Mafia Boss- Season- 3

Married To The Dark King-  Mafia Boss- Season 3 !! Part- 80

রাজধানীর খুব নামকরা একটা রেস্তরায় বসে আছেন আনিলা বেগম।বেশ সেজেই এসেছেন ওনি।কারোর অপেক্ষায় মগ্ন ওনি।নীল রংয়ের একটা কাতান শাড়ী পরে আছেন।
বারবার ঘড়ি দেখছেন আর মেইন গেইটের দিকে তাকাচ্ছেন।হঠাৎ কিছু দেখে ওনার সারা মুখে হাসি ফুঁটে উঠলো।এতো বছরের অপেক্ষা তাহলে শেষ হতে চলেছে।
রোয়েন রুমে এলো দৌড়ে।সাইফ রাহমান ও দৌড়ে এসে রায়না রাহমানের পাশে দাঁড়ালেন।
রোয়েন থেকে সরিয়ে সাইফ রাহমানের দিকে তাকালেন রায়না রাহমান।
-তোমার রোনু ও।বলে উঠেন সাইফ রাহমান।
-স্বামীর থেকে চোখ সরিয়ে রোয়েনের দিকে তাকালেন রায়না রাহমান।
রোয়েন সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।মাম্মার কাছে গিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরার জন্য পায়ে শক্তি পাচ্ছেনা রোয়েন।চোখ জোড়া ভারি হয়ে আসছে ওর।চোখের অশ্রু গুলো যেন আটকে আসছে।
রায়না রাহমান পলকহীন ভাবে সন্তান কে দেখছে।এটাই কি তার সেই ছোট্ট বাচ্চাটা?এটাই কি তার সেই ছোট্ট রোনু?যে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে সারা ঘর দৌড়ে বেড়াতো?
সুযোগ পেলেই রায়না রাহমান চোখ ছোট্ট দুহাতে ঢেকে বলতো মাম্মা বলতো কে?তখন রায়না ছোট্ট দুহাত সরিয়ে বলতো আমার রোনু আব্বু টা আর কে হবে?আবার কখনো মায়ের কোলে চড়ে বসতো লাফ দিয়ে।
একা ভাত খেতে জানলে ও মায়ের হাতে খাওয়ার বায়না ধরতো।আবার কখনো কাগজের ফুল বানিয়ে সেটাকে কালার করে মাকে গিফট করতো।কথা গুলো ভাবতেই চোখজোড়া আর বাঁধা মানতে চায়না।সন্তান ডাকতে চেয়ে ও পারছেননা।
খুব কষ্টে ডেকে উঠলেন রায়না রাহমান,
-রোনু!!!রোনু!!এদিকে আয় বাবা।
রোয়েন নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছেনা।তাকে ডাকছে, আদর করে ডাকছে,মা ডাকছে।যার জন্য এতো বছরের অপেক্ষা।
রোয়েন আর নিজেকে থামাতে পারলো না।দৌড়ে রায়না রাহমানের কাছে এসে দাঁড়ালো।দুহাতে মায়ের গাল স্পর্শ করলো।
যতো ধরছে রোয়েনের চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে আসছো ততো।
-ম ম মম মাম্মা!!!!কাঁদো গলায় বলল রোয়েন।
তারপর রায়না রাহমানের কপালে চুমু খেয়ে শক্ত করে মাকে জড়িয়ে ধরলো।জোরে কেঁদে উঠলেন রায়না রাহমান সন্তানের স্পর্শ পেয়ে।রোয়েন ও কাঁদছে ভীষন কাঁদছে।তবে আজ অশ্রু গুলো সুখের অশ্রু,মাকে ফিরে পাওয়ার অশ্রু।রোয়েন শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে মাকে।সাইফ রাহমান চোখ মুছে নিলেন।
হঠাৎ আজিজ রায়হান দৌড়ে রুমে এলেন।কিছু বলতে যাবেন ঠিক তখনই সাইফ রাহমান ওদের দেখে ইশারা করলোকিছু না বলতে।আজিজ রায়হান বিস্ময়ের চোখে দেখছেন তাদের।কান্নার কারন বুঝতে পারছেননা ওনি।রায়না রাহমান সরে এলেন রোয়েন থেকে।রোয়েনের গালে চুমু বর্ষন করতে শুরু করলেন।
তারপর সরে এসে আবার রোয়েনকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলেন।
এতোদিন নিজের রোনুকে কি করে চিনলাম না? ছেলেটা আমার কাছে ছিলো মা বলে ও ডেকেছিলো।কি করে বুঝতে পারলাম না ও আমার ছেলে।
আজিজ রায়হান এখন বুঝতে পারলেন রায়না রাহমান রোয়েনের মা।
