না চাইলেও তুই আমার

না চাইলেও তুই আমার !! Part- 12

মিরারা বাড়ি ফিরে যে যার রুমে চলে যায়। জারিফ কে মিরার সাথে ফিরতে দেখে জারিফের মা অনামিকা খান আর দাদি জারিফকে ডেকে তাদের রুমে নিয়ে যায়। দাদি খুব উৎফুল্ল স্বরে জিজ্ঞাসা করে।
দাদি : দাদাভাই তুই আজ মিরার সাথে সারাদিন ছিলি?
জারিফ : হ্যা দাদি।
অনামিকা : তোকে কিছু বলেনি?
জারিফ : কি বলবে?
দাদি : তোর সাথে ভালো ভাবে কথা বলছে ও?
জারিফ : আরে বাবা হ্যা। আমরা অনেক জায়গায় ঘুরে দেখছি তারপর দুপুরে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার খেয়ে এসেছি।
দাদি : জানিস তোদের দাদা এখনো মিরার জন্য কষ্ট পায়। যে মিরা সারাদিন দাদাভাই দাদাভাই করতো সে মিরা ওর মা যখন বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তারপর থেকে আর তার সাথে কথা বলে না। মিরা দেশে ফিরেছে পর থেকে কথা বলা তো দূর তার দিকে একটু তাকিয়েও দেখেনি।মিরা আসার পর থেকে মানুষটা সারাদিন মনমরা হয়ে বসে থাকে।
অনামিকা : মা চিন্তা করবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
জারিফ : উফ দাদি তুমি আর চিন্তা করো না আপুর অভিমান কমে গেলে নিজে থেকেই দাদাভাইয়ের কাছে যাবে।
জারিফ ওর মাকে আর দাদিকে বুঝিয়ে চলে যায়।
সন্ধ্যার পর সবাই সাজগোজ করতে ব্যস্ত কিন্তু মিরা নিজের রুমে বসে টিভি দেখে ব্যস্ত সময় পার করছে। কিছুক্ষন পর দরজায় নক করলে মিরা দরজা খুলে দেখে নীলা আর নিধি হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

মিরা : কিছু বলবে তোমরা?
নীলা : আপু তুমি এখনো রেডি হওনি? অনুষ্ঠান তো কিছুক্ষনের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে!
মিরা : আমার এসব অনুষ্ঠান ভালো লাগে না।তোমরা ইনজয় করো যাও।আমি এখানে ঠিক আছি।
নিধি : তা কি করে হয়। এই দেখো তোমার জন্য দাদি একটা শাড়ি পাঠিয়েছে।
মিরা : আমি এসব শাড়ি টাকা পড়ি না। তোমরা যাও এখন!
নীলা : আপু প্লিজ চলো না। সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। ভালো লাগবে তোমার!
মিরা : ওকে ফাইন যাবো আমি কিন্তু এই শাড়ি টাড়ি পড়তে পারবো না।
নিধি : ঠিক আছে তুমি রেডি হয়ে আসো। আমরা নিচে আছি।
মিরা : আচ্ছা।
ওরা চলে গেলে মিরা কিছুক্ষণ ভেবে তারপর রেডি হতে শুরু করে।
নীলা নিধি মিরার রুম থেকে বের হয়ে ওদের দাদির রুমে চলে যায়।নীলা দাদির হাতে শাড়ির প্যাকেট দিয়ে বলে।
নীলা : নানু আপু শাড়ি পড়বে না বলছে। রেডি হয়ে একটু পর নিচে আসছে।
দাদি : এই মেয়েটা কোনো কথা শোনে না। যা বলবো তার ঠিক উল্টো করবে। আজকে অনুষ্ঠানে দিনে একটা শাড়ি পড়বে তা না।
নিধি : দাদি তুমি রাগ করো না আপু তো এতোদিন বিদেশে দিলো।একদিনে তো সবকিছু হবে না আস্তে আস্তে সব পাল্টে যাবে।
নীলা : নিধি একদম ঠিক কথা বলেছ। তাছাড়া যদি চলে যেতে চায় তখন কি হবে জানোই তো আপু অল্পতেই রেগে যায়।
দাদি : এই একটা জিনিস পেয়েছে ওর দাদাভাইয়ে মত। কিছু পারুক না পারুক চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলতে পারে দুজনে।

নীলা আর নিধি দাদির কথা শুনে হেসে দেয়। নীলা বলে।
নীলা : উফ তোমাকে নিয়ে আর পারি না এখন চলো নিচে সবাই অপেক্ষা করছে।
দাদি : চল।
মিরা রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। গাউন আর হালকা সাজে মিরার দিক দিয়ে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। আশেপাশের সব ছেলেরা মিরার দিকে তাকিয়ে আছে। মিরা সেদিকে নজর না দিয়ে ওর মামুর কাছে চলে যায়। মিরাকে দেখে ওর মামু মিষ্টি হেসে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু দিয়ে বলে।
মামু : আমার মাকে আজ তো রাজকুমারীর মত লাগছে।
মিরা : তোমার সবকিছুই বেশি বেশি। আমি ওতোটাও সাজিনি যে আমাকে রাজকুমারীর মত লাগবে।
ওদের কথার মাঝে নিঝুম চলে আসে। নিঝুম মিরাকে বলে।
নিঝুম : উফ আপু তোমাকে কি কিউট লাগছে। একদম ডলের মত।
মিরা মুচকি হেসে নিঝুমের দিকে তাকিয়ে বলে।
মিরা : তোমাকেও খুব মিষ্টি লাগছে। চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।
নিঝুম : তোমাকে আমার থেকেও বেশী ভালো লাগছে।
এরমধ্যে নীলা,নিধি আর দাদি ওদের দিকে চলে আসে। নীলা কাছে আসতে আসতে বলে।

নীলা : কি নিয়ে কথা হচ্ছিলো শুনি?

মিরা : তেমন কিছু না নিরা কোথায়?

নীলা : আরিফের সাথে আছে নিরা।

ওরা এরকম আরো নানা ধরনের কথা বলতে থাকে।

এদিকে মিহান সবে হসপিটাল থেকে ফিরেছে।ফ্রেশ হয়ে হলে রুমে এলে মিহানের মম মিহানকে এক মগ কফি দিয়ে বলে।

মম : শোন তারা রাজি হয়ে গেছে। তারাও চাচ্ছে ঢাকা ফিরে কাজটা সেরে ফেলতে।

মিহান ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে তুলে বলে।

মিহান : পাপা কে বলো কাজ শুরু করে দিতে।

মম : তা তোর বলা লাগবে না। সেটুকু বোঝার ক্ষমতা আমাদের আছে। তোর মত পাগল ছেলে আমার জীবনে আর একটাও দেখিনি।

মিহান হেসে দিয়ে বলে।

মিহান : দেখবে কি করে? আমি এক পিস ই আছি। আমার মিরা জানের পাগল ডাক্তার।

মিহানের কথা শুনে ওর হেসে দিয়ে বলে।

মম : সেটা আমি জানি।

মিহান : আচ্ছা মম তুমি থাকো আমি একটু আসছি।

মম : এখন আবার কোথায় যাবি?

মিহান : কোথাও না রুমে যাবো। মিরার সাথে কথা বলতে। আজ সারাদিনে মিরার সাথে কথা বলেনি। এখন যাই একটু জ্বালিয়ে আসি।

মিহান ওর রুমের দিকে হাটা দেয় আর মম ওর কথা শুনে হেসে দেয়।

মিরা এতো লোকজন ভালো লাগছে না।অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে‌ কিছুক্ষন আগে।এক ফাঁকে মিরা বাড়ির বাগানের একটু নিরিবিলি জায়গায় চলে যায়।একা একা আশেপাশের পরিবেশটা উপভোগ করছে।একটু এগিয়ে খেয়াল করে একটা বাচ্চা ছেলে গোলাপ ফুল গাছ থেকে ছেঁড়ার চেষ্টা করছে,কিন্তু কাটার কারনে পারছে না।মিরা এগিয়ে যাবে তার আগে ছেলেটি গাছ থেকে ফুল ছিঁড়ে হাতে নেওয়ার সময় হাতে কাটা ফুটে রক্ত বের হয়ে যায়।এরমধ্য একজন মহিলা এসে বলে।

– বাবু তুমি এখানে কি করছো?

ছেলেটা হাসি মুখে ঐ মহিলার দিকে ফুলটা এগিয়ে দিয়ে বলে।

ছেলেটা : মামনি এটা তোমার জন্য।

ছেলের হাসি মুখে ফুলটা নেওয়ার সময় খেয়াল‌ করে তার ছেলের হাত থেকে রক্ত পড়ছে।তিনি হাটু গেঁড়ে বসে হাতটা মুখের সামনে ধরে বলে।

ছেলেটার মা : বাবু তোমার হাত কাটলো কি করে?

ছেলেটা : তোমার জন্য ফুলটা ছিড়েঁতে গিয়ে।

ছেলের মা ছেলের হাতে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।একটা লোক এসে বলে।

– মা ছেলের ভালোবাসা শেষ হলে ভিতরে চলুন।

ছেলেটা মা : দেখোনা তোমার ছেলে কি করেছে!আমার জন্য ফুল ছিড়ঁতে গিয়ে নিজের হাতে কাটা‌ ফুটিয়েছে।

ছেলের বাবা : তোমাদের মা ছেলেকে নিয়ে আমি আর পারি না চলো ভিতরে ছেলের হাতে মেডিসিন লাগাতে হবে।

ছেলের মা : হ্যা তাড়াতাড়ি চলো।

ছেলের মা ছেলেকে কোলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। মিরা এতক্ষণ এই তিনজনের ভালোবাসা দেখছিলো। ওরা চলে গেলে মিরার চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে। মিরাও খুব ইচ্ছে ছিলো ওর পরিবারটা এমন হবে। বাবা মা ভালোবাসা দিয়ে ওকে আগলে রাখবে। কিন্তু এসব কিছু ওর ভাগ্য ছিলো না। ছোট বেলার স্মৃতি গুলো আবার চোখের সামনে ভাসতে শুরু করে।মিরা চোখ মুছে ড্রাইভারের কাছ থেকে গাড়ির চাবি দিয়ে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না বলে।

চলবে… 🍁