পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল !! Part- 20

ওয়াসেনাত ভ্রু কুচকে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।রিমি ওয়াসেনাতের জামার পিছনের অংশ খামছে ধরে হেসেই চলেছে।ওয়াসেনাতদের কাজের মেয়ে রূপালি ওয়াসেনাতের পাশে দাড়িয়ে হাসি আটকানোর চেস্ট করছে। রূপালি রসিক টাইপের মেয়ে। ওয়াসেনাতকে তার অতিব মাএায় ভাল লাগে।তাই ছলে বলে কৌশলে ওয়াসেনাতের সাথে কথা বলার ধান্দা খুজে। ওয়াসেনাত ছাদে পানি দিতে গেলেই তার পিছন পিছন যায়। আর নানা রকমের কথা বলে তাকে হাসাতে চেস্টা করে।ওই তো সে দিনের কথা।ওয়াসেনাত টবে পানি দিচ্ছে আর সে পিছনে দাড়িয়ে বলে উঠে…….
__আপু জান কেমন আছেন??
__ভাল। আর এই আজাইরা প্রশ্নের মানে কি?(বিরক্তি ভঙিতে বলে উঠে)
__আপুজান আপনি জানেন আমার নাম রূপালি কেনো রাখছে??আমি কিন্তু রূপার মত না।তবুও রাখছে। কেনো বলি??
__বল
__আসলে আমার মার রূপালি রং পছন্দ। সে তো রূপালি ইলিশের পাগল ছিল।কিন্তু মরার আগে খাই যাইচে পারে নাই।আমি জন্মের পর আমার নাম তাই রূপালি রাখছে।(দাতঁ কেলিয়ে)
:
ওয়াসেনাত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হু হা করে হেসে উঠে। আসলে কিন্তু তার হাসি পাচ্ছেনা।তবুও হাসল।কারন মেয়েটা তাকে হাসাতে চাচ্ছে।ওয়াসেনাতের সাথে রূপালিও হাসল।মেয়েটার কেউ নেই ওয়াসেনাত ভার্সিটি সামনে দেখে ছিল ভিক্ষা করতে তাই নিয়ে এসে ছিল। এই দুই বছরে মেয়েটা তার বোনের মতই হয়ে গেছে।
:
:
:
ওয়াসেনাতের এভাবে তাকানোর বিশেষ কারন আছে।তা হল লামিয়াকে দেখতে আশা ছেলেটা।ছেলেটা একা আসে নি তার সাথে তার মা বাবা আর ভাই, বোন এসেছে।ব্যাপারটা সেটা না।ছেলেটা দেখতে কাঠির মত মানে যাকে বলে হ্যাংলা।শ্যাম বর্ন এগুলোও ব্যাপার না।ব্যাপারটা হল ছেলেটা নিজের চশমাটা নাকের ডগায় এনে এর উপড় দিয়ে ওয়াসেনাতের দিকে তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাত প্রথমে এমনে মনে করলেও পরে বুঝতে পারে ছেলেটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে।তাই সে ওভাবে তাকাছে।আর রিমি ও রূপালির হাসার কারন ছেলেটার জামা,চুল,আর ভাবমূর্তি। ছেলেটা একটা ডিলা শার্ট পরেছে।এটা কোন নরমাল ডিলা শার্ট না এই শার্টের ভিতরে রিমি রূপা এবং ওয়াসেনাত অনায়াসে ডুকে যেতে পারবে। আর চুলের অবস্থা হচ্ছে ছেলেটা মনে হয় পাচঁ কেজি সরিষার তেল নিজের চুলে মেখেছে যার কারনে কানের পাশে তা বেয়ে বেয়ে পরছে।মাথায় আবার সোজা সিঁথিও করেছে।আর ভাবমূর্তি হল সে একবার পায়েসের বাটির পায়েস খাচ্ছে একবার ওয়াসেনাতের দিকে তাকাছে আবার লামিয়ার দিকে তাকাছে তো আবার চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। আবার শার্টের হাতা দিয়ে কপালের বেয়ে আশা তেল গুলো মুছছে।বিগত কিছু সময় থেকে এগুলোই চলছে।ওয়াসেনাত রিমি আর রূপালিকে চোখ রাঙিয়ে চুপ থাকতে বলে।ওয়াসেনাত তার মায়ের পাশে দাড়িয়ে বলে উঠে……….
