একঝাঁক জোনাকির আলো

একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 48

৪৮
_________________
সাফার এমন বাঁধভাঙা কান্না আর ভিত্তিহীন কথা শুনে নিভ্রর রাগ চরম পর্যায়ে আছে।রাগে তার মাথা ভনভন করছে।আর সাফা!! সে তার কান্না অপরাধবোধ সবই অব্বাহত রেখেছে।নিভ্র ভাবতে পারছে না একটা মেয়ে এত কান্না কিভাবে করতে পারে।তাও এত সময় ধরে।সেই সন্ধ্যা থেকে এক ভাবে কেঁদেই চলেছে।নিভ্রর মনে হচ্ছে মেয়েজাতির প্রধান হাতিয়া তার কান্না।যখন তখন শুরু করে দিতে পারে।নিভ্র তাকালো না সাফার দিকে।ধমকের সুরে বললো,
—” চুপ করবা!!”
সাফা তাও শুনলোই না উল্টা আরো শব্দ করে কাদঁতে লাগলো।সে কেঁদেই চলেছে।নিভ্রর এবার মেজাজ চরম খারাপ।উঠে দাঁড়িয়ে নিভ্র রুমের জিনিসপত্র ভাঙ্গচুর শুরু করেছে।কাঁচের গ্লাস থেকে শুরু করে কাঁচের টিটেবিল সব ছুঁড়ে মেড়ে ভেঙে দিচ্ছে। সাফার উপড়ের সব রাগ অভিমান নিভ্র এই বেচারা জিনিস গুলোর উপড় উড়িয়ে দিচ্ছে। সাফার কান্না এবার উড়ে গেছে।হা করে নিভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে সে।চোখে জমে থাকা পানি আপন গতিতে গড়িয়ে পড়ছে।নিভ্র জানালার পাশে ঝুলানো পর্দা টানতেই সাফা চেঁচিয়ে বললো,
—” আল্লাহ কি করছেন আপনি??এত উত্তেজিত হচ্ছেন কেনো??আর এত রেগে আছেন কেনো??”
নিভ্র কিছু বললো না।চোখমুখ ফুলিয়ে টেনে পর্দা ফেলে দিলো।সাফা হতবম্ভ। কি হচ্ছে সে কিছুই বুঝতে পাড়ছেনা।উঠে দ্রুত নিভ্রর সামনে গেলো।নিভ্রকে থামাতে চাইলো।নিভ্র কঠিন গলায় বললো,
—” এখানে কি করছো??যাও বসে বসে যোগ্য অযোগ্য নিয়ে কথা বলতেই থাকো আর কাঁদো। যাও।”
সাফা পঞ্চবিমহিত হয়ে বললো,
—” কি হয়েছে আপনার??এভাবে পাগলের মত করছেন কেনো?আর আপনি অসুস্থ।এভাবে করলে আর অসুস্থ হয়ে যাবেন।”
নিভ্র চেঁচিয়ে বললো,
—” হলে হবো তোমার কি??”
বলেই নিভ্রর লাল লাল চোখ গুলো দিয়ে সাফার দিকে তাকালো।সাফা ভয়ে চুপসে গেছে।নিজের দোষ খুঁজতে শুরু করে।সে কি এমন করেছে তাই খুঁজে পাচ্ছে না।নিভ্র পাশে থাকা চেয়ারটা তুলতেই সাফা দু’হাতে নিভ্রকে জড়িয়ে ধরে বুকে ঝাঁপিয়ে পরে।নিভ্র স্তব্ধ। হঠাৎ তার সারা শরীরে শীতল হাওয়া বয়ে গেছে।নিভ্র নিস্তেজ হয়ে গেছে।সব রাগ, অভিমান,বিরক্ত হঠাৎ করেই ঠান্ডা বরফের মত জমে গেছে।সাফা জাপ্টে আছে নিভ্রকে।কেঁদে কেঁদে নিভ্রর বুক ভাসিয়ে ফেলেছে।নিভ্র এখনো জমে দাঁড়িয়ে আছে।তার এখন কেমন অনুভুতি হচ্ছে সে জানে না।কি নাম দিবে এই অনুভুতির তাও সে জানে না। তার শুধু সব থমকে দিতে ইচ্ছে করছে।মনে হচ্ছে সব সময় এভাবে থেমে যাক।