আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 32

এদিকে চৌধুরী বাড়িতে নতুন বউ এসে বাড়ির সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
তা দেখে আয়েশা বেগম এবাং রাজের মা বউ বরণ করতে এগিয়ে আসে।
আয়েশা বেগম বলে,”দেখি তোমরা নিজেদের জোড়া ঠিক করে দাড়াও বরণ করার অনুষ্ঠান টা সম্পন্ন করে নেই।”
মায়ের মুখে এমন কথা শুনে আয়াত এসে রিমি পাশে দাঁড়িয়ে যায়।
রিদি সোজা গিয়ে রাজের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে।

রিমি আর রিদির এমন উল্টা পাল্টা দাঁড়ানো দেখে রাজের মা বলে,”আরে রিদি বউমা তুমি আয়াতের পাশে না দাঁড়িয়ে ভুল করে রাজের পাশে কেনো দাঁড়িয়ে আছো?”
আয়েশা বেগম বলে,”রিমি তুমি আরিয়ানের পাশে না দাঁড়িয়ে রাজের পাশে কি করছো? ”
আয়াত বলে,”মা রিমি আমার বউ রিদি রাজের বউ।তাই আমাদের বউ কেনো উল্টা পাল্টা দাঁড়াতে যাবে।”
আয়েশা বেগম এবং রাজের মা একদম অবাক হয়ে বলে,”কি সব উল্টা পাল্টা কথা বলছিস তোরা।”
রাজ বলে,”আয়াত ভাই যা বলেছে একদম ঠিক বলেছে।তারপর রাজ তাদের বিয়ের সব ঘটনা খুলে বলে দেয়।
রাজের মা আর আয়েশা বেগম সবটা শুনে তো জ্ঞান হারানোর অবস্থা।
রাজের মায়ের হাত থেকে পায়েসের বাটি পড়ে যায়।
রাজের মা বলে,”এ কি সর্বনাশ হলো আমার! আমার ছেলের বিয়ে হয়ে গেলো আর আমি জানতেও পাড়লাম নাহ।”
আরিয়ানের বাবা আরিফ চৌধুরী এসে বলে, “দেখ জন্ম মৃত্যু বিয়ে সব আল্লাহর হাতে।
তাই এদের বিয়ে নিয়ে অযথা আফসোস না করে নতুন বউদের বরণ করে ঘরে নিয়ে যাও।”
আয়েশা বেগম বলে,”সমস্যা নেই যাদের পছন্দ করে আনছি তারাই তো বাড়ির বউ হয়ে এসেছে অন্য কেউ তো আসে নাই।
শুধু ছেলে আর মেয়ের বদল হয়েছে বেপার না সব আল্লাহর ইচ্ছা।”
তারপর সবাই ওদের বরণ করে ঘরে নিয়ে আসে।
এরপর মৌ এসে রিদি আর রিমিকে তাদের নিজেদের ঘরে পৌঁছে দিয়ে আসে।
এরপর তিন ভাই ছাদে যায়।

আয়াত আরিয়ান কে বলে,”তুই এখন কি করবি?”
আরিয়ান বলে,”জানি না কি করবো।”
রাজ বলে,”আমি জানতাম অনু আর তোর বিয়ের কথা মামী জানতে পারলে কোনোদিন এই বিয়েটা মেনে নিবে না এমনকি এটাও হতে পারে সে নিজে তোদের সম্পর্ক টা ঠিক হবার আগে ভেঙ্গে দিতে পারে।”
আরিয়ান বলে,”বাহ আমার জীবনের গল্পের বারোটা বাজিয়ে এখন এসেছিস তুই সহানুভূতি দেখাতে? ”
আয়াত বলে,”আহ আরিয়ান মানুষ মাত্র ভুল করে।রাজ নিজেকে বদলে নিয়েছে যখন তখন তাকে ভালো হবার চান্স তো দে।
আর রাজ ভুল কিছু বলে নাই।
অনুর ভাই যে ভাবে কথা বলেছে তাতে মনে হয় না অনুকে তুই আর কোনোদিন পাবি? ”
আরিয়ান বলে,”অনু আমার ভাগ্যে আছে বিয়ে যখন হয়েছে একবার তখন সে আমার সম্পদ। তার উপর অন্য কারো কোনো অধিকার নেই।
অনু কে নিজের করে পেতে আমি সব কিছু করতে রাজি আছি বলে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।”
আয়াত আর রাজ আফসোস করে বলে,”জানিনা এর কপালে কি লেখা আছে তবে খারাপ কিছু যেনো না থাকে সেই আশা করবো বলে নিজেদের বাসর ঘরের দিকে চলে যায়।”

