সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 27

উনি আমার হাতদুটো শক্ত করে ধরে মাথাটা ঝাঁকিয়ে বললেন,
-হ্যাঁ ভুলে যাবো সব।আর কখনো তোমার চোখে পানি আসতে দিবো না আরু।এখন থেকে সবসময় তোমার খেয়াল রাখবো।আমাদের সন্তানের কথা ভেবে সব ভুলতে হবে আমাদের।নতুন করে জীবনটা শুরু করবো আমরা।তুমি আমায় কখনো ছেড়ে যাবে না তো কথা দাও?
আমি উনার কপালে নিজের কপালটা ঠেকালাম। ডুকরে কেঁদে উঠে বললাম,
-কোথায় যাবো আমি আপনাকে ছেড়ে? আর কখনো এমনটা বলবেন তো খবর আছে আপনার।
এমন সময় উনার ফোনটা বেজে ওঠল।উনি রিসিভ করে নিশ্চুপ হয়ে থাকলেন।কোনো কথা বললেন না।আমি উনার কাঁধে হাত রাখতেই কেঁপে উঠলেন উনি।আমি উনার কাছে নরম গলায় জানতে চাইলাম,
-কি হয়েছে আপনার? ওভাবে কেঁপে উঠলেন কেন?
উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে ছোট্ট বাচ্চাদের মতোন কান্না জুড়ে দিলেন। আমি উনার পিঠে হাত রাখলাম।উনাকে আরও শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললাম,
-কি হয়েছে?
উনি আমাকে টেনে নিজের মুখের সামনে আনলেন।আমার গালে, মুখে পাগলের মতোন ভালোবাসার পরস ছুঁইয়ে দিয়ে বললেন,
-সত্যি আমাকে ছেড়ে কখনো যাবে না তো তুমি?
আমি মাথা ঝাকিয়ে বললাম না।উনি চোখের পানি মুছে আমার মাথায় হাত রাখতে চেয়েও হাত সরিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন কেবিন থেকে।
🍁
বেডের উপরে পা এলিয়ে দিয়ে বসে আছি আমি।মা, শ্বাশুড়ি মা পাশের সোফায় বসে গল্প গুজব করছেন।আমি বারবার মোবাইল স্কীনের দিকে তাকিয়ে সময় দেখছি।ঘড়ির কাটায় রাত তখন –১২ঃ৩৫ টা।এই সময়টা উনি খুব শান্ত মেজাজে কেবিনের মধ্যে ঢুকলেন।আনমনা হয়ে হাটতে গিয়ে কার্পেটের সাথে পায়ের ঘষা লেগে ফ্লোরে পরে গেলেন উনি।ভাবলেশহীন ভাবে ওভাবেই পরে আছেন।আমি হাতের স্যালাইনটা খুলে ছুটে গেলাম উনার কাছে।উনাকে উঠিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম নিজের বুকে।বাইরে থেকে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ আসছে।কেবিনের ভেতর থেকে দরজা দেওয়া। উনার মাথাটা উঠিয়ে দেখলাম কপালের এক পাশটাতে কেটে গেছে।আমি ভাবলাম পরে গিয়ে হয়তো কেটেছে।কিন্তু উনি আমাকে সরিয়ে দিয়ে উঠে দাড়িয়ে দেয়ালের সাথে নিজের মাথায় আঘাত করতে লাগলেন অনবরত।আমি উনাকে থামানোর চেস্টা করলাম পারলাম না।উনি রক্তাক্ত কপালটা নিয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে বললেন,
-আমি পাপি! আমাকে শাস্তি দাও আরু।
আমার হাত নিয়ে নিজের গালে চড় মারতে লাগলেন উনি।শ্বাশুড়ি মা আর আমার মা এসে উনাকে শান্ত করতে চাইলেন।আমি একদম স্তব্ধ হয়ে আছি উনার পাগলামি দেখে।কেউ যখন উনাকে থামাতে পারলেন না।আমি উনাকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলাম।উনাকে ঝাঁকিয়ে কেঁদে উঠে বললাম,
-কেন এমন করছেন আপনি? আমার খুব কস্ট হচ্ছে আহান।আমি আপনার শরীরে এক বিন্দু রক্তও দেখতে পারছি না।আপনার কি হয়েছে আমাকে বলুন? বলুন না?
উনি চুপ হয়ে রইলেন।আমার সামনে সত্যিটা বলার সাহস উনি পেলেন না।দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলেন কেবিন থেকে। কেবিনের বাইরে থেকে দরজাটা লক করে দিয়েছেন উনি।আমি কