আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 36
আরিয়ান পাগলের মতো বিলাপ করছিল এমন সময় তার কেবিনে হঠাৎ করে মিষ্টির আগমন হয়।
আরিয়ান মিষ্টি কে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে মিষ্টিকে কোলে নিয়ে চুমা দিয়ে ভরিয়ে দেয়।
আরিয়ানের টেবিলের উপর একটা বক্সে চকলেট ভরা ছিলো।
সেই চকলেটের বক্সটা আরিয়ান মিষ্টির হাতে ধরিয়ে দেয়।মিষ্টি এতো চকলেট পেয়ে আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে চুমা দিয়ে ধন্যবাদ জানাই।
আরিয়ান মিষ্টি কে বলে,”আচ্ছা মিষ্টি তুমি এতো ভালো তোমার ফুপিটা এতো দজ্জাল কেনো বলবা সোনা মনি? ”
মিষ্টি আরিয়ানের কোল থেকে নেমে চকলেটের বক্স সামনের চেয়ারের উপর রেখে কোমরে দু হাত দিয়ে রাগি লুক নিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,”আমার ফুপি অনেক ভালো তার মতো মিষ্টি আর কেউ নাই।তুমি তাকে দজ্জাল বলো কেনো?
দজ্জাল তুমি তোমার ছেলে তোমার বউ।
কাবো না তোমার চকরেট খাও তুমি হুহ।”
এমন সময় অনু এসে বলে,”আরে মিষ্টি মণি রাগ করেছে কেনো? কে বকেছে কে দিয়েছে গালি?”
মিষ্টি সোজা আরিয়ানের দিকে ইশারা করে সে অন্য দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে থাকে।
অনু সোজা গিয়ে আরিয়ানের কোর্ট আর টাই ধরে বলে,”এই পাজি, উগান্ডার বান্দর আমার ময়না পাখি কে বকা দিতে কে বলছে? ছোট বাচ্চা দের সাথে কেমন ব্যবহার করবে তা এখনো শেখো নাই তুমি?”
আরিয়ান বলে,”আজব তো এই মিষ্টি আমি তোমাকে কিছু বলেছি তুমি এভাবে মিথ্যা অভিযোগ করতে পারলে তোমার এই দজ্জাল ফুপির কাছে? ”
মিষ্টি বলে,”ফুপি এই যে তোমাকে দজ্জাল বলে গালি দিয়েছে।আমাকে তো আদর করেছে।”
অনু বলে,”মিষ্টি তোমাকে যখন আদর করেছে তখন তো সমস্যা হবার কথা নেই।”
মিষ্টি বলে,”আমি কি বলেছি আমাকে বকা দিয়েছে? সে তোমাকে দজ্জাল বলে বকা দিয়েছে আমি সেই কথা বলেছি।”
অনু বলে,”তোমার এই চকলেট আঙ্কেলের কাছে আমি শুধু দজ্জাল না আরো অনেক কিছু।
তাই ওসব নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।”
আরিয়ান বলে,”যেমন মেয়ে তার তেমন হৃদয় হীনা ফুপি হুহ।”
অনু বলে,”দেখো একদম হৃদয় হীনা বলবা না।হৃদয় আমারো ছিলো তা একজনকে দিয়েছিলাম সে যত্ন নিতে পারে নাই।আমার হৃদয় কে সে কলার পাতায় করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। ”
আরিয়ান বলে,”সেদিন ভুল দু জন মানুষ করেছিল আর সে দোষে দোষী একজন মাত্র হয়েছে।”
এমন সময় কেবিনে অয়ন এসে বলে,”আরিয়ান কে দোষে দোষী হলো? ”
আরিয়ান বলে,”এ যে দেখছি অয়ন ভাইয়া!
আসেন বসেন ভাইয়া। আপনাকে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে।”
অনু আরিয়ানের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,”শালা এমন বর জীবনে দেখি নাই যে বউয়ের প্রেমিক কে দেখে এতো বেশি খুশি হয়।এমন যদি সব বরেরা হয় তাহলে তো বউদের কপাল খুলে যাবে।”
আরিয়ান বলে,”সব বর তো আর আমার মতো কপাল পোড়া না তাই সব মেয়েদের কপাল খুলবে না।”
অয়ন বলে,”আরে তোমরা এতো কি ফিসফিস করে কথা বলছো?”
আরিয়ান বলে,”তেমন কিছু না আমাদের অফিসিয়াল কিছু কথা।এই অনু যাও অয়ন ভাইয়ের জন্য চা বা কফি নিয়ে আসো! ”
অয়ন বলে,”আমার এই সব কিছুর দরকার নেই।আসো তিন জন বসে একটু কথা বলি তাহলে হবে।তোমার আবার সমস্যা নেই তো আরিয়ান? ”
আরিয়ান বলে,”কি যে বলেন না ভাইয়া আমার সমস্যা নেই যা কাজ ছিলো সকালে এসে কমপ্লিট করেছি।”
অয়ন বলে,”কি আর বলবো বলো তোমার মতো স্মার্ট সুন্দর ভালো ছেলের বউ না কি তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে? এসব ভাবতেই কতো খারাপ লাগে।আর তোমার বউটা বা কেমন মেয়ে এতো ভালো ঘর আর বর থাকতে অন্য কাউকে বিয়ের কথা কি ভাবে চিন্তা করতে পারে ভাবা যায়।”
অনু বলে,”অয়ন ভাই পরের বউয়ের চিন্তা করে নিজের রোগবালাই বাড়াতে কেনো চাইছেন যার বউ তাকে চিন্তা করতে দেন না কেনো?”
অয়ন বলে,”অনু তুই ছোট মানুষ বেশি কথা বলবি না।কি বুঝিস এসবের? বিয়ে জীবনে একবার হয়।বার বার আর যাই হোক বিয়ে হতে পারে না।তাহলে সম্পর্কের মূল্যবোধ নষ্ট হয়ে যায়।তাই সবার উচিৎ বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্ক্য কে সব সময় সম্মান করা।
বিয়ে সবার জীবনের বেপার দু দিনের খেলা নয়। অাজ একে পছন্দ হয়েছে বিয়ে করে নিলাম। কাল ভালো লাগছে না ছেড়ে দিলাম।এমনটা আমাদের ধর্মের শিক্ষা না।
তবুও মানুষ জন আজ কাল প্রেম আর বিয়েটা কে ছেলে খেলা বানিয়ে রেখে দিয়েছে।
কোনো সম্মান নেই।সবাই সবার থেকে উপরে উঠতে চাইছে।কেনো এই আরিয়ানের বউ ফিরে এসে ওর সাথে বোঝাপড়া করতে পারতো না? কেনো সে তাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে কোন অধিকারে তাকে অপমানিত হতে হবে?
তার উচিৎ ছিলো আরিয়ান কে তার ভুল গুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া।
তারপর যদি আরিয়ানের মাঝে খারাপ লাগা কাজ না করতো তাহলে অবশ্যই সে চলে যেতে পারতো।চেষ্টা না করে হেরে যাওয়া মেয়েটা অন্যের সংসারে কি করবে আল্লাহ জানে।”
অনু বলে,”ভাই আপনি আমার আপন না আরিয়ানের আপন তা একটু বলবেন?
