1. নতুন গল্পঃ3. রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প গুলোঃলেখাঃ মস্ত লিজাসেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! লেখাঃ মস্ত লিজা

সেলিব্রেটি স্বামী

হেঁচকা টানে বোরখার নেকাবটি খুলে ফেললো।থিমারটি টেনে ছিঁড়ে ফেললো।তারপর সিঁড়ি থেকে ঘেঁষতে ঘেঁষতে নিয়ে এলো আমার রুমে।আমার হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে।পায়ে অসহনীয় ব্যাথা করছে।চিৎকার দেওয়ার শক্তিটুকু আমার মাঝে নেয়।আমি ঘামছি।ব্যাথায় কুঁকড়ে আছি।আমার চুলের মুঠি ধরে শেষ বারের মতোন জিজ্ঞাসা করলো, বিয়ে কি করবি?
-নাহ!

(বিঃ দ্রঃ “ সেলিব্রেটি স্বামী !! লেখাঃ মস্ত লিজা ” গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)

ঠাসসসস! করে একটা চর বসিয়ে দিলো আমার গালে।
আলমারি থেকে আমার সমস্ত হিজাব, নেকাব আর যতো বোরখা আছে এনেই আমার চোখের সামনে প্রেক্টোল ঢেলে জ্বালিয়ে দিলো।আমি কাঁদছি। চিৎকার করছি। আমার কান্না কি
কারও দেখার নয়?
আমি আজ বড় অসহায়।

কারণ আমার আপন মা আমাকে এই যন্ত্রণাটা দিচ্ছে। আমার উপর অত্যাচার করছে। কেন? কারণ আমি বিয়ে করবো না বলেছি।
আমি আরিশা জান্নাত।বয়স আমার বেশি না সবে মাত্র ১৯! অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ি।বুঝতে শিখেছি ধরে কখনো মাথার একটা চুলও পরপুরুষকে দেখাই নি।স্কুল লাইফ শেষ হতেই হাতে পায়ে মোজা পরা শুরু করেছি।সব ছেলে বন্ধুর সাথে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছি।এমন কি মোবাইল ফোন থেকে অভিভাবক ছাড়া সকলের নাম্বার ডিলিট করে দিয়েছি।এসবের জন্য অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে আমাকে।পরিবারের বিপক্ষে যেতে হয়েছে।কারণ আমার মা পছন্দ করেন না এসব সাজ পোশাক।বাবা আমার বিদেশ থাকে।বছরে একবার কি দুবার দেশে আসে।এখানে আমি কেমন আছি সেটা জানতে চাওয়ার সময়টুকুও তার নেয়।আমি অনেক বলেছি বাবাকে বাবা আমি ভালো নেয়। বাবা শুনেছে কিন্তু গুরুত্ব দেয় নি।শুধু বলেছে মা যা করেন সন্তানের ভালোর জন্যই করেন।মায়ের থেকে ভালো একটা সন্তানকে আর কেউ বাসতে পারে না।বাবারে আজ যদি তুমি দেখতে তোমার ছোট্ট রাজকন্যাটা কত্ত সুখে আছে তাহলে কি বুঝতে? নাকি বরাবরের মতোই মায়ের সাপোর্ট নিতে? মা শব্দটা কতোই না পবিত্র।কিন্তু আমার বেলায় কেন এতো নিষ্ঠুর হলো বলোতো?

