Childhood marriage 3 !! Part- 13
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সকাল সাতটা
চারতলা বাড়িটার ঠিক সামনের রাস্তায় দুটো বাইক এসে থামলো,একটাতে সায়ন আর একটাতে মারুফ।
মারুফঃ তোর মাথায় ঠিক কি চলছে বলতো?আজ ছুটির দিন,ভাবলাম একটু শান্তি করে ঘুমাবো কিন্তু তুই…এই তোর জন্য আমার সাধের ঘুমটা…
সায়নঃ আরে রাখ তোর ঘুম,এখন আফসোস করছিসতো একটু পরেই মনে মনে আমাকে থ্যাঙ্কস দিবি
মারুফঃ সে যাই হোক আমাকে আবার বাইক আনতে বললি কেন?তোরটাতেইতো হতো…
সায়নঃ আছে একটা কারণ,একটু পরেই সব বুঝতে পারবি
মারুফঃ আমি বুঝতে পারছি না আমরা এই সাত সকালে এখানে কি করছি আর তুইতো কিছু বলতেই চাইছিস না…
সায়নঃ এখন জানতে হবে না,একটু ওয়েট কর সব জানতে পারবি
মারুফঃ ওকে ফাইন তুই যখন বলছিস তখন একটু নাহয় ওয়েট করেই দেখি…না জানি তোর মাথায় আবার কোন ভূত চেপেছে!
সায়নঃ তুই একটু চুপ করবি?আমারই ভুল হয়েছে,তোকে সাথে নিয়ে আসাটাই ঠিক হয়নি,এর জন্য রাকিবই বেটার ছিল
মারুফঃ আহা রাগ করছিস কেন?এই আমি চুপ করলাম আর একটা কথাও বলব না।তোর মাথায় ভূতই চাপুক আর পেত্নী তাতে আমার কি,তোর ব্যাপার তুইই বুঝে নিস…
সায়নঃ হুম
মারুফঃ বাই দ্য ওয়ে আমরা কি কারো সাথে দেখা করতে এসেছি নাকি অন্য কিছু?
সায়নঃ (বিরক্তি নিয়ে)মারুফ…
(মারুফের সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই বোধহয় অদূরে লোপা আর তাসনিয়াকে দেখা গেল)
সায়নঃ নে তোর উত্তর এসে গেছে,সাবধান আমারটার দিকে নজর দিবি না পারলে নিজেরটা সামলা
মারুফঃ আরে না না আমার ওপাশের জন হলেই চলবে..থ্যাঙ্ক ইউ দোস্ত লাভ ইউ সো…মাচ…
সায়নঃ আরে আরে কি করছিস!মানুষতো অন্য কিছু ভেবে বসবে…
মারুফঃ কিন্তু তুই কিভাবে…
সায়নঃ জানতেতো হবেই আফটার অল আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড প্লাস বেস্ট কাজিন প্লাস বেস্ট রুমমেট ইত্যাদি ইত্যাদি।তোর লাইফে যতগুলো বেস্ট জিনিস আছে তারমধ্যে আমি নাম্বার ওয়ান।সো তুই কার উপর ক্রাস খেয়েছিস সেটা আমি ছাড়া আর কে জানবে?
মারুফঃ তা এখন আমাকে কি করতে হবে?
সায়নঃ কি আবার?আমাদের একটু প্রাইভেসি দরকার,ফার্স্ট ডেটে একটা থার্ড হুইল সাথে নিয়ে ঘোরাটা…
মারুফঃ বুঝেছি বুঝেছি আর কিছু বলতে হবে না,বাঁকিটা আমার হাতে ছেড়ে দে
সায়নঃ আর হ্যাঁ পারলে নিজের লাইনটাও ক্লিয়ার করে নিস
মারুফঃ তা আর বলতে….
(সায়ন আর মারুফের কথার মাঝেই তাসনিয়া আর লোপা ওখানে চলে আসলো)
তাসনিয়াঃ কোথায় যেতে হবে বলুন
সায়নঃ পুরো দশ মিনিট লেট,এটার কি করবে?
তাসনিয়াঃ ওহ মাত্র দশ মিনিট!আমিতো ভাবলাম…
সায়নঃ মানে!তোমার কি আরও দেরি করার ইচ্ছে ছিল নাকি?
তাসনিয়াঃ যদি বলি তাই
সায়নঃ দেখো তুমি কিন্তু…
মারুফঃ আহ সায়ন,এখানেই কি সারাদিন নষ্ট করবি নাকি?
সায়নঃ ঠিক আছে,ফার্স্ট ডে তাই কনসিডার করছি কাল থেকে যদি দেরি কর না তাহলে কিন্তু ডাবল ট্রাবল দিব।এখন ঝটপট বাইকে উঠে পড়ো
তাসনিয়াঃ কোথায় যেতে হবে বলুন,আমরা ঠিক চলে যাবো
সায়নঃ জ্বি না ম্যাডাম,ওটি হবে না চুপচাপ বাইকে উঠবে নাকি কোলে করে উঠাবো?
তাসনিয়াঃ এই না না তা আর লাগবে না,আমি একাই পারবো।চুপচাপ বাইকে উঠে বসলাম
সায়নঃ এক মিনিট
তাসনিয়াঃ (বিরক্তি নিয়ে)আবার কি?
সায়নঃ এই যে এটা।হেলমেটটা ওর মাথায় পরিয়ে দিতে গেলাম
তাসনিয়াঃ লাগবে না,আমি একাই পরতে পারবো
সায়নঃ আমি জানি তুমি পারবে কিন্তু আমার যে পরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে…
তাসনিয়াঃ দে..দেখুন…
সায়নঃ শসসস…হেলমেটটা পরিয়ে দিতে দিতেই ওর কানে কানে বললাম,তোমাকে না আজকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে!এতো সুন্দর কেন তুমি?
তাসনিয়াঃ আচমকা এমন কথায় বিষম লেগে গেল
সায়নঃ মুচকি হেসে ওর দিকে পানির বোতলটা এগিয়ে দিলাম।ধরো পানি খাও,সব ঠিক হয়ে যাবে
তাসনিয়াঃ হাত বাড়িয়ে বোতলটা নিলাম।উফ!আদিখ্যেতা,যত্তসব…
সায়নঃ এখন তাহলে যাওয়া যাক?
তাসনিয়াঃ হুম
সায়নঃ মারুফের দিকে একবার চোখ টিপেই বাইক স্টার্ট দিলাম।All the best…ইয়ার…
মারুফঃ থ্যাঙ্কস
লোপাঃ আর আমি?
মারুফঃ আপনার জন্য আমি আছিতো…
লোপাঃ ওহ আপনি!আপনিও যাচ্ছেন নাকি?
মারুফঃ না গেলে এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি মশা মারবো?
লোপাঃ না মানে…
মারুফঃ আর কথা না বাড়িয়ে উঠে বসো,নাহলে কিন্তু ওরা অনেক দূরে চলে যাবে
লোপাঃ ও হ্যাঁ,দেখি হেলমেটটা দিন
মারুফঃ এদিকে আসুন,পরিয়ে দিচ্ছি
(মারুফের কথা শুনে লোপা ওর দিকে এমনভাবে তাকালো যেন এক্ষুণি গিলে খাবে!ভয়ে ভয়ে মারুফ হেলমেটটা ওর হাতেই ধরিয়ে দিল।লোপা মুহূর্তের মধ্যেই ওটা মাথায় পরে নিল তারপর চুপচাপ বাইকে উঠে বসলো)
লোপাঃ নিন চলুন…
মারুফঃ কি আনরোমান্টিক মেয়েরে বাবা!ভাবলাম নিজ হাতে হেলমেটট পরিয়ে দিব অথচ…চোখের সামনে সায়ন আর তাসনিয়াকে দেখেও কিছুই শিখলো না!(বিড়বিড় করে)
লোপাঃ কিছু বললেন?
মারুফঃ কই নাতো…
লোপাঃ তাহলে এখনো দাঁড়িয়ে আছেন কেন?চলুন…
মারুফঃ হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন যাওয়া যাক
(বাইক নিয়ে কিছুদূর গিয়েই মারুফ অন্য রাস্তায় ঢুকলো)
লোপাঃ আরে আরে,এদিকে কোথায় যাচ্ছেন?ওরাতো ওদিকের রাস্তায় যাচ্ছে…
মারুফঃ আমারও চোখ আছে,আমিও দেখতে পাচ্ছি
লোপাঃ তাহলে এদিকে যাচ্ছেন কেন?বাইক ঘুরান বলছি
মারুফঃ নো ওয়ে,আমি পারবো না
লোপাঃ হোয়াট!তারমানে এসব…বাইক থামান…থামান বলছি…
(বাইক থামতেই লোপা লাফ দিয়ে নেমে পড়লো)
মারুফঃ তো মিস থার্ড হুইল,এবার বলুন কি বলবেন?
লোপাঃ এক্সকিউজ মি,আপনি আমাকে বলছেন?
মারুফঃ এখানে কি আর কেউ আছে?
লোপাঃ তাহলে নিশ্চয়ই আমি ভুল শুনেছি,এনি ওয়ে এসবের মানে কি?আপনি ওদেরকে ফলো না করে অন্য রাস্তায় আসলেন কেন?এসব কার প্ল্যান জানতে পারি?
মারুফঃ তাছাড়া আর কি করব?তোমার থার্ড হুইল হতে প্রবলেম না থাকলেও আমার আছে তাই…
লোপাঃ কি বললেন আপনি?আমি থার্ড হুইল!
মারুফঃ তা নয়তো কি?ওরা দুজন ডেটে যাচ্ছে,কোথায় ওদেরকে একটু প্রাইভেসি দেবেন তা না কাবাবমে হাড্ডি হতে চাইছো!
লোপাঃ দে..দেখুন আপনি কিন্তু…
মারুফঃ আর তাছাড়া এতোক্ষণে ওরা অনেক দূরে চলে গেছে তাই ফলো করতে চাইলেও কোন লাভ হবে না
লোপাঃ তাহলে…
মারুফঃ তুমি যদি চাও তাহলে আমি কিন্তু ফোর্থ হুইল হতে রাজি আছি
লোপাঃ মানে!
মারুফঃ মানে ওরা যেমন ডেটে গেছে,আমরাও যদি তেমন…
লোপাঃ দেখুন মি…
মারুফঃ অবশ্য তুমি যদি এসব ঝামেলায় না গিয়ে সরাসরি বিয়ে…
লোপাঃ হোয়াট!
মারুফঃ না না তাতেও কোন অসুবিধা নেই,তুমি চাইলে বাবাকে বলে কালকেই তোমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব…
লোপাঃ আচ্ছা আপনি কি পাগল?
মারুফঃ কেন বলো তো…
লোপাঃ না মানে চেনা নেই জানা নেই সরাসরি বিয়ে!
মারুফঃ ওহ এই প্রবলেম?ওকে ফাইন হাই আমি মাহমুদুল হাসান মারুফ,ট্রিপল ইতে অনার্স করছি এখন ফাইনাল ইয়ার চলছে,বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান,বাবা গভমেন্ট এমপ্লয়ি আর মা হাউজ ওয়াইফ।যদি আরও কিছু জানার থাকে তো এই যে জলজ্যান্ত আমি এই তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি,যা জানার যখন ইচ্ছে হবে জেনে নেবে
লোপাঃ মানুষটার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি,কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না
মারুফঃ এভাবে কি দেখছো?আমারটা শেষ,এবার তোমার পালা
লোপাঃ আ..আমার!আমি আবার কি…
মারুফঃ কেন?নামটা দিয়েই শুরু কর না…
লোপাঃ (অবাক হয়ে)নাম!আপনি আমার নাম জানেন না!
মারুফঃ উহু জানার প্রয়োজন পড়ে নি,ওটা আমার কাছে অতটা ইম্পর্ট্যান্ট না
লোপাঃ আমার নামই জানেন না অথচ বিয়ের প্ল্যানিং করে ফেললেন!স্ট্রেঞ্জ…
মারুফঃ এ আর এমন কি?আমিতো বাচ্চা কাচ্চার নামও ঠিক করে ফেলেছি।মেয়ে হলে নাম রাখব মিলি,তোমার আর আমার নামের ফার্স্ট লেটারের সাথে মিলিয়ে আর ছেলে হলে…ওটা অবশ্য এখনও খুঁজে পাইনি,তোমার কাছে কোন আইডিয়া থাকলে বলতে পারো।আর হ্যাঁ ছেলে হোক আর মেয়ে আমরা কিন্তু দুটোর বেশি নিব না,দেশের সচেতন নাগরিক বলে কথা…
লোপাঃ এবারে আর না হেসে পারলাম না,লোকটা আসলেই একটা…
মারুফঃ কি হলো হাসছো যে…
লোপাঃ আপনি না আসলেই একটা পাগল…
মারুফঃ জানি আর এই পাগলটাকে তোমাকেই সামলাতে হবে
লোপাঃ অনেক হয়েছে,এখন চলুন যাওয়া যাক
মারুফঃ কোথায়?
লোপাঃ কোথায় মানে!সারাদিন কি এখানেই কাটানোর ইচ্ছে আছে নাকি?
মারুফঃ আর আমার প্রস্তাবটা?
লোপাঃ আমি কিন্তু প্রচণ্ড রকমের টক পাগলী আর ফুচকা চটপটি এগুলো হলেতো কথাই নেই,আমার চাইই চাই…
মারুফঃ মানে?
লোপাঃ মানে…আমার সাথে থাকতে হলে কিন্তু এসব খাওয়ার অভ্যেস করা লাগবে,কোন বাহানা কিন্তু আমি সহ্য করব না
মারুফঃ তার মানে তুমি…
লোপাঃ আপনার প্রস্তাবে সম্মতি প্রকাশ করছি
মারুফঃ রিয়েলি!বাট কোনটা ফার্স্ট না সেকেণ্ড?
লোপাঃ আপাতত নাহয় প্রথমটাই বহাল থাক,দ্বিতীয়টা নিয়ে পরেও ভাবা যাবে।এখন চলো…
মারুফঃ (চমকে উঠে)কি বললে?
লোপাঃ (মুচকি হেসে)বললাম চলো আর এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না,আচ্ছা টি বাঁধের দিকে যাবে নাকি অন্য কোথাও?আজ ফার্স্ট ডে তাই তোমার পছন্দকেই প্রায়োরিটি দিচ্ছি,কাল থেকে কিন্তু…
মারুফঃ ওক্কে ম্যাম তাই হবে।বাই দ্য ওয়ে তোমার নামটা কি জানতে পারি?
লোপাঃ (মুচকি হেসে)লোপা…
চলবে…