না চাইলেও তুই আমার !! Part- 19
মিরাকে সিঁদুর রাঙ্গা শাড়ি পড়িয়ে হালকা সাজিয়ে মিরাকে নিয়ে নিচে আসে মিরার ফুপি।মিরা নিচে আসলে সবাই মিরার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অসম্ভব সুন্দর লাগছে মিরাকে।মিহান মাতাল করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিরার দিকে।মিরার দাদি এসে মিরার থুতনিতে হাত দিয়ে চুমু খেয়ে বলে।
দাদি : বাহ!রাজকন্যার মত লাগছে আমার নাতনি কে।কারো নজর না লাগে।
নীলা : মা তুমি কি করছো?আপুকে তো চেনাই যাচ্ছে না।
ফুপি : কোথায় কি করলাম?ওর এত এত সাজের জিনিস তা দিয়ে সাজাতে দিলো না।কত করে বলাম একটু সাজ।শুধু লিপস্টিক, কাজল দিয়ে চলে এলো।
মিরা এদের কথা শুনে বিরক্ত ভাব নিয়ে বলে।
মিরা : এত কথার কি আছে।এমনেতেই শাড়ি পরে Uncomfortable লাগছে।যা করার তাড়াতাড়ি করো।শাড়ি পরে বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না।
দাদি : মেয়ে হয়ে জন্মেছিস শাড়ি তো পরতেই হবে। আজ প্রথম পড়লি তো তাই এমন লাগছে। পরে অভ্যাস হয়ে যাবে।
অনামিকা : মা এসব কথা পরে বলা যাবে। আগে বিয়ের কাজটা শুরু হোক।
মিরা একবার আড়চোখে মিহানের দিকে তাকায়। মিহান এতক্ষণ মিরার দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মনে মনে বলে।
মিহান : তোমাকে শাড়িতে এত সুন্দর লাগবে কখনো কল্পনা করি নি।আমার মনের রাজ্যের রানি তুমি।আর পাত্র কয়েক মুহূর্ত তারপর সারাজীবনের মত তুমি আমার হয়ে যাবে।
মিহানের ভাবনা ছেদ ঘটলো অনুর ধাক্কায়।অনু মিহানকে ধাক্কা দিয়ে বলে।
অনু : সোজা হয়ে বস এখনি বিয়ে এখুনি বিয়ে শুরু হবে।
কিছুক্ষনের মধ্যে মিরা,মিহানের বিয়ে সম্পূরণ হয়।মিহানের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে মিহান আজ কতটা খুশি।মিহানের মম মিহানের মনের কথা বুঝে মিরা আর মিহানকে একা কথা বলার জন্য মিরার রুমে যেতে বলে।মিরা শাড়ির কারনে হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে।মিরা আস্তে আস্তে হেটে রুমের দিকে যাচ্ছে।মিহান মিরার পিছন পিছন আসছে।মিরা রুমে গিয়ে বেডের একপাশে বসে পড়ে।মিহান রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে মিরার পাশে বসে কোনো কিছু না বলে সোজা ওর কোলে মাথা রাখে।মিহানের এমন কাজে মিরা চমকে উঠে।এখন কি করা উচিৎ তা মিরা বুঝতে পারছে না।মিরা নিজেকে সামলে মিহানকে কোল থেকে নামানোর চেষ্টা করে বলে।
মিরা : কি করছেন?নামুন আমার কোল থেকে।
মিহান : জান আজ তোমায় ভিশন সুন্দর লাগছে।তোমাকে দেখে একটা কবিতা খুব মনে পড়ছে।
অনন্ত প্রেম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার।
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়।
গাঁথিয়াছে গীতহার,
কত রূপ ধরে পরেছ গলায়,
নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।
যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,
প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতি পুরাতন বিরহমিলনকথা,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে।
দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমিররজনী ভেদিয়া।
তোমারি মুরতি এসে,
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।
আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি
যুগল প্রেমের স্রোতে।
অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে।
আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা
কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহবিধুর নয়নসলিলে,
মিলনমধুর লাজে—
পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।
আজি সেই চিরদিবসের প্রেম
অবসান লভিয়াছে।
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ,
নিখিল প্রাণের প্রীতি,
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে।
সকল প্রেমের স্মৃতি—
সকল কালের সকল কবির গীতি।
কবিতা আবৃত্তি শেষ করে মিহান ছোট একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলে।
মিহান : কেমন হয়েছে কবিতা আবৃত্তি? তোমার পছন্দ হয়েছে?
মিরা মিহানের কোল থেকে উঠিয়ে দেয়।মিহান উঠে ভালো ভাবে বেডে বসে। মিহানের দিকে তাকিয়ে বলে।
মিরা : ভালো হয়েছে কবিতা আবৃত্তি। কিন্তু আমি কি আপনাকে কবিতা আবৃত্তি করতে বলেছি? তাছাড়া এই তিনদিন কোনো খোঁজ নেই কোনো খবর নেই আর আজ এসে হঠাৎ করে বিয়ে করে নিলেন।এগুলোর মানে কি আপনি বলতে পারেন?
মিহান : মানে খুব সোজা।তুমি রাজশাহী গিয়ে কি বলেছিলে?কোন জয় না ফয় তোমাকে প্রপোজ করবে মনে আছে?আমি তোমাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চাই না।তুমি কিছু করার আগে তোমাকে আমার রাজ্যের রানি করে নিলাম।
মিরা বিড়বিড় করে বলে।
মিরা : কোনো যে সেই রাত জয়ের কথা বলতে গেলাম?তাহলে আর আমাকে পাগল ডাক্তারকে বিয়ে করতে হতো না।
মিহান মিরাকে বিড়বিড় করতে দেখে মিরাকে টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিরার পিঠ ঠাকায়।দুই হাত দিয়ে মিরার পেট জড়িয়ে ধরে মিরার কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে।
মিহান : বিড়বিড় করে লাভ নেই জান।এখন শুধু তুমি আমার।#না_চাইলেও_তুই_আমার।তোমাকে আজ রাতেই নিয়ে যেতাম চৌধুরী বাড়ি কিন্তু তোমার দাদা বলেছে কাল সকালে যেতে।আমি মানা করিনি।আমি সকালে এসে তোমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তারা আজ রাতে আমাকে এখানে থাকতে বলেছে।তোমার কাছে থাকার সুযোগ কি মিস করতে পারি বলো?তাই রাজি হয়ে গেলাম।
মিরা মিহানের ছোঁয়ায় কেমন অজানা অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে।না চাইলেও ভালো লাগছে মিহানের ছোঁয়া গুলো।এই প্রথম কোনো ছেলের সংস্পর্শে এলো মিরা।মিরা মিহানকে কিছু না বলে মিহানের ছোঁয়া গুলো অনুভব করতে চোখ বন্ধ করে রাখে।অদ্ভুত অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে মিরার মনে।
চলবে… 🍁