The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 102
→রুমে এসে চিন্তিত হয়ে বসে থাকে রোয়েন।রুহী পেটে হালকা ভাবে হাত বুলাচ্ছে।যেন খুব আদর করছে বাচ্চাকে।পেটের দিকে তাকিয়ে হেসে রোয়েনকে বলল
”শুনো আমার পেটে চুমু খাওনা।আমি দিতে পারছিনা।”
রোয়েনের জবাব না পেয়ে রুহী পাশে তাকায়।লোকটা কেমন মন মরা হয়ে বসে আছে।রুহী কষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে রোয়েনের সামনে এসে বসে।তারপর একহাত রোয়েনের কাঁধে রেখে বলল
”কি হয়েছে?কি নিয়ে ভাবছো?”
”কিছুনা রুহী।ভালো লাগছেনা।”
”জানো তোমার এই একটা কাজেই খারাপ লাগে আমার।কখনো কিছু শেয়ার করতে চায়না।দেখা যায় তুমি সব কিছু বন্ধুদের জানাও।আমার কি কোন রাইট নেই জানার?হ্যা আমি দূর্বল কিন্তু জানলে ভাল লাগবে এটা ভেবে আমার হাসবেন্ড আমাকে সব কিছু জানায়।হয়ত একসময় এতে অভ্যস্ত হয়ে শক্ত হবো।সেটার চান্স দাওনা।”
বৌকে দেখছিলো রোয়েন এতক্ষন।একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
”রুহী আমি চাইনা তুমি কোন স্ট্রেস নাও।আর এই অবস্থায় অবশ্যই না।”
”প্লিজ বলো।”
”আচ্ছা ফাহমিন এসেছিলো কিছু বলতে।”
”কি?”
”ফাহমিন সামায়রা কে খুব পছন্দ করে।ওরা একসাথে ঘুরাঘুরি করেছে কয়েকদিন।কিন্তু একটা মিসআন্ডার্স্ট্যান্ডিং এর কারনে সামায়রা কলেজে ও যায়না ফাহমিনের কল পিক করছেনা।”
-”ওহ।কিন্তু ফাহমিন ভাইয়া ওর চেয়ে অনেকটাই বড়।”
”হুম।কিন্তু রুহী অনেক বিয়েতে এমন টা দেখা যায়।আর বড় কথা হলো ফাহমিন অনেক ভালো একটা ছেলে।অস্ট্রিয়া থেকে আসার পর রামীনের পর ও আমার অনেক কাছের বন্ধু।কোন ব্যাড হ্যাবিটস নেই।মেয়ে নিয়ে ও ঝামেলায় ছিলো না।”
”তোমার ও নেই।”
”রুহী তুমি আমায় যতোটুকু চিনো সেটা এইটি পার্সেন্ট।আর টুয়েন্টি পার্সেন্ট তোমার কাছে আমি অপরিচিত।”
”দেখো বিয়ের আগে যাই করেছো সেটা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই।আমি এই মানুষটাকে চিনি যে আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে।সেই অচেনা মানুষটাকে নাই চিনলাম।চিনে যদি আমাদের মাঝে দূরুত্ব সৃষ্টি হয় তাহলে তো না চিনাই বেটার।”
”হুম।তা কি করতে চাও সামায়রা আর ফাহমিনের ব্যাপারে?”
”ওকে আমি বুঝাই।”
”বুঝাতে হলে ওকে সরাসরি বুঝাতে হবে।আর তুমি বের হও সেটা চাইনা।”
”ওকে নিয়ে আসি বাসায়।অন্তত আমার ও ভাল লাগলো ওকে ও বুঝালাম।”
”ঠিক বলেছো।আচ্ছা কাল মামীকে কল দিয়ে ওকে আনাচ্ছি।”
”হুম।”
রুহী রোয়েনের কাছে গিয়ে ওর বুকে মাথা রাখে।রোয়েন রুহীর মাথায় হাত রেখে বলল,
”কি হয়েছে?”
”তোমাকে বলেছিলাম আমার চুলে তেল লাগিয়ে দিতে।সব গিলে খেয়ে বসলে।”
”সত্যিই খেয়াল ছিলো না।তেল কই আছে?”
রুহী উঠে দাঁড়াতে চাইলে রোয়েন বলল,
”আমাকে বলো কই আছে।নিয়ে আসি আমি।”
”আলমারিতে আমার ড্রয়ারটায়।”
”ওকে।”
রোয়েন আলমারি খুলে তেল বের করে আনে।তারপর রুহীর চুল ভাগ করে আলতো হাতে তেল লাগিয়ে দিতে থাকে।রুহীর খুব আরাম হচ্ছে।রোয়েন বলল,
-”তেলটার ঘ্রান বেশ।”
-”হুম আমার খুব ভালো লাগে।”
ছোটখাটো গল্পে রুহীর লম্বা চুলে তেল দেয়া হয়ে গেলো।রুহী চুলে খোপা করে নিয়ে রোয়েনের দিকে ফিরে বসে।রোয়েন তেল মাখানো হাত ধুতে গেছে।দুজনে শুয়ে পড়ে পাশাপাশি।রুহী হঠাৎ বলল,
-”বাবুকে চুমু খাবো কিন্তু আমি পারছিনা।”
-”ও এলে দিও।”
-”না এক্ষুনি দিবো।”
-”সেটা কেমন করে হবে?”
-”আমার চুমুটা ওকে পৌছে দাও।”
রুহীর কথার মানে বুঝে বাঁকা হাসে রোয়েন।তারপর রুহীর ওষ্ঠে চুমু দিয়ে ওর পেটে চুমু খেয়ে বলল,
”এই যে দিলাম।”
”থ্যাংক ইউ।এবার বুকে নিয়ে ঘুমাও।
রোয়েন চুপচাপ রুহীকে বুকে টেনে শুয়ে পড়ে।পরদিন সকালে অফিসে যায় রোয়েন।সেখানে নীরা হামিদ কে কল করে ও।নীরা হামিদ পানি খেতে আসেন।টেবিলেই ওনার ফোন রাখা।সেখানে দেখেন রোয়েনের নম্বর থেকে কল।চিন্তিত হন ওনি।মাথায় রুহীর কথাই আসতে থাকে।মেয়েটা ঠিক আছে তো?কোন সমস্যা হয়নি তো?দেরি না করে কল রিসিভ করেন নীরা হামিদ।অপরপাশ থেকে সালাম দিয়ে বলল,
”ভালো আছেন?”
”আলহামদুলিল্লাহ। তোমরা কেমন আছো?”
”এইতো আলহামদুলিল্লাহ।সামায়রার কলেজ চলছে কেমন?”
”ভালোই চলছিলো।মেয়েটা হঠাৎ কেমন যেন হয়ে গেলো কলেজে যায়না ”
”নতুন পরিবেশ হয়ত খাপ খাওয়াতে সমস্যা হচ্ছে।কোথা থেকে ঘুরে আসলে ভাল লাগবে।”
”হুম।ওর জায়গা পরিবর্তন লাগবে।”
”রুহী ও ইদানিং একা বোধ করে।রামীলা আছে কিন্তু ঘরের কাজ ও করতে হয়।একটা কাজ করছেননা কেন?সামায়রা কে আমাদের বাসায় পাঠান।রুহীর ও ভালো লাগবে আর সামায়রা ও খুশি থাকবে।”
”খারাপ বলোনি।ওর বাবার সাথে কথা বলে জানাচ্ছি।”
”আচ্ছা।আসবেন বাসায়।”
”অবশ্যই তোমরা ও এসো।”
কল কেঁটে কাজে মন দেয় রোয়েন।অতপঃর সেদিন রাতে সামায়রা চলে এলো রুহীর কাছে।আরমান হামিদ না করেননি কারন মেয়েটাও কেমন মনমরা হয়ে থাকে।বোনের কাছে গেলে ওর ভালো লাগবে।সামায়রা এসেই রুহীর সাথে রাজ্যের গল্প জুড়ে দেয়।আর দুইবোন হেসে গড়িয়ে যেতে থাকে।
বোনের সাথে এতোটাই ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছিলো যে রোয়েনকে ও চোখে পড়েনি রুহীর।
রোয়েন রুমে আসতেই সামায়রা পাশে তাকিয়ে সালাম দেয়।রোয়েন সালামের উত্তর দিয়ে বলল,
”ভাল আছো?”
”ভালো ভাইয়া আপনি?”
”ভালো।খেয়েছো তুমি?”
”ভাইয়া খাওয়া দাওয়া হবেই।আগে আপুর সাথে গল্প করে নেই।তারপর বাকি সব।”
রোয়েন ভ্রু কুঁচকে বলল,
”রুহী ওকে না খাইয়ে রেখেছো।আমার একটামাত্র শালী তারপর ও না খেয়ে আছে।এটা কি ঠিক?”
রুহী দুষ্টু হেসে বলল,
”অলে বাবালে একটা মাত্র শালী কি খেতে চায়?”
”আপু খিদে নেই।বরং আমি তোমাদের কফি বানিয়ে খাওয়াবো।সামায়রা স্পেশাল।”
”তা কি বিশেষত্ব আছে তোর কফিতে।শুনি।”
হেসে জিজ্ঞেস করলো রুহী।সামায়রা রুহীর দুগাল টেনে বলল,
”তোমরা দিওয়ানা হয়ে যাবা আমার বানানো কফি খেয়ে।আমি বানিয়ে আনি তারপর দেখবে কি বিশেষত্ব আছে।”
”আচ্ছা যা।রামীলা আছে ও দেখিয়ে দেবে কোথায় কি আছে।”
”আচ্ছা আপি।”
সামায়রার যাওয়ার অপেক্ষায় যেন ছিলো রোয়েন।ও বেরুতেই রুহীর সামনে এসে বসে পড়ে।তারপর বলল,
”তুমি জানোনা ফিরে তোমাকে একটু একা পেতে।চাই।”
”সেটা কিভাবে হবে বলো।ওকে ও তো টাইম দিতে হবে।আমার ছোট বোন।”
”হুম।বুঝলাম বাট আমার টাইমের কি?”
এটাতো ঘুমের সময় ও পাবে।বাট ওকে তো কিছু সময় দিতেই হবে।”
”আচ্ছা ওসব বাদ।আমার ওয়েলকাম চুমু পাইনি।”
”ও চলে আসবে।এখন না পরে।”
”ওর আসতে দেরি আছে।তুমি দাও।”
রুহী রোয়েনের ওষ্ঠজোড়ায় ডুবে গেলো।তখনই সামায়রা এসে বলতে নিচ্ছিলো কফি না পাওয়ার কথা কিন্তু বোন আর বোন জামাইকে এভাবে দেখে দৌড়ে পালিয়ে গেলো।সামায়রার পায়ের শব্দে ঘোর কাঁটে রোয়েন রুহীর।রোয়েন সরে এসে বলল,
”কে ছিলো?”
”কেমনে বলবো?না করছিলাম তোমাকে।শুনলে না।এখন যেই দেখেছে কি মনে করবে?
”কি মনে করবে?আমি আমার বৌ কে আদর করছি সেখানে কার ভাবনার কি?”
”তোমার যতো কথা।সামায়রা দেখলে লজ্জা পাবে বেচারী।বরং আমি গিয়ে ওকে দেখে আসি।”
রুহী উঠে বাহিরে যাবার পথে পা বাড়ায়।রোয়েন ফ্রেশ হতে চলে যায়।রুহী এসে দেখলো সামায়রা কফি বানাচ্ছে।রুহী ওর পাশে দাঁড়ায়।সামায়রা খুব লজ্জা পেলে ও বলল,
”আপি তুই আসলি কেন?আমি নিয়ে যেতাম।”
”আরে সমস্যা নেই।তুই একা পাকঘরে তাই তোকে সঙ্গ দিতে আসলাম।”
”ওহ।”
সামায়রা রুহীর দিকে তাকাতে পারেনা।এমন কি ঠিকমতো কথাও বলতে পারছেনা।রুহী বলল,
”তুই রুমে গিয়েছিলি তখন।আমার চোখে কি যেন পড়েছিলো।রোয়েন ওটা বের করে আনছিলো।”
সামায়রা এবার আশ্বস্ত হয়।তাহলে এখানে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।তিনজনে কফি খেয়ে ডিনার করে নেয়।সামায়রা কে রোয়েন রুহীর পাশের রুমটা দেয়া হয়েছে।সামায়রা সেখানে গিয়ে শুয়ে পড়ে।ফোন টা হাতে নেয় ও।ফাহমিনের ২০ কে কল এসে আছে।সামায়রা চোখ বেয়ে অজান্তেই অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।পরদিন রোয়েন কাজে গেলে রুহী ওকে বুঝাতে বসে।
”ক্লাশ কেমন লাগছে?”
”ভালো আপি।”
”এতো ভালো যে কলেজে যাওয়া অফ করেছিস।”
”আপি আমার কেমন যেন লাগছে।কয়েকদিন একটু ছুটি চাই।”
”সব ঠিক আছে তো?কেউ বিরক্ত করছেনা তো আবার?”
”না আপি তেমন কিছুনা।”
”তাহলে ক্লাশ গুলো এ্যাটেন্ড কর।দুবছর সময় মাত্র।ক্লাশ গুলো কত ইম্পরট্যান্ট জানিস।কতো কিছু দাগায় দেয়।আর তুই যাচ্ছিসনা।পরে নিজেই ঝামেলায় পড়ে যাবি।”
”হুম আপু।যেতে মন চায়না।”
”পড়াশুনা করতে কার ভালো লাগে বল?তুই ভালো স্টুডেন্ট।ক্লাশ গুলো বাদ পড়লে পিছিয়ে যাবি।দেখা যাবে পরীক্ষাগুলো ও অাশানুরুপ হবে না।”
”আচ্ছা আপু তাহলে যাবো আমি।”
”এই তো বুঝে গেছিস।
রুহীর কাছে দুদিন থেকে নিজ ঘরে ফিরে গেলো সামায়রা।মাকে জানালো ও কলেজ যাবে।মা আর বাবা বেশ খুশি।পরদিন কলেজ থেকে বেরিয়ে ফাহমিন কে দেখতে পায়।লোকটার চেহারাটা অনেক মলিন হয়ে আছে।সামায়রাকে দেখে হেসে হাত নাড়ায় ফাহমিন।সামায়রা সরে দাঁড়ায় সেখান থেকে।ফাহমিন সামায়রার সাথে কথা বলার জন্য ওর পিছু নেয়।সামায়রা কে পেয়ে গেলো পিলারের পিছে।সেখান থেকে টেনে নিজের সামনে দাঁড় করায় ফাহমিন তারপর বলল,
”প্রবলেম কি?কথা বলোনা কেন?দেখেছো কতোবার কল করেছি। কত চিন্তা হচ্ছিলো আমার ভাবতে ও পারবেনা।”
”আপনার সাথে কোন কথা নেই আমার।আমার মতো আমাকে ছেড়ে দিন।”
”প্রশ্নের জবাব পাওয়া ছাড়া কোথা যাবোনা।কেন কথা বলতে চাওনা?তুমি তো আমার বান্ধুবী।”
”আপনার অনেক বন্ধুবান্ধুবী আছে।আমি কিছুনা।আপনি চলে যান।”
সামায়রা প্লিজ কি হয়েছে বলো।তুমি জানো আমি তোমাকে সবচেয়ে বেশি সময় দেই আমার পরিবারের পর।তোমার দুলাভাইকে ও অতোটা সময় দেইনা।এখন বলোকি হয়েছে?”
” সেদিন সেই মেয়েটাকে আপনাকে জড়িয়ে ধরেছিলো আমার সামনে।ব্যাপারটা একটুও ভালো লাগেনি।”
ফাহমিন গলা ছেড়ে হাসতে শুরু করে।হাসির শব্দ গুলো সাময়রার কানে বাজছে।ও ভ্রু কুঁচকে বলল,
”হলো টা কি?”
”সেদিনের ব্যাপারে রেগে গেছো?ও আমার ক্লাশমেট।ছোট্ট বেলার বন্ধু।ওর নাম নীলা।জাপান থেকে আসছে তেরবছর পর।ওর দুটো বাবু আছে।”
”ওহ।”
”এবার হাসো।”
সামায়রা একটু হাসলো।ফাহমিন ওকে টেনে নেয় বুকে।সামায়রার ভালো লাগলে ও রাস্তায় হওয়াতে বেশ লজ্জায় পড়ে যায় ও।সরে আসে সামায়রা।ফাহমিন দুবক্স চকলেট ওর হাতে দিয়ে বলল,
”কাল আমার সাথে বাহিরে যাবে।খুব সুন্দর একটা জায়গা দেখাবো তোমাকে।
চলবে