00

মেঘ বর্ষণের মায়া !! Part- 05

ঘড়ির কাটায় রাত তিনটা ছুঁই ছুঁই।জানালার কোণ ঘেঁষে দাড়িয়ে আছি আমি।দমকা বাতাস।নির্জ্জলতার আভাস।ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ।এভাবেই নির্ঘুম রাতটা কেটে গেলো আমার।সকালে খুব ভোর হতেই সেজেগুজে রুম থেকে বের হলেন কাকিমা।আজ শুক্রবার।তাই সবার বন্ধের দিন।ঝিমিও ঘুমাচ্ছে আপন মনে আজ।কাকিমা এসে ঝিমিকে চিৎকার করে ডেকে তুললেন।ঝিমিকে রেডি হতে বললেন ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাবে বলে।মেঘ ঘুম থেকে উঠে আলসেমি কাটিয়ে উঠে তাকালে চোখের সামনে মায়ের মুখটা দেখতে পেলেন।মা তাকে গদগদ স্বরে আদুরে গলায় বললেন,
—“বাবারে শুভ কাজে দেরি করতে নেই। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”
কাকিমার কথা শুনে যেন উনি আকাশ থেকে পড়লেন।হাই তুলে মুখে হাত টিপে তাকিয়ে আছেন নিজের মায়ের দিকে।মায়ের ভাবসাব কিছু যেন ভালো ঠেকছে না তার।বিস্ময় নিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললেন উনি,
—“কোথায় যাবো মা?”
কাকিমা উনার পাশে এসে বসে পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন,
—“বউমাকে দেখতে?”

রুমের বাইরে দাড়িয়ে আমি দুজনের কথা শ্রবণ করছি।উনি আমাকে দেখতে পেয়ে বললেন,
-“একি মায়া বাইরে কেন দাড়িয়ে আছিস ভেতরে আয়!”
আমি ধীরে ধীরে উনার রুমের ভেতরে আসলাম।উনার সামনে এসে দাড়ালে আমার হাতটা টেনে বসিয়ে দিলেন বিছানায়।আমার গাল টেনে বললেন,
—“তুই যাবি আমাদের সাথে? মলিকে দেখে আসবি সাথে আবিরের সাথেও দেখা হবে।ভালো হলো না? একসাথে দুইটা কাজ সেরে নিতে পারবি।জানিস মলির মতোন মেয়ে হাজারে একটা হয়।যে কখনো কাউকে কস্ট দিতে পারে না।কারও মনও ভাঙতে পারে।এমনকি তুই যদি ওর মনে কস্টও দিস তবুও তোর প্রতি ওর হৃদয়ে একটুখানিকও অভিযোগ থাকবে না।এমন মেয়েকে জীবনসঙ্গিনী রূপে ক’জনই বা পাই বল? ভালো হয়েছে না ও আমার জীবনে এসেছে? না হলে…”
এটুকু বলে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে উনি।আমি নিজের চোখদুটো নিচের দিকে নামিয়ে নিলাম।উনার দিকে তাকানোর মতো মুখ নেই আমার।নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে আজ আমার।কাকিমা রুম থেকে বেড়িয়ে গেলে আমিও উঠে দাড়ালাম।বাইরে যাবার জন্য পা বাড়াতেই পেছনের থেকে আমার পেট জড়িয়ে ধরলেন উনি।আমি একদম স্তব্ধ হয়ে আছি।হঠাৎ উনার এমন আচারণ আমি আশা করি নি।
—“ছাড়ুন আমায়।”

কথাটা বলতেই আমাকে টেনে নিজের কোলের উপরে বসিয়ে দিলেন উনি। আমার কাঁধ থেকে চুল সরিয়ে ঘাড়ে থুতনিটা রেখে বললেন,
—“ছেড়ে তো দিবোই।এতোদিন তো তুই আমার সাথে নাটক করেছিলি।ভালোবাসার নাটক।এই নাটকটা দেখিয়ে তো আমার মনে জায়গা করে নিয়েছিলি তুই।আজ যখন আমি নিজের ভালোটা বুঝে নিতে চাচ্ছি তখনও তুই খুশি হচ্ছিস না।একটা কথা বল তো মায়া আমার থেকে তুই দূরে যেতে চাস।আবিরকে বিয়ে করতে চাস।তাহলে বারবার আমার রুমের আসেপাশে কি করতে আসছিস?”
আমি কনুই দিয়ে ঠেলে উনাকে সরিয়ে দিলাম।উনার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বুকে ধাক্কা দিতে লাগলাম আর বললাম,
—“আমি ভালো না।আমি খারাপ।খুব স্বার্থপর আমি।আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করবো।কোনো মেয়ের মতো হবার প্রয়োজন নেই আমার।জানেন আবির কখনো আমায় কস্ট দেয় নি।এমন কিছু করে নি যাতে আমি কস্ট পাই।ঘন্টার পর ঘন্টা দাড় করিয়ে রেখে মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য দেখা করেছি।কখনো অভিযোগ করে নি আমায়।দশবার কল করলে একবার রিসিভ করেছি কখনো রেগে কথা বলে নি আমার সাথে। আবিরের মতো ছেলেই হয় না।ওকে বিয়ে করা সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।অনেক ভালোবাসবে আদর করবে।আপনার মতো এভাবে কস্ট দেবে না আমায়।”
কথাগুলো শুনে এক ধাক্কায় নিচে ফেলে দিলেন আমাকে উনি।রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন আমায়,
—“বেড়িয়ে যা আমার রুম থেকে।”
আমি উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।উনি ধমকানো স্বরে আবার বললেন,
—“কথা কানে যায় না তোর?”

উঠে এসে আমাকে টেনে তুলে রুম থেকে বের করে দিলেন।দরজার কাছে এনে ধাক্কা দেওয়ার পর বললেন,
—“যতোদিন না মলির সাথে আমার বিয়েটা হচ্ছে তুই আমার আসেপাশেও আসবি না।দেখতে চাই না তোর মুখটা আমি।”
কথাটা বলে মুখের সামনে শব্দ করে দরজাটা লাগিয়ে দিলেন উনি।আমি চোখ মুছে নিজের রুমের দিকে ছুটতে লাগলাম। হঠাৎ ঝিমি এসে আমার সামনে দাড়ালে আমি ভুত দেখার মতো ভয় পেয়ে কেঁপে উঠতেই আমার দিকে প্রশ্নসূচক ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলো।আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।
চলবে,,,,,,