Childhood marriage

Childhood marriage 3 !! Part- 11

(দুদিন পর)
রাত জাগাটা তাসনিয়ার খুব পুরনো একটা অভ্যাস,পুরো এলাকার মানুষ যখন ঘুমে বিভোর ও তখন গল্পের বইয়ে মুখ ডুবিয়ে দিব্যি ঘণ্টার পর ঘণ্টা নির্ঘুম কাটিয়ে দিচ্ছে।আজকেও তার ব্যতিক্রম হয়নি তবে অন্য রাতের সাথে পার্থক্যটা হচ্ছে আজকে আর ও কোন গল্পের বইয়ে মুখ ডুবিয়ে নেই।তার বদলে ঠায় করে নিয়েছে একজোড়া টি-শার্ট,ও দুটো হাতে নিয়ে ভাবনার রাজ্যে হারিয়ে গেছে তাসনিয়া।হঠাৎ…
সায়নঃ খুবতো বলেছিলে আমাকে চেনো তাহলে এসব কি?
(চমকে পেছন ফিরে তাকালো তাসনিয়া কিন্তু একি এতো সায়ন!বালিশে হেলান দিয়ে দিব্যি দাঁত বের করে হাসছে!)
তাসনিয়াঃ আ..আপনি!আপনি এখানে কি করছেন আর এখানে আসলেন কিভাবে?
সায়নঃ বাব্বাহ একসাথে এতো প্রশ্ন!কোনটা ছেড়ে কোনটার উত্তর দেই বলোতো?
তাসনিয়াঃ কোনটারই উত্তর দিতে হবে না,আপনি এখন যানতো…
সায়নঃ কোথায় যাবো?

তাসনিয়াঃ কোথায় আবার,যেখান থেকে এসেছেন সেখানে
সায়নঃ সেতো বুঝলাম কিন্তু যাবোটা কিভাবে?
তাসনিয়াঃ কেন যেভাবে এসেছেন সেভাবেই…
সায়নঃ সেতো ওয়াল বেয়ে কিন্তু ওভাবেতো নামতে পারব না…
তাসনিয়াঃ কিহ!আপনি ওয়াল বেয়ে এখানে উঠে এসেছেন?
সায়নঃ হ্যাঁ এ আবার এমন কি?চেষ্টা করলে তুমিও পারবে।প্রথমে ওয়াল বেয়ে সিঁড়ি ঘরে তারপর সেখান থেকে দরজা দিয়ে রুমের ভেতরে,এই তোমরা এই রাতের বেলাতেও দরজা খুলে রেখেছো!জানো এটা কত ডেঞ্জারাস?আর কখনও এমন করবে না কেমন?
তাসনিয়াঃ সর্বনাশ!কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে যে সর্বনাশ হয়ে যাবে।আচ্ছা আপনি জানেন এটা কত বড় অপরাধ?এর জন্য আমি চাইলেই আপনার নামে পুলিশ কমপ্লেন করতে পারি
সায়নঃ সে তুমি চাইলে করতেই পারো তবে তার আগে বলো আমাকে মিথ্যে কেন বলেছিলে?
তাসনিয়াঃ মি..মিথ্যা!আ..আমি আবার কি মিথ্যা বললাম?
সায়নঃ একটা টি-শার্ট হাতে তুলে নিলাম,খুবতো বলেছিলে আমাকে চেনো না তাহলে এটা কি?
তাসনিয়াঃ কেন কি প্রবলেম এটাতে?
সায়নঃ এ দুটোইতো আমি তোমাকে বান্দরবানে গিফট করেছিলাম।কি ঠিক বলছিতো?
তাসনিয়াঃ ক..কই নাতো
সায়নঃ কেন শুধু শুধু মিথ্যে বলছো?এবার অন্তত সত্যিটা স্বীকার করে নাও
তাসনিয়াঃ কি..ক..কিসের সত্যি?দেখুন আমার সাথে একদম চালাকি করার চেষ্টা করবেন না,কি প্রমাণ আছে যে এ দুটো আপনারই দেওয়া?আরে বাবা একই ডিজাইনের অনেকগুলো টি-শার্ট কি থাকতে পারে না?
সায়নঃ প্রমান না?ওয়েট…টি-শার্ট দুটো হাতে তুলে নিলাম,মুহূর্তের মধ্যেই যা খুঁজছিলাম পেয়েও গেলাম।এই নাও এটা দেখো…
তাসনিয়াঃ শার্টের উল্টো দিকে যে জায়গাটায় উনি ইশারা করলেন,একবার চোখ পড়তেই বুঝলাম আর কোন উপায় নেই আমি ধরা পড়ে গেছি।নীল কালি দিয়ে ছোট্ট করে লেখা মি.নোবেল ম্যান আর মিস ড্রামা কুইন
সায়নঃ সেদিন জাস্ট কৌতূহলের বশেই কথাগুলো লিখেছিলাম,আমি কি জানতাম একদিন এটাই আমাকে এত্তো বড় একটা হেল্প করবে…
তাসনিয়াঃ এ..আমি একটু আসছি…
সায়নঃ বুঝতে পারছি মেয়েটা লজ্জা পেয়ে পালাচ্ছে কিন্তু ওকে পালাতে দিলেতো…খপ করে একটা হাত ধরে ফেললাম,কোথায় যাচ্ছো?আমার এখনও অনেককিছু জানার আছেতো…

