না চাইলেও তুই আমার !! Part- 18
আজ তিন দিন হয়ে গেছে মিহান মিরার সাথে না দেখা করছে,না ফোন করে কোনো খোঁজ নিয়েছে।মিরা বেশ অবাক হয় এমন কাজে যে মিহান সারা দিন ফোন দিয়ে মিরাকে জ্বালায় সেই মিহান মিরার কোনো খোঁজ নিচ্ছে না।মিহানের মম অবশ্য দুইবার এসে মিরাকে দেখে গেছে আর ফোনে সব খবর নিচ্ছে।মিরা আজ বেশ সুস্থ থাকায় অফিসে গেছে।মিরা সারাদিন অফিস করে রাত আটটার দিকে বাড়ি যায়।মিরা ডোর বেল বাজালে রুমা দরজা খুলে মিরাকে দেখে মিটমিট করে হাসছে।মিরা ওকে পাত্তা না দিয়ে হল রুমে চলে যায়।মিরা অবাক হয়ে হল রুমের থাকা মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।চৌধুরী বাড়ি আর খান বাড়ির সবাই হল রুমে বসে আছে আরো দুই তিন জন লোক আছে।মিরা কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে উপরে উঠতে গেলে মামু মিরাকে ঢেকে বলে।
মামু : এদিকে এসো মামনি।
মিরা গিয়ে মামুর পাশে সোফায় বসে।মামু মিরার হাত ধরে শান্ত গলায় বলে।
মামু : আমি যদি তোর কাছে কিছু চাই দিবি আমায়?
মিরা হাসি মুখে বলে।
মিরা : বলো কি চাই তোমার?
মামু : আমি চাই আজ তুই মিহানকে বিয়ে করবি!
মিরা : হোয়াট!
মিহান মিরার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে মনে মনে বলে।
মিহান : কি সুন্দর লাগছে জানটাকে এখন।শক খেয়ে মুখের এক্সপ্রেশনই বদলে গেছে।
মামু : রাখবি না আমার কথা?
মিরা গম্ভির হয়ে বলে।
মিরা : মামু তুমি জানো আমি এসব বিয়ে ভালোবাসায় বিশ্বাস করি না।তাহলে এসব চাওয়ার মানে কি?
মামু : আমি এত কিছু জানতে চাই না।আমি এই প্রথম তোর কাছে কিছু চেয়েছি প্লিজ রাজি হয়ে যা।
মিরা : না মামু আমি বিয়ে করবো না।তুমি অন্য কিছু চাওয়ার থাকলে চাও।
মামু : এটাই তোর শেষ কথা?
মিরা : হুম!
মামু : ওকে তাহলে আমি এখন থেকে মেডিসিন খাবো না।তোর কোনো কথা শুনবো না।তোর সাথে কথাও বলবো না।চলে যাবো যেদিকে দুচোখ যায়।
মিরা মামুর কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে থাকে আর মামু অন্যদিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে।
মামু : আমি জানি তুই আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবি না।কিন্তু মা আমি তো ভালোর জন্য এসব করছি।আমি আর কতদিন আছি বল।আমি মিহানের চোখে তোর জন্য পবিত্র ভালোবাসা দেখেছি।তাই তো তাড়াতাড়ি করে ওর সাথে তোর বিয়ে দিতে চাইছি।আমি জানি তুই আমার কথা ভেবে রাজি হয়ে যাবি।
মিরা অনেকক্ষন ধরে ভেবে যাচ্ছে।কেউ কিছু বলছে না।সবাই মিরার দিকে তাকিয়ে আছে।মিরা ছোট একটা নিঃশ্বাস নিয়ে মামুর দিকে তাকিয়ে বলে।
মিরা : ঠিক আছে আমি রাজি আছি বিয়ে করতে।
মিরার কথা শুনে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠে।মামু মিরার দিকে তাকিয়ে বলে।
মামু : সত্যি বলছিস মামনি?
মিরা : হ্যা কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে!
মামু ঘাবড়ে গিয়ে বলে।
মামু : কি শর্ত?
মিরা : আমি পাগল ডাক্তারকে বিয়ে করবো।তার সাথে সংসারও করবো।যদি তুমি আমার কথায় রাজি হও।
মামু : কি কথা?
মিরা : তোমাকে বিয়ে করতে হবে।আমি তোমার জন্য পাত্রী খোজবো।রাজি থাকলে বলো!
মামু চমকে উঠে বলে।
মামু : কককি?
মিহান এদের এসব কথা শুনে মনে মনে বলে।
মিহান : এই মেয়েটা কি কখনো সোজা কাজ করতে পারেনা!মামু করবে এই বয়সে বিয়ে?আমি শিওর মামু কখনো রাজি হবে না।তাহলে কি আর আমার বিয়ে করা হবে না?
