Childhood marriage 2 !! Part- 29
#লেখিকা-সানজিদা সেতু
একটা লেকের পাড়ে এসে থামলো সায়ন,ছোঁয়ার হাত ছেড়ে দিল।পশ্চিম আকাশের চাঁদটার আলো ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে আর সেই স্নিগ্ধ আলোতে চারপাশে কেমন একটা মায়াময় আবহের সৃষ্টি হচ্ছে।লেকের স্বচ্ছ পানিতে চাঁদের প্রতচ্ছবিটা যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে,তারসাথে সাথে যুক্ত হয়েছে দূর থেকে ভেসে আসা দুই একটা রাতজাগা পাখির ডাক।লেকের আশেপাশে মানুষজন বেশ কম,মাঝে মাঝে দুই একটা প্রেমিক যুগল বসে আছে।তবে এই সময়টাতে লেকের ধারে ফ্রেণ্ড সার্কেলের আনাগোনাটা একটু বেশি,ওরা যেখানটাতে দাঁড়িয়ে আছে তার থেকে একটু দূরেই এমনই একটা সার্কেল দেখা গেল।ওদের মধ্যে একটা ছেলের হাতে গিটার,ছেলেটা গিটার বাজিয়ে গান গাইছে আর বাঁকিরা গানের সাথে হাত তালি দিচ্ছে আর মাঝে মাঝে নিজেরাও গলা সাঁধছে।
“দিও তোমার মালা খানি বাউলের এই মনটারে
আমার ভিতরও বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে…”
ছেলেগুলো গান গেয়ে চলেছে,সায়ন আর ছোঁয়া একটু দূরেই বসে আছে,দূর আকাশের ওই চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে কল্পনার জগতে হারিয়ে গেছে দুজনের কারোরই জানা নেই…
(কয়েকদিন পর)
ঘড়িতে রাত প্রায় এগারোটার কাছাকাছি,ছোঁয়ার ফোনটা হঠাৎ করেই বেজে উঠলো,স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠেছে সায়নের নাম
ছোঁয়াঃ হ্যালো
সায়নঃ ঘুমিয়ে পড়েছিলে?
ছোঁয়াঃ কই নাতো
সায়নঃ তাহলে এক কাজ কর,ঝটপট নিচে নেমে এসো
ছোঁয়াঃ মানে!আপনি কি এখানেই কোথাও…ছুটে গিয়ে জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিলাম
সায়নঃ ওকে হাত নেড়ে নিচে নামতে বললাম
ছোঁয়াঃ আপনি!আপনি এত রাত্রে এখানে!আপনার কি মাথার ঠিক আছে?কেউ দেখে ফেললেতো সর্বনাশ হয়ে যাবে…
সায়নঃ বেশি কথা না বলে ঝটপট নিচে নেমে আসো
ছোঁয়াঃ কিন্তু…
সায়নঃ আরে বাবা বলছি তো কিচ্ছু হবে না
ছোঁয়াঃ বললেই হল কিছু হবে না!ধ্যাত এই লোকের সাথে কথা বলাই ঠিক না,ফোনটা কেটে দিয়ে চুপচাপ টেবিলে গিয়ে বসে পড়লাম
(কিছুক্ষণ পর)
লোপাঃ চল ছোঁয়া
ছোঁয়াঃ কোথায়?
লোপাঃ নিচে,সায়ন ভাই ওয়েট করছে
ছোঁয়াঃ মানে কি?এত রাতেতো দারোয়ান মামা গেটই খুলবে না তাহলে শুধু শুধু…
লোপাঃ আগে চলতো তারপর দেখা যাবে
ছোঁয়াঃ কিন্তু…
লোপাঃ চুপ..আর কোন কথা না চল…
(লোপা ছোঁয়াকে নিয়ে নিচে নেমে আসলো কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে ওরা আসার প্রায় সাথে সাথেই দারোয়ান মেইনগেটের দরজা খুলে দিল!)
ছোঁয়াঃ অবাক হয়ে লোপার দিকে তাকালাম
লোপাঃ হা করে কি দেখছিস?তাড়াতাড়ি চল…
(ওরা বের হয়ে আসলো।সায়ন আর মারুফ বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল,ওদেরকে দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে আসলো)
মারুফঃ হাই
লোপাঃ হাই,কেমন আছেন?
মারুফঃ এতক্ষণ ভাল ছিলাম না বাট এখন অনেক ভাল লাগছে
লোপাঃ কেন হঠাৎ করে কি এমন হল যে…
মারুফঃ ইয়ে মানে আমাদের মনে হয় এখান থেকে এখন যাওয়া উচিত নাহলে আবার গোলমাল হয়ে যাবে
লোপাঃ কি গোলমাল?
মারুফঃ না মানে দারোয়ানকেতো অনেক কষ্টে ম্যানেজ করেছি কিন্তু বেশি জানাজানি হয়ে গেলে আবার ভেজাল হয়ে যাবে…
লোপাঃ আচ্ছা চলেন
মারুফঃ আচ্ছা আমরাতো বকবক করে যাচ্ছি কিন্তু যাদের জন্য এখানে আসা,তারাতো একেবারে সাইলেন্স মুডে চলে গেছে!কি রে সায়ন,কথা বলছিস না কেন?
সায়নঃ কি বলব?
মারুফঃ কি বলব মানে?ওই শালা কিছু বলবি নাতো এত রাতে এখানে কেন নিয়ে আসলি?
লোপাঃ ইয়ে মানে আমার মনে হয় ওদেরকে একটু একা ছেড়ে দেওয়া উচিত,আমরা বোধহয় ওদেরকে একটু ডিস্টার্ব করে ফেলছি
মারুফঃ তাই?আচ্ছা ঠিক আছে চলুন ওদিকটায় যাওয়া যাক,ওদিকে আমাদের বাঁকি বন্ধুরা বসে আছে
লোপাঃ বন্ধুরা?
মারুফঃ ভয়ের কিছু নেই,আমরা আসলে সবাই ই ওদের জন্য এসেছি।আসলে এত রাতে ক্যাম্পাসে বোঝইতো…
লোপাঃ আচ্ছা চলুন,যাওয়া যাক…
মারুফঃ সায়ন…আমরা আশেপাশেই আছি,কিছু লাগলে বলিস
একটা বিশাল মাঠ,দুই বিল্ডিংয়ের মাঝখানের এই জায়গাটা সারাদিন স্টুডেন্টদের কোলাহলে পরিপূর্ণ থাকে কিন্তু এখন?এখন স্বাভাবিকভাবেই পুরো মাঠটাই ফাঁকা,একেবারে নির্জন জনশূন্য হয়ে পড়ে আছে।
মাঠের ঠিক মাঝখানে আকাশের দিকে তাকিয়ে পাশাপাশি শুয়ে আছে সায়ন আর ছোঁয়া।ছোঁয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে তারাগোনায় ব্যস্ত আর সায়ন?সায়ন ব্যস্ত ছোঁয়াকে দেখায়।যদিও এই অন্ধকারে চাঁদের হালকা আলোয় কোনকিছুই ঠিকমত দেখা যাচ্ছে না কিন্তু তবুও এই আবছা আলো ছায়ার খেলায় ছোঁয়ার এক অন্য রূপ ফুটে উঠছে।ওকে আর ঠিক মানুষ বলে মনে হচ্ছে না,মনে হচ্ছে যেন স্বপ্নলোকের রাজকুমারী যেন পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছে।সায়ন কিছুতেই ওর দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না…
(কিছুক্ষণ পর)
সায়নঃ ছোঁয়া…
ছোঁয়াঃ জ্বি?
সায়নঃ চল
ছোঁয়াঃ কোথায়?
সায়নঃ আচ্ছা তুমি কি প্রশ্ন ছাড়া কখনও কোন কাজ করতে পারো না?
ছোঁয়াঃ না মানে আসলে…
সায়নঃ চলো….
ছোঁয়াকে সায়ন একরকম জোর করেই ওখান থেকে নিয়ে আসলো।ছোঁয়া এখনও মুখ ভার করে আছে কারণ ওর কিছুতেই আসতে ইচ্ছে করছিল না
সায়নঃ মন খারাপ?
ছোঁয়াঃ হুম
সায়নঃ কেন?
ছোঁয়াঃ ওখানেইতো ভাল লাগছিল,শুধু শুধু এখানে নিয়ে আসলেন কেন?
সায়নঃ ওখানেওতো আমিই নিয়ে গিয়েছিলাম তাইনা?
