Mafia Boss- Season- 3

Married To The Dark King-  Mafia Boss- Season 3 !! Part- 96

রোয়েন কে দেখে চমকে যান সাজিদ রায়হান।রোয়েন দৌড়ে এসে আজিজ রায়হান গলা চেঁপে ধরে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে দিলো।
আজিজ রায়হান কথা বলতে পারছেননা।ওনার দম আটকে আসছে।রোয়েন সজোরে ঘুষি লাগাতেই সাজিদ রায়হানের ঠোঁট ফেঁটে কোনা বেয়ে রক্ত গড়াতে লাগলো।
আবার ও ঘুষি লাগাতে যাবে তখনই রায়না রাহমান পিছন থেকে বলে উঠে,
-রোনু বাবা মারিস না ওনাকে।সে তোর বাবা।
সাজিদ রায়হান রোয়েনের দিকে চেয়ে আছে।ওর অশ্রুসজল চোখ জোড়া মন ভরে সন্তান কে দেখছে।যাকে ভালো বন্ধু ভাবছিলো সেই ওনার ছেলে।
মায়ের কথায় সাজিদ রায়হানকে ছেড়ে সরে আসে।তারপর পিছু ফিরে মায়ের কাছে যেতে নিবে তখনই পিছন থেকে সাজিদ রায়হান দৌড়ে এসে রোয়েনের হাত জড়িয়ে ধরে,
-আমাকে মেরে ফেল রোয়েন বাবা।
রোয়েন নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়।
-আজ আমার মাম্মা এখানে না থাকলে এ জায়গাটায় আপনার লাশ পড়ে থাকতো।শুধু মাত্র মায়ের জন্য কিছু করলাম না।বলে মায়ের কাছে এসে দাঁড়ায় রোয়েন।
মাকে ধরে উঠাতেই সাজিদ রায়হান বলেন,
-মাফ করে দে বাবা।আমি অনেক খারাপ।সারাজীবন তোদের কষ্ট দিয়ে আসছি।কেঁদে উঠেন সাজিদ রায়হান।
-রোয়েন সামনে ফিরে।মাফ তো কবেই করে দিয়েছিলাম।কিন্তু আপনার আজকের কাজটা ভীষন কষ্ট দিয়ে ফেলেছে আমায়।
-আমার মাম্মা আমার ভাই আমার পরিবারের থেকে দূরে থাকবেন।আমার বাবা আছে।সাইফ রাহমানকেই বাবা মানি আমি।আর মানবো ও।দূরে থাকবেন।আপনার ছায়াটাও যেন সামনে না পড়ে।বলে রায়না রাহমানকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে রোয়েন।
রোয়েন চলে যেতেই সাজিদ রায়হান ফ্লোরে বসে কাঁদতে শুরু করেন।
গাড়িতে মাকে বসিয়ে রোয়েন গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের হাতটাকে চোখের সামনে ধরে।যে হাত দিয়ে সাজিদ রায়হানকে আঘাত করে ছিলো।
চোখের কোন অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠে রোয়েনের।
রায়না রাহমান ছেলেকে না বসতে দেখে মাথা বের করে বলেন,
-রোনু!!সব ঠিক আছে তো?
-মায়ের ডাকে চোখ মুছে সামনে তাকায় রোয়েন,
-জি মাম্মা।ভিতরে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে রোয়েন।
রায়না রাহমান ছেলের মাথায় হাত বুলাতেই রোয়েন মাকে জড়িয়ে ধরে।
-রায়না রাহমান ও ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন।বাবা কাঁদছিস কেন?
-ভীষন ভয় পেয়ে গেছিলাম মা।কাঁদো গলায় বলে রোয়েন।
-আরে বাবা ঠিক আছি তো।আমার রোনু থাকতে আমার কি কিছু হতে পারে?মায়াবী কন্ঠে বলেন রায়না রাহমান।
রোয়েনকে সামনে এনে ওর চোখ মুছে দেন রায়না রাহমান আর বলেন,
-আমার রোনু টা যেদিন তার ছেলে মেয়েকে কোলে নিবে আমি যখন আমার নাতি নাতনী কে কোলে নিবে সেদিন তো খুশির সীমানাই থাকবেনা আমার।
-রোয়েন হেসে মাথা ঝাঁকায়।
-নে ঘরে চল।রুহী মামনি বাসায় আছে।ওর চিন্তা হবে দেরি হলে।বলে।উঠেন রায়না রাহমান।
-জি মাম্মা।গাড়িতে স্টার্ট দেয় রোয়েন।
রুহী শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে।পাঁচ মাসের শেষ দিকে এখন।শরীরটা কোনরকমেই ভালো লাগেনা ওর।
পাশের ড্রয়ার থেকে ওর পার্সোনাল ডায়েরীটা হাতে নেয়।এখানে ওর প্রেগন্যান্সির প্রত্যেকটা মুহূর্তকে স্মরনীয় করে রাখছে।
ডায়েরী খুলে তারিখ দেয় রুহী ৩.৯.১৯
৬ মাস হতে আর মাত্র পনের দিন বাকি।এই পাঁচ মাসটা কি করে কাঁটছে বুঝতে পারছিনা।পেটে বাবুর নড়াচড়ায় খুশি হতে গিয়ে ও পারছিনা।খুশি হবো বা কি করে বোনটা যে কাছে নেই।মাকে তো হারিয়েছিই।
শরীরটা ভালো লাগছেনা।নিশ্বাস কেমন বন্ধ হয়ে আসতে চায়।
বাবু তুই ছেলে মেয়ে যে হোস না কেন?নিজে সুখে থাকবি আশেপাশের সবাই কে সুখে রাখবি।
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে ডায়েরী সরিয়ে নেয় রুহী।
রোয়েন এসে রুহীর মাথায় চুমু দিয়ে ওর ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায়।
রুহী মুচকি হাসে।
-এতো লেট হলো যে?জিজ্ঞেস করে রুহী।
-একটু কাজে গেছিলাম।রুহীর ঠোঁটে গাঢ়ো চুমু দিয়ে সরে আসে রোয়েন।সামনে যেতে নিবে তখনই রুহী রোয়েনের হাত টেনে ধরলে পিছে ফিরে রোয়েন,
-কই যাও(রুহী)
-ফ্রেশ হয়ে আসছি।বলে উঠে রোয়েন।
-ওকে।রুহী হাত ছাড়ে রোয়েনের।
রোয়েন ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
চার পাঁচদিন পর রোয়েনের ফোনে একটা টিএনটি নম্বর থেকে কল আসে।
ভ্রু কুঁচকে নম্বরটাকে চিনার চেষ্টা করে রোয়েন।কিন্তু মনে করতে পারছেনা।
তারপরও কল রিসিভ করে রোয়েন।কানে ধরতেই অপরপাশ থেকে ফিসফিস আওয়াজে রুপন্তীর কথা শুনতে পায় রোয়েন।
-হ্যালো জিজু।বলে উঠে রুপন্তী।
-জি রুপন্তী।বলো কি হয়েছে?জিজ্ঞেস করে রোয়েন।
-জিজু দুটো দিন একটু কেয়ারফুল থাকেন।প্রনয় খানের মাথায় কোন একটা প্ল্যান চলছে।বলেই কল কাঁটে রুপন্তী।
-হ্যালো রুপন্তী!!!হ্যালো!!!!ফোন সামনে আনে রোয়েন।
তখনই রোয়েনের ফোনে মেসেজ দেয় রুপন্তী।প্রনয় খান আমার রুমে।
সাজিদ রায়হান কে ভীষন অসুস্থ আর ক্লান্ত লাগছে।
ওনার সামনে বসে আছেন প্রনয় খান আর আনিলা বেগম।
♦♦♦♦
খাট থেকে ভীষন কষ্টে উঠে বসেন সাজিদ রায়হান।
তারপর দূর্বল গলায় গেস্ট দুজনকে বসতে বলেন।
প্রনয় খান আর আনিলা বেগম বসেন।দুজনের মুখেই হাসির ছাপ।
-ঠিক চিনলাম না আপনাদের।অসুস্থ গলায় বলেন সাজিদ রায়হান।
-আমরা আপনার দূরের আত্মীয়।বলে উঠেন প্রনয় খান।
-দূরের আত্মীয়!! ঠিক বুঝলামনা।বলে উঠেন সাজিদ রায়হান।
-রোয়েন চৌধুরীর পিতা আপনি তাইনা?জিজ্ঞেস করেন প্রনয় খান।
-জি।তো?জিজ্ঞেস করেন সাজিদ রায়হান।
-আমার ওয়াইফ আনিলা রোয়েনের খালা শাশুড়ী। বলে উঠেন প্রনয় খান।
-ওহ।তা কি করতে পারি?জিজ্ঞেস করেন সাজিদ রায়হান।
-কিডন্যাপ করতে হবে একজনকে।বলে উঠেন প্রনয় খান।
-আমার পিএস এর সাথে কথা বলুন।কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।অসুস্থ গলায় কথাগুলো বলে আবার ও শুয়ে পড়েন সাজিদ রায়হান।
-জি ধন্যবাদ।বলে প্রনয় খান আর আনিলা বেগম উঠে সাজিদ রায়হানের পিএসের কাছে চলে যান।
সাজিদ রায়হান ঘুমিয়ে পড়েন।শরীরটা ভালো নেই ওনার।
রোয়েন রেডি হচ্ছে।কালো শার্টের বোতাম লাগিয়ে আয়না দিয়ে পিছনে খাটে বসে থাকা রুহীর দিকে তাকায়।।
রুহী হাসছে রোয়েনের দিকে তাকিয়ে।ওর কোঁকড়ানো চুল গুলো বাতাসে ফুলে আছে।শার্টের কলার ঠিক করে রুহীর চুল আচড়ে খোপায় গুঁজে দিলো চুলগুলো।
সব ফাইল নিয়ে রুহীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে রোয়েন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।
ওদের সিরিয়াল নম্বর ৫৬।এখন চলছে চল্লিশ নম্বর সিরিয়াল।
রুহী রোয়েনের কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে আছে।
রুহীর চুল হাতিয়ে দিচ্ছে রোয়েন।রুহীর ঠোঁটের কোনে হাসি লেগে আছে।
একটা ছেলে এসে রোয়েন কে বলল,
-এই ফরমটা ফিলআপ করে ঐ কাউন্টারে জমা করুন।বামদিকের কাউন্টারে ইশারা করে ছেলেটা।
-ওকে।ফরমটি হাতে নেয় রোয়েন।মনযোগ দিয়ে ফরম পূরন করতে শুরু করে।
রুহীর ভীষন পানি পিপাসা লাগছে।রোয়েনকে ও ডাকতে চাইছেনা ও।
রোয়েন ফরম পূরন করে বামদিকের কাউন্টারের দিকে চলে যায়।রুহী কষ্ট করে উঠে ডানদিকের গেটের কাছে চলে যায়।
রাস্তায় একজন লোক পানি বিক্রী করছে।সেদিকে চলে যায় রুহী।
রোয়েন ফিরে আসে সব কাজ সেড়ে।ছাপান্ন নম্বর সিরিয়ালের পেশেন্ট কে ডাকা হচ্ছে।
সিটে রুহীকে না পেয়ে ঘাবড়ে যায় রোয়েন।আশেপাশে তাকিয়ে রুহী কে খুঁজতে থাকে রোয়েন।
-জোরে চিৎকার করে রোয়েন ডেকে উঠে,রুহী!!!!!!
-সবাই কে ধরে বলতে থাকে রোয়েন,
-আমার সাথে আমার ওয়াইফ ছিলো ফাইভ মান্থ প্রেগন্যন্ট। এখানেই বসেছিলো। দেখেছেন?জিজ্ঞেস করতে থাকে রোয়েন।
-একজন বলল ওনাকে বের হতে দেখলাম।ডানসাইডের গেট দিয়ে।
রোয়েন দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।ওর চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু গড়াচ্ছে।
আশেপাশে খুঁজতে লাগলো রুহীকে।কিন্তু পাচ্ছেনা।হঠাৎ পানি ওয়ালা লোকটাকে দেখলো রোয়েন।সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
তার কাছে এগিয়ে এলো ও।রুহীর ছবি দেখলো লোকটাকে।
-ওকে দেখেছেন?জিজ্ঞেস করে রোয়েন।
-জে ফানি খিনতো আইসিলো।খুব ফিফাসা ফাইছিলো।খিন্তু খিনতে ফারেনাই।
একডা সাদা গাড়ি আইয়া ম্যাডাম রে টাইন্না লইয়া গেছে।
রোয়েন দ্রুত ফোন বের করে।ওর হাত চলতে চাইছেনা।কি হয়ে গেলো মুহূর্তের মাঝেই।চোখজোড়ায় অশ্রু বাঁধা মানছেনা।হাতের আঙ্গুল দিয়ে ডলে চোখ মুখে একটা নম্বরে কল দিয়ে ফোন কানে ধরে রোয়েন।
চলবে