মিরা ওর মামুর অবস্থায় দেখে মনে মনে বলে।
মিরা : আই নো মামু কখনো রাজি হবে না বিয়ে করতে।তাহলে আমাকেও আর এই পাগল ডাক্তারকে বিয়ে করতে হবে না।আর যদি রাজি হয় তাহলে না হয় পাগল ডাক্তারকে বিয়ে করে মামুকেও একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে দিয়ে দেবো।যে আমার থেকেও বেশি আমার মামুকে ভালোবাসবে।
নিধি আস্তে করে নীলার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলে।
নিধি : আপু আমার মনে হয় আজ আর বিয়েটা হবে না।মামা করবে বিয়ে?
নীলা : আমারো তাই মনে হয়।মামার মুখ দেখে মনে হচ্ছে আপুর শর্তে মামা রাজি নয়।দেখি এখন কি হয়।
নিধি : হুম।
মিরার দাদা দাদিকে বলে।
দাদা : দেখলে কি মধ্যে কি ঢুকিয়ে দিলো।এতো জেদি কেনো মেয়েটা?
দাদি ভেংচি কেটে বলে।
দাদি : যেমনি দাদা তেমনি নাতনি।জেদ আর রাগ তোমার থেকেই পেয়েছে ও।
দাদা : ওর মত ওতোটা রাগি আমি না।ওর রাগ দেখলে তো আমার গলা শুকিয়ে যায়।
দাদি : এখন চুপ করো দেখি ফাহিম কি বলে?
দাদা : ঠিক আছে।
মামু মিরার কথা শুনে মনে মনে ভাবে।
মামু : এখন আপাতত মিরার কথায় রাজি হয়ে যাই।এখনি তো আর বিয়ে দিচ্ছে না আমার।পরে না হয় কোনো ভাবে বিয়ে আটকে দেবো।
মামু দৈঘ্য নিঃশ্বাস ফেলে মিরার দিকে তাকিয়ে বলে।
মামু : আমি রাজি তোর শর্তে।
মিরা খুশি হয়ে মামুর হাত ধরে বলে।
মিরা : সত্যি বলছো মামু?
মামু মিরার কপালে চুমু দিয়ে বলে।
মামু : হুম সত্যি বলছি।আমার মা কিছু বলবে আর আমি তা রাখবো না তা কখনো হয়।এখন আর কথা নয় নীলা,নিধি মিরাকে রেডি করে নিয়ে এসো।কাজি অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষা করছে।
নীলা : এখনি যাচ্ছি মামা।
মিরা : না ওরা কেউ আমাকে রেডি করাবে না।আমাকে ফুপি রেডি করাবে।
মিরার কথায় খান বাড়ির সবাই অবাক হয়ে যায়।বাংলাদেশে এসেছে পর থেকে এই প্রথম বাড়ির কাউকে সম্পর্কে সম্মধন করে ডাকলো মিরা।ফুপি ছলছল চোখে মিরার দিকে তাকিয়ে থাকে।মিরা বিরক্তির ভাব মুখে ফুটিয়ে তুলে বলে।
মিরা : যাবে না।ঠিক আছে আমি এই ড্রেসে বিয়ে করতে পরবো।আমার কোনো সমস্যা নেই।
মিরার ফুপি তাড়াতাড়ি সোফা থেকে উঠে মিরার সামনে গিয়ে বলে।
ফুপি : না না চল আমি তোকে রেডি করে দিচ্ছি।
মিরা : চলো।
ফুপি যেতে যেতে মনে মনে বলে।
ফুপি : মিরার ছোট বেলায় ওকে বউ সাজিয়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে বলতাম ও বড় হলে আমি নিজের হাতে সাজিয়ে ওকে বিয়ে দেবো ও আজো এই কথাটা মনে রেখেছে।আমি জানি মিরা বাইরে থেকে কঠিন সেজে থাকে কিন্তু ওর ভিতরটা খুব নরম।
অনু মিহানের হাতে একটা চিমটি কেটে বলে।
অনু : ভাইয়া তাহলে ভাবী বিয়েতে রাজি হলো।আমি ভেবেছিলাম তোর কপালে বউই নেই।
মিহান : এই ফাজিল মেয়ে এত জোরে চিমটি দিলি কেনো?হাত এখন ব্যাথা করছে।আর আমার কপালে পরির মত বউ আছে দেখলি তো।দাঁড়া আগে আমার বিয়েটা হতে দে তারপর তোকে বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বিদায় করার ব্যবস্থা করছি।
অনু মিহানের কথা শুনে ভেংচি কেটে অন্য পাশে চলে যায়।
চলবে…🍁