__আম্মু পাএ কি করে গো??
__শুনেছি অনেক বড় বিজন্যাস আছে। কি যেন না সেলিম ইন্ডাস্ট্রি। কেমন রে ছেলেটা?? তোর ফুফুর তো অনেক পছন্দ হয়েছে।
__একদম ছ্যাঁছড়া টাইপের।কেমন করে যেন তাকায়।এর সাথে বিয়ে দিতে হবে না।আমি ফুফুকে বলি।
__লাভ নাই।
__মানে
__তোর ফুফু এর সাথেই বিয়ে দিবে ঠিক করে ফেলেছে।বাদ দে ওর মেয়ে তো টাকা আছে শুনেই খুশিতে গদগদ।মিঞা বিবি রাজি তো কেয়া কারেগা কাজি।
:
:
:
ওয়াসেনাত তার মার কথা শুনে কিছুক্ষণ হাসে তারপর নিজের রুমে চলে যায়।তার সাথে সাথে রিমি আর রূপালিও যায়। তারপর তিন জন মিলি হু হা হি করে হাসিতে মেতে উঠে।
:
:
:
ওয়াসেনাত আজ আট দিন পরে ভার্সিটি যাচ্ছে। তার আজও যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না।কিন্তু নবীন বরনের সব কাজ তাকে করতে হবে বলে দেওয়া হয়েছে।আর ৩ দিন পরেই নবীন বরন তাই তাকে আজ ভার্সিটিতে যেতে হচ্ছে। তার কেন যেন ভয় ভয় লাগছে। এই কেনোর উওর অরিএান। হুম তার চিন্তা মতে অরিএান যদি বাহিরে থাকে তবে।এটা ভাবতেই ওয়াসেনাতের মন হালকা হালকা কেঁপে উঠছে।একদিকে ভয় লাগছে অন্যদিকে এক প্রকার আকুলতা জাগছে।আজ আট দিন সে অরিএানকে দেখে না।তারও ইচ্ছে আছে অরিএানকে দেখার তবে এটা সে নিজের মনকে প্রকাশ করতে দেয় না।
:
:
:
ওয়াসেনাত ভয়ে ভয়ে গেটের দরজাটা খুলছে।যদিও কেনো যেন তার মনে হচ্ছে আজ আসবে না তবুও ভয় করছে।ওয়াসেনাত খুবি সাবধানতার সাথে দরজাটা খুলে প্রথমে বাহিরে উঁকিঝুঁকি দিয়ে নেয়।..না আসে নাই।ব্যাপারটা ভাবতেই তার ভিতু মনে অসংখ্য কালো মেঘ ভর করে।কেনো যেন না চাইতেও তার খুব খারাপ লাগছে।সে মোটেও নিজের খারাপ লাগাটাকে প্রাধান্য দিতে চায় না।কিন্তু না চাইতেও খারাপ লাগা কাছ করছে।
:
:
:
ক্লাস আর কাজের ব্যাপারে কথা বলে ওয়াসেনাত ভার্সিটির একটা রুমের সামনে এসে দাড়ায়। এখান থেকে ভার্সিটির মাঠটা দৃশ্যমান।ওয়াসেনাত মাঠের দিকে তাকিয়ে প্রচণ্ড রকমের ঝাটকা খায়। কারন ভার্সিটির শত খানেক মেয়ে কাকে যেন ঘিড়ে রেখেছে।দেখে মনে হচ্ছে গুপ্তধন পেয়েছে।ওয়াসেনাতের কেনো যেন এই মেয়ে গুলোর এত বাড়াবাড়ি একদম বিরক্ত লাগছে।তাই সে রিমিকে খুঁজতে শুরু করে।রিমি আর সে একুই ভার্সিটির হলেও তাদের ডিপার্টমেন্ট ভিন্ন। ওয়াসেনাত এদিক ওদিক খুঁজে রিমিকে ফেলো না তাই ভিড়ের মাঝে খুঁজতে গেল।