তাসনিয়াঃ দে..দেখুন আমি আপনার কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই,ছাড়ুন বলছি..নাহলে কিন্তু…
সায়নঃ ছেড়ে দিব তাইতো?ওকে ফাইন,হেচকা টানে ওকে নিজের আরও কাছে টেনে নিলাম।এতোটা কাছে যেন ওর হার্টবিটের শব্দও আমি শুনতে পাচ্ছি
তাসনিয়াঃ এ..একি এসব কি করছেন আপনি!ছেড়ে দিন প্লিজ…
সায়নঃ ছেড়েতো দিবই তবে তার আগে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর যে তোমায় দিতেই হবে,নাহলে কিন্তু…
তাসনিয়াঃ দে..দেখুন আমি কিন্তু এবার চিৎকার দিব
সায়নঃ সে তুমি যদি সবার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিতেই চাওতো দাও চিৎকার তবে একটা প্রশ্ন কি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেবে?ফ্রেণ্ড বয়ফ্রেন্ড,হাজবেণ্ড নাকি অন্য কিছু?
তাসনিয়াঃ দেখুন আপনি কিন্তু…
সায়নঃ কেন শুধু জেদ করছো সোনা?লক্ষ্মী মেয়ের মতো আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে দাও আমি চলে যাবো,আর কোন ঝামেলা করব না প্রমিজ…
তাসনিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে বলুন কি জানতে চান
সায়নঃ আমাকে চিনেও না চেনার ভালো করছিলে কেন?
তাসনিয়াঃ কারণ আমি সত্যি সত্যিই আপনাকে ভুলতে চেয়েছিলাম
সায়নঃ কিন্তু কেন?
তাসনিয়াঃ কারণ আপনাকে সামনা সামনি ফেস করাটা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।আপনার সাথে ওই তিনটা দিন আমি এমন কিছু করেছি যা আমার স্বাভাবিক বিহেভিয়ারের বাইরে,বলতে পারেন স্বাভাবিক অবস্থায় আমার দ্বারা কখনোই ওসব সম্ভব না
সায়নঃ বুঝলাম কিন্তু তার সাথে আমাকে এভয়েড করার প্রশ্ন আসছে কেন?
তাসনিয়াঃ আপনি কেন বুঝতে পারছেন না,আপনাকে ফেস করা মানে আমার জন্য অনেক ইমবেরেসিং একটা সিচুয়েশন তাই…
সায়নঃ ইমবেরেসিং!তারমানে তুমি ওই তিনটা দিনের জন্য রিগ্রেট ফিল করো?
তাসনিয়াঃ এতো দিন করতাম না বাট আপনার সাথে আবার দেখা হওয়ায় পর থেকে করছি আমার যদি সাধ্য থাকতো তাহলে সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতাম,আপনার সাথে পরিচয়টাও
সায়নঃ ঠিক আছে,তুমি যা চাইছো তাই হবে…

তাসনিয়াঃ মানে!কি করতে চাইছেন আপনি?
সায়নঃ এমন কিছু যাতে আমার সাথে দেখা হওয়ার জন্য তোমাকে আর কক্ষণও কোন রিগ্রেট করতে না হয়
তাসনিয়াঃ আপনি এসব কেন করছেন?
সায়নঃ কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি
তাসনিয়াঃ কিন্তু আমিতো আপনাকে ভালোবাসি না
সায়নঃ কিন্তু কেন?কোন দিক দিয়ে কমতি আছে আমার?আমাকে অপছন্দ করার পেছনে অন্তত একটা কারণ দেখাও…
তাসনিয়াঃ তাও ঠিক উনাকে অপছন্দ করার মতো কোন কারণ নেই তবুও আমি কেন…কিন্তু কিছু একটাতো বলতেই হবে,কিন্তু কি বলি?কিছুতো মাথায় আসছে না (মনে মনে)
সায়নঃ থাক থাক আর আকাশ পাতাল ভাবতে হবে না,আমি জানি উপযুক্ত কোন কারণ তুমি খুঁজে পাবে না So just admit that you also like me…
তাসনিয়াঃ দেখুন আপনি কিন্তু…
সায়নঃ ও আর কিছু বলার আগেই কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিলাম
তাসনিয়াঃ ব্যাপারটা এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেল যে কিছু বুঝে উঠার আগেই…
সায়নঃ Bye bye sweet heart,see you tomorrow…
(সায়ন দরজা খুলে চলে গেল,তাসনিয়া যেন এতোক্ষণে যেন প্রাণ ফিরে পেলো।ধপ করে বিছানায় বসে পড়েই জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো)

(পরদিন সকালে)
লোপা আর বৃষ্টিকে সাথে নিয়ে ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে তাসনিয়া।
লোপাঃ কাল রাতে কি কেউ এসেছিলো?
তাসনিয়াঃ (চমকে উঠে)হঠাৎ..একথা বলছিস কেন?
লোপাঃ না মানে রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল,মনে হলো তোর সাথে কেউ কথা বলছে
তাসনিয়াঃ ক..কই নাতো,ঘুমের ঘোরে কি ভুলভাল শুনেছিস কে জানে…
লোপাঃ কি জানি হবে হয়তো কিন্তু কেন জানি আমার একটা খটকা লাগছে…
বৃষ্টিঃ ওই তুই থামবি?কি এক উদ্ভট আলোচনা!আরে বাবা অত রাতে কে আসবে আর কেনই বা আসবে?
(ওরা আলোচনা থামিয়ে দিতে বাধ্য হলো কারণ অপরিচিত একটা ছেলে ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে।ওদের কাছাকাছি আসতেই ছেলেটা একটা লাল গোলাপ আর একটা ভিউ কার্ড তাসনিয়ার দিকে এগিয়ে দিল)
– আসসালামু আলাইকুম ভাবি,ভাই আপনাকে এগুলো দিতে বললো
তাসনিয়াঃ আ..আপনি কি আমাকে বলছেন?
– জ্বি ভাবি