এদিকে অনু বাড়িতে এসে আবির কে বলে,”ভাইয়া তুমি কিন্তু ভাবী কে থাপ্পড় দিয়ে ঠিক কাজ করো নাই! ”
অনুর মুখে রিমার কথা শুনে আবির চোখ গরম করে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
অনু আবারো বলে,”ভাবীর কি দোষ এখানে তুমি তার উপর কেনো রাগ করেছো?
তোমার যতো রাগ অভিমান সব তো আমার উপর তাহলে ভাবী কে কেনো দূরে রেখেছো? ”
আবির বলে,”তুই যেমন আজ আরিয়ানের উপর অভিমান করে আমার হাত ধরে ওকে ফিরিয়ে দিয়ে চলে এসেছিস আমারো ঠিক তেমন ভাবে রিমার উপর খুব রাগ হচ্ছে।”
রিমা এসে আবিরের সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে বলে,”প্লিজ তুমি আর যায় করো না কেনো আমার উপর রাগ করে থেকোনা তোমার যতো অভিযোগ সব আমাকে বলো আমি শুনতো রাজি আছি।তবুও চুপ করে থেকো না প্লিজ।”
আবির বলে, “জানো তুমি খুব স্বার্থপর একটা মেয়ে! ”
অনু বলে,”ভাইয়া ভাবী কে কি সব উল্টা পাল্টা কথা বলছো এসব? ”
আবির বলে,”জানিস অনু আমরা যখন কারো উপর খুব বেশি ভরসা করি তখন সেই ভরসার মর্যাদা সে ব্যক্তি নিজে নষ্ট করে।
রিমাও ঠিক সেই একি কাজ করেছে।
সে আমাদের বিশ্বাস ভরসার মূল্য রাখতে পারে নাই।”
অনুর মা বলে,”আবির বাবা তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছিস রিমাও কিন্তু তখন অনুর বয়সী ছিলো।আর এতো বড় কাহিনী যা অনু বলার সাহস করতে উঠতে পারে নাই।সেই একি কথা রিমা কি ভাবে বলবে?”

আবির বলে,”মা রিমার আমার বউ হয়ে কি করে পাঁচ বছর ধরে এতো বড় কাহিনী আড়াল করেছে? ”
অনুর মা বলে,”বাবা তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছিস ওরা ফিরে আসার পর পর তোদের বিয়ে হয়ে যায়।রিমার নতুন এক সম্পর্ক তৈরি হয় তোর সাথে।সে বাড়ির মেয়ে থেকে বউ হবার সামাজিক প্রসেসিং এ পড়ে যায়।
আমরা ওর কাছে চেনা মানুষ তবে অচেনা এক নতুন সম্পর্কে সে জড়িয়ে গিয়েছে।
যেখানে ওর কাছে তোদের দু জনের এই নতুন সম্পর্কটা একটা চ্যালেঞ্জ এর মতো ছিলো।
রিমা হয়তো তোদের এই নতুন সম্পর্কের শুরুতে কোনো ভেজাল করতে চাই নি।
আর নয়তো সে তোর কাছে এতো বড় কথা বলতে পারার সাহস করে ওঠে নাই।
আর সংসারের ঘূর্ণিপাকে পড়ে রিমা নিজে হয়তো তাল গোল পাকিয়ে ফেলেছে বিষয়টা।একটা কথাই বলবো তা হচ্ছে কোনো বউ চাইনা তার বর কষ্টে থাক সেই কথা ভেবে হয়তো অনুর ইতিহাস রিমা বলে নাই।
সেদিন যদি তুই অনুর নিরবতাকে সাপোর্ট করতে পারিস তাহলে আজ কেনো রিমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিস?”
অাবির অনেক সময় চুপচাপ থাকার পর রিমা জড়িয়ে ধরে বলে,”সরি আমি শুধু নিজের দিকটা দেখেছি তোমার পরিস্থিতি বুঝতে চেষ্টা করি নাই।এবং মা তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আসলে তুমি সব ঠিক কথা বলেছো।
আমি রিমা অার অনুর সাথে পক্ষপাতিত্ব করতে পারি না।অপরাধী হলে দুজনে না হলে কেউ না।”
অনুর মা বলে, “আমি চাই না আমার কোনো ছেলে মেয়ে কষ্টে থাক।তুই রিমা অনু তিন জন আমার চোখে সমান কেউ আলাদা না।”
রিমা আর অনুও এসে ওদের মা কে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ দেয়।
আবির রিমাকে বলে,”সরি রিমা আমাকে মাফ করে দিও প্লিজ। ”
রিমা আবির করে জড়িয়ে ধরে বলে,”প্লিজ তুমি আমার কাছে মাফ চেয়ে আমাকে ছোট করে দিও না।আসলে আমি আমাদের সম্পর্ক টা নিয়ে এতোটা অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলাম তখন যে অনুর কথা বলার সাহস করতে পারি নাই।
আর পরে বলার মতো সময় সুযোগ ও করে উঠতে পারি নাই।আসলে দোষ আমাদের কারো না সময়ের ছলনা ছিলো সবটা।”
অনুর মা চলে যায়।
অনু মিষ্টিকে সাথে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।আজ মিষ্টি আর অনু ঘুমাবে।
এদিকে আবির রিমার হাত ধরে নিজেদের রুমে চলে যায়।আসলে ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে।তবে সেই ভুল বোঝাবুঝি কে সম্পর্ক নষ্ট হতে দেওয়ার কারণ বানানো উচিৎ না।

সম্পর্ক অনেক যত্ন নিয়ে অনেক সাধনা করে গড়ে তোলে সে সম্পর্ক যদি একটু মান অভিমানের নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সম্পর্কের গড়ার উপর আর কারো বিশ্বাস থাকবে না।
এরপর সবাই যে যার রুমে চলে যায়।
অনু মিষ্টিকে নিজের বুকের উপর নিয়ে ঘুমপাড়িয়ে দেয়।আর ভাবতে থাকে মানুষ যদি মজার মাঝেও কারো মন ভেঙ্গে দিতে পারে।
জন্ম মৃত্য বিয়ে তিনটা আল্লাহর হাতে নয়তো সেদিন বিয়েটা কেনো হবে আর সেই সম্পর্কের কেনো কোনো ভবিষ্যৎ হবে না।
আল্লাহ যদি চাই অবশ্যই সবটা ঠিক হয়ে যাবে।তবে নিজেকেও কিছু করতে হবে।
তালি এক হাতে কখনো বাজে না।
তেমন সম্পর্ক ঠিক করতে হলে দুই পক্ষের সম্মিত লাগবে এসব ভাবতে ভাবতে অনু ঘুমিয়ে যায়।
এদিকে আয়াত আর রাজ নিজেদের রুমে প্রবেশ করবে বাসরঘর করতে।
(ঈদের ব্যস্ততার মাঝেও গল্প দিতে চেষ্টা করছি। আপনারা বুঝবেন হয়তো আশা করি।)



চলবে……