না কি আপনি ছেলে বলে আরিয়ানের দিকটা দেখছেন? আমার দিকটা একবার ও দেখার প্রয়োজন বোধ করছেন না? ”
অয়ন বলে,”তোর দিক মানে কি? ”
অনু বলে,”সরি আসলে আরিয়ানের বউয়ের দিক টা দেখছো না তাই বলছি। ”
অয়ন বলে,”তাই বলবি তো।আমি কি না কি ভেবেছি। তুই যদি ঐ মেয়ের স্থানে থাকতি অবশ্যই আরিয়ানের কান ধরে বলতিস যে,
এই সব তোমার ভুল শুধরে নাও নয়তো তোমার নাক কেটে স্টাইল নষ্ট করে দিবো।”
আরিয়ান বলে,”থাক ভাই অনুকে আর কিছু শেখাতে হবে না।ওকে যা শেখাবেন সবটা কিন্তু আপনার উপর এপ্লাই করবে তাই সাবধান। ”
অয়ন বলে,”ধন্যবাদ তোমাকে আমাকে বাঁচানোর জন্য।”
অনু বলে,”অনেক গল্প হয়েছে এবার আমাদের বাড়িতে যাওয়ার দরকার।”
অয়ন বলে,”আরিয়ান কয়দিন পর তো আমাদের বিয়ে তোমার দাওয়াত থাকলো তুমি কিন্তু অবশ্যই আসবে।”
আরিয়ান বলে,”তা আর বলতে হবে না।
আমি না থাকলে তো বিয়েটা হবে না।”
অয়ন বলে,”কেনো বিয়ে হবে না? ”
আরিয়ান বলে,”আমিই হবো আপনাদের বিয়ের প্রথম স্বাক্ষী। ”
অনু বলে,”নাহ দরকার নেই স্যার।”
আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে,”টেনশন করার কিছু নেই।কিছুদিন পর আমার বিয়ে আমার মামাত বোন দিশার সাথে।”
অয়ন বলে,”আরে এ কথা আগে বলবে না অভিনন্দন তোমাকে।”
অারিয়ান অয়ন কে ধন্যবাদ জানায়।
অনু আরিয়ানের বিয়ের খবর টা হজম করতে পারছে না।
তারপরও নিজেকে সংযোজিত করে বাড়ির দিকে রওনা দেয়।
অনু বাড়িতে এসে নিজের রুমের মাঝে পায়চারী করতে থাকে আর নিজেকে বলতে থাকে,”ঐ শালার টিকটিকির তিন নাম্বার বাচ্চা।
খচ্চরের জামাই। ব্যাঙের চাটনি।
তার কতো সাহস সে আবারো বিয়ের পিঁড়িতে বসবে।আমি যদি ওর বিয়ের চুলায় আগুন না দিয়েছি তাহলে আমার নাম ও অনু মনু নাহ।”
রিমা এসে বলে,”দু দিন পর তো তোরও বিয়ে তাহলে তুই কেনো আরিয়ানের বিয়ে নিয়ে এতো চিন্তা করছিস? ”
অনু বলে,”চিন্তা করবো না মা-নে কি?আমার বিয়ে করা বর আরিয়ান। তার উপর সে আমার বিয়ের কথা শুনে দেবদাস হয়ে থাকবে। তা না করে সে কি না নিজের বিয়ের ব্যবস্থা করেছে।আমি ভেবেছি আমার বিয়ের পর সে কিছুদিন বাউলের মতো রাস্তায় ঘুরবে আমার সেই ইচ্ছার মুখে আরিয়ান ছাই দিতে পারে না।
আমি আমার স্বপ্ন গুলো এভাবে নষ্ট করতে দিবো না।”
রিমা বলে,”আজব কাহিনী তো।যাকে বর বলে অধিকার দেখাতে যাস না তার বিয়ে নিয়ে অযথা টেনশন করে ব্লাড লেভেল হাই করছিস। ”
অনু বলে,”অসুস্থ হলে বাড়িতে ডাক্তার আছে সমস্যা নাই।”
রিমা বলে,”কাল সকালে রিমা আর রিদি আপু চলে যাবে তাদের শ্বশুর বাড়িতে। ”
অনু বলে, “যাবে তো শ্বশুরবাড়ি তে।ওখান থেকে এসে না হয় আমার চিকিৎসা করবে সমস্যা নেই।”
পরেরদিন সকালে রিমি রিদি রাজ আয়াত সবাই অনুদের বাড়ির সবার কাছে থেকে বিদায় নিতে শুরু করে দেয় বাড়িতে যাবার জন্য।
রাজ আয়াত কে বলে,”এই প্রথম কোনো জামাই হয়তো বাসরঘর না করে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরুনির অনুষ্ঠান করে নিজের বাড়িতে যাচ্ছে। ”
আয়াত বলে,”থাক ভাই আফসোস করে লাভ নেই।আমাদের পোড়া কপাল বলে কথা।চল বাড়িতে গিয়ে দেখি কি আছে কপালে।”
এরপর ওরা সবাই চৌধুরী বাড়িতে চলে আসে ফিরুনির অনুষ্ঠান শেষ করে।
তারা বাড়িতে এসে দেখে এখানে নতুন কাহিনী চলছে!!
(অনেক ব্যস্ত তারপর ও গল্প দেওয়ার চেষ্টা করছি)
‘
‘
‘
চলবে…