Married To The Dark King- Mafia Boss- Season 3 !! Part- 97
এদিকে রুহীর কিডন্যাপিং এর খবরে সারা বাড়িতে বয়ে গেছে শোকের ছায়া।আজিজ রায়হান মেয়ের খবর শোনার পর থেকেই কান্না করছেন।
আর একে ওকে কল করে যাচ্ছেন সাইফ রাহমান।যদি মেয়েটাকে কেউ খুঁজে দিতে পারে।আর এ অবস্থায় কে এমন করতে পারে ভেবে পান না সাইফ রাহমান।
রায়না রাহমান কাঁদছেননা।নিজেকে শক্ত রাখতে চান ওনি।বাসার সবার মন খারাপ। কিন্তু রুহী অনেক অসুস্থ মেয়ে টা কই আছে কিভাবে আছে কেমন আছে?ভাবতেই চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠে ওনার।
রেহান আজিজ রায়হান কে স্বান্তনা দিচ্ছে।কিন্তু ও যে ভালো আছে তেমন টা নয়।রুহী ভাবি হওয়ার আগে ওর বোন।
ভাই হয়ে বোনটাকে রক্ষা করতে পারলোনা।বোনটার কতোটা কষ্ট হচ্ছে সেটা শুধু রেহান কল্পনা করতে পারছে।
কিন্তু যে মানুষটার বাহুডোরে সারাটা রাত কাঁটে তার কেমন লাগছে সেটা রোয়েন ভাই ছাড়া কেউ বুঝবেনা।ওনি তো পাগল হওয়ার উপক্রম।
রুহীর কিডন্যাপিং এর খবর তো দিলো রফিক।কিন্তু ভাইয়া তো ঘরেই এলোনা এখনো।
আজ হয়ত ঘরে হয়ত মনটা ও টিকবেনা ভাইয়ের।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে রোয়েন।কানে ফোন। অপরপাশ থেকে কেউ একজন কথা বলছে কিন্তু রোয়েনের চোখজোড়া বেয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
-স্যার শুনতে পাচ্ছেন?শামীম বলে উঠে।
-হুম।অশ্রু সংবরন করার চেষ্টা করে রোয়েন।
-রুহী ভাবীকে কিডন্যাপ করা হয়েছে যে গাড়ি দিয়ে সে গাড়ির মালিককে ডিটেক্ট করা হয়েছে।
-রোয়েনের চোখজোড়া জ্বলে উঠে।কে সে?দাঁতে দাঁত চেঁপে প্রশ্ন করে রোয়েন।
-স্যার সাজিদ রায়হান।ওনার গাড়ি দিয়,,,,,,,,,শামীম কথাটুকু শেষ করতে পারলোনা।তার আগেই কল কেঁটে দেয় রোয়েন।
রুপন্তী সিড়ি বেয়ে নামছিলো।আজ প্রনয় খানকে এতোটা ঠান্ডা মেজাজের দেখে বিস্মিত ও।
সোফায় প্রনয় খান আনিলা বেগম কে জড়িয়ে ধরে বসে আছেন।
আর আনিলা বেগম কিছুক্ষন পর পর প্রনয় খানকে আঙ্গুর খাইয়ে দিচ্ছেন।
-আজ অনেক খুশি আমি আনিলা।বলে উঠে প্রনয় খান।
-তোমার এতো বছরের স্বপ্ন পূরন হতে চলেছে যখন জানু।বলে প্রনয় খানের ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ান আনিলা বেগম।
-উফ কালরাতটা চরম কাঁটবে বেবি।ভাবতেই আমার ভীষন ভালো লাগছে।খুশিতে গদ গদ হয়ে বলে উঠেন প্রনয় খান।
-আমি জানি হানি।রুহী তো তোমার সেই যৌবনের স্বপ্ন ছিলো।যখন ওর ২বছর ছিলো।তা কই দেখলে ওকে?জিজ্ঞেস করে উঠেন আনিলা বেগম।
-হ্যা।ওকে দেখিনি তবে রোয়েনের খবর পেয়েছিলাম।
সেদিন হাসপাতাল থেকে ফিরার সময় আমার এক লোক কল দিয়ে জানায় রোয়েন বাংলাদেশে।আর ও খবর নিয়ে জানতে পারলাম রুহী ও এখানে।
আর কাল থাকবে ও আমার বিছানায়।বিছানা গরম করবে ও।
রুপন্তী কানকে বিশ্বাস করাতে পারছেনা।চোখ জোড়া ভরে গেছে ওর।ওর বোন এখন কই আছে? কিভাবে আছে?
-তা ওকে কই রেখেছো প্রনয়?জিজ্ঞেস করেন আনিলা বেগম।
-বনানীর ফরেস্ট হাউজে।বলেন প্রনয় খান।
– প্রনয় কালকের পর কি ওকে রোয়েনের কাছে ফিরিয়ে দেবে?জিজ্ঞেস করেন আনিলা বেগম।
-পাগল নাকি?ওকে ওর মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেবো।বলেই হাসিতে ফেঁটে পড়েন প্রনয় খান।
রুপন্তী আর অপেক্ষা করতে পারলোনা।এড্রেস টা মাথায় সেট করে নিয়েছে ও।রুপন্তী দৌড়ে রুমে চলে আসে।
ওর বুক কাঁপছে।একটু আগে কি শুনে এলো ও?নাহ এখন ওনাদের কিছু বলা যাবেনা।চুপ থাকতে হবে।রুপন্তী তাড়াহুড়ো করে নিজের ফোন নিয়ে কল দেয় একটা নম্বরে।
রুহী একটা খাটে বসে আছে।বিশাল বড় একটা বাড়িতে রাখা হয়েছে ওকে।অনেক মেয়েরা আছে এখানে।রুহী কে কিছুক্ষন পর পর কেউ না কেউ এসে দেখে যাচ্ছে।
চোখ জোড়া বেয়ে টপটপ অশ্রু গড়িয়ে যাচ্ছে রুহীর।কেন পানি কিনতে গেলো ও?না ও বাহিরে যেতো তাহলে রোয়েন থেকে আলাদা হতো না ও।ফোনটা ও ফেলে দিয়েছে ওরা।
দুটো মেয়ে রুহীর রুমে আসে।বেশ সুন্দর মেয়ে দুটো।একজনের মুখে হাসি কিন্তু অপরজনের চেহারায় বিষাদের ছায়া।মেয়েটি দরজার কোনায় দাঁড়িয়ে রুহীকে দেখছে।
অপর মেয়েটি রুহীর দিকে লাল একটি জর্জেটের শাড়ী ছুড়ে দিলো।
-স্যারের খুব পছন্দের রং লাল।পরে নেয়।তাহলে স্যার খুব খুশি হবে।বলে উঠে মেয়েটা হাসি মুখে।
রুহী শাড়ী টা সরাতেই মেয়েটি রুহীর হাত টেনে দাঁড় করালো।
-ঢং করিসনে।জলদি পরে নে।বলে উঠে মেয়েটা।
দরজার কোনায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা আচমকা বলে উঠলো,
-অর্পি একটু কেয়ারফুলি ধরনা।
-চুপ থাক জন দরদী।তার রুহীর দিকে তাকায় মেয়েটা।
অপর মেয়েটিকে বের করে দেয় অর্পি।দরজা লাগিয়ে রুহীকে জোর করে শাড়ী পরিয়ে একটু সাজালো।
রুহীর চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে।অর্পি চলে যেতেই হাত দিয়ে কাজল লিপস্টিক আইলাইনার সব মুছো শুয়ে পড়লো।
চোখের পানিতে বালিশ ভিজে যাচ্ছে রুহীর।
সাজিদ রায়হান শুয়েছিলেন।হঠাৎ রুমের দরজায় খুব জোরে শব্দ হয়।ধড়ফড় করে বসে পাশে তাকান সাজিদ রায়হান।
রোয়েন ঢুকেই ওনার দিকে তেড়ে এসে শার্টের কলার চেঁপে ধরলো।তারপর ঘুষি মারতে গিয়ে ও থেমে গেলো।
-রোয়েন বাবা তুই?সব ঠিক আছে তো?ভয় পেয়ে বলেন সাজিদ রায়হান।
-চুপ!!!!গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করে রোয়েন।জাস্ট সাটআপ।নাম নিবেননা আমার।
-তুমি বসো বাবা।কি হয়েছে আমাকে বলো।শান্ত গলায় বলেন সাজিদ রায়হান।
-আপনাকে বলেছিলাম আপনার ছায়াটাও সহ্য হয়না আমার।কেন বারবার পিছে পড়েন আমাদের?গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করে রোয়েন।
♦♦♦♦
-শুনো বাবা তুমি বসো।শান্ত হয়ে বলো কি হয়েছে?জিজ্ঞেস করেন সাজিদ রায়হান।
-এতো মধুর মিষ্টি কথা শুনিয়ে মনে করবেননা আপনার অতীত ভুলে যাবো আমি।আমার মাকে কতো কষ্ট দিয়েছিলেন মনে আছে আমার সেটা।
-দেখো যেটা করেছি আমি জানি অনেক বড় ভুল ছিলো আমার।ক্ষমাও চেয়েছি।চাইনি তোমাদের কোন ক্ষতি করতে কিন্,,,,,,,,,,,,,কথাটা শেষ করতে পারলেননা সাজিদ রায়হান।
-ক্ষতি টা তো করে ফেলেছেন।চিৎকার করে বলে উঠে রোয়েন।
-ম মানে?কি করলাম?জিজ্ঞেস করেন সাজিদ রায়হান।
-প্রনয় খান কে চিনেন?জিজ্ঞেস করে রোয়েন।
-প প্রনয় তখনই সাজিদ রায়হানের চোখের সামনে ভেসে উঠে সেদিনের প্রনয় খান আর তার সাথে আসা রুহীর খালার কথা।মাথায় ঝাঁকান সাজিদ রায়হান চিনি।সেদিন আমার কাছে এসেছিলো কাউকে কিডন্যাপ করাতে।
-এতোটুকু মনষ্যত্ববোধ আপনার মাঝে নাই?যে মেয়েটা ছয় মাসের প্রেগন্যান্ট তাকে কিডন্যাপ করালেন ঐ প্রনয় খানের শয্যাসঙ্গী হওয়ার জন্য?হোয়াই?কি করেছিলো আমার রুহী?চিৎকার করে বলে রোয়েন।
-কিডন্যাপ!!রুহী।রোয়েন সেদিন ওদের সাথে কথা আমি বলিনি।ট্রাস্ট মি।আমি ভীষন অসুস্থ ছিলাম।ওদের আমার পিএসের কাছে পাঠিয়ে ছিলাম।পিএস!!!উঠে দাঁড়ান সাজিদ রায়হান।তারপর তাকান রোয়েনের দয়া করে এসো আমার সাথে।
রোয়েন উঠে সাজিদ রায়হানের সাথে যান ওনার পিএসের কাছে।পিএসকে দেখেই তার গালে চড় মারলেন সাজিদ রায়হান।
-সেদিন কাকে কিডন্যাপ করিয়েছিলি?রাগী গলায় বলেন সাজিদ রায়হান।
-স্যার কিডন্যাপ!!মানে?ভয়ে তোঁতলাতে লাগে পিএস।
-যেদিন প্রনয় খান এসেছিলো।চিৎকার করে বলেন সাজিদ রায়হান।
-রুহী চৌধুরী।পকেট থেকে রুহীর ছবি বের করে পিএস।স্যার ওনাকে।
-সাজিদ রায়হান খুব মারতে শুরু করেন পিএস কে।জানিস?এটা আমার বড় ছেলের বৌ।তার থেকে বড় সে আমার মেয়ে!!!চিৎকার করেন সাজিদ রায়হান।
-সরি স্যার।বুঝতে পারিনি।ভয়ে ভয়ে বলে পিএস।
হঠাৎ রোয়েনের ফোন বেজে উঠে।পকেট থেকে ফোন বের করে রোয়েন।রুপন্তীর মেসেজ পেয়ে বাঁকা হাসে রোয়েন।
তারপর সামনে এগোতে নিলে সাজিদ রায়হান পিছন থেকে ডাকেন ওকে,
-রোয়েন!!!
-রোয়েন থেমে যায়।
-কি করবা এখন?জিজ্ঞেস করেন সাজিদ রায়হান।
-নিজের মায়াবতীকে নিজের কাছে আনবো।তার আগে কিছু কাজ করতে হবে।মুখটা কঠিন হয়ে আসে রোয়েনের।
-রুহীকে বাঁচাতে গেলে আমি ও যাবো তোমার সাথে।কারন ওকে ছেলের বৌ না নিজের মেয়ে মনে করি।মন খারাপ করে বলেন সাজিদ রায়হান।
রোয়েন চুপচাপ চলে যায়।সাজিদ রায়হান অশ্রুসজল চোখে রোয়েনের যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকে।
আজিজ রায়হান সাইফ রাহমান আর রেহানের সাথে বসে আছে রোয়েন।
-প্রনয় খান আপনার চাকরী ফিরিয়ে দিয়েছিলো চাচ্চু।তো আপনার ওনার প্রতি থ্যাংকফুল থাকা উচিৎ।তাইনা?ওনার জন্য একটা পার্টি তো দেয়াই যায় তাইনা? জিজ্ঞেস করে রোয়েন।
-আমার মেয়েটা কাছে নেই রোয়েন।আর তুমি পার্টির কথা বলছো রোয়েন।কিছুটা অবাক হয়ে উঠেন আজিজ রায়হান।
বড় নিশ্বাস নেয় রোয়েন।তারপর হেসে বলে পার্টি হবে আর কালকেই।তারপর দেখেন কি করি।বলেই বাঁকা হাসে রোয়েন।
রোয়েন ঘর থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।গন্তব্য প্রনয় খানের বনানীর ফরেস্ট হাউজ।অপরদিকে রুপন্তী বেশ ভাব জমিয়েছে প্রনয় খানের সাথে।
পার্লারে পর্যন্ত রুপন্তী পাঠিয়েছিলো প্রনয় খানকে।
চলবে