সাইফ রাহমান আর আজিজ রায়হানের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটে উঠেছে।
আজিজ রায়হান কে দেখতে পেয়ে মায়ের থেকে একটু সরে এলো রোয়েন।
-বাবা আপনি কখন আসলেন?জিজ্ঞেস করে উঠে রোয়েন।
-একটু আগেই।ভীষন ভালো লাগলো এতো সুন্দর মুহূর্ত টা।ভাবি নিজের হারানো সন্তান ফিরে পেয়েছে আর তুমি তোমার মা পেয়েছো রোয়েন।আমি সত্যি ভীষন খুশি তোমার জন্য।
-আজিজ আনিলা কই? জিজ্ঞেস করে উঠলেন রায়না রাহমান।
-ও বাহিরে গেলো।বলেই রায়না রাহমানের সামনে এসে বসলেন আজিজ রায়হান।
-ভাবি আপনাকে যে নিয়ে গিয়েছিলো তাদের দেখেছিলেন?জিজ্ঞেস করে উঠেন আজিজ রায়হান।
রায়না রাহমান চুপ করে আছেন।
-ভাবি চুপ থাকলে চলবেনা।তাকে শাস্তি দিতে হবে।দেখেছেন আপনি?আবার ও বলে উঠলেন আজিজ রায়হান।
মাথা ঝাঁকালো রায়না রাহমান।
-দেখেছি তাকে। শুধু দেখিইনি চিনি ও তাকে।খুব ভালো ভাবে চিনি।তার আচার আচরন সম্পর্কে খুব ভালো ধারনা আছে আমার।
-কে সে?জিজ্ঞেস করে উঠেন আজিজ রায়হান।
-আমার আগের হাসবেন্ড সাজিদ রায়হান চৌধুরী।
কুমিল্লা থেকে ফিরেই নিজের আগের ম্যানশনের দিকে রওনা হলেন সাজিদ রায়হান।কে জানি লোকগুলো রায়নার খেয়াল রাখতে পারছে কিনা?
মোবাইলে নিজের লোকদের নম্বর চেঁপে কানে ফোন ধরলেন ওনি।
-কিন্তু ফোন ধরছেনা কেউ।
স্ট্রেন্জ!!!ফোন ধরছেনা কেন এরা?আবার ও কল দিলেন কিন্তু আগের মতো কেউ ধরলো না ফোন।এবার চিন্তায় পড়ে গেলেন সাজিদ রায়হান।বারবার কল দিতে লাগলেন।কেউ রিসিভ করলো না কল।
আগের বাড়িতে এসে পৌছালেন সাজিদ রায়হান।গেটটা খোলা।কারোর সাড়া শব্দ নাই।পুরো বাড়ি খাঁখাঁ করছে।গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই ভড়কে গেলেন সাজিদ রায়হান।জায়গায় লোকগুলার লাশ পড়ে আছে।কারোর শরীর মাথা আলাদা হাত আলাদা,কারোর ঘাড়া বেঁকে আছে।কেমন উটকো গন্ধ ও বেরিয়েছে।সেজন্যই এই এলাকায় ঢুকার সময় মানুষদের হৈচৈ শুনতে পেরেছিলেন।সবাই গন্ধ পাচ্ছিলো কিন্তু গন্ধের উৎস খুঁজে পায়নি।
সহ্য করতে না পেরে বমি করে দিলেন সাজিদ রায়হান।
হঠাৎ ওনার মাথায় এলো এদের এই অবস্থা তাহলে রায়না কই?কি অবস্থায় আছে?
কিছু না ভেবেই দৌড়ে ভিতরে চলে গেলেন সাজিদ রায়হান।রুমের সামনে এসে চিৎকারে ফেঁটে পড়লেন।সবই ঠিক আছে শুধু রায়না নেই।খুব জোরে চিৎকার করতে লাগলেন।
ভীষন রাগ হচ্ছে ওনার নিজের ওপর।কি করে এসব হয়ে গেলো।তিনদিনের ভিতর এতো কিছু হয়ে গেলো আর ওনি খবরই পেলেননা।
আরেকজন লোককে কল দিলেন সাজিদ রায়হান।
দুবার রিং হতেই কল রিসিভ হলো।
-হ্যালো স্যার আপনি ফিরে আসছেন?বলে উঠলো লোকটা।
-জি আসছি।এখানে এতো কিছু হয়ে গেলো জানাস নি কেন আমাকে?গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করলেন সাজিদ রায়হান।
-স্যার সরি।আসলে ছিলেননা আপনি।তাই টেনশন দিতে চাইনি আপনাকে।বলে উঠলো লোকটা।
-গোটু হেল উইদ ইউর সরি ইডিয়েট।জলদি খবর লাগাও এটা কার কাজ?তাকে আমি ছাড়বোনা কখনো।
জ্যান্ত মাটিতে গেড়ে দিবো।চিৎকার করে বললেন সাজিদ রায়হান।
-স সাজিদ রায়হান চৌধুরী!!!অবাক কন্ঠে বললেন আজিজ রায়হান।
-হ্যা ঠিক শুনেছো।সাজিদ রায়হান।বলে উঠেন রায়না রাহমান।
বিশ্বাস হচ্ছেনা আজিজ রায়হানের।কি শুনলো সে?
দুই ভাই ছিলেন ওনারা।বড় ভাই বাবার ব্যাবসায় হেল্প করছিলো তখন আজিজ রায়হান মেট্রিক পরীক্ষা দিচ্ছিলো।ভাই কোন এক রমনীর প্রেমে পড়ে যান।তাকে বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লাগেন।কিন্তু মা বাবা রাজি হচ্ছিলোনা।তাই ভাইয়া পালিয়ে বিয়ে করে।যেটা বাবা সহ্য করতে পারেনা।তাই ভাইকে ত্যাজ্য করে দেন।ভাইকে তারপর থেকে আর দেখেনি।ভাই ভাবিকে নিয়ে কখনো ঘরে ও আসেননি।বাবা মা ও কখনো ভাইকে ঘরে ফিরাতে চাননি।ভাবি কে ও দেখেনি কেউ।ভাবতে ভাবতে রায়না রাহমানের দিকে তাকান আজিজ রায়হান।
-আপনি কি শিওর?সে সাজিদ রায়হান?জিজ্ঞেস করে উঠেন আজিজ রায়হান।
-হ্যা আজিজ।সে আমার স্বামী ছিলো।বলে।উঠেন রায়না রাহমান।আজিজ রায়হান রোয়েনের দিকে তাকায়।তারপর উঠে দাঁড়িয়ে ওর মাথা হাতিয়ে বেরিয়ে আসেন।
রোয়েনের ভীষন অবাক লাগছে আজিজ রায়হানের আচরন।বাবার নাম শুনেই এতো অবাক হলেন যেন বাবাকে চিনেন ওনি।
-এক্সকিউজমি!!! বলে বেরিয়ে যায় রোয়েন।
আজিজ রায়হান সামনে হেঁটে যাচ্ছেন।ভাই কোথায় তিনি জানেন না।কই খুঁজবেন ভাইকে।হঠাৎ পা থেমে।গেলো ওনার কাঁধে কারোর স্পর্শ পেয়ে।পিছনে ফিরে তাকান আজিজ রায়হান।রোয়েন ওনার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
-আমার সাথে আসুন।বলেই সামনে হাঁটতে শুরু করে রোয়েন।
আজিজ রায়হান রোয়েনের পিছু নিচ্ছে।আজিজ রায়হানকে নিয়ে ক্যাফেটেরিয়ায় এসে বসলো রোয়েন।
-সাজিদ রায়হান কে?জিজ্ঞাস করে উঠে রোয়েন।
-জানিনা।সে রায়না ভাবির স্বামী ছিলেন।বলে উঠেন আজিজ রায়হান।
-সেটা আমার জন্য।কিন্তু আপনি ওনার নাম শুনে এমন চমকে গেলেন কেন?সে কি হয় আপনার?জিজ্ঞেস করে উঠে রোয়েন।
-জানি আমি।সে কে?তাকে দেখিনি।বলে উঠেন আজিজ রায়হান।
-আপনি একটা বলছেন,আপনার চোখ আরেকটা বলছে।সে কে?কি লুকাচ্ছেন আপনি?রাগী গলায় জিজ্ঞেস করে উঠে রোয়েন।
আজিজ রায়হান না পারতেই রোয়েনকে জড়িয়ে ধরলো।সরি রোয়েন।আমি লুকাতে চাইনি।তাকে আমি চিনি।আর চিনবো না কেন?সে তো বড় ভাই আমার আপন বড় ভাই।রোয়েন কি বলবে বুঝতে পারছেনা।কি বলবে ও?
ওর বাবা আজিজ রায়হানের ভাই।তারমানে সবই ওর এই পরিবারটা ওর।বংশটা ওর।ওর অস্তিত্ব এখানেই।আজিজ রায়হান ওর চাচা।রোয়েন আজিজ রায়হানকে ও জড়িয়ে ধরলো।
-আপনি আলাদা কেন ছিলেন?জিজ্ঞেস করে উঠে রোয়েন।
-আজিজ রায়হান সব বলে দিলেন রোয়েনকে।রোয়েন মনে মনে আজ ভীষন খুশি অনেক কিছু পেয়ে গেছে ও।সরে এলেন আজিজ রায়হান।
-দাদা দাদি কই?জিজ্ঞেস করে উঠে রোয়েন।
-ওনারা নেই রোয়েন।বলে উঠেন আজিজ রায়হান।
রোয়েন বড় নিশ্বাস টেনে মাথা নিচু করলো।
-রোয়েন ভাবির কাছে যাও আব্বু।এখন ওনি অবশ্যই নিজের বড় ছেলেকে কাছে চান।বলে উঠেন আজিজ রায়হান।রোয়েন মাথা নাড়লো।আজিজ রায়হান উঠে চলে গেলেন।রোয়েন উঠে দাঁড়াতেই ওর কল এলো।
-হ্যালো স্যার!!!বলে উঠে রফিক।
-জি রফিক বলো।বলে উঠে রোয়েন।
-স্যার জানেন কে আসছে?(রফিক)
-কে?ভ্রু কুঁচকালো রোয়েন।
-প্রনয় খান।বলে উঠে রফিক।
রোয়েনের চোখ লাল হয়ে আসে,যেন আগুনের ফুলকি!!!!!
চলবে