00

মেঘ বর্ষণের মায়া !! Part- 06 (Last-Part)

আমি বুঝতে পারলাম ঝিমি কিছুটা আচঁ করতে পেরেছে।ওকে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম আমি।রুমে এসে দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিলাম।ঝিমি আমাকে অনেকবার ডাকল কিন্তু আমি দরজা খুললাম না।নিজেই ভেবে নিলাম আর কখনো উনার সাথে কথা বলবো না।উনার সামনেও যাবো না কখনো।কি আছে এই ভালোবাসায়? কিছুই না।শুধু অপমান আর কস্ট ছাড়া।সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে।চাইলেও আর কিছু ঠিক হবার সম্ভব নয়।আবির আমাকে ভালোবাসে।মলি উনাকে ভালোবাসে।আমরা নিজেরাই দু’দিক থেকে সরে এসেছি।এই পিছুটান, মায়া এগুলো একদিন ঠিক চাপা পরে যাবে ভেতরের থেকে।তাই আমাদের সরে আসায় উত্তম।সব ভালোবাসা তো পূর্ণতা পাই না।আমরা না হয় অল্প কিছু মানুষের পাল্লাটা ভারী করি।
🍁
সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চললো এখনো আমি নিশ্চুপ হয়ে রুমের মধ্যে বন্ধ দরজার আড়ালে বসে রইলাম।কেউ এসে আমাকে ডাকলো শুনতে পেয়ে নড়ে উঠতেই কাকিমার গলার কন্ঠস্বর।কাকিমা আমাকে ডাকছে আর এক সপ্তাহ পর উনার আর মলির বিয়ে ঠিক করে এসেছে বলে।অবশ্য আমি জানতাম কাকিমা আজই বিয়েটা ঠিক করে আসবে।ভদ্রতা বজায় রাখতে দরজাটা খুললাম আমি।কাকিমা আমার মুখের মধ্যে ঠেসে ঠেসে দুটো মিস্টি ভরে দিলেন।আমাকে জড়িয়ে ধরে গাল টেনে বললেন,
—“মলি যদি এবাড়ির বউ হয় তাহলে তো তোর ননদ হবে মলি তাই না? আচ্ছা মা কখনো বলিস না ওবাড়ি গিয়ে আমার দুর্নাম।বুঝতেই তো পারছিস শ্বাশুড়ি বলে কথা। আমার মান সম্মাণ থাকবে না।ছোট হয়ে যাবো ওদের কাছে আমি।”
কথাটা বলে আমার কপালে চুমু দিয়ে মিস্টির প্যাকেটটা আমার হাতের উপরে রেখে যতো ইচ্ছা ততো মিস্টি খেতে বলে চলে গেলেন কাকিমা।আমি দু’মিনিট হা হয়ে তাকিয়ে আছি কাকিমার ব্যাবহারে এতো পরিবর্তন দেখে।তার চেয়েও বেশি ভালো লাগছে বাবা-মা চলে যাবার পর আজ প্রথমবার কাকিমা আমার সাথে এতো আদুরে গলায় কথা বললেন।খুশিতে আমার দু’চোখের পানি বাঁধ মানলো না।
আমাকে বাড়িতে এখন আর কোনো কাজই করতে দেয় না কাকিমা।সারাদিন একান্তে থাকি।মনের ভেতরটা ভার হয়ে আছে।উনিও আমার সাথে দেখা করেন না।ফোনটা ভেঙে যাওয়ার পর থেকে আবিরের সাথে আর কথা হয় না।যার জন্য আবির আসে আমার সাথে দেখা করতে।কেন যানি আবিরকে মন খুলে কিছু বলতে পারি না আমি।আবির একা একাই কথা বলে।আমি শুধু শুনি।ধীরে ধীরে বিয়ের দিন যতো আগাচ্ছে।ততো যেন বেশি ভেঙে পরছি আমি।আবির আমার সাথে কথা বললে বুঝতে পারতো কিন্তু সমস্যাটা খুঁজে পেতো না।আমি নিজেই আবিরকে বললাম সাহস করে কথাটা।
—“আবির মলি আপনার ছোট বোন না? আপনি যদি মলির আগে বিয়ে করেন তাহলে ক্ষতি কিসের? মলির তো বিয়ে হবেই আমি চাই আপনার বিয়েটা মলির আগে হোক যেন আমি নিজের ননদের বিয়েতে আনন্দ করতে পারি।”