সাফা সারা জীবন এভাবেই তার বুকে পরে থাকুক।সাফা নিভ্রর পিঠ খাঁমছে কাদঁছে। ভাঙ্গচুরের শব্দ শুনে অনেকেই এদিকে চলে এসেছে।নার্সদের বেশ অবাক লাগছে সব।এই লোকটা কি উম্মাদ?? কথাটা তাদের মাথায় ঘুড়ে।অল্পবয়সী নার্সদের আফসোস হচ্ছে সাফাকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে দেখে।আহ্ তারাও যদি একটা সুযোগ পেতো।কিন্তু কিছুই করার নেই।সবাই দরজার কাছে এসেই চলেগেছে আবার।নিভ্র এতসময়ের পরে এখন সাফাকে জড়িয়ে নিজের বাহুতে নিয়েছে।সাফার কান্নার গতি বাড়ে।নিভ্রর ভালোই লাগছে।তার মতে যত কিছু করার সে এই বুকে থেকেই করতে পারবে।সাফার শরীর কাপঁছে। গাল, কান লাল হয়ে উঠেছে।হাত পা কাঁপছে।মানুষটার ছোঁয়া তাকে মিলিয়ে নিচ্ছে তার সাথে।অদ্ভুত সে অনুভুতি। এই মানুষটাকে পাওয়া তার কাছে একটা সময় অবিশ্বাস্য মনে হতো।আর আজ সে মানুষ তার এত কাছে, এতটা জড়িয়ে,এতটা আপন করে নিয়েছে তাকে।সাফা স্রোতের গতিতে কাদঁছে। এই তো সেই জায়গা।সেই নিরাপদ স্থান।সেই ভালোবাসা মাখানো আবেক, সেই অনুভুতি,সেই প্রেমে মেখে আছে এই বুক।এই সেই মানুষ।এই তো এত কাছে।যার স্বপ্নে সে রাতের ঘুম বিলিন করেছে।যাকে দেখার আকুলতা তার চোখজুড়ে।যার কথা ভেবে সমুদ্র,বালিশ,নদীকে সাক্ষী রেখে চোখের পানি বিসর্জন দিয়েছে।তার আপন, খুব কাছের মানুষ, তার ভালোবাসা এই লোক।এই মানুষ।তাদের বিচ্ছেদের অবসান কি এই মিলন??বিচ্ছেদের অবসান কি এভাবে হয়??তার অনুভুতি কি এমন??সয্য করার ক্ষমতা কি হারিয়ে যায়??হয় তো এটাই বিচ্ছেদের অনুভুতি। এটাই ভালোবাসা।যা বিচ্ছেদে আরো মজবুত হয়।সাফার চোখ ব্যথা করছে।মাথা ছিড়ে যাচ্ছে। সব ঝাপসা হয়েগেছে। তবুও সে শক্ত করে জড়িয়ে আছে।চারিদিকে সব নিশ্চুপ। কোনো শব্দ নেই।দুজনের নিঃশ্বাসের ও শব্দ যেনো নেই।সাফা শব্দ করে কাদঁছে। নিভ্র সেই শব্দেরও প্রেমে পড়ছে।সত্যি কি কারো কাছে এত ক্ষমতা আছে??যার সব জুড়েই প্রেমে পড়া যায়!!নিভ্র দীর্ঘ প্রশান্তির শ্বাস নিয়ে মনে মনে বলে,
—” হুম। আমার সাফারানীর সে ক্ষমতা আছে।আল্লাহ তাকে সেভাবেই বানিয়েছে।আর শুধু আমিই তার সব কিছুর প্রেমে পড়তে চাই।শুধু আমি।”
দু”জনের মাঝে পিনপিনে নিরবতা।কেউ কথা বলছে না।কিন্তু কেনো??সাফা ভাবছে নিভ্র হয় তো চেঁচিয়ে ধমকাবে??কিন্তু কিছুই করছেনা।সাফা তো এখনো কাদঁছে। তাকে বোকবে না??সাফা আরো শক্ত করে নিভ্রকে জড়িয়ে ধরে।নিভ্র সাফার হেজাবের উপড় থুঁতনি রাখে।সাফাকে জড়িয়ে উপড়ে তুলে নেয়।সাফা এখন নিভ্রর কাধে মাথা রেখে কাপঁছে। নিভ্র ঠান্ডা গলায় শীতল কন্ঠে ডাকবো,
—” সাফারানী….”
