পরিণয়ে পরিণতি

পরিণয়ে পরিণতি !! Part- 08

মুনতাহা কে দেখে সাইমুন চোখ কচলিয়ে নিলো। হয়ত রাতের বেলায় ভুল দেখছে। কই নাতো সত্যি মুনতাহা এসেছে।
সাইমুন হা করে তাকিয়ে আছে। মুনতাহার পরিবর্তন সাইমুনের মন কে নাড়া দিয়ে গেলো। ভীষণ মায়াবী দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে মুনতাহার বয়স ৫ বছর কমে গেছে। সাজলে কেন জানি প্রতিটি মেয়েকে সুন্দর লাগে। যদিও মেয়েরা জন্মগতভাবে মায়াবতী সাজলে তাদের মায়া আরো বেড়ে যায়।
যে মেয়ে সারাক্ষণ মন মরা থাকে। যার চোখে কান্না লেগে আছে সেই মেয়ে বরের গায়ে হলুদে এত সুন্দর করে সেজে এসেছে। শুধু সাইমুন না উপস্থিত সবাই মুনতাহাকে দেখে রিতীমত অবাক!!
মুনতাহা একটা লাল টুকটুকে জামদানী পরেছে।ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, মাথায় গাজরা, হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি। সাধারনের ভিতর মুনতাহা কে অসাধারণ লাগছে।
সবাই ফিস ফিস করতে লাগলো। শোকে দুঃখে মুনতাহার মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাতো। নাহয় নিজের স্বামীর গায়ে হলুদে কেউ এত সুন্দর করে সাজে।
সাইমুন যেভাবে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে মনে হয় যেন রাত বিরাতে ভূত দেখেছে।।
রাহি কে ডেকে সাইমুন চুপিচুপি বলছে,,
মুনতাহার কি হয়েছে কিছু জানিস। ও ঠিক আছে তো??
— আমি কি করে জানবো। মনে হয় ভাবীর মাথা
খারাপ হই গেছে।
আমার জন্য আজ মুনতাহার এ অবস্থা। জানিনা আর কি কি অপেক্ষা করছে । মুনতাহার যে কি হলো আল্লাহ জানে। তবে এটা সত্যি আজ মুনতাহা কে অন্য রকম সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে ৪ বছর আগের কলেজ পড়ুয়া মুনতাহা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ এভাবে সাজার কারণ কি?
মুনতাহা সবার নিরাবতা ভাঙ্গিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে,
— কি ব্যাপার তোমরা মজা করছ না কেন?? তোমাদের এক মাত্র ভাইয়ের বিয়ে আর তোমরা চুপচাপ হয়ে থাকবে।
— না মানে ভাবী। ভাইয়ার ভালো লাগছে না। মন মেজাজ খারাপ।
— কি বলো কারো বিয়ের আগের দিন মেজাজ খারাপ থাকে?? নিপা আপু আমাকে ভাবী ডেকো নাহয় কাল তোমার নতুন ভাবী এসে শুনলে কেলেংকারী হয়ে যাবে। চলো চলো সবাই মজা করি।
কেউ কোন কথা বলছে না।। সবার ধারণা মুনতাহার বিয়ে নিয়ে কষ্ট হচ্ছে দেখে আবোলতাবোল বলছে।
— তোমরা মজা না করলে করিও না। আমি কিন্তু আমার জামাইর বিয়েতে খুব মজা করব। ও সরি জামাই বলা যাবে না। কাল থেকে উনি আমার প্রাক্তন হয়ে যাবে। মুনতাহা নামে যে কেউ ছিলো সেটা মুছে যাবে।
সাইমুন মুনতাহার হাত শক্ত করে ধরে ছাদের এক কোণে গিয়ে,,
— তোমার হাবভাব আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
— কিভাবে বুঝবে মনের সম্পর্ক থাকলে তো বুঝবো। তুমি তো অবন্তিকার স্পর্শ পাওয়ার জন্য বেকুল হয়ে উঠছো। তোমার শরীরে লোমে লোমে শিহরণ বইছে। সত্যি বলতে পুরুষরা মেয়েদের মনের চেয়ে দেহ ভোগ করতে বেশি ভালোবাসে।
সাইমুন রাগে মুনতাহার গাল টিপে বলছে
— কি শুরু করছ??
— উফফ ব্যাথা পাচ্ছি। ছাড়ো আমাকে তুমি চাও না আমি ভালো থাকি??
— চাই। এখন কি হয়েছে সেটা বলো।। হঠাৎ সুন্দর করে সেজেগুজে হাজির। তুমি তো চাওনি বিয়ে হোক তাহলে??
– ভাবলাম আমাকে যেহেতু ভালোবাসো না আমার কেঁদে কি লাভ। যতটুকু সময় আল্লাহ বাচিঁয়ে রেখেছে জীবন টা উপভোগ করি। কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না। সময় চলে যায় আপন গতিতে।।
ভোরের কুয়াশা বেদ করে সকাল হয়ে রোদের আলো আসবেই এটাই স্বাভাবিক।
— তুমি কি বিয়ে টা মন থেকে মেনে নিচ্ছ??
— আমার মানা না মানা নিয়ে সত্যি কি কিছু এসে যায়!!
— সব বুঝেও কেন বাচ্চাদের মত আচরণ করছ?