আমার মুখে কথাটা শুনে আবির বিস্ময় নিয়ে তাকালেন।প্রথমে মনে হয়েছিলো হয়তো ভুল কিছু বলে ফেলেছি।কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম আবির আমার কথায় অনেক বেশি খুশি হয়েছে।আমাকে কিছু না বলে পরের দিন আবির ওর বাবা-মাকে নিয়ে আসলেন।বিয়ের কথা কাকিমাকে বললে আর না করতে পারে নি সে।কাকিমা নিজের হাতেই সব আয়োজন করেছে।জানি না কথাটা উনি শুনার পর কতোটা রিয়াক্ট করেছেন। কারণ আমরা এখন আর দুজন দু’জনের সামনে আসি না।গায়ে হলুদের পর্ব শেষ।সন্ধ্যার পর বিয়ে। খুব কান্না পাচ্ছে আমার এবার। এতো রাগ, এতো ঘৃণা একটা মানুষ কিভাবে করতে পারে যে একবার আমার সামনেও আসলেন না।অনেক কেঁদেছিলাম কেউ হয়তো বুঝিনি আমার কান্নার কারণটা।ঝিমিকেও বলেছি একবার তোর ভাইয়াকে ডেকে দিবি আমি কিছু বলতে চাই। কিন্তু ঝিমিও কোনো গুরুত্ব দেয় নি আমার কথায়। কোনোমতে বিয়েটা শেষ হতেই বিদায়ের সময় আমার চোখদুটো ঘুরে ঘুরে সেই মানুষটাকেই খুঁজছিলো।তার কোনো দেখা পেলাম না।
গাড়িতে উঠলে ঝানালার পাশে মুখটা ঘুরিয়ে বসে আসে আবির।নতুন জীবন শুরু করতে চলেছি তাই আর আবিরের থেকে কিছু লুকাতে পারলাম না।আমি আবিরকে নিচু দৃষ্টিতে বললাম,
—“আমি জানি আবির আপনি আমাকে ভালোবাসেন।আমি এটাও জানি এখন আমি যেটা বলবো সেটা শুনার পর আমার উপর আপনি রাগ করবেন।তবুও বলবো আমি।আমাকে যে বলতে হবে।আমি আপনাকে কখনো ভালোবাসিনি।এক প্রকার জেদ দেখিয়ে বিয়েটা করেছি।আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।আর সে হলো মেঘ।”
এটুকু বলতেই গাড়ির জানালার গ্লাস থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে আমার দু’বাহু শক্ত করে চেপে ধরলেন।ভয়ে আমি চোখদুটো বন্ধ করে নিলাম।হঠাৎ আমার ঠোঁটে কারও ঠোঁটের আলতো ছোঁয়া পরতে চোখ খুললাম।ধাক্কা দিয়ে চিৎকার করে বললাম,
—“আমার উপর জোড় খাটাতে পারবেন না আপনি আবির।”
সঙ্গে সঙ্গে আমার গালে পরলো এক চড়! চোখ তুলে তাকালে দেখলাম উনি।আমার মুখটা বন্ধ হয়ে আছে।কিচ্ছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না আমি।এবার উনি আবার আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিলাতে গেলে আমি হাত রাখলাম উনার মুখের সামনে।কেঁদে উঠে বললাম,
—“আমি এখন আবিরের বউ।”
উনি আবার হাত উঁচু করলেন আমাকে চড় মারবার জন্য। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলে বললেন উনি,
—“তোর বিয়ে আবিরের সাথে না আমার সাথে হয়েছে।”
আমি চোখ খুলে উনার সেড়োয়ানী টেনে বললাম,
—“কি বলছেন?”
উনি আমার হাত সরিয়ে সেড়োয়ানী ঝেড়ে বললেন,
—“ফাট্ট!”