সাফার সব জুড়ে শিহরণ বয়ে গেছে।ভিতরের সব নড়ে উঠেছে।কারো কন্ঠ এতটা শীতল, এতটা মায়াবী, এতটা ভালোবাসায় মাখা হয় নাকি??যা নিজের ভিতরের সব নাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে??নিভ্রর এই ডাকটা সাফার কাছে তেমনই মনে হচ্ছে। এই তো সেই ডাক।সেই ভালোবাসায় জড়িয়ে থাকা কন্ঠ। সাফা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।নিভ্রর চোখে পানি মুখে হাসি।সেই পুরানো হাসি।সেই দীর্ঘ হাসি।বিলিন হওয়া হাসি।নিভ্র আর একটু শক্ত করে কোমড় জড়িয়ে বললো,
—” সাফারানীর কান্না কি থামবে??”
সাফা নিভ্রর কাধে নাক ঘঁষে। চোখ ঘঁষে। জবাবে কিছু বলে না।নিভ্র এক হাতে কোমড় জড়িয়ে, আর এক হাতে সাফার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।সাফা তার পা ভাঁজ করে নিভ্রর গলা জড়িয়ে নিভ্রর চোখে চোখ রাখে।সবুজ চোখ। সেই ভয়ংকর চোখ।যা ঘায়েল করে মনের প্রতি প্রান্ত। দু’জনের চোখ আবার একবার এক হয়।সেই পুরোনো দিনের মত।দু’জনের জন্য ভালোবাসার কোনো অভাব নেই এই চোখে।এতটাই ভালোবাসায় ডুবা চোখ তাদের। সাফার নীলাভ চোখ পানিতে টইটুম্বুর হয়ে আছে।হালকা ছাঁকিতেই তা গাল বেয়ে পড়ছে।সেই লাল গাল।সেই সাফা।নিভ্রর সব কেমন যেনো স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছে। সত্যি কি সাফা তার বাহুতে। এভাবে তার সামনে??সব কি সত্যি??আল্লাহ কি সত্যি তাকে আবার একবার সাফাকে কাছে পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে??হুম দিয়েছে।তার চাওয়ার জোড়ে আল্লাহ তাকে ফিড়িয়ে দিয়েছে।নিভ্র সাফার গলায় নাক ঘঁষে। সাফা ভয়ংকর মাত্রায় কাঁপে।আরো শক্ত করে কাধ চাপড়ে ধরে নিভ্রর।নিভ্র সাফার কপালে কপাল ঠেকায়।সাফা চোখবুজে।নিভ্র ধরা গলায় বলে,
—” ভালোবাসি সাফারানী।খুব ভালোবাসি।এতটা ভালো আমি কখনো, কোনো ভাবে, কোনো ব্যক্তিকে বাসতে পারিনি।তোমাকে ছাড়া আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।তুমি অক্সিজেন আমার।তবুও ছেড়ে গেলে??একটু ও কি মনে পড়েনি আমাকে??”
সাফার কান্না আবার বাড়ে।চিৎকার করে সে কাদেঁ। কাদঁতে কাদঁতে বলে,
—” আমার খুব কষ্ট হয়েছে।খুব খুব কষ্ট।আপনাকে ছাড়া আমি সত্যিই ভালো নেই।আপনাকে ছাড়া আমি ভালো থাকতেও পারবো না।পারবো না আমি!!”
নিভ্র সাফাকে নিচে নামায়।বুকে তার এখনো টান লাগে।সাফার গাল দু’হাতে আঁকড়ে কপালে চুমু খায়।সে কখনো ভাবতেও পারেনি এই কপালে আবার তার ঠোঁটজোড়া ভাগ বসাতে পারবে।নিভ্র মনে প্রানে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে।তার কাছে ভাষা নেই। সাফাকে আবার জড়িয়ে বললো,
—” তুমি চাইলেও আর হারাতে পারবেনা।আমি হতেই দিবো না।আমি সার্থপর।নিজের জন্য সব করতে পারি।তুমি ছাড়া আমার বাঁচা মশকিল। বাচাঁতে চাই।তাই তোমাকে আমার চাই।”
সাফা জড়িয়ে ধরে।বলতে চায় আমি যাবো না।কিন্তু পারে না।
_________________________
সাফার বাবার মুখে সব শুনে সবাই কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে ছিলো।পরিবারের দুই’ছেলেই তাদের প্রিয়।কেউ কারো থেকে কম না।আর এই ঘটনার পিছনে তারা চেয়েও কাউকে দোষ দিতে পারবে না।সবাই সবার জায়গায় ঠিক।অভ্র চাইলেই ভিলেন হতে পারতো।কিন্তু সে হয়েছে ত্যাগি।এটাই ভালোবাসা।তার ভালোবাসা সবার উর্দে। সে ভাইকে বেশি ভালোবাসেছে।যা হয়েছে এতে তার কোনো দোষ নেই।তাই তার মাঝে অপরাধ বোদ থাকাও উঁচিত না।কিন্তু সে অপরাধ বোধে ভুগছে।সোফার এক কোনায় মায়ের কোলে মাথা রেখে সে কাদঁছে। তার খারাপ লাগছে। তার জন্য শুধু তার জন্য তার ভাই এত দিন কষ্ট পেয়েছে।তার পরিবার কষ্ট পেয়েছে।সে এটা মানতে পারছে না।সবাই তাকে বুঝাচ্ছে। এতে তার কোনো দোষ নেই।কিন্তু তার মন মানছেনা।
____________________________
সকাল।প্রতিটি সকাল নতুন হয়ে উঠে।নতুন করে মানুষের জীবনকে।আলোকিত করে মানুষের প্রানকে।সব উজাড় করে ভালোবাসায় কানায় কানায় ভরিয়ে দেয় সব।নিভ্রর সকালটা ঠিক তেমনই।এত গুলো দিন এতগুলো সকাল তার জীবনে যে বিষাদময় হয়ে উঠেছিলো সব আজ শোধ করে দিয়েছে।আজকের সকাল তার জীবনের রং পালটে দিয়েছে।কারন তার সকাল তার প্রিয় মানুষের মুখ দেখে হয়েছে।অপেক্ষার ফল আসলেই মধুর হয়।এটাই সেই মধু। সাফা নিভ্রর পাশে হাত গুলো মাথায় রেখে ঘুমচ্ছে।নিভ্র যখন ঘুমাচ্ছিলো সাফা বলেছে সে চলে যাবে কিন্তু গেলো না।তার পাশেই বসে ঘুমিয়ে পড়েছে।সাফার এলোমেলো হেজাবের ভাঁজ থেকে কিছু চুল এলোমেলো হয়ে বেরিয়ে এসেছে।নিভ্রকে ঘুমের ঔষুধ দেওয়া হয়েছিলো।তাই তার খবরই ছিলো না সাফা তার পাশে এভাবে ঘুমচ্ছে।সাফার চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ।চোখমুখ ফুলে লাল হয়ে আছে।ঠোঁটজোড়ায় ছোপ ছোপ লাল রক্তের মত জমে আছে মনে হচ্ছে। নিভ্র উঠে বসে।বেড থেকে নেমে সাফাকে কোলে নেয়।বেডে শুয়ে দেয়।সাফা গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে।নিভ্র হাঁসে। এখনো আগের মত ঘুম। এত গভীর কারো ঘুম হয়??সাফার হয়।সাফাকে শুয়ে নিভ্র পাশের টুল টেনে বসে।সাফার গায়ে চাদুর টেনে দেয়।গালে হাত দিয়ে সাফাকে দেখে সে।মনে হচ্ছে কত যুগ যুগ পড়ে দেখছে।যুগ যুগইত।নিভ্রর কাছে সাফা বিনা এক দিন একবছরে সমানই মনে হয়েছে।নিভ্র গভীর ভাবে সাফাকে পর্যবেক্ষণ করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।চুলগুলো যত্নের সাথে সরিয়ে দিচ্ছে।গালে নিজের হাতের পিঠ দিয়ে হালকা ঘোঁষে দিচ্ছে।সাফার নাড়াচাড়া, ঠোঁট কামড়ানো,আবার বাচ্চাদের মত ঠোঁট নাড়ানো দেখে নিভ্র হাঁসে। শব্দ বিহিন সে হাসি।কিছুক্ষণ পর পর আবার সাফার কপালে আলতো করে চুমু বসিয়ে দিচ্ছে নিভ্র।আবার তাকিয়ে থাকছে।এভাবে ঘন্টা পার করছে।
নার্স রুমে ডুকেই টাস্কি খায়।রোগী কে?? মেয়েটা না কি নিভ্রনীল এটাই তার মাথায় ডুকছে না।এটা কি হলো??নার্স এগিয়ে এসে বললো,
—” পেসেন্ট তো আপনি না??”
নিভ্র সাথে সাথে পিছনে ঘুড়ে হিশশশ্ করে চুপ করতে বলে।আস্তে করে বলে,
—” ধীরে কথা বলুন ও ঘুমাচ্ছে।”
নার্স অবাক হয়ে গেছে এই কান্ডে।বলে কি??তিনি আরো একটু এগিয়ে এসে আস্তে বলে,
—” স্যার বেডটা রোগীর জন্য মানে আপনার জন্য উনার জন্য না।”
নিভ্র সাফার কাছ থেকে উঠে আসতে আসতে বলে,
—” আমার যা আমার বউয়েও তাই।মেডিসিন দিতে এসেছেন নিশ্চুই?? দিয়ে যান। ”
নার্স নিজের অবাকতা নিয়ে একবার সাফাকে একবার নিভ্রকে দেখে দেখে মেডিসিন দিচ্ছে।আর মনে মনে বলে,
—” ডা.নিভ্রনীল কি পাগল টাগল নাকি??
আবার নিজেই হেঁসে বলে,
—” ভালোবাসার পাগল।”
________________________
সাফার ঘুম ভাঙ্গতেই নিজেকে বেডে আবিষ্কার করে।সে অবাক হয়ে ডান দিকে ঘুড়তেই নিভ্রকে দেখে।নিভ্র গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে।সাফা হুরমুড়িয়ে উঠতে নিলেই নিভ্র বলে,
—” স্বাভাবিক মানুষের ঘুম ভাঙ্গার কিছুসময় পরে ধীরে ধীরে উঠে বসতে হয়।এভাবে হুরমুড়িয়ে উঠলে মস্তিষ্কের সমস্যা হবে।কারন মানুষের সাথে তার মস্তিষ্কও নিস্তেজ থাকে।মস্তিষ্ক সচল হতে সময় লাগে।”
সাফার মনে হচ্ছে বহুদিন পরে কেউ তাকে ঘাসপুস টাইপের জ্ঞান দিচ্ছে।সাফা হেঁসে দেয়।নিভ্র তাকিয়ে থাকে সে হাসির দিকে।তারপর বলে,
—” হাসির কিছু বলেছি বলে আমার মনে হয় না।তাহলে তুমি হাসছো কেনো??”
সাফা উঠে বালিশে ঠেস দিয়ে বসে বলে,
—” আপনার জ্ঞানী জ্ঞানী কথা শুনে।ডাক্তার হয়েছেন তো কি হয়েছে সব সময় এমন জ্ঞান মারা লাগে??”
নিভ্র গাল থেকে হাত সরিয়ে বলে,
—” জ্ঞান না সিরিয়েস কথাই বলছি।বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে এই হসপিটালের বেডে বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।আর তুমি যে এভাবে বাচ্চাদের মত ঘুমাও আমার জানা ছিলো না।তুমি জানো ঘুমিয়ে থাকা কালিন তোমার ঠোঁটজোড়া কি সুন্দর নড়ে।”
সাফা মুহূর্তেই লজ্জা পায়।মাথা নামিয়ে হালকা হাঁসে। নিভ্র চোখ বাঁকিয়ে সে হাসি দেখে।সাফা মাথা তুলে সামনের ঘড়ি দেখে।দশটার বেশি বাজে।মানে সবাই তাকে এভাবে ঘুমাতে দেখে গেছে।সাফা উদ্বেগের সাথে নিভ্রকে বলে,
—” সবাই আমাকে ঘুমাতে দেখেছে না??সব আপনার জন্য??একটু ডেকে দিলে কি হতো??ছিই সবাই কি ভাবছে??রোগীর বেডে আমি আরাম করে ঘুমাচ্ছি।ছিই।”
নিভ্র শব্দ করে হু হা করে হেসে উঠে।সাফার দিকে আর একটু ঝুঁকে বলে,
—” সবাই না শুধু কয়েকজন নার্স দুই তিনজন ডাক্তার আর পরিবারের সবাই।”
সাফা রাগী চোখে তাকায়।নিভ্র উঠে সাফার দু’গালে হাত রেখে কাছে টেনে কপালে একটা চুমু খায়।সাফা হা করে তাকিয়ে থাকে নিভ্রর দিকে।লোকটা তাকে এত ভালোবাসে কেনো??এতটা ভালো না বাসলেও পারতো!!”
দরজায় টোকা পরে।দু’জনে হকচটিয়ে যায়।ছিটকে দুরে সরে যায় সাফা।নিভ্র হেঁসে বসতে বসতে পিছনে তাকায়।দরজার দিকে তাকিয়ে দু’জনেই আবাক।বিস্ময়ে হতভম্ভ।একজন আর একজনের মুখ চাওয়া চায়ি করে আবার দরজার দিকে তাকায়।দু’জনের চোখই কপালে।দু’জনেই একসাথে বলে উঠলো,
—” আপনি এখানে!!!!”
.
#চলবে________________

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *