সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 28

প্রতিযোগীতায় নাম লেখালো চুমপুয়িং।অংশগ্রহণ করে সেরা স্থান অধিকার করলো মাইশা।অডিশন থেকে শুরু করে শেষ এপিসোড পর্যন্ত মাইশার মুখে নেকাব বাঁধা ছিলো।কারও সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে চায় না সে।নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করে স্বামীর সামনে দাড়াবে।তার আগে কাউকে নিজের পরিচয় দেবে না সে।ধীরে ধীরে সব কিছুতে পারদর্শী হয়ে উঠলো সে।সকল প্রকার খাবার খাওয়াতে অভ্যস্ত হলো।চলা ফেরা পোশাক আশাক সব কিছুর পরিবর্তন করলো।এখন গড়গড় করে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে সে।ডিসুজাকেও বাংলায় পারদর্শী করে তুলেছে মাইশা।একটার পর একটা গানের অফার আসতে থাকলো।বছরের প্রত্যেকটা এওয়ার্ড ফাংশনে সেরা গায়িকার পুরষ্কারটাও তার হাতেই আসে।প্রতিবার মাইশা নিজেকে আড়াল করে রাখে।ডিসুজা মাইশার হয়ে এওয়ার্ড নেয়। কারণ ফাংশনে রুহান আসে। রুহানের সামনে আসতে চাই না এতো সহজে সে।যদিও মন চাই যাবে রুহানের কাছে চুমপুয়িং আটকে রাখে তাকে।প্রতিযোগীতা থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত মাইশাকে সবাই ম্যাশ বলেই যানে।চুমপুয়িং মাইশার ম্যাশ নামটা রেখেছিলো প্রতিযোগীয়।তারপর থেকে এই নামটাই মাইশার পরিচয় হয়ে দাড়ায়।
🍁
রুহান ঠিক মতো নিজের যত্ন নেয় না।খাওয়া দাওয়া ও করে না।সারাক্ষণ মাইশাকে নিয়ে ভাবে।মা, বোনের সাথে এখনো কথা বলে না।আগের মতো কোন কনসার্ট করে না।কিছু কিছু কনসার্টে রাজি হয় শুধু মাত্র সেনডির কথায়। সেনডি রুহানের হাতটা শক্ত ধরে রাখলে রুহান গান গাইতে পারে।মিডিয়া সেনডি আর রুহানকে নিয়ে অনেককিছু লেখে।দু’জনের ভবিষ্যৎ জুটি নিয়ে প্রশংসা করে।যেগুলো নিউজ পেপারের পাতায় পিক সহ বড় বড় অক্ষর হেডলাইনে ছাপা হয়।সেনডি প্রচন্ড ভালোবাসে রুহানকে।যার জন্য মায়ের সাথে দেশ ছেড়ে যাই নি সে।কিন্তু রুহান তার মাইশাকে এখনো খোঁজে। মাইশাও রুহানকে ভালোবেসে কিন্তু পারে না রুহানের কাছে আসতে।পেপারে এসব দেখে ভেঙে পরে সে।চুমপুয়িং মাইশাকে শক্ত হতে বলেন।মাইশা ধৈর্য ধরে রাখে।না পাক সে রুহানকে।তবে নিজেকে প্রমাণ করে দেখাতে তো হবে সে তার যোগ্য!
🍁
দেখতে দেখতে নয়টা মাস কেটে গেলো।আমার মাথায় ঘন কালো চুল অনেকটা লম্বা হয়েছে।উনি আমার চুলে মুখ না গুজে ঘুমুতে পারেন না।আজ খুব ইচ্ছে করছে আমার মনের কথাগুলো উনাকে বলি।মাঝরাতে উনাকে ঘুম থেকে তুলে উঠালাম।উনি উঠে বসে ঘুম ঘুম চোখে বললেন,
-এতো রাতে কি হলো তোমার?
-আপনি স্নিগ্ধা বিয়ে করে নিন আহান।স্নিগ্ধার সাথে অনেক অন্যায় হচ্ছে।আপনার সন্তানের মা ও।তাছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করা জায়েজ আছে।
একদমে কথাটা বলে থামতেই আমার গালে পরলো এক চড়।উনি কোন কথা বললেন না।বালিশটা উঠিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলেন।আমি উনাকে ডাকলাম কোনো কথা বললেন না আমার সাথে। উল্টো ঘুরে শুয়ে পরলেন উনি।সকালে রুম থেকে বেড়িয়ে দেখলাম সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে স্নিগ্ধার সাথে কথা বলছেন উনি।স্নিগ্ধার চোখে পানি।উনার হাত ধরে কিছু একটা বলছেন।আমাকে দেখে উনি সিঁড়ি থেকে নিচে নেমে গেলেন।আর স্নিগ্ধা উপরে এসে বললেন,
-আমার গর্ভের সন্তান আহানের না আরিশা।এটা আমার ভালোবাসার চিহ্ন। আমাকে নিয়ে তোমরা নিজেদের মধ্যে ঝামেলা বাঁধিও না।
আমি কিছু বলব তার আগেই হাত উঁচু করে আমাকে কোনো প্রশ্ন করতো বারণ করল স্নিগ্ধা।নিচে তাকিয়ে দেখি উনি নিচে দাড়িয়ে আছেন।তাকিয়ে দেখছে উপরে স্নিগ্ধা আর আমি কথা বলছি।স্নিগ্ধা মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে উনি আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকালেন।এক পলক তাকিয়ে চলে যেতে লাগলেন।আমি উনাকে ডেকে উঠলাম।উনি দাড়ালে নয় মাসের উঁচু পেটটা সামলে আস্তে করে সিঁড়ি থেকে নামলাম।উনার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম,
-এখনও রাগ করে আছেন আমার উপর?
আমি আর কিছু বলার আগেই উনি আমাকে টেনে নিজের সামনে আনলেন।রাগি দৃষ্টিতে আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে গেলেন বাড়ি থেকে।
সারা দিন শ্বাশুড়ি মা আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করলেন।কেন করলেন বুঝলাম না।সকালে স্নিগ্ধার কাছে শুনতে গিয়েছিলাম সত্যিটা কিন্তু স্নিগ্ধার রুমে তখন শ্বাশুড়ি মা থাকায় চলে আসলাম।
বিকালে মা এক ঝুড়ি কাঁচা আম নিয়ে আসে।স্নিগ্ধা প্রথমে মাকে দেখে বস্তির বলে নানান কথা শুনাচ্ছিলেন।আমাকে দেখে থেমে গেলেন।সুর পাল্টে অন্য কথা বললেন।আমি মাকে নিয়ে নিজের রুমে আসলাম।মা বলল,
-স্নিগ্ধা মেয়েটা সুবিধার না।অভিনেত্রী বুঝতেই পারছিস।না হলেও শতাধিক সিনেমা করেছে। তুই হয়তো সিনেমা দেখিস না তাই জানিস না।ওই মেয়ে অভিনয় দিয়ে যা ইচ্ছে করতে পারে।একটু আগে দেখলি না আমাকে কিভাবে বস্তির বলে অপমান করছিলো? তোকে দেখেই রূপ বদল।সামলে থাকিস মা।বেবিটার খেয়ার রাখিস।আহান তো সবসময় বাড়িতে থাকে না।তোর শ্বাশুড়ি মাও তোর কাছে আসে না।তোর বাবা দেশে ফিরেছে এখন আমার বাড়িতে থাকা লাগবে।তোকে চেয়েছিলাম এই কয়টাদিন আমার কাছেই রাখবো আহান চাইলো না।সাবধানে থাকিস মা।নিজেরও যত্ন নিস।
কথাগুলো বলে চলে গেলেন মা।আমিও ভেবে দেখলাম এতোগুলো মাস ধরে স্নিগ্ধা বলেছে ওর সন্তানের বাবা উনি।তাহলে আজ কেন বললেন ওর সন্তানের বাবা অন্য কেউ? আর যদি স্নিগ্ধার গর্ভে উনার সন্তান না হবে স্নিগ্ধা সেদিন উনার সাথে নিজের ওসব পিক কেন মিডিয়ায় ছাড়বে? অন্যের সন্তানের দায় উনার উপর কেন চাপাবে? নাহ উনার সাথে কথা বলতে হবে।তার আগে উনার রাগ ভাঙাতে হবে আমার।
চলবে,,,,