ছোঁয়াঃ হুম
সায়নঃ তাহলে ট্রাস্ট মি,যেখানে নিয়ে যাচ্ছি সেখানেও ভালোই লাগবে
ছোঁয়াঃ এটাতো…
সায়নঃ সেন্ট্রাল ক্যাফেটেরিয়া
ছোঁয়াঃ কিন্তু আমরা এখানে…
সায়নঃ ভেতরে চল তাহলেই বুঝতে পারবে
ছোঁয়াঃ হুম…
(সায়ন ছোঁয়াকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো,চারপাশে একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার।ভয় পেয়ে ছোঁয়া সায়নের হাত চেপে ধরলো)
সায়নঃ ভয় পেও না,আমি আছিতো…
(সায়ন শিস বাজাতেই রুমের লাইটগুলো সব জ্বলে উঠলো,পুরো রুমটাকে বেলুন আর কালারফুল পেপার আর জরি দিয়ে সাজানো হয়েছে।লাল,নীল,সবুজ,সাদা বিভিন্ন রঙের লাইট আর তারসাথে রোমান্টিক ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক।এক কথায় মুগ্ধ করার মত একটা পরিবেশ…)
ছোঁয়াঃ (অবাক হয়ে)এ..এসব…
সায়নঃ ওয়েট…
(সায়ন আবারও শিস বাজালো আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভেতর থেকে একে একে সায়নের সব বন্ধুরা বেরিয়ে আসলো)
“Happy birthday to you
Happy birthday to you
Happy birthday dear Chowa
Happy birthday to you…”
(ছোঁয়া অবাক হয়ে সায়নের দিকে তাকালো)
সায়নঃ (মুচকি হেসে) Happy birthday baby
ছোঁয়াঃ আপনি..কিভাবে…
সায়নঃ তোমার ব্যপারে এমন অনেককিছুই আমি জানি
ছোঁয়াঃ কিন্তু…
লোপাঃ এই যে দুলাভাই,ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি এদিকেও একটু আসবেন?আমাদেরকেওতো একটু সময় দিন…
(সায়ন লোপার দিকে এগিয়ে গেল,পাশেই মারুফ দাঁড়িয়ে ছিল,ওকে দেখেই এগিয়ে আসলো)
মারুফঃ (ফিসফিস করে)টেনশন নিস না,কেউ এখনও ভাবীর আসল পরিচয় জানে না
সায়নঃ থ্যাংকস দোস্ত
মারুফঃ মেনশন নট
খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই পার্টি ইনজয় করায় ব্যস্ত,শুরুতে খুব রোমান্টিক একটা গান বেজে উঠল আর সবার রিকুয়েস্টে সায়ন আর ছোঁয়াকে ডান্সফ্লোরে নামতে হল।সায়ন একহাতে ছোঁয়ার কোমড় পেঁচিয়ে রেখেছে আর অন্য হাতে ছোঁয়ার এক হাত ধরে রেখেছে আর ছোঁয়া সায়নের কাঁধে আলতো করে নিজের হাতটা রেখেছে।ওর খুব আনইজি ফিল হচ্ছে কিন্তু সবার সামনে কিছু বলতেও পারছে না তাই চুপচাপ সায়নের সাথে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে।ওদিকে সায়ন কিন্তু বেশ ইনজয় করছে,ছোঁয়াকে এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ কখনও পায়নি তাই এই সুযোগটার পুরো সদ্ব্যবহার করছে।ওর চুলের গন্ধ যেন সায়নকে পাগল করে দিচ্ছে,অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছে
মারুফও কিন্তু সুযোগটা হাতছাড়া করেনি,লোপার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।লোপাও না করতে পারেনি,মারুফের হাত ধরে ডান্সফ্লোরে নেমে এসেছে…
একটু পরেই ডিজে মিউজিক বাজা শুরু হল আর সবাই একেবারে উড়াধুড়া ডান্স শুরু করল,কারো দিকে যেন কারো খেয়ালই নেই।এই সুযোগে সায়ন ছোঁয়ার হাত ধরে বেরিয়ে আসলো,সোজা ক্যাফেটেরিয়ার পাশের পুকুরপাড়ে গিয়ে বসলো
ছোঁয়াঃ এখানে…
সায়নঃ শসসস…এই নাও ধরো
ছোঁয়াঃ এটা?আইসক্রিম!
সায়নঃ হুম,তোমার না রাত্রিবেলা আইসক্রিম অনেক পছন্দ
ছোঁয়াঃ অফকোর্স পছন্দ কিন্তু এভাবে না
সায়নেঃ তাহলে?
(ছোঁয়া পায়ের হিল খুলে পুকুরের পানিতে পা ডুবিয়ে আইসক্রিম খেতে লাগলো,সায়নও আর দেরি না করে ওর পাশে গিয়ে বসে পড়লো।মেয়েটা ছোট বাচ্চাদের মত করে আইসক্রিম খাচ্ছে,গালের এখানে ওখানে আইসক্রিম লেগে যাচ্ছে।সায়নের খুব ইচ্ছে করছে গালটা মুছে দিতে কিন্তু…)
সায়নঃ ছোঁয়া…
ছোঁয়াঃ হুম?
সায়নঃ একটা কথা বলব?
ছোঁয়াঃ হুম
সায়নঃ বলছি যে আমাকে কি মাফ করে দেয়া যায় না?
চলবে…
#নোটঃ জানি আজকের পর্বটা একটু ছোট হয়ে গেছে কিন্তু কি করব বলুন প্রজেক্ট পেপার লিখতে লিখতে আমার মাথাটাই খারাপ হয়ে গেছে।আর কালকে কিন্তু গল্প দিতে পারব না তাই ছোটকরে হলেও আজকে একটা পর্ব দিয়েই দিলাম।কেমন লাগলো জানাবেন