ভিড়টা এতই গভীর যে ভিতরে যাওয়া মশকিল তবুও হালকা পাতলা ঠেলে ভিতরে ডুকতেই ওয়াসেনাত গাছ ধেকে ধারাম করে পরলে যেমন চেহারা হয় তার এখন তেমন চেহারা।কারন এই মেয়েগুলোর অমূল্য গুপ্তধন হচ্ছে অরিএান। 😂অরিএানকে ঘিড়েই এরা এমন করছে।এমন করছে মানে ভুল কিছু না এই সেল্ফি টেল্ফি তুলছে।ওয়াসেনাত এটা ভেবে আরো হতবাক রিমিও এদের মধ্যে আছে। কিন্তু সে ছবি তুলছে না কি যেন নিয়ে অরিএানের সাথে কথা বলছে অরিএানও বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনছে আর কিছুক্ষণ পর পর মেয়েগুলোর দিকে বিরক্ত ভঙিতে তাকিয়ে একটা দুটা সেল্ফির সুযোগ দিচ্ছে। ওয়াসেনাতের প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে অরিএানের উপড়।ছেলেটা এখনও ছ্যাঁছড়াই রয়ে গেছে।কেমন খারাপ ছেলে ভাবা যায়।ছি ছি ছি।এক নাম্বারের মেয়ে বাজ টাইপের ছেলে।তানা হলে এত মেয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে ডিঙি পোনা করতে পারতো?না তো।ব্যাপারটা ভাবতেই ওয়াসেনাতের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।
:
:
:
রিমি ভিড়ের মাঝে ওয়াসেনাতের রণচণ্ডী টাইপের মুখ দেখেই চিৎকার করে বলে উঠে……
__ওয়াসু দেখ কে এসেছে??ভাইয়া দেখেন ওয়াসু??
:
:
:
রিমির এই বিকট ভঙির চিৎকারে সবাই ওয়াসেনাতের দিকে তাকায়। সাথে অরিএানো।অরিএান অবাক হয়ে দেখছে তার ফেইড়িপরীকে ইসসস মেয়েটা কেমন শুকিয়ে গেছে।এই আট দিনে কেমন যেন হুলিয়া করে রেখেছে নিজের।খাওয়াদাওয়া করেছে বলে মনে হয়না।কথাগুলো ভাবছে আর ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে ওয়াসেনাতের দিকে।অরিএানের মনে হচ্ছে তার জ্বলন্ত কলিজায় কেউ ফ্রিজের ঠান্ডা পানি ডেলে দিয়েছে।ওওহ কি শান্তি। এই মেয়েটা যে তার জীবনের কত বড় শান্তি সে বলে বুঝাতে পারবে না।
:
:
:
অরিএানের চেহারাটা দেখে ওয়াসেনাতের বুক ধাক করে উঠে।এই আটদিনে অরিএানের যে কি পরিবর্ত হয়েছে বলে বুঝানো যাবে না।
:
:
মেয়েগুলোর চাহনি দেখে ওয়াসেনাত ভিতু গলায় বলে উঠে…..
__এভাবে তাকানোর মানে কি?
__মানে তেমন কিছু না জানেমান। (অরিএান ওয়াসেনাতের সামনে এসে বলে উঠে)
:
:
সবাই একবার অরিএানকে দেখে তো একবার ওয়াসেনাতকে দেখছে। আর ওয়াসেনাতের তো রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। কি সাঙ্ঘাতিক ছেলে সবার সামনেই এমন উল্টা পাল্টা কথা বলছে। ওয়াসেনাতের মেজাজ চড়কগাছ। সে রিমির দিকে তাকিয়ে বলে…….
__আমি চলে যাচ্ছে। তুই যাবি??
__আরে দাড়া। এত তাড়া কিসের?? দ না মানে ভাইয়াও যাবে আমাদের সাথে।
__কোথায়(অবাক হয়ে)
__আরে মাইয়া তুই বেশী পটরপটর করছ।চল তো(বলেই সবার সামনে থেকে হাত ধরে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে আশে)
:
:
অরিএান বহু কষ্টে নিজেকে মেয়েগুলো থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আশে। সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় আর বডি গার্ডস ছাড়া এভাবে ভার্সিটি আসবে না।তা না হলে মেয়েগুলো তার রোস্ট বানিয়ে খেয়ে ফেলবে। বলাত যায় না।এরা মায়ের জাতি এদের দ্বারা সব সম্ভব। অরিএান ওয়াসেনাতের সামনে দাড়াতেই বলে উঠে……
__ও মাই গড ওয়াসু ইউ নো দেট তোমার নাকটা এই আট দিনে এত লম্বা হল কি ভাবে??
:
:
ওয়াসেনাত চট করে নিজের নাকে হাত দিয়ে দেখতে শুরু করে।আবার শব্দ করেই বলে উঠে….
__কই কই। রিমি তুই দেখ তো?
:
:
:
রিমি আর অরিএান ওর এমন অবস্থা দেখে হু হা করে হেসে উঠে।ওয়াসেনাত প্রচণ্ড রাগি চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে হাটা ধরে।অরিএান একটু দ্রুত গতিতে হটে ওয়াসেনাতের হাত ধরে বলে উঠে…..
__ সরি জান মজা করছিলাম।চল আজ আমরা সারা দিন ঘুরবো। একা না রিমিকেও নিবো। আফ্টার অল ও আমার শালিকা হবে।(রিমির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরে)
__এই আপনার সমস্যা কি??এভাবে পিছনে পরে থাকার মানে কি? সব কিছুর লিমিট ক্রস করছেন কিন্তু ভাল হবে না। আপনি আমার থেকে দুরে থাকবেন। ফালতু মেয়ে বাজ টাইপের ছেলে।ছ্যাছঁড়াি।দূরে থাকতে বলেছি মনে বুঝতে পারছে না??ফালতু ফাউল লোক।কথা কানে যায় না?দূরে থাকবেন মানে দূরে??(ঝাঁজালো গলায় কথা গুলো বলে উঠে)
:
অরিএান এক দৃষ্টিতে ওয়াসেনাতের দিকে তাকিয়ে আছে।সে ভাবছে এই মিষ্টি গলার অধিকারি মেয়েটা কিভাবে এত ঝাঁজালো গলায় কথা বলতে পারে?কিভাবে সম্ভব?? অরিএান নিজে নিজে একবার নিজের দোষ গুলো স্মৃতি চারণ করে নেয়।হ্যাঁ এটা ঠিক সে আগে অনেক ভুল করেছে কিন্তু এই মেয়েটার সাথে তো কখনো খারাপ করে নি।বরং এ তার জীবনে আসাতেই সে নিজেকে পরবর্তী করেছে।আর এই মেয়েটাই তাকে এভাবে দূরে ঠেলে দিচ্ছে?না এটা সে হতে দিবে না।অরিএান হালকা ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলে…..
__জানপাখি তোমার থেকে দূরে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।তুমি তো আমার অক্সিজেন। আর অক্সিজেন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে যদি তোমার মনে হয়, তবে আমি দূরে যেতে রাজি।বল এবার?? (ভ্রু নাচিয়ে হাসি হাসি মুখে বলে উঠে)
:
:
ওয়াসেনাতের অবস্থা এখন এমন যে তার গলায় মাছের কাটা গেঁথে গেছে বেচারি না ফেলতে পারছে না গিলতে পারছে🤣।