— আমি চাই তুমি বিয়ে কর। এতদিন বিয়ের পক্ষে ছিলাম না কিন্তু আজ বলছি তুমি বিয়ে করে সুখী হও। ভালোবাসার মানুষ কে না পাওয়ার মাঝেও আনন্দ আছে। আর আমি
— আমি জানতাম তুমি ঠিক বুঝবে। দেখবা সব ঠিক হয়ে যাবে।
— হুম সব ঠিক হবে কোন সমস্যা থাকবে না।
আচ্ছা অনেকক্ষন হই গেছে। সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। পরে বলবে বিয়ের আগে তোমাকে পটাচ্ছি।
সাইমুন মুনতাহার আচরণে হতবাক। সত্যি কি মুনতাহা বিয়ে টা মেনে নিলো। মুনতাহার কথার মাঝে আজ কোন কষ্টের ছোঁয়া নেই। হতে পারে মুনতাহা বুঝেছে বিয়ে টা সবার জন্য ভালো হবে।
আজ মুনতাহার কথাতে সস্থির চেয়ে কষ্ট হচ্ছে বেশি। আমি তো এটাই চেয়েছিলাম ও হাসিমুখে মেনে নিক। তাহলে কেন এত খারাপ লাগছে। কেন ওর হাসি খুশি চেহেরা আমার অসহ্য লাগছে। কেন আমাকে হারানোর ভয় ওর চেহেরায় ফুটে উঠছেনা।
এ পৃথিবীর মানুষ গুলো বড়ই অদ্ভুত যখন কেউ ভালোবাসার অবহেলায় কাতরায় তখন মূল্য কমে যায় আবার পাত্তা না দিলে সেই মানুষের মূল্য বেড়ে যায়।
মুনতাহা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,
চলো আজ সাইমুনের স্পেশাল দিন কে আরো স্পেশাল বানিয়ে দি।
— সাইমুন আমি কিন্তু তোমাকে মেহেদী লাগিয়ে দিব। এ সুযোগটুকু হারাতে চাই না। সবার ভাগ্যে এমন দিন আসে না বুঝলা।
রাহি বলছে,,
— যাক ভাবী অবশেষে বুঝতে পেরেছেন বিয়েটা মেনে নেয়া আপনার জন্য ভালো।
— হুম। তাইতো তোমাদের সাথে মজা কর‍তে চলে আসলাম।
কই তোরা ভাইয়ার গায়ে হলুদ দিবি না।
মুনতাহা সাইমুন কে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে। এত কাছে থেকেও সাইমুন মুনতাহার ভিতরের চাপা চিৎকার শুনতে পারছেনা। যে মানুষ আগে চোখ দেখে মনের ভাষা বুঝে যেত সে আজ পাশাপাশি বসেও কিছু অনুভব করতে পারছে না। সময় পারে দুরুত্ব কমিয়ে কাছে আনতে আবার সময় পারে কাছের মানুষ কে দূরে ঠেলে দিতে।
স্বামী স্ত্রী নাকি চোখ আর হাতের মত একজন কাঁদলে অন্য জন হাত হয়ে মুছে দেয়। মাঝেমধ্যে কথাটা কারো কারো জন্য ভুল হয়ে যায়। একজন কাঁদলে অন্য জন সুখের সাগরে ভাসে।
সবাই ভাবছে মুনতাহার বিয়েতে আপত্তি নেই। মুনতাহা ভাগ্য কে মেনে নিয়েছে।
চোখের দেখা কি সব সময় সত্যি হয়!!
সবাই শুধু বাহিরের সাজগোজ দেখলো মুনতাহার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কারো চোখে পড়লো না। বুকে পাথর দিয়ে নিজেকে শক্ত রেখে সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলছে। মুনতাহা নিজের ভালোবাসা কে আর অসম্মান করতে চায়না। কান্নাকাটি করে জোর খাটিয়ে ভালোবাসার মানুষ কে জয় করা গেলেও ভালোবাসা হেরে যায়।
মুনতাহার শাশুড়ী মুনতাহার আচরণে ভরসা পেল,,
— আমি জানতাম তুমি ঠিক নিজেকে গুছিয়ে নিবে। সাইমুন কে ভালোবেসে তুমি উদারতার পরিচয় দিয়েছ।
আচ্ছা মা একটা কথা বলি,,
— যদি অবন্তিকা আমার মত মা হতে না পারে আপনার ছেলে কে কি আবার বিয়ে করাবেন??
— ভুলেও অলক্ষুণে কথা মুখে আনবা না। না না হবে না সবার কি এ সমস্যা হয় নাকি!!
— দোআ করি যেন না হয়। জানতে ইচ্ছে হলো তাই বললাম।
অনেক রাত হয়েছে আপনি ঘুমাতে যান। কাল বিয়েতে প্রচুর কাজ থাকবে।
মুনতাহা তাহাজ্জুদ নামাযের অজু করে নিলো। একমাত্র নামাজ ওর মনের সকল অশান্তি দূর করবে। গভীর রাতে আল্লাহ তার বান্দার খুব কাছাকাছি থাকে।
ঘড়ির কাঁটা রাত ৪ টা ছুঁই ছুঁই। দরজার কটকটানি শব্দ মুনতাহার কানে লাগছে…..
…..চলবে……