Childhood marriage

Childhood marriage 2 !! Part- 24

#Childhood_marriage_2
#পর্ব-২৪
#লেখিকা-সানজিদা সেতু
ছোঁয়া সমানে হাত-পা ছুড়ছে,যে ওকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে,ওকে ধরে রাখার জন্য তাকে রীতিমত বেগ পেতে হচ্ছে।বেশ কিছুক্ষণ পর ছোঁয়াকে একটা রুমে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিল
ছোঁয়াঃ কে আপনি?কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?দেখুন আপনি কিন্তু কাজটা মোটেও ভাল করছেন না,আমি কিন্তু চিৎকার করব…
(এরমধ্যেই রুমের লাইটটা জ্বলে উঠল,তীব্র আলোতে প্রথমে চোখ বন্ধ করে ফেললেও একটু পরেই চোখ মেলে তাকালো ছোঁয়া আর চোখের সামনে যেই মানুষটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল তাকে দেখে রীতিমত শক খেল)
ছোঁয়াঃ আ..আপনি!!!
সায়নঃ হ্যাঁ আমি,কেন অন্য কাউকে এক্সপেক্ট করছিলে নাকি?
ছোঁয়াঃ না মানে সেরকম কিছু না,আ..আসলে আপনি..আপনি আমাকে এভাবে এখানে নিয়ে আসলেন কেন?আর এটা কোন জায়গা?
সায়নঃ পাবে পাবে সব প্রশ্নের উত্তর পাবে,আগে বল তুমি এই ক্যাম্পাসে কি করছো?
ছোঁয়াঃ আ..আমি এখানে ভর্তি হয়েছি তাই…
সায়নঃ ভর্তি হয়েছো!তা এসব কবে হল?কে এসেছিল সাথে?
ছোঁয়াঃ সপ্তাহ খানেক আগে আর বাবা এসেছিল আমার সাথে
সায়নঃ কার বাবা?
ছোঁয়াঃ মা..ম..মানে?
(সায়িন এতক্ষণ রাগটাকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করে রেখেছিল কিন্তু এবার আর পারল না)
সায়নঃ মানেটা খুব পরিষ্কার,আমার বাবা তোমাকে নিয়ে এতদূর এসে এতকিছু করে গেল আর আমি তার কিছুই টের পেলাম না!এই মেয়ে কি প্রবলেম তোমার?কি পেয়েছো তুমি,একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো উনি আমার বাবা,তোমার না সো এরপর থেকে আমাকে ছাপিয়ে আমার বাবা-মাকে নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করবে না বুঝেছো…

ছোঁয়াঃ আ..আমি আবার কি করলাম?
সায়নঃ কি করেছো কিছুই বুঝতে পারছো না তাইনা?এই মেয়ে তোমার সাহস কি করে হয় আমার বাবা-মাকে দিয়ে আমার কাছে মিথ্যে কথা বলানোর!তোমার জন্য আমার বাবা-মা আমাকে এতদিন কতগুলো মিথ্যে কথা বলেছে তোমার ধারণা আছে?
ছোঁয়াঃ কি বলব বুঝতে পারছি না,উনার চোখ দুটো রাগে একদম টকটকে লাল রঙ ধারণ করেছে,ওদিকে তাকালেই ভয়ে আমার পুরো শরীর শিউরে উঠছে
সায়নঃ কি হল চুপ করে আছো কেন?কথা বল বলছি..কেন করেছো এসব?
ছোঁয়াঃ আ..আমি..আসলে..আ..আপনি একটু দূরে সরে দাঁড়াবেন প্লিজ আমার ভয় লাগছে…
সায়নঃ ভয় লাগছে!কেন আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক?
ছোঁয়াঃ আপনি প্লিজ সরে দাঁড়ান,আমার প্রচণ্ড ভয় লাগছে
সায়নঃ এখন কেন ভয় লাগবে হুম?যখন এসব কন্সপিরেসি করছিলে তখন ভয় লাগেনি?
ছোঁয়াঃ আর উনার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছি না,ভয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম
সায়নঃ এই মেয়ে,ওদিকে তাকাচ্ছো কেন?আমার দিকে তাকাতে কি সমস্যা?এদিকে তাকাও বলছি…
ছোঁয়াঃ উনাকে এই রকম রাগতে কখনও দেখিনি,শেষবার যখন দেখেছিলাম তখন আমি অনেক ছোট।সেই প্রথমদিন যখন আমি উনাদের স্কুলে গিয়েছিলাম সেদিন কিন্তু তখনকার রাগ আর এখনকার রাগের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য,এখনকার এই রাগটা অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।আর মাথা তোলার সাহস পেলাম না,আরও নিচু করে ফেললাম…
সায়নঃ কি বলছি শুনতে পাচ্ছো না?নাহ এভাবে হবে না,ওকে একেবারে দেয়ালের সাথে সেঁধিয়ে দিলাম।ওর দুহাত আমার দুহাত দিয়ে ধরে রেখেছি,কি হল আমার দিকে তাকাতে বললাম না?তাকাও বলছি…
ছোঁয়াঃ ভয়ে ভয়ে উনার দিকে চোখ তুলে তাকালাম।উনি খুব শক্ত করে আমার হাতদুটো ধরে রেখেছেন,প্রচণ্ড ব্যথা লাগছে কিন্তু কিছু বলতে পারছি না।রাগের মাথায় উনি হয়তো বুঝতেও পারছেন না যে উনি আমাকে কতটা শক্তি দিয়ে ধরে রেখেছেন।কি আর করা দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করছি
সায়নঃ কি হল কথা বলছো না কেন?কেন করেছো এসব?
ছোঁয়াঃ আপনাকে সারপ্রাইজ….
সায়নঃ সারপ্রাইজ!আমাকে বোকা পেয়েছো?আমাদের সম্পর্কটা এতটাও গভীর না যে তুমি আমাকে এই রকম একটা সারপ্রাইজ দেবে।সত্যি করে বল কেন করেছো…
ছোঁয়াঃ আর সহ্য করতে পারছি না,হাতদুটো মনে হয় অবশ হয়ে গেছে
সায়নঃ Speak up damn it…
ছোঁয়াঃ আহ…লাগছেতো…প্লিজ ছেড়ে দিন…
সায়নঃ এতক্ষণে খেয়াল করলাম ওর হাত চেপে ধরে রেখেছিলাম,মেয়েটার চোখে মুখে যন্ত্রণার তীব্র একটা ছাপ দেখতে পেলাম তাই আর সময় নষ্ট না করে ওকে ছেড়ে দিলাম

ছোঁয়াঃ ছাড়া পেতেই উনার থেকে দূরে সরে এসে হাঁপাতে লাগলাম…প্রচণ্ড পানি তেষ্টা পেয়েছে,গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে কিন্তু এখানে পানি কোথায় পাব…
সায়নঃ এক গ্লাস পানি ওর দিকে বাড়িয়ে ধরলাম।নাও ধরো,নিশ্চয় পানির চেষ্টা পেয়েছে…
ছোঁয়াঃ উনার হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়েই ঢকঢক করে খেতে লাগলাম
সায়নঃ ও যখন পানিটা খাচ্ছিল তখনই ওর দুই হাতের দিকে চোখ পড়ল।ফর্সা হাতে আমার আঙুলের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে,জায়গাটা একেবারে লাল হয়ে আছে।মনে হচ্ছে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে
ছোঁয়াঃ পানিটা শেষ করে উনার হাতে গ্লাসটা ফেরত দিয়েই চলে আসতে নিলাম
সায়নঃ ও চলে যাচ্ছিল,ওর হাত চেপে ধরলাম
ছোঁয়াঃ ছাড়ুন বলছি…আমাকে যেতে দিন প্লিজ…
সায়নঃ শসসস চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো,খবরদার একটুও নড়াচড়া করবে না।ইশ রে একেবারে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে…
ছোঁয়াঃ ছাড়ুন বলছি…(এতক্ষণ কষ্ট দিয়ে এখন আসছে দরদ দেখাতে…)
সায়নঃ এই মেয়ে,এত আঘাত লাগছিল তাহলে কিছু বললে না কেন?ইশ..দুই হাতে কেমন কালসিটে পড়ে গেছে..তোমাকে না ধরে থাপড়ানো দরকার,একবার বলতেতো পারতে যে লাগছে তাহলেইতো ছেড়ে দিতাম
ছোঁয়াঃ একটু আগে যে আমার উপর রাগ ঝাড়ছিল তারসাথে এই মানুষটার কোন মিলই নেই!মনে হচ্ছে যেন সম্পূর্ণ আলাদা দুজন মানুষ…
সায়নঃ ফার্স্ট এইড বক্সটা যে কোথায় গেল…এখানেইতো রেখেছিলাম,কাজের সময় যদি একটা জিনিস ঠিকমত পাওয়া যায়…
ছোঁয়াঃ শুনুন আমার ওসব কিছু লাগবে না,সামান্য একটু আঘাত লেগেছে এমনিই ঠিক হয়ে যাবে
সায়নঃ চুপ একদম চুপ,চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো এক পাও যদি নড়েছো তোমার খবর আছে…
(কিছুক্ষণ পর)
সায়ন ছোঁয়ার হাতে ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছে আর ছোঁয়া বাধ্য মেয়ের মত চুপ করে ওর সামনে বসে আছে।ঠিক তখনই ঘরের দরজাটা খুলে গেল আর দরজা ঠেলে রুমে ঢুকল মারুফ।মারুফকে দেখে ওরা দুজনেই উঠে দাঁড়ালো,মারুফতো ওদের দুজনকে একসাথে দেখে সেই লেভেলের শক খেয়েছে।হা করে শুধু একবার সায়নের দিকে আর একবার ছোঁয়ার দিকে তাকাচ্ছে,পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ছোঁয়া কাউকে কিছু না বলেই ছুটে বেরিয়ে গেল।সায়নও ওর পিছু পিছু যাচ্ছিল কিন্তু মারুফ ওকে আটকে দিল…
মারুফঃ তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিল
সায়নঃ পরে বলিস এখন একটু তাড়া আছে
মারুফঃ না কথাগুলো এখনই বলা জরুরী
সায়নঃ শোন দোস্ত,তুই আর একটু ওয়েট কর আমি জাস্ট যাব আর আসব।এসেই তোর সব কথা শুনব প্রমিজ..
মারুফঃ তোর এই জরুরী কাজটা কি মিস ফ্রেশারকে নিয়ে?
সায়নঃ চলে যেতে নিয়েছিলাম,মারুফের কথা শুনে থমকে দাঁড়ালাম।কি বললি তুই?
মারুফঃ ওই মেয়েটা,যে একটু আগে এখান থেকে ছুটে পালালো ওর সাথে তোর কি সম্পর্ক?
সায়নঃ মানে?
মারুফঃ মানে এই মেয়ের জন্যেইতো তুই তখন আমাদের সাথে ঝামেলা করলি আর এখন এই ক্লাব অফিসে একা একা তোরা দুজন…কাহিনী কি খোলাসা করে বল
সায়নঃ কাহিনী আবার কি,কোন কাহিনী নেইতো…
মারুফঃ কাহিনী যখন নেই তাহলে ওই মেয়েকে একা একা এখানে কেন নিয়ে এসেছিলি?
সায়নঃ দেখ দোস্ত তুই যেটা ভাবছিস সেটা মোটেও ঠিক না,ব্যপারটা সম্পূর্ণ আলাদা
মারুফঃ ঠিক কি ভুল সেটা আমি বুঝব আগে ঘটনাতো বল..নাকি বুঝে নেব রিয়ার মত এই মেয়েও তোর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তোর সাথে…
সায়নঃ মারুফ…রিয়ার সাথে ওকে কমপেয়ার করিস না প্লিজ
মারুফঃ তাহলে সত্যিটা বল নাহলে তোদের যে অবস্থায় দেখলাম তাতে শুধু আমি কেন যে দেখবে সেই নেগেটিভ মিনিং বের করবে
সায়নঃ ওকে ফাইন,তোকে শুধু এক কথায় একটা জবাব দিব।আশা করি ওতেই তোর সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি কিন্তু তার আগে আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে..

মারুফঃ ওকে…
সায়নঃ ওর নামটা কি জানিস?
মারুফঃ হ্যাঁ তখন অবশ্য নামটা একবার বলেছিল,কি যেন নামটা..হ্যাঁ মনে পড়েছে তাসনিয়া মাহবুব
সায়নঃ রাইট আর আমার পুরো নামটা কি?
মারুফঃ হোয়াট ননসেন্স,সায়ন তুই কিন্তু কথা ঘোরানোর চেষ্টা করছিস
সায়নঃ বেশি বকবক না করে আমার প্রশ্নের উত্তরটা দে
মারুফঃ ওকে ফাইন তোর নাম মাহবুব হাসান সায়ন,এবার খুশিতো?
সায়নঃ হুম এবার আমার উত্তরটা দিচ্ছি মন দিয়ে শোন
মারুফঃ হুম বল
সায়নঃ মেয়েটা মানে তাসনিয়াকে বাড়িতে সবাই ছোঁয়া বলে ডাকে
(কথাটা বলেই সায়ন বেরিয়ে গেল)
মারুফঃ What nonsense!সায়ন এটা কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর না,তোর আর ওর আসল নামের মধ্যে কানেকশনটা কি?আর what do you mean by তাসনিয়ার নিকনেম ছোঁয়া?ওয়েট এ মিনিট,তাসনিয়ার নিকনেম ছোঁয়া!
তাসনিয়া যদি ছোঁয়া হয়..তারমানে তো…এই সায়ন…দোস্ত এক মিনিট দাঁড়া,আমিও আসছি…
(সায়ন বেশ দূরে চলে এসেছে,মারুফ একরকম দৌঁড়ে এসে ওকে ধরল)
মারুফঃ আচ্ছা এই মেয়েই কি…
সায়নঃ তোদের ভাবী,মিসেস তাসনিয়া মাহবুব ছোঁয়া
মারুফঃ মা..ম..মানে কিভাবে কি আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না…
সায়নঃ আমি নিজেই কিছু বুঝছি না তাহলে তুই কেমনে বুঝবি!
মারুফঃ মানেটা কি,তুই এই ব্যাপারে কিছু জানতি না?
সায়নঃ নাহ কিচ্ছু জানতাম না,কেউ আমাকে কিছুই বলেনি।ওকে আজ ক্যাম্পাসে দেখে আমিতো সেই লেভেলের শক খেয়েছি
মারুফঃ রিয়েলি!হাহাহা শেষমেশ বউকে দেখে শক!হাহাহা
সায়নঃ ওই শালা চুপ কর,আমার যে কি পরিমাণ রাগ হচ্ছে তোকে বোঝাতে পারব না
মারুফঃ কেন কিসের রাগ,তোর জন্যতো ভালই হল তুই আর ভাবী একই ক্যাম্পাসে…
সায়নঃ ওসব বাদ দে,আগে ক্যাফেটেরিয়া থেকে একটু বরফের ব্যবস্থা করে দে
মারুফঃ বরফ!বরফ কি হবে?মাথায় দিবি নাকি হাহাহা
সায়নঃ আমার মাথায় না তোর মাথায় দিব রে শালা,যা বলছি কর না এত বকবক করছিস কেন?
মারুফঃ কারণটা না বললে আনব না আর তোর মাথাতো প্রচুর হট আছে,তোরও উচিত মাথায় বরফ পানি ঢালা…
সায়নঃ সে না হয় পরে হবে আগে ছোঁয়ার ব্যবস্থাটাতো করি…
মারুফঃ এই এই দাঁড়া,ছোঁয়ার ব্যবস্থা করবি মানে?তুই আবার মেয়েটার সাথে উল্টো পালটা কিছু..এক মিনিট ও যখন বেরিয়ে গেল তখন মুখটা অমন মলিন দেখাচ্ছিল কেন?সত্যি করে বল মেয়েটার সাথে তুই এক্স্যাক্টলি কি করেছিস…
সায়নঃ তেমন কিছু না,ওই রাগের মাথায় একটু…

মারুফঃ তুই রাগলে যে একটু আধটু কিছু করিস না সেটা আমার খুব ভাল করেই জানা আছে,ভনিতা না করে বলে ফেল কি করেছিস…
সায়নঃ ওকে যখন বকা দিচ্ছিলাম তখন হাতদুটো খুব শক্ত করে চেপে ধরেছিলাম তাই কালসিটে পড়ে গেছে
মারুফঃ হোয়াট!এইটাকে তুই সামান্য ব্যপার বলছিস!আচ্ছা তুই কি মানুষ?যা কিছু হয়েছে তাতে ওর কি দোষ?আমরা সিনিয়ররা র‍্যাগিং করছিলাম বলেইতো…
সায়নঃ আমিও না ঠিক বুঝতে পারছি না,হঠাৎ করে এত রাগ কেন যে উঠল…যাই হোক এখন চল পাগলীটাকে খুঁজে বের করতে হবে
মারুফঃ হ্যাঁ হ্যাঁ চল
চলবে..
#সরি গাইজ একটু ঝামেলা করে ফেলেছিলাম,এবার ঠিক করে দিয়েছি।সরি এগেইন…