তাসনিয়াঃ কি আশ্চর্য!আপনি আমাকে ভাবি ভাবি করছেন কেন?
– ভাই ই তো বললো
তাসনিয়াঃ দেখুন আমি কারো ভাবি টাবি না,আমাকে আর কক্ষণও এই নামে ডাকবেন না
– ঠিক আছে ভাবি,আপনার যা ইচ্ছা এখন ধরেন নাহলে ভাই আবার রেগে যাবে
তাসনিয়াঃ দেখুন আপনার বোধহয় কোন একটা ভুল হচ্ছে,এগুলো আমার হতেই পারে না
– জ্বি না কোন ভুল হচ্ছে না,সায়ন ভাই আপনাকেই দিতে বলেছে
বৃষ্টিঃ ওয়েট এ মিনিট,কি যেন বললেন নামটা?
– কেন?সায়ন ভাই…
বৃষ্টিঃ এই তাসু তুই কি এই নামে কাউকে চিনিস?
তাসনিয়াঃ সায়ন নামটা শুনতেই চমকে উঠলাম,এই নামেতো আমি একজনকেই চিনি কিন্তু উনি এখানে…অসম্ভব,এটা কিভাবে সম্ভব!(মনে মনে)
লোপাঃ সায়ন?এটাতো…It can’t be.That’s impossible…
বৃষ্টিঃ কি ইম্পসিবল?আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না
তাসনিয়াঃ তোকে কিছু বুঝতে হবে না।It’s just a coincidence,nothing more than that.সায়ন নামে আমি একজনকেই চিনতাম কিন্তু সে অনেক আগেই আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে।এই নামে আমি আর কাউকে চিনি না আর চিনতে চাই ও না
সায়নঃ রিয়ালি?
(হঠাৎ সায়নের কণ্ঠস্বর কানে আসতেই সবাই পেছন ফিরে তাকালো)
তাসনিয়াঃ আ..আপনি?
সায়নঃ আমাকে যখন চেনোই না তখন চেনানোর একটা ব্যবস্থা যে করতেই হচ্ছে…
তাসনিয়াঃ মানে?
সায়নঃ চলো আমার সাথে
তাসনিয়াঃ কোথায় আর আমি খামোখা আপনার সাথে যাবো কেন?
সায়নঃ আমি বলছি তাই,এখন ভালোই ভালোই যাবে নাকি তোমাকে কোলে করে…অবশ্য তাতে আমার কোন আপত্তি নেই বরং খুশিই হবো
তাসনিয়াঃ না না তা আর লাগবে না আমি একাই যেতে পারবো
লোপাঃ কিন্তু…
তাসনিয়াঃ চিন্তা করিস না,আমি সব সামলে নিব

বৃষ্টিঃ Are you sure?
তাসনিয়াঃ হুম
(কিছুক্ষণ পর)
তাসনিয়াঃ বলুন কি বলবেন
সায়নঃ তেমন কিছুই না,একটু আগে বলছিলে না আমাকে চেনো না।আসলে আমারই ভুল,তোমার সাথে প্রোপারলিই ইন্ট্রোডিউস করা হয়নি সো…হাই আমি সায়ন,নাইস টু মিট ইউ…
তাসনিয়াঃ থ্যাঙ্ক গড আপনিই সায়ন
সায়নঃ কেন?নামটা বুঝি মনে ধরেছে?
তাসনিয়াঃ মোটেও না,ব্যপারটা ঠিক উল্টো
সায়নঃ মানে?
তাসনিয়াঃ কাল রাতে আপনাকে পছন্দ না করার পেছনে একটা কারণ জানতে চেয়েছিলেন না?এটাই হচ্ছে সেই কারণ।আপনার নাম সায়ন আর এই কারণটাই আমার জন্য যথেষ্ট
সায়নঃ কিন্তু কেন?এটা কোন উপযুক্ত কারণ হতেই পারে না
তাসনিয়াঃ আপনার কাছে না হতে পারে বাট আমার জন্য এই একটা কারণই যথেষ্ট।এই একটা নাম আমার জীবনে বিষের কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে,ওটাকে আর নতুন করে জাগিয়ে তোলার শক্তি,সাহস বা ইচ্ছা কোনটাই আমার নেই
সায়নঃ কিন্তু কেন?
তাসনিয়াঃ সেটা আপনার না জানলেও চলবে জাস্ট এটা জেনে রাখুন We are not made for each other and our connection is simply impossible…
(সায়নকে আর কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তাসনিয়া চলে গেল)
সায়নঃ জানিনা আমার নামটা তোমার কেন এতো অপছন্দ,কি এমন রহস্য লুকিয়ে আছে এই নামের পেছনে।তবে কারণ যাই হোক সব বাধা পেরিয়ে তোমার মনটাকে তো আমি দখল করবই আজ না হয় কাল…
চলবে….