ওয়াসেনাত দাতঁ মুখ খিঁচে বলে উঠে……
__আপনি এত ফালতু ছেলে তে কিভাবে রূপ নিতে পারেন??আমার মনে হয় আপনি পাগল হয়ে গেছেন 😠😠
__মুখটা এমন করে রেখনা প্রিয়,কেমন যেন আদর আদর লাগে।
__এই এই কথায় কথায় ভ্রু নাচাবেন না।ইডিয়ট😠😠
__রিয়্যালি আচ্ছা যাও সব মেনে নিব। চল
__কোথায়??
__এই তুই বেশী কথা বলিস চলত(রিমি ওয়াসেনাতের হাত টানতে টানতে তাকে ফুচকার দোকানে বসিয়ে নিজেও বসে পরলো)
:
:
:
অরিএান ফুচকার দোকানটা দেখেই একটু নাকছিটকায় অবাক কি যেন ভেবে ওয়াসেনাতের পাশ ঘেঁষে বসে পরে।ওয়াসেনাত সাথে সাথে উঠতে চায় কিন্তু একদিকে রিমি তার হাত ধরে আছে আর অন্যদিকে অরিএানও তার হাত ধরে আছে।ওয়াসেনাত কিছুক্ষণ মুচড়া মুচড়ি করে হতাশ হয়ে বসে পরে। ওয়াসেনাতের মাথা কাজ করছে না এটা ভেবে অরিএান আসলে কি চাচ্ছে। কেন তার পিছনে এভাবে পরে আছে??তাকে দেখেত মনেই হচ্ছে না ওই রাতের কথা কিছু তার মনে আছে।ওয়াসেনাত একটু ইতস্তত ভাবেই অরিএানকে দেখছে। লেমন কালারের টিশার্ট আর এশ কালারের পেন্টে লোকটাকে অসাধারণ লাগছে মনে হয় এই রংটা পৃথিবীতে তার জন্যেই সৃষ্টি হয়েছে।চেহারাটা কেমন যেন ফেকাসে হয়ে গেছে।চোখের নিচটা সাদা থেকে বাদামিতে রূপ নিয়েছে। ঘুম হয় বলে মনে হয় না।ওয়াসেনাতকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অরিএান বলে উঠে…….
__ও মাই গড ওয়াসেনাত তুমি কেমন যেন করে তাকিয়ে আছ??মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই গিলে খাবে।ছি ছি এভাবে একটা ছেলের ইজ্জত নিয়ে টানা টানি করতে পারনা??ইম্পসিবল?? ছি??(হাহুতাশ টাইপের কন্ঠে বলে উঠে)
__মানে কি?? আমি আবার কখন আপনার ইজ্জত নিয়ে টানা টানি করছি??
__অবশ্যই করেছ।চোখ দিয়েও মানুষের ইজ্জত নিয়ে টানা টানি করা যায়।কিন্তু তুমি চিন্তা কর না বিয়ের সাথে সাথে আমার সব তোমার। ইজ্জতটাও(কানে কানে ফিসফিস করে বলে উঠে)
__এই আপনি কিন্তু এবার আমার মাথাই গরম করে দিলেন। যা আর আপনিই বলমু না।শালা তোর সমস্যা কোন জায়গায় বল।কুচু কালকে থেকে পেন পেন করেই চলেছে তো চলেছেই।তোর যদি ফুচকা খাইতে মন চায় খা আমার বাপের কি??কিন্তু আমারে নিয়া টানা টানি করবি না মাথা ফাটাই দিমু।ভদ্র মাইয়া হয়ে আছি দেখে কি তোর ভাল লাগেনা??ওই তুইকি ঝগড়া করতে চাস বল করি। আমার সাথে পারবি বলে মনে হয় গরু মার্কা পোলা যত সব। হু(এক নিশ্বাসে বলে গেন্জি ছেড়ে হাপাতে শুরু করে)
:
:
অরিএান হা করে থাকলেও তেমন অবাক হয় না ওয়াসেনাত মাঝে মাঝেই তুই তাঙারি করে কথা বলে তবে এত রেগে আগে তেমন কথা বলে নাই এটা ভেবে সে হতবাক। ওয়াসেনাত এবার টেবিলের ফুচকার দিকে তাকিয়ে যেই একটা ফুচকা মুখে দিবে তার আগেই অরিএান নিজের মুখ এগিয়ে ফুচকা সহ ওয়াসেনাতের আঙ্গুল কামড়ে দেয়।ওয়াসেনাতো আউ করে চিৎকার করে উঠে।যা দেখে অরিএান আর রিমি হেসে কুটি কুটি।ওয়াসেনাত অরিএানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে রাস্তায় একটা বাচ্চাকে হাটতে দেখে বয়স দুই কি তিন হবে।সামনে একটা ট্রাক আসছে। ওয়াসেনাত উঠে দাড়ি দৌড়াতেই ধাড়াম করে পাশে পরে যায়।পাশেই কাচঁ ভাঙ্গা বৌতল পড়ে ছিল যা ওয়াসেনাতের পায়ে লেগে পায়ের নিচ থেকে উপড়ের কিছু অংশে ডুকে যায়।যার ফলে রক্তে রাস্তা ভেসে যেতে শুরু করে।ওয়াসেনাতের সেদিকে খেয়াল নেই বললেই চলে সে সামনে তাকিয়ে আছে।অরিএান কত সুন্দর করে বাচ্চাটাকে নিজের বুকে চেপে আছে ইসস কত সুন্দর লাগছে তাকে কেমন যেন বাবা বাবা ভাব। বাচ্চাটাও তার কোলে কুন্ডুলি পাকিয়ে জড়িয়ে আছে।ওয়াসেনাতকে ভয়াত্নক দৃষ্টিতে তাকাতে দেখে অরিএানও সেদিকে তাকিয়েই দৌড় দেয় ওয়াসেনাত পরে যাওয়া সে আর যেতে পারে নি কিন্তু অরিএান গিয়ে বাচ্চাটাকে জড়িয়ে সেখান থেকে সড়িয়ে নেয়।
:
:
:
ওয়াসেনাত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অরিএান বাচ্চাটাকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে বলছে যাতে না কাদে।হঠাৎ একটা কান্ড দেখে ওয়াসেনাত হা করে তাকিয়ে আছে।বাচ্চাটার মা তাকে খুঁজতে খুঁজতে অরিএানের কাছে এসে বাচ্চাটাকে নিতেই অরিএান ঠাসসস করে তার গালে চড় বসিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠে……..
__মা হয়ে যদি বাচ্চা সামলাতে না পারেন তবে মা কে হতে বলেছে??এভাবে বাচ্চাকে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়ার মানে কি?
__আসলে আমি জিনিস
__যাই করেন তাই বলে বাচ্চাকে রাস্তায় এভাবে ছেড়ে দিবেন??
__সরি
:
:
:
অরিএান তাছিল্যের হাসি দিয়ে বাচ্চাটাকে তার মার কোলে দিতে গেলেই বাচ্চাটা অরিএানকে আরো আকড়ে ধরে। দেখে মনে হচ্ছে সে যেতে চাচ্ছে না।অরিএান বাচ্চাটার গালে একটা চুম খেল তারপর জোর করে তাকে তার মার কোলে দিয়ে দিল বাচ্চাটা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেদেই চলেছে।অরিএান কিছুক্ষণ তাকিয়ে হেসে আবার ওয়াসেনাত দিকে তাকিয়েই শিউড়ে উঠে মুহুর্তেই তার চোখ মুখ ভয় আকড়ে ধরে। সে দৌড়ে ওয়াসেনাতের কাছে আসতেই আৎকে উঠে। সে চিৎকার করে বলে উঠে…..
__কিভাবে হল??কত রক্ত? তুমি আমাকে ডাকলে না কেনো?? হোয়াই?? ড্যামেট?? ব্যথা করছে তাই না?তুমি কিভাবে এত ইরেসপন্সিবল হতে পার? কিভাবে?
:
:
:
অরিএান রিতিমত পাগলের মত করছে।সে ওয়াসেনাতের এত রক্ত দেখতে পারছে না তার নিজের মাথাই কেমন যেন ঘুড়ছে।অরিএানের এমন পাগল পাগল অবস্থা দেখে রিমি হতভম্ভ চোখে তাকিয়ে আছে।ছেলেটা কেমন ছন্নছাড়া পাগলামি করছে ভাবতেই রিমির চোখেও পানি চলে আশে।
:
:
:
ওয়াসেনাতের কেমন যেন মাথাটা ঘুড়তে শুরু করে। শেষ বার সে অরিএানের সবুজ চোখ জোড়া থেকে পানি গড়িয়ে পরতে দেখেছে।যে লোক হাসতেই পারতো না সে যে কাদঁছে ব্যাপারটা ওয়াসেনাতের ঘোলাটে চোখ বিশ্বাস করতে পারছে না………….
:
:
চলবে……………………🍁

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *