরে!কি আশ্চর্য!এসব…এটা কোন ধরণের অসভ্যতামি?দেখুন খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু…
সায়নঃ শুধু শুধু রেগে যাচ্ছো কেন?আরে বাবা,এমন স্বচ্ছ সুন্দর পানি কখনও দেখেছো?খোলা পানিতে গোসলের সাথে তোমাদের ওসব কৃত্রিম শাওয়ারের কোন তুলনায় হয় না তাই বলছি সুযোগ যখন পেয়েছো উপভোগ কর
তাসনিয়াঃ সে..তো বুঝলাম কিন্তু..আমিতো..সা..সাঁতার জানি না..(ভয়ে ভয়ে)
সায়নঃ তাতে কি,আমিতো আছি…
তাসনিয়াঃ আপনি বুঝতে পারছেন না,আমি সত্যিই সাঁতার জানি না,সাঁতার কি জিনিস তাইতো জানি না,পানিতেও নামিনি কখনও।আমি ডুবে যাবো,একদম পানির নিচে তলিয়ে যাবো,আমি যদি মারা যায় প্লিজ আমার বাবা মাকে…
সায়নঃ শসসস…জাস্ট রিল্যাক্স,কিচ্ছু হবে না…তোমাকে ডুবতে দিলেতো…একবার তাকিয়েতো দেখো…
তাসনিয়াঃ প্রচণ্ড ভয় লাগছে,এর আগে কখনও এভাবে পানিতে নামিনি,নামাতো দূরে থাক পুকুর,নদীর ধারে কাছে যাওয়ারও সুযোগ পাইনি কোনদিন।ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম
সায়নঃ ওকে আরও কাছে টেনে নিলাম,ওর দুহাত আমার কাঁধের উপর রাখলাম।ভয় কেন পাচ্ছো?আমি আছিতো…বিলিভ মি,তোমার কিচ্ছু হবে না…
তাসনিয়াঃ চোখ মেলে তাকালাম আর তাকাতেই উনার চোখে চোখ পড়লো,কই যেন আছে ওই চোখে!ওই চোখের ভাষাটা আমার চেনা যেন স্পষ্ট জানান দিচ্ছে,”তোমার কোন ভয় নেই,আমি থাকতে তোমার কোন ক্ষতি হতে দিব না…”
সায়নঃ কি হলো কি দেখছো?
তাসনিয়াঃ কি..ক..কিছু না,বলছি সত্যিই কিছু হবে নাতো?
সায়নঃ (মুচকি হেসে)উহু কিচ্ছু হবে না…তুমি শুধু শক্ত করে আমাকে ধরে থাকো তাহলেই হবে
তাসনিয়াঃ হঠাৎ মনে হলো আমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছি,এই মানুষটা থাকতে আমার কিছু হতেই পারে না।মুহূর্তেই সব ভয় কেটে গেলো,সব ভুলে পানিতে গা ভাসিয়ে দিলাম…

তাসনিয়াঃ দুর ছাই,আর ভাল্লাগে না,এমন পাগলামি কেউ করে!বলা নেই কওয়া নেই হুট করেই পানিতে টেনে ফেলে দিল!আরে বাবা,সবইতো বুঝলাম কিন্তু আমি কি কোন এক্সট্রা জামা-কাপড় এনেছি নাকি?এখন এই ভেজা কাপড়ে যদি বেশিক্ষণ থাকি তাহলেতো সর্দি লেগে যাবে,এমনিতেই আমি যে রকম সেনসিটিভ…
(তাসনিয়া যখন রুমের মধ্যে আপন মনে এমন আকাশ পাতাল ভাবছে তখনই দরজায় টোকা পড়লো)
তাসনিয়াঃ এখন আবার কে এলো?দরজা খোলা কি ঠিক হবে?নাকি…
সায়নঃ তাসনিয়া,ইট’স মি,দরজাটা একটু খুলবে?
তাসনিয়াঃ হালকা করে দরজাটা খুলে দিলাম,দরজা ধরেই দাঁড়িয়ে আছি।কিছু বলবেন?
সায়নঃ না মানে এ..এগুলো..আমি বলতে চাইছি বেশিক্ষণ ভেজা কাপড়ে থেকো না,এগুলো আমারই কাপড়,তোমার জন্য অবশ্য একটু ঢিলেঢালা হবে তবে ভেজা কাপড়ে থাকার চেয়েতো ভালো তাইনা? যাই হোক চেঞ্জ করে রেস্ট নাও,বাইরে আসতে না চাইলে আসার দরকার নেই।আমি বরং ডিনারের ব্যবস্থা করি
তাসনিয়াঃ ডি..ডিনার!আমরা কি আজ রাতে এখানেই থাকবো?

সায়নঃ থাকার প্ল্যানিংতো ছিল না তবে তুমি চাইলে একটু চেঞ্জতো আনা যেতেই পারে তাইনা?
তাসনিয়াঃ এই না না,আমি আসলে ওটা মিন করিনি
সায়নঃ (মুচকি হেসে)চিন্তা করো না,তুমি যা ভয় পাচ্ছো তেমন কিছুই হবে না।এখন ঝটপট চেঞ্জ করে নাও নাহলে হয়তো আমার মুড চেঞ্জ হলেও হতে পারে…
তাসনিয়াঃ চমকে উঠে দরজা লাগিয়ে দিলাম,এই লোকতো দেখছি তার কিলার লুক আর হাসি দিয়েই আমাকে ঘায়েল করে ফেলবে!ইয়ার তাসু,এখনও সময় আছে সাবধান হ নাহলে কিন্তু সাতদিন শেষ হওয়ার আগেই উনার প্রেমে…
চলবে…