Adorable Love !! লেখাঃ ঊর্মি ধর
Adorable Love
গাড়ির ডোর খুলে একপ্রকার টেনে হিচড়ে ঈশিকাকে নামালো আমান। চোখ মুখ শক্ত করে হিড়হিড় করে ঈশিকাকে টেনে বাগান বাড়ির ভেতর ঢুকলো। কাল থেকেই মেজাজ চড়ে আছে এই মেয়ের ওপর। তাই এই সকালেই অফিসের ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং ক্যান্সেল করে ভার্সিটির সামনে থেকে একপ্রকার তুলে নিয়ে এসেছে তাকে।
রাগে তার ফর্সা মুখ একদম লাল হয়ে আছে। এতো রাগের কারণ যদিও কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে ঈশিকা কিন্তু পুরোটা নিশ্চিত না। তাই কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। গাড়িতে ওঠার সময় নাকচ করলে এমন ভাবে তাকিয়েছে যেনো আস্তো কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। তাই চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো গাড়িতে উঠে বসেছে। তারপরও কয়েকদফা চিল্লিয়ে জিজ্ঞেস করায় আমানের এক আত্মা কাঁপানো ধমকেই একদম চুপসে গেছে।
(বিঃ দ্রঃ “ Adorable Love !! লেখাঃ ঊর্মি ধর ” গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)
আমানের টানাহেঁচড়ায় ঈশিকা একবার হোচট খেলো কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই আমানের। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই ঈশিকা দেখলো আমানের পি.এ. সোফায় বসে আছে। আমানকে দেখে সে উঠে এগিয়ে এসে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
—– ” স্যার…পেপারটা।”
আমান ঈশিকার হাত ছেড়ে দিয়ে পেপারটা হাতে নিয়ে দেখে বললো,
—–“পেন টা দাও।”
এরপর আমান হাতের ওপরে নিয়ে পেপারে ঘচাঘচ সাইন করে ঈশিকার হাতে পেন টা গুজে দিয়ে পেপার টা সামনে ধরে শান্ত গলায় বললো,
—– ” সাইন করো।”
—– ” কিসের সাইন…কিসের পেপার এটা? আমি কোনো সাইন করব না।” ভয়ে ভয়ে বললো ঈশিকা।
আমান নিজের বা হাত পেপারসহ কোমড়ে ঠেকিয়ে ডান হাত দিয়ে মাথার চুল টেনে অন্য দিকে ঘুরে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। তারপর কঠিন গলায় বললো,
—– ” তুমি নিশ্চয়ই চাইবে না অন্য লোকের সামনে তোমার মান সম্মান যাক..হু?”
একথা শুনেই ঈশিকা আমানের পি.এর দিক তাকালো। এ ছেলের যে পরিমাণ রাগ একে দিয়ে বিশ্বাস নেই। কথা না শুনলে কখন যে নিজের পি.এর সামনেই কষিয়ে চড় থাপ্পড় মেরে দেবে গালে তার ঠিক নেই। তাহলে মান সম্মান নিয়ে টানাটানির মতো হবে ব্যাপারখানা ।
ঈশিকা হাত বাড়িয়ে পেপার টা নিলো। যেই একবার পেপারটা পড়তে যাবে ওমনি আমান এক ধমক দিয়ে বললো,
—– ” তোমাকে সাইন করতে বলেছি আমি পড়তে নয়।”
আমানের ধমকে ঈশিকা কেঁপে উঠে টেবিলের ওপর পেপারটা নামিয়ে ঘটাঘট সাইন করে দিলো। তারপর আমান পেপারটা হাতে নিয়ে পি.এ কে বললো,
—– ” ইউ মে গো নাউ। আর হ্যাঁ বাবা বা বাড়ির কেও তোমাকে কল করলে বলবে আমি দুই দিনের জন্য ব্রেকে আছি। কেউ যেনো না জানে আমি এখানে আছি। আমার ফোন বন্ধ থাকবে তাই কেউ যেনো আমার সাথে কনট্যাক্ট করার চেষ্টা না করে এই দু’দিন। গট ইট?”