আমি কেঁপে উঠে চুপ করে বসলে উনি আবার আমাকে ঘুরিয়ে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলালেন।কিছুক্ষণ পর ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বললেন,
—“কেমন মেয়েরে তুই? ভাবলি কি করে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসবো? এই ছয়টা দিনে আমি তোকে একবারের জন্যও দেখা দিই নি।কিন্তু তুই কিভাবে পারলি আমার সামনে না এসে থাকতে?”
আমি মুখে হাত রেখে চুপ হয়ে আছি।উনি আমাকে ঝাকিয়ে বললেন,
—“কথার উত্তর দে! না হলে মারবো আরেক চড়!”
রাগী দৃস্টিতে তাকিয়ে রইলেন উনি। উনাকে কিছু বললাম না আমি।রাগ শান্ত করার উপায় খুঁজতে লাগলাম।কিছু একটা ভেবে হুট করে উনার সেড়োয়ানীর কলারটা টেনে ধরে নাকে নাক ছুয়ালাম।উনি ভ্রু কুচকে তাকালেন।গালে কপালে আর থুতনিতে কিস করলাম।এটা করার পর উনি আমার কোমড়টা চেপে ধরলেন।এমন সময় গাড়িটা এসে থামলো এয়ারপোর্টের সামনে।গাড়িতে ঝাঁকুনি খেয়ে আমি পরলাম উনার বুকে।উনি আমাকে ঠেলে সরিয়ে হাত ধরে উঠিয়ে বাইরে নিয়ে আসলেন।আমাকে নিয়ে দৌড়াতে লাগলেন আর কোনো একজনকে খুঁজলেন।অবশেষে তার দেখা মিললো।লাগেজ হাতে দাড়িয়ে আছে একটি মেয়ে।পড়নে বিয়ের পোশাক।উনি আমায় নিয়ে ছুটে গিয়ে মেয়েটার সামনে দাড় করালেন।আমাকে দেখিয়ে বললেন,
—“এটা মায়া যার কথা বলেছিলাম তোমাকে।”
মেয়েটা মুচকি হেসে বললেন,
—“ওহ তাহলে এই সেই মেয়ে? বাহ খুব মিস্টি দেখতে তো।”
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে।মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিসয়ে বললেন,
—“আমি মলি আবিরের কাজিন বউও বলতে পারো।”
পেছনের থেকে আবির এসে দাড়িয়ে মেয়েটাকে ডাকছে।আবিরকে দেখে আমি চিন্তায় পরে গেলাম।আবির এগিয়ে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে বললেন,
—“কি খুশি হয়েছো? এটা সত্যি তোমাকে আমি ভালোবাসি কিন্তু তোমার খুশির থেকে বেশি না।সেদিন যখন তোমার কাকিমা, ঝিমি আর আবির মলিকে দেখতে আসে তখন ঝিমি আমাকে আলাদা ভাবে ডেকে তোমাদের সম্পর্কটার কথা বলে।আর মলি বলে ও আমাকে ভালোবাসে।আমার খুশির জন্য কখনো বলে নি।তোমার মতোন মলিরও বাবা-মা নেই।আমাদের সাথে বড় হয়েছে।শুধু আমাকে ভালো রাখবে বলে তোমার আমার বিয়েতে খুশি হবার অভিনয় করতো।কখনো আমাকে বুঝতে দেয় নি।যেদিন ও জানতে পারলো মেঘের সাথে তোমার ভালোবাসার কথা সেদিন ও চিন্তা করলো আমার ভালোবাসার চেয়ে দু’জন ভালোবাসার মানুষকে এক করাটা বেশি প্রয়োজন।তাই মেঘকে এই প্লানটা দেয় মলি।মেঘ অফিসে মলির এসিস্টেন্ট ছিলো।খুব ভালো বন্ধুও ছিলো বলতে পারো।সেই প্রেক্ষিতে দু’জন দুজনের মনের সব কথা শেয়ার করতো।আমি সবটা শুনে ভেবে দেখলাম আমারও কিছু করা উচিৎ তোমাদের জন্য। তাই তোমার কাকিমাকে বোঝালাম আর আমাদের প্লানে সামিল করলাম।এখন বুঝি জানো কাউকে ভালোবাসার থেকে ভালোবাসা পাওয়াটা অনেক বড় ব্যাপার যেটা সবাই পাই না।তোমাকে পেলে হয়তো ভালোবাসাটা পেতাম না।তবে মলিকে পেয়ে ভালোবাসাটা পেয়েছি! এইতো আর কি লাগে!”

আমি কিছুক্ষণ নিরব থেকে আবিরের কাছে জানতে চাইলাম,
—“আপনারা দু’জন কোথায় যাচ্ছেন? আজই তো বিয়ে করলেন?”
আবির মুচকি হেসে বললেন আমায়,
—“দু’জন না চারজন।আমরা চারজন হানিমুনে যাচ্ছি। আজ বিয়ের ছুটি গেলো।কিছুদিন পর হানিমুনের ছুটি হবে।এভাবে চললে অফিসের কাজের ক্ষতি হবে।তাই ভাবলাম এক ছুটিতেই সবটা করে নিয়। তারপর বাড়ি ফিরে রিলাক্সে কাজ করা যাবে।কি বলো মেঘ?”
উনি মুচকি হেসে হ্যাঁ বলে আমাকে কোলে তুলে নিলেন আর আবির মলিকে।
।।।।সমাপ্ত।।।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *