আমার ক্রাশ বর

আমার ক্রাশ বর সিজন- 2 !! Part- 31

আবির এমন এক ভাই যার কলিজার একমাত্র টুকরো বোন অনু।
সে নিজের মেয়ের থেকে বেশি ভালোবাসে নিজের বোন কে।
সেই বোনের জীবনে না কি এতো কাহিনী হয়ে গেছে আর সে কোনো কিছুই জানে না।
তার বোনের সাথে এতো অন্যায় হয়েছে যা সে মেনে নিতে পারবে না।
তবে আজ এই মূহুর্তে আবিরের মনে হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
এতো মানুষ অনুর শত্রু হলো কিভাবে?
আর আরিয়ান কেনো অনুকে সেদিন অপমান করে ফিরিয়ে দিয়েছিলো?
অনুর মনে কি এখনো আরিয়ান আছে না কি সে ভুলে গেছে আরিয়ান কে?
যদি মনে রেখে থাকে তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ কী?
আবির আর এতো কিছু চিন্তা করতে পারছিল না।তাই সে নিজের মনে চলতে থাকা হাজার প্রশ্নের ঝড় আরিয়ানের দিকে ছুড়ে দিতে থাকে!
*আবিরের প্রথম প্রশ্ন রুবি কে?

আরিয়ান বলে,”মেয়েটা খুব গায়ে পড়া স্বভাবী ছিলো।সে শুধু আমার পিছনে ঘুরঘুর করতো।”
*আবির আবারো বলে,”এতে অনুর সমস্যা কোথায় ছিলো? ”
আরিয়ান বলে,”রুবি নিজে মেয়ে হয়ে মেয়ের অপমান করছিল যা অনুর মতো প্রতিবাদী মেয়ে মেনে নিতে পারে নাই।
সে রুবিকে অপমান করে সঠিক পথে আসার জন্য।কিন্তু কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয় না ঠিক তেমন রুবিও সোজা হবার মেয়ে ছিল না।”
আবির বলে,”মামুন কে? ”
আরিয়ান বলে,”মামুন রুবির ভাই।
তবে অনুর সাথে তার শত্রুতা অন্য কোথাও থেকে শুরু হয়।”
আবির বলে,”কি ভাবে শুরু হয়।”
রিমা বলে,”আমি বলছি।”
আবির রক্ত চক্ষু দৃষ্টি তে রিমার দিকে তাকিয়ে থাকে তাতে রিমা বুঝতে পেরেছে আবির চাইছে না আরিয়ান আর আবিরের মাঝে অন্য কেউ আসুক।
আরিয়ান বলে,”একটা গরীব মানুষ কে কিছু খারাপ মানুষ মারধোর করছিলো।
রাস্তার পাশের জনগণ নীরব হয়ে সেই দৃশ্য দেখতে থাকে।তবে অনু সেখানে থেকে যাবার সময় তাদের অন্যায় সহ্য না করতে পেরে প্রতিবাদ করে।গরিব মানুষ কে সাহায্যদান করে।আর ঐ লোকগুলোকে অনু অনেক পিটানি দেয়।যাদের অনু মারধোর করে তারা মামুন ভাইয়ের দলের ছেলেপেলে ছিলো।”
আবির বলে,”অন্যায়ের প্রতিবাদ করা কি পাপ? ”
আরিয়ান বলে,”নাহ অন্যায়ের প্রতিবাদ করা পাপ না।তবে মেয়েদের সব কিছুতে ছেলেদের মতো প্রতিবাদ করাটা সমাজের চোখে দোষের।”
আয়াত এবার বলে,”ছেলেরা যখন নিজের দায় এড়িয়ে চলে যায় তখন যদি কোনো মেয়ে সেই দায় কে দায়িত্ব মনে করে তাহলে সমাজের এতো সমস্যা কেনো তা আমি ও বুঝি না।”

আবির বলে,”আচ্ছা এদের সাথে ঝগড়া তা বুঝলাম কিন্তু রাজের সাথে ঝগড়া কেনো? ”
রিদি এবার সামনে এগিয়ে এসে মাথা নিচু করে বলে,”এই সব সমস্যা শুরুটা আমাকে নিয়ে ভাইয়া।আমি রাজকে ভালবাসি সেই কথা অনু জানতো। রাজ যখন আমাকে ধোঁকা দেয় তখন অনু তাকে খুব অপমান করে আর সেই অপমানের শোধ তুলতে রাজ রুবি আর মামুন কে সাহায্য করে।”
আবির বলে,”আরিয়ানের সাথে অনুর সম্পর্ক কি ছিলো? আরিয়ান কি কখনো অনুকে ভালবাসতে পেরেছিলো?”
আরিয়ান বলে,”অনু আমাকে পছন্দ করতো তা আমি খুব ভালো করে জানতাম তবে সে জানতো না সেই আমার মনে তো প্রথম দিন স্থান করে নিয়ে ছিলো।
অনুর সরলতা প্রতিবাদ করা সবটা সব সময় আমাকে মুগ্ধ করে।তবে আমার অনুকে নিয়ে সব সময় ভয় লাগতো।আপনার বোন কে অনেক বার বোঝাতে চেয়েছি সে অবুঝের মতো কখনো তা বুঝতে চেষ্টা করে নাই।
সে যদি একটু বুঝতে চেষ্টা করতো তাহলে আজ এতো কাহিনী হতো না।”
আবির বলে,”তুমি অনুকে বিয়ে করে সেই বিয়ের কথা তাকে ভুলে যেতে কেনো বলেছো?
আর কোন সাহসে অনুকে অপমান করেছিলে?”
আরিয়ান বলে,”রুবি অনুর এমন অবস্থা করেছিলো যাতে যে কেউ অনুকে দেখলে শিউর এটা ভাববে যে অনুর ধর্ষণ হয়েছে।
তবে তেমন কোনো খারাপ কাজ রুবি অনুর সাথে করতে দেয় নি মামুন কে।
রুবি মেয়ে হয়ে এই করুণা টুকু সেদিন অনুকে করেছিলো।তবে সব কথার এক কথা পাহাড়ি মানুষ গুলো তো আর রুবির করা কাজের কথা জানতো না।
তারা অনুর ধর্ষক হিসাবে আমাকে দোষী ভাবে।অনুর সামনে তারা আমাকে অনেক অপমান করেছিল অনু তার একটা প্রতিবাদ সেদিন করে নাই।
এমনি যখন আমাদের জোড় করে বিয়ে দিয়েছিলো তখন শুধু সে বিয়ে না করার জন্য বলে।
এতে করে ওরা আমাকে অনেক বেশি অপমান করে।তারা আমাদের বিয়ে দিয়ে শহরে আসার জন্য মেইন রোডের কাছে পৌঁছে দিয়ে যায়।”
তখন আমি অনুকে বলি,”সারা দুনিয়ার মানুষের অন্যায়ের প্রতিবাদ তুমি করো।
আমাকে বিনা দোষে তারা দোষী বানিয়ে দিলো সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ কেনো করলে না?
তখন কেনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলে পাহাড়ের মতো হয়ে।”
অনু ভাবলেশহীন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।ওর এমন ভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে আমার খু্ব রাগ লাগছিলো।
তাই আর সহ্য না করতে পেরে বলেছিলাম,”এখন তো মনে হচ্ছে তোমার সাথে খারাপ কাজ মামুন করেছে।নয়তো নিজের কলঙ্ক ঢাকতে আজ আমাকে কলঙ্কিত করে দিলে।

সত্যি কি সবটা রুবির প্লানিং না মামুন ছিলো সেখানে? ”
অনু উওরে বলে,”যদি তাই মনে করেন তাহলে তাই।এখন সবটা আপনার ভাবনা আমি কিছু বলতে চাইনা এই বিষয় নিয়ে।”
অনুর এমন উওর শুনে আরিয়ান তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে।
সে বলে,”তোমাকে ভালবাসা টা আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল।
সারা দুনিয়া প্রতিবাদ করে বেড়াতে পারো।
যখন দরকার তখন মুখ বন্ধ করে রাখো তাই না।তোমাকে প্রটেক্ট করতে এসে আজ আমাকে আমার জীবনটা তোমার মতো ফালতু স্বার্থপর মেয়ের জন্য নষ্ট করতে হলো।
তোমার মতো স্বার্থপর মেয়ের আমার জীবনে কোনো দরকার নেই।
তোমার যেদিকে ইচ্ছা চলে যাও।
কোনোদিন ও আমাকে নিজের স্বামী বলতে আসবে না।যে নিজের স্বার্থের জন্য অন্যকে ছোট করে তাকে আর যাই হোক ভালবাসা যায় না।”
অনু সেদিন আমার করা অপমানের কোনো প্রতিবাদ করে না।চুপচাপ সবটা মেনে নিয়ে চলে যায়।
অনুর এমন অন্যায় মেনে নেওয়াটা সেদিন আমাকে অপমানিত করেছিল।
আমার ইগো হার্ট করেছিলো।
যার প্রতিবাদ করার গুণ আমাকে এতো আকৃষ্ট করেছিলো ওর সেই গুনটা মিথ্যা ছিলো।
রাগের মাথায় তো সেদিন আমি এটাই ভুলে গিয়েছিলাম যে আমাদের সাথে যা কিছু ভুল হয়েছে সবটা সময়ের খেলা ছিলো।
এখানে অনু বা আমি কেউ দায়ী ছিলাম না।সেদিনের সেই ঘটনা সবটা সময় আর পরিস্থিতির জন্য হয়েছিলো।
আমার এটা সব থেকে খারাপ লেগেছিলো যে সেদিনের পর অনু কোনোদিন আমার সাথে দেখা বা যোগাযোগ করতে চেষ্টা করে নাই।আমিও একবুক অভিমান নিয়ে দেশের বাহিরে চলে যায়।
তবে বিয়ের পবিত্র সম্পর্ক কে কোনোদিন ও মন থেকে অস্বীকার করতে পারি নাই।
আমি বিবাহিত আমি অনুর বর এটাই সব থেকে বড় পরিচয়।তবে অনুর সাথে পাঁচ বছর পরে দেখা হলে পাঁচ বছরের অভিমান রাগ অপমান ইগনোর সব কিছু অনুকে সহ্য করতে হয়েছে।

আবির সবটা শোনার পর অনুকে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,”পাঁচ বছর ধরে এতো কষ্ট এই ছোট হৃদয়ের মাঝে কিভাবে আড়াল করে রেখেছিস? আমরা কি মরে গেছিলাম যে আমাদের কাউকে বলার প্রয়োজন মনে করিস নাই?
না কি আমরা তোর আপন জন না?
আমাদের কাছে না বলে কি ভাবে এতো গুলো বছর তুই এতো কষ্ট বুকে চাপা রেখে মুখে হাসি নিয়ে মেতে থাকতি সব কিছু তে।”
অনু আবির কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে,”ভাইয়া গো আমি সেই কালো অতীতের ছায়া তোমাদের সুখের জীবনের উপর পড়তে দেই নি।কারণ আমার জন্য কেনো এতো গুলো মানুষ কষ্ট পাবে বলো তো? ”
আবির বলে,”ধুর পাগলি আমাদের যদি সবটা খুলে বলতিস তাহলে আজ অন্য কারো মুখে এমন ভাবে শুনতে হতো না।”
অনু বলে,”ভাইয়া তোমরা আমাকে ভালো হবার জন্য তোমাদের থেকে দূরে রেখেছিলে কিন্তু আমি দেখো নিজেকে একটু বদলাতে পারি নাই।আমি খুব খারাপ বোন তাই না ভাইয়া। ”
আবির অনুর কপালে চুমা দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,”ধুর পাগলি তুই কেনো খারাপ হতে যাবি? খারাপ তো আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থা কেউ সামনে এগিয়ে যেতে চাইলে তার পা ধরে তাকে ১০ হাত পিছনে নিয়ে চলে আসে।”
রিমা এসে অনুর মাথায় হাত রাখতে গেলে আবির রিমার হাত ধরে নেয়।
অনুকে সরিয়ে দিয়ে রিমার সামনে দাঁড়িয়ে জোড়ে কষিয়ে একটা থাপ্পড় দিয়ে দেয়।
আবিরের এমন কাজ দেখে সেখানে উপস্থিত সবাই একদম অবাক হয়ে যায়।
আবির রিমাকে বলে,”আমার বোনকে তোমার দায়িত্বে সেখানে পাঠিয়েছিলাম তবে তুমি সেই দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে পারো নাই।
না ননদের না বান্ধবীর।”
রিমা কিছু বলতে যাব তখন আবির অনুর হাত ধরে সেখান থেকে নিয়ে চলে আসতে লাগে।
তখন আরিয়ান অনুর হাত ধরে বলে,”অনুকে আমি আমার সাথে করে নিয়ে যেতে এসেছি। ”
আবির এসে আরিয়ানের গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে অনুর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”সেদিন যখন অনুকে সম্পর্কটা ভুলে যেতে বলেছিলে।
আজ আমি তোমাকে পাঁচ বছর পরে বলছি
তুমি আমার বোন অনুকে ভুলে যাও।
সেদিন অনু প্রতিবাদ করে নাই।
কারণ সেদিন অনু একা ছিলো আজ অনু একা নেই।আজ অনুর সাথে তার ভাই আছে।
যে তোমার মতো না।

বিপদ থেকে বাঁচাতে গিয়ে বিপদ গভীর হবার অপেক্ষা করে।
সেদিন শুধু ভুল অনু একা করে নাই দোষ তোমারো ছিলো।
শুধু অনুর দিকে আঙ্গুল উঠাবে না।
নিজের দিকেও কিছু উঠাও তাহলে উওর পেয়ে যাবে।সেই পরিস্থিতিতে তুমি আমার বোন কে বুঝতে চেষ্টা করো নাই।
যদি সত্যি ভালোবাসতে তাহলে বুঝতে পারতে সেদিন কেনো অনুর তোমার বা সেই মানুষ গুলোর অন্যায়ের প্রতিবাদ করে নাই।
সেদিন তুমি শুধু নিজের দিকটা দেখেছো একবার ও অনুর স্থানে নিজেকে দাঁড় করিয়ে দেখো নাই।”
আরিয়ান বলে,”হ্যাঁ আমি মানছি আমি ভুল করেছি। তার শাস্তি তো পাঁচ বছর অনুর থেকে দূরে থেকে পেয়েছি। ”
আবির বলে,”সে সব আমার ভাবার বিষয় না।তুমি বাড়িতে চলে যাও অনুকে তোমার সাথে আমি যেতে দিবো না।রাজ আয়াত রিদি রিমি কে নিয়ে বাড়িতে গিয়ে সুখে সংসার করো।ওদের বিবাহিত জীবন গুছিয়ে নিতে সাহায্য করো। আর অনু নামের কোনো মেয়ের সাথে যে তোমার কোন সম্পর্ক ছিলো সে কথা ভুল যাও।”
এরপর আরিয়ানের সামনে আবির অনুকে নিয়ে চলে যায়।অনু একবার ও পেছনে ফিরে তাকাবার সুযোগ পায়নি।
অারিয়ান জানে এই সম্পর্ক ঠিক করতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে।
তাই আর আফসোস না করে নব_বিবাহিত বর বউদের নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
(দেখা যাক সামনে কি কি হয়।
সবাই কে অগ্রিম ঈদ মোবারক।
ঈদের ব্যস্ততার জন্য দুই তিন দিন হয়তো গল্প দিতে পারবো না।
যদি সম্ভব হয় দিতে চেষ্টা করবো।)



চলবে…..