ঘন্টা দুই পরে, পাত্র পক্ষের আনা গোনা শোনা যাচ্ছে।বাড়ি ভর্তি মেহমান।প্রেস, মিডিয়া কোন কিছুর বাদ যায় নি।পাত্রের বয়স ৩০।শরীরের গঠন কাঠামোও খারাপ না।শুধু একটাই অপ্রিয় সত্য যা মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না আর সেটা হচ্ছে পাত্র মাতাল, দুশ্চরিত্র।একজন তারকা অভিনেতা।যাকে নিয়ে রোজ কিছু না কিছু নিউজ পত্রিকায় পরেছি।সে নিজেই বলেছে এর আগে নাকি অনেক মেয়েকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে ছেড়ে দিয়েছে।দিন দুপুরে মদ খেয়ে মাঝ রাস্তায় মাতলামি করেছে।মিডিয়ার সাক্ষাতে বলেছে, সে নিজের যা ইচ্ছা শুধু তাই করে।কাউকে শোনে না।কাউকে মানে না।সেদিন ছিলো ঝড় বৃস্টির দিন।রিক্সা না পেয়ে ভার্সিটি থেকে হেঁটেই ফিরছিলাম।পথে ভীর ভাট্টা দেখে ঠেলে এগিয়ে গিয়ে দেখি একজন বাবার বয়সী বৃদ্ধ রিক্সাচালককে কেউ বেঘোরে পিটাচ্ছে।রাস্তার মানুষ কেউ আগাচ্ছে না।আমি কিছু না বুঝেই রাগ কন্ট্রোলে রাখতে না পেরে সাহস দেখিয়ে গিয়ে লোকটাকে টেনে কষিয়ে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিই।সঙ্গে সঙ্গে আমার চারপাশে ছয় সাত জন মানুষ ঘিরে ধরে।

 

দূর থেকে আমার থাপ্পড় দেওয়ার দৃশ্যটি কেউ ক্যামেরায় বন্দী করে নেয়। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফেসবুক, ইউটিউব সবখানে ভাইরাল হয়ে যায় সেই দৃশ্য। লোকটির মুখের দিকে তাকিয়ে আমি অবাক।এতো আহান খান।আমার কিছু বুঝে ওঠার আগে সে এসে আমার হাতটা খপ করে ধরে বসে।আর বলে, তার গাড়িতে উঠতে।

আমি উঠতে চায় না।সে জোড় করে আমাকে টেনে তার গাড়িতে উঠিয়ে দেয়।তারপর সে আমাকে তার জানোয়ারী রূপগুলোর বিবরন শোনায়। আমাকে বোঝায় তার গায়ে হাত তুলে কত বড় ভুল করেছি আমি।
গাড়িটা এনে সে তার বাড়ির সামনে থামায়।বাড়ির মধ্যে টেনে হিচরে নিয়ে গিয়ে সে তার বডি গার্ডগুলোকে বাড়ির বাইরে যেতে বলে।তারা চলে গেলেই সে আমাকে শক্ত করে তার বাহুতে টেনে জড়িয়ে ধরে। ভয়ে আমি কিছু বুঝতেই পারছিলাম না কি করবো।হঠাৎ তার মাকে ডাকতে থাকে। তার মা আসতেই বলে, এই মেয়েকে আমি বিয়ে করবো মা।এর কথা বলেছিলাম তোমাকে আমি।
তার মা কিছু বলতে যাবে আমি না শুনেই কোনো রকমে নিজেকে তার থেকে ছাড়িয়ে ছুটে তার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসি।কিন্তু সে আমার পিছু ছাড়ে না।আমাকে ফলো করতে করতে আমার বাসায় অবদি পৌঁছে যায়।অনেক টাকা দিয়ে আমার মাকেও কিনে নেয়।আর আমাকে বিয়ে করতে চায়।তার মতো চরিত্রহীন আর অভদ্র লোককে কখনোই বিয়ে করা যায় না।

হাদিসে আছে, একজন সৎ চরিত্রবান নারী একজন সৎ চরিত্রবান পুরুষের জন্য আর একজন সৎ চরিত্রবান পুরুষ একজন সৎ চরিত্রবান নারীর জন্য।(আন-নুর ২৬) আমি আমার দিক থেকে যথেষ্ট চেস্টা করেছি এ বিয়ে ভাঙতে কিন্তু পারি নি।তার জন্য পালাতে চেয়ে ছিলাম আমি।কিন্তু ভাগ্য আমার এতো খারাপ যে ধরা পরে গেলাম।আমার বোরখা, নেকাব, খিমার, হিজাব সব পুড়িয়ে ফেলেছে আমার মা।মায়ের মুখে একটাই কথা জীবনে টাকাই সব।আর কিছু তার দেখার মধ্যে পরে না।

শহরের সবচেয়ে নামী দামি বিউটিশিয়ানরা চলে এসেছে।সব জিনিসপত্র বের করে সাজাতে শুরু করেছে।আমি নিরুপায়! চাইলেও কিছু করতে পারছি না।এমন সময় আমার ছোটবোন রুমে আসে। আমার হাতে নিজের বোরখাটা দিয়ে বলে, এটা পরে পালিয়ে যা আপু এখান থেকে। তোর মন না চাইলে এ বিয়ে করিস না।আমি ধন্য যে আমার বোনটা অন্তত আমার কথা ভেবেছে।কিন্তু আমি যাবো কিভাবে? সারা শরীরে যে অসহনীয় ব্যাথা করছে।চলার শক্তিটুকুও আমার মাঝে নেয়। নাহ! আমাকে পারতেই হবে।মনের উপর জোড় দিয়ে উঠে দাড়ালাম আমি।বোনের বোরখাটা পরে আমার একটা ওরনা দিয়ে ভালোভাবে মুখ বেঁধে নিয়ে হাতে পায়ে মোজা পরে রুম থেকে বের হলাম। দেখি সারা বাড়ি ভর্তি লোকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।সবার চক্ষু এড়িয়ে কিভাবে পালাবো এবার?

ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে পালানোর সুযোগটাও ছোট বোন করে দিয়েছে। সকলের চক্ষু এড়িয়ে ও আমাকে বের করে দিয়েছে বাড়ির থেকে।
রাস্তায় এসে আমি ঠিকভাবে চলতে পারছি না।মাথাটার মধ্যে ঘুরাছে।চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা দেখতে লাগছে।শরীরে অসহনীয় ব্যাথা।কিছুদূর এসেই ধপ করে বসে পরলাম মাঝ রাস্তার মধ্যে।আমার চোখদুটো আস্তে করে বুজে গেল।তারপর আর কি হলো আমার কিচ্ছু মনে নেই।
চোখ মেলে দেখি আমি হসপিটালে।

আমার সামনে মা আর ওই যঘন্য মানুষটা দাড়িয়ে আছে। মা আমার দিকে তেড়ে এগিয়ে আসতে লাগে। সে বাঁধা দিয়ে চোখের ইশারায় বেড়িয়ে যেতে বলে।মা বেড়িয়ে গেলে সে আমার পাশে এসে বসেই আমাকে দেয় এক ধমক।
আমি একদম নিশ্চুপ হয়ে আছি।কোনো কথা বলছি না।আমার নিরাবতা দেখে সে আমার হাতটা টেনে ধরে।আমাকে বলে, তোর সাহস হয় কি করে বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার? তুই কি জানিস, তোর মতো দু’টাকার সস্তা মেয়ে মিনিটে মিনিটে কিনে সামনে দাড় করানোর ক্ষমতা আমি রাখি? তোকে বিয়ে করতে চেয়েছি আমি এটাই তোর ভাগ্য।

আমি কিছু না বলে, অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি।নিজের হাত ছাড়ানোর অযথা চেস্টা করছি তার হাতের থেকে।সে আমাকে আরও জোড়ে টেনে ধরে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়, আজ যদি তুই সত্যি চলে যেতি তাহলে প্রেস, মিডিয়াতে আমাকে নিয়ে কত নিউজ বানানো হতো যানিস? হেড লাইন হতো আহান খানের বিয়ের দিন তার হবু বউ পালিয়েছে। তোর মতোন মেয়ে এইসবের কি বুঝবে? গাঁধি! ডাফর! আরে কত মেয়ে আমার জন্য নিজের হাত কেটেছে সেটাও তোর কল্পনার বাহিরে।
চলবে,,,,,

বিঃ দ্রঃ নিচে Next >> ক্লিক করলে পরবর্তী পর্ব পাবেন..!

বিঃ দ্রঃ ” লেখাঃ মস্ত লিজা ” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন…

👉আমাদের ফেসবুক পেজ

 

সেলিব্রেটি স্বামী সেলিব্রেটি স্বামী সেলিব্রেটি স্বামী সেলিব্রেটি স্বামী সেলিব্রেটি স্বামী সেলিব্রেটি স্বামী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *