The Cobra King Mafia Boss- Season 4

The Cobra King Mafia Boss- Season 4 !! Part- 98

→-”আই থিংক ওকে সব জানানো উচিৎ।”
.
.
রোয়েনের কথা শুনে চমকে উঠে রামীন।এমনিতেই কাল।ইদুর দেখে সেটার ভয় এখনো কাঁটাতে পারছেনা তারওপর রোয়েনের কথায় ওর বুক যেন ধক করে উঠে।কিছুটা সামলে নেয় নিজেকে রামীন।তারপর গ্লাসের পানিটুকু ঢকঢক করে গিলে নিয়ে বলল,
.
.
-”কারে?”
-”রুহীকে।সব জানিয়ে দেয়া উচিৎ।যেহেতু আমার স্ত্রী ও। ওর অধিকার আছে।”
.
.
গম্ভীর কন্ঠে কথা গুলো বলে রোয়েন।চোখ মুখ দেখে বোঝাই যাচ্ছে কিছুটা রাগ অভিমান কষ্ট আরো হরেকরকমের অনুভূতি জমা আছে কোব্রা লর্ডের সুন্দর মুখ খানায়।রামীন রোয়েনের চেহারা দেখে একটু হাসে। রেগে থাকলে ও কতো সুন্দর লাগে।আর চোখজোড়া তো বড্ডমায়াবী।সেটা ও ছেলে হিসেবেই ধরতে পারলো।হঠাৎ রামীনের মনে পড়ে কিছু বলেছিলো রোয়েন।তাই ও আবার জিজ্ঞেস করে,
.
.
-”কি বলবি?”
-”ব্র্যাডলি ফ্লোরা।”
-”ফ্যাশন ডিজাইনার আর তোর……”
.
.
রোয়েন চোখ বড় করে রামীনের দিকে জ্বলজ্বলে চোখে তাকায়।রামীন কথাটা শেষ করতে পারেনা।
ও আগের কথা শেষ না করেই বলল,
.
.
-”তোর জানিয়ে দেয়া উচিৎ।অন্তত ও অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসবে।”
-”এতো সহজ না।আমার জন্য খুব কঠিন।ঐ লোককে পেলে কঠিন শাস্তি দিবো।”
-”তোর আরেকটু ঘাঁটা উচিৎ অতীত।”
-”আর কিছু জানার বাকি নেই।সব স্পষ্ট স্বচ্ছ পানির মতো।”
.
.
রামীন আর কিছু বলতে পারেনা।যেখানে রোয়েন বলল সব স্বচ্ছ সেখানে আর কিছু বলার থাকেনা।সামায়রার কথাটা কানের মধ্যে ঘন্টার মতো বাজতে থাকে ফাহমিনের।মেয়েটা বাচ্চা চাইছে তাও আবার বিয়ের আগেই।ফাহমিন নিজেকে একটু দেখে নেয় আয়নায়।ও ই সামায়রার বাবুর বাবা হবে।তবে সঠিক সময় আসলে।সামায়রাকে ও জানাবে কতোটা ভালবাসে।কিন্তু মেয়েটাতো ওকে বন্ধু মানে ওকে কি কখনো ভালবাসতে পারবে?ভাবতেই চিন্তিত হয়ে পড়ে ফাহমিন।হঠাৎ ফোনের ভাইব্রেশনে চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে।ফোন হাতে নিয়ে নম্বরটা দেখে মৃদু হাসে।ফোন কেঁটে কল ব্যাক করে ও।অপরপাশ থেকে বাচ্চাসুলভ মিষ্টি কন্ঠে কেউ সালাম দিলো।
মেয়েটার বয়স যতোই হোক কন্ঠটা বাচ্চা বাচ্চা।ফাহমিন বলল,
.
.
-”ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছো?”
-”ভালো না।”
-”কেন?”
-”বললেন না যে কেমন লাগবে আমাকে।”
-”কি কেমন লাগবে?
-”ঐযে মা হলে।”
-”দেখো সবাইকে সুন্দর লাগবে তেমন কোন কথা নেই।আর বাকি রইলো তেমার কথা। যথেষ্ঠ বাচ্চা একটা মেয়ে তুমি।তোমার পড়াশুনায় মন দেয়া উচিৎ।”
-”পারছিনা।”
-”কেন?”
-”জানেন বাবুকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে ছিলাম।”
-”কি দেখলে?”
-”আমি একটা ছোট্ট বাবুকে কোলে নিয়ে আছি আর আমার সামনে একজন ডাক্তার দাঁড়িয়ে আছে।সে বাবুটাকে চুমু দিয়ে আমাকে কিছু বলতে যাবে তখনই মা ডাক দিলো।”
-”উইয়ার্ড ড্রিম তোমার।”
-”অনেকটাই।খেয়েছেন?”
-”রান্না হচ্ছে।পরে খাবো।তুমি খেয়েছো?
-”খেয়ে কল দিলাম।”
-”ওহ।সবাই কেমন আছে?”
-”রুহীপুকে নিয়ে বিজি।”
-”আর তুমি?”
-”বাবুকে নিয়ে।”
.
.
হেসে দেয় ফাহমিন।পরক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
.
.
-”কাল কলেজ খোলা?”
-”খোলাইতো।”
-”পাস্তা খাও?”
-”খুব ভালবাসি।”
-”কাল খাওয়াবো।পরিচিত একটা রেস্টুরেন্ট আছে।তোমার পছন্দ হবে।”
-”আচ্ছা।”
-”শুনো!!!”
-”জি বলুন?”
-”লাল ড্রেস পরে এসো।”
-”হঠাৎ লাল কেন?”
-”আমি বলেছি তাই।”
-”আমার তো লাল নেই।এমনকি পছন্দ করিনা কালারটা।”
-”আমার জন্য পরবেনা?”
-”আপনার জন্য কেন পরবো?”
-”কেন পরবে মানে?তোমার ফ্রেন্ড আমি।”
-”ও আচ্ছা তাও ঠিক।দেখি ম্যানেজ করতে পারি কিনা।”
-”ওকে।থ্যাংক ইউ।”
-”ওয়েলকাম।রাখি।কাল দেখা হবে।
-”ইনশাল্লাহ।”
.
.
রুহীর কোমড়ে কেমন যেন চিনচিনে ব্যাথা হয়ে আছে।ব্যাপারটা প্রথমে বুঝতে না পারলে ও কোমড়ে তীব্র ব্যাথা অনূভব হতে থাকে।চিৎকার করে কাঁদতে মন চায় ও।ব্যাথা টা কেমন যেন কামড়ে উঠছে।রামীলা কোমড় চেঁপে দেয়ার পর ও ঠিক হচ্ছিলো না।বেচারী তো ভয় কেঁদেই ফেলেছিলো।রুহী বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে রইলো হঠাৎ হঠাৎ কোমড়ে কামড়ে দিচ্ছে ব্যাথাটা।রামীলা রোয়েনের নম্বর বের করে কল লাগায়।কাজের মাঝে ফোন বেজে উঠায় একটু বিরক্ত হয়ে ফেন হাতে নিতেই বিরক্তি কেঁটে গিয়ে একরাশ ভাললাগা কাজ করলো।ফোন রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে রামীলা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
.
.
-”ভাইয়া আফুরে বাঁচান।মইরা গেলো।”
.
.
রামীলার কথায় প্রচন্ড ভয় পায় রোয়েন।বুক টা ধকধক করতে লাগে।রোয়েন বলল,
.
.
-”কি হয়েছে ওর?”
-”বিছানাত তড়পাইতাছে।আফনে আয়েন ভাই।”
.
.
আর অপেক্ষা করতে পারেনা রোয়েন।কোটটা হাতে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায়।কলিজাটা সাথে নেই।পিছন থেকে কারোর ডাক কানে গেলোনা সব যেন বাতাসে মিলিয়ে গেলো।রোয়েন ঘরে ঢুকেই দৌড়ে রুমে চলে আসে।রুহী বিছানায় চোখ বুজে আছে।চোখের কোনে পানি জমে আছে।রোয়েন পাশে বসে রুহীর চোখের পানি মুছতেই চোখ খুলে রুহী।তারপর দূর্বল কন্ঠে বলল,
.
.
-”এসেছো?”
-”কি হয়েছে তোমার?”
-”তেমন কিছুনা।কোমড়টা খুব ব্যাথা করছে।গটম পানি কোমড়ে ঢেলেছি।এখন কম আছে।”
-”কম আছে।তোমার ফোন কই?”
-”রামীলার কাছে মনে হয়। কেন?”
-”ওর কাছে তোমার ফোন কেন দিলে?আর কখনো দিবেনা।”
-”বেচারী একা থাকে তাই দেই।শুধু গেমস খেলে।কেন কিছু হয়েছে?
-”কল দিয়ে বলল তোমাকে বাঁচাতে কিনা কি হয়ে গেছে।কতোটা ভয় পেয়েছিলা বুঝতে পারছো?”
-”এই মেয়েটা ও না?তুমি সেজন্য চলে ও এলে?”
-”রুহী তুমি ভাবতে কিভাবে পারলে আমি না আসবো।ও যেভাবে বলেছিলো নিজের মাঝেই ছিলামনা।”
.
.
রুহী হেসে রোয়েনকে টেনে আনে নিজের কাছে।তারপর জড়িয়ে ধরে।রোয়েন রুহীর কাঁধে ওষ্ঠ বুলিয়ে রুহীকে জড়িয়ে ধরে সেভাবে শুয়ে থাকে।এদিকে রাত থেকেই নীরা হামিদকে জ্বালিয়ে মারছে সামায়রা লাল ড্রেসের জন্য।নীরা হামিদ প্রচন্ড অবাক।যে মেয়ে লাল জামা দেখলেই সরে যায় সে এখন লাল ড্রেস চায়।ব্যাপারটা বড় ভাববার বিষয়।নীরা হামিদ জিজ্ঞেস করেন,
.
.
-”হঠাৎ লাল ড্রেস কি করবি?”
-”পরবো কাল।”
-”লাল তোর পছন্দ না।”
-”এখন পছন্দ।মা প্লিজ দাও।”
-”আমি খুঁজে দেখছি।”
.
.
চিন্তিত মুখে রুমে চলে যান নীরা হামিদ।এদিকে সেদিন রুহীর শরীর খারাপ থাকায় কথাটি চেয়ে ও বলতে পারেনা রোয়েন।কিন্তু বিষয়টা ওর মাথায় ঘুরছে।রুহী ব্র্যাডলি ফ্লোরার ফেমিলি,হাসবেন্ড সার্চ করেছিলো।রোয়েনের চিন্তা লাগছে।কিছু জানতে পারেনি তো রুহী?পরদিন অফিসে যায়না রোয়েন।রুহীর কোমড় ব্যাথা রাতে থাকলে ও এখন নেই।কাল ভারি কি যেন উঠাতেই কোমড়ে টান লাগে।তাই ব্যাথা হয়েছিলো তবে আজ ভালো আছে।দুজনে নাস্তা সেড়ে বারান্দায় আসে কফি নিয়ে।রোয়েনের পাশে বসে ওর বুকে মাথা রেখে আছে রুহী।রোয়েন কফির কাপে লাস্ট চুমুক দিয়ে বলল,
.
.
-”রুহী কিছু কথা ছিলো।খুব ইম্পরট্যান্ট। ”
-”বলো।”
-”তুমি আমার দিকে তাকাও।”
.
.
রোয়েনের বুক থেকে সরে এসে ওর দিকে তাকায় রুহী।তারপর বলল,
.
.
-”এবার বলো।কি বলবে?
-”ব্র্যাডলি ফ্লোরা নিয়ে তোমার অনেক উৎসাহ তাইনা?সেদিন আমাকে জিজ্ঞেস করলে আর কয়েকদিন দেখাম অনেক কিছু সার্চ করেছো ওনাকে নিয়ে।”
-”সরি রোয়েন।কিন্তু তুমি বলো নাই তাই একটু এক্সাইটেড ছিলাম।তোমার বইয়ে ওনার নাম দেখে।”
-”তোমার ধারনা সত্যি।আমি তাকে চিনি।”
-”ওনি কে হয় তোমার?”
-”মা। আমার মা।”
-”মা!!!”
-”হুম।আমার জন্ম অস্ট্রিয়া হয়েছিলো রুহী।আমার বাবা সেখানে ব্যাবসা করতে যায়।মা আগে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল ছিলোনা।মা পড়াশুনার পাশাপাশি বারে কাজ করতো।সেখানে আমার বাবার সাথে পরিচয় হয় মায়ের।দুজনের মাঝে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে।ওনারা বুঝতে পারেন একে অপরকে ভালবাসেন।মা বাবাকে বিয়ের কথা বললে বাবা সাফ বলে দেন মাকে ইসলাম গ্রহন করতে হবে।মা রাজি হয়ে যায়।ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে ওনি হয়ে যান রাহেলা বেগম।বাবার সাথে বিয়ের পর মা নিজের ফ্যাশন হাউজ খুলে।রাতারাতি প্রচুর খ্যাতি লাভ করে।সে সময়ে আমার বাবার পরিচয় হয় এক প্রোস্টিটিউটের সাথে।অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা।মা কথাটি জানতে পেরে বাবাকে প্রশ্ন করলে বাবা।মাকে মারতে থাকে।প্রচুর মারের কারনে মার ইন্টার্নাল ব্লিডিং শুরু হয়।বাবা মা মরে গেছে ভেবে বেরিয়ে যায়।তখন বাড়িওয়ালা মাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়।সেই যাত্রায় মা বেঁচে যায়।কিছুদিন পর বাবা এসে মায়ের কাছে মাফ চায়।মা খুব ভালবাসতো বাবাকে তাই মাফ করে দেয়।কয়েক বছরের মাথায় আমার জন্ম হয়।মা তখন উন্নতির শিখরে।বাবার সহ্য হচ্ছিলো না।ওনি চাইতেন মা ওনার নিচে থাকুক তাই মায়ের নামে যা তা কথা ছড়াতে থাকে।মা নাকি পতিতা পল্লী যেতো,মা ইসলাম গ্রহন করেনি,এমন অনেক কিছু।কিছুদিনের মাথায় মায়ের ফ্যাশন হাউজে ধস নেমে আসে।তার কয়েকদিন পরেই মা গায়েব হয়ে যায়।আর কখনো দেখিনি মাকে।তারপর আমার টিচার আমাকে নিয়ে আসে তার সাথে।সেই লোককে খোঁজার অনেক চেষ্টা চালাই কিন্তু লাভ হয়না।সে খুব পাওয়ার ফুল তাই মাফিয়ার পথ বেছে নিতে হয়েছে আমাকে।
.
.
রোয়েনের কথায় চোখ ভিজে আসে রুহীর।লোকটা কতোটা কষ্টে আছে সেটা সে ছাড়া কেউ বুঝবেনা।রুহী আবার ও বলল,
.
.
-”কিন্তু রোয়েন কাহিনী অন্যরকম ও তো হতে পারে।”
-”রুহী আমার মা কথা গুলো না লিখে গেলে জানতে পারতাম না।আর কোন স্ত্রী তার স্বামীর বিরুদ্ধে মিছেমিছি এমন লিখবেনা।নিশ্চয়ই সত্যি সব। ”
.
.
রোয়েনকে রেগে যেতে দেখে চুপ হয়ে গেলো রুহী।কিছু বলতে পারেনা আর।
চলবে