—- ” ওকে স্যার বলে দেবো।” বলেই সে চলে গেলো।
আমান আবারো ঈশিকার হাতটা খপ করে ধরে সিড়ি বেয়ে ওপরের ঘরে এসে ঈশিকাকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। দরজা লাগিয়ে পেপারটা পাশের টেবিলে রেখে ঈশিকার দিকে এগিয়ে গেলো। রাগে তার চোখ ও লাল হয়ে আছে। লাল চোখ দেখে ঈশিকা মনে মনে ভাবলো, “গাঁজা টাজা খেয়েছে নাকি লোকটা? এমন নেশাখোরদের মতো দেখাচ্ছে কেনো? আচ্ছা এখানে এনেছে কেনো আমাকে? মেরে টেরে ফেলবে না তো!!” এসব ভেবে
হকচকিয়ে উঠে দাঁড়ালো ঈশিকা।
——” কিক্কি.কি হলো? আ..আম..মাকে এখানে এনেছেন কেনো আপনি? এ..একদম কাছে আসবেন না। খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু!” কাঁপাকাঁপা গলায় পেছাতে পেছাতে বললো ঈশিকা।
——” আচ্ছা? কি খারাপ করবে আমার? আর আমি আসবো না তো কে আসবে? তোমার ওই ফ্রেন্ড কি যেনো নাম…হ্যাঁ শোয়েব সে বুঝি? কই তার সাথে ঢলাঢলি করে ফুচকা খেতে তো এতো কাঁপাকাঁপি আসে না তোমার?
আর কোন সাহসে তুমি বিয়েতে না করেছো??” কাছে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো আমান।
এইবার এবার বড় এক ঢোক গিললো ঈশিকা। সে যা আন্দাজ করছিলো সেটাই ঠিক। হ্যাঁ…আমান এর বাড়ি থেকে পাঠানো বিয়ের প্রস্তাবে সে সাফ মানা করে দিয়েছে। ঈশিকাকে চুপ থাকতে দেখে আমান ঈশিকার কাধ ঝাঁকিয়ে চেঁচিয়ে বললো,
—– ” কথা বলছো না কেনো? স্পিক আপ ড্যাম ইট!!
আমানের চেঁচানোতে কেঁপে উঠলো ঈশিকা। তারপর হরবরিয়ে বলতে শুরু করলো,
—– ” আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। আপানার জন্য ভার্সিটির অনেকেই রীতিমতো হিংসে করে আমায়। সুযোগ পেলে ইনডিরেক্টলি পিঞ্চ করে নানা কথাও বলে। আর এই ছোট বয়সেই বাবা মা আমাকে বিয়ে দিতে চাইছে যেটা আমি একদমই মানতে পারছিনা। আর তাছাড়াও আপনি হলেন দ্য গ্রেট আমান আহমেদ। সব মেয়ের ক্রাশ বয়…সেখানে আমিতো আপনার কাছে কিচ্ছুনা। আমি আপনার একদম যোগ্য না বিশ্বাস ক….উম্মম…
আর বলতে পারলো না ঈশিকা। তার আগেই তার ঠোঁট আমানের ঠোঁটের দখলে। সে প্রথমে এহেন ঘটনায় হকচকিয়ে গেলেও পরে বুঝতে পেরে আমানের বুকে ইচ্ছামতো ঠেলা থাপ্পড় মারতে থাকলো। কিন্তু কিছুতেই তাকে সরাতে পারছে না। পারবে কি করে? কোথায় আমানের মতো সিক্স ফিট্ জিম ট্রেইন্ড বডিওয়ালা ছেলে আর কোথায় চুনো পুটির মতো ছোট্ট রোগা পাতলা সে।
কিন্তু একসময় ঈশিকার জোর এক ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে আমান পিছিয়ে যায়। সেই সুযোগে ঈশিকা ছুটে দরজা খুলতে নেয়। এবার আর রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা আমান। এক ঝটকায় ঈশিকার হাত ধরে কাছে এনে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে ফের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। তবে এবার আর সেই আগের মতো ভালোবাসায় ভরা কোমলতার ছোঁয়া নেই। আছে জেদ রাগ থেকে জন্ম নেওয়া হিংস্রতা। বিছানায় দুই হাত চেপে ধরে ক্রমাগত দাঁত চালাচ্ছে ঈশিকার ঠোঁটের ওপর। আর হাত বন্ধ থাকায় ঈশিকা সমানে পা ছোটাছুটি করছে।
এরুপ ধস্তাধস্তির কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ ই আমানের হুস ফিরলে খেয়াল করে ঈশিকা আগের মতো ছটফট করছে না শান্ত হয়ে গেছে। ঠোঁট ছেড়ে হাত আলগা করে তাকিয়ে দেখলো সেন্সলেস হয়ে গেছে ঈশিকা। এই মেয়ে অল্পেই এতো প্যানিকড হয়ে যায় যে একবারে অজ্ঞানে গিয়ে থামে।
তারপর কোলে তুলে ভালোভাবে বিছানায় শুইয়ে দিলো ঈশিকাকে। জলের ছেঁটা দিয়েও জ্ঞান ফিরলো না। শেষে চাদর টেনে দিলো গায়ে। ঈশিকার গালে হাত রেখে বললো,
——” কেনো এমন করো ঈশু? তুমি কি বোঝনা তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্ত বেঁচে থাকা সম্ভব না আমার। সেখানে কিভাবে তোমাকে হারাতে পারবো আমি বলো? তুমি কি জানো তোমার এই অবহেলা আমার বুকে তীরের মতো বিঁধে। আমার ভালোবাসার পরিমাণ কি বোঝোনা তুমি? এতো কেনো অবুঝ তুমি ঈশু?”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টেবিল থেকে পেপারটা নিয়ে কাবার্ডে রেখে ট্রাউজার আর টি শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো আমান। শাওয়ার শেষে বাড়ির কেয়ারটেকার কে ডেকে গাড়ি থেকে ঈশিকার ব্যাগ আনালো। তারপর ঈশিকার ব্যাগ থেকে ফোন বের করে থেকে কল করলো ঈশিকার ফ্রেন্ড নোভা কে। নোভা ঈশিকার ফোন পেয়েই রিসিভড করে ব্যস্ত গলায় বললো,
—– ” হ্যালো ঈশি…কিরে কোথায় তুই? আর আমান ভাইয়া তোকে ওভাবে নিয়ে গেলো কেনো? তুই ঠিক আছিস তো?”
—– ” আমি আমান বলছি নোভা। ঈশিকা আমার কাছে আছে এবং আগামী পরশু পর্যন্ত আমার কাছেই থাকবে। তুমি জাস্ট একটু হেল্প করো।”
—— ” কি হেল্প ভাইয়া?”
—— ” তুমি ঈশিকার মা কে কল করে বলবে এ দু’দিন ও তোমার বাসায় থাকছে। আর কোনো প্রকার আপত্তি শুনলে তুমি জোর করবে।”
—– ” কিন্তু….
—– ” প্লিজ।”
—– ” আচ্ছা ঠিকাছে বলবো।”
—– ” থ্যাংক ইউ!” বলেই কল কেটে দিলো আমান।
পেছন ফিরে দেখলো নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে ঈশিকা। কি নিষ্পাপ মুখখানা! আমান ঈশিকার পাশে বসে কপালে একটা গভীর চুমু খেলো। ঠোঁটের দিক তাকাতেই দেখলো রক্তলাল হয়ে দাঁতের ঘষায় আর কামড়ে ক্ষত বিক্ষত হয়ে ফুলে গেছে কোমল ঠোঁটটা। ঠোঁটে আঙ্গুল বুলিয়ে ফের আলতো একটা চুমু খেয়ে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পা বাড়ালো কিচেনের দিকে। এখন এক কাপ কফির খুব প্রয়োজন।
.
.
____________________________________________
কফি হাতে ওপরে এসে দেখলো ঈশিকার এখনো জ্ঞান ফেরেনি। আমান তার পি.এ কে দিয়ে রেজিস্ট্রি পেপার এর সাথে ল্যাপটপ টাও আনিয়ে রেখেছিলো। হ্যাঁ রেজিস্ট্রি পেপার….তখন আমান ঈশিকাকে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করিয়েছে। আজ থেকে অফিসিয়ালি তার স্ত্রী সে।
আমানের বাবা আরমান আহমেদ ঈশিকাদের বাড়ি গিয়ে ওর মা বাবাকে বিয়ের কথা বললে ঈশিকা বিয়েতে অমত জানায়। আর সেটা কাল রাতে শুনেই প্রচুর রাগে ছিলো আমান। তবে রাগটা নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলো। ভেবেছিলো পরে সময় নিয়ে ঠান্ডা মাথায় বসে কথা বলে ঈশিকাকে বোঝাবে। সকালে অফিসে গেলে গার্ড এর দেওয়া ইনফরমেশনে জেনেছে ক্লাস বাংক করে সে দিব্যি বন্ধুদের সাথে ফুচকা খাওয়ার প্রতিযোগিতা করছে। কিন্তু যখনি শুনেছে সবার সাথে শোয়েব নামের ছেলেটাও আছে তখনি রাগটা নিয়ন্ত্রণের বাহিরে গিয়ে পুরোপুরি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ওই ছেলেটাকে আমান একদম সহ্য করতে পারেনা। ঈশিকাকে বারবার বলেছে শোয়েব এর থেকে দূরে থাকতে তাও এই মেয়ে কথা শোনার না। তাই অফিসের ফরেনার ক্লায়েন্টের সাথে ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং ক্যান্সেল করে রাগের বসে ডিরেক্ট ভার্সিটি থেকে তুলে নিয়ে এসে একেবারে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে সেরে ফেলেছে । এবার এই মেয়ের আর তার থেকে পালানোর ফুরসতটুকু রাখেনি সে। তবে সেটা ঈশিকা এখনো জানে না। জানলে যে রিয়াকশন কি হবে আল্লাহ মালুম!!
আমান কফির কাপ আর ল্যাপটপ টা নিয়ে কাউচে আধশোয়া হয়ে অফিসের পেন্ডিং কাজগুলো কমপ্লিট করতে লাগলো।
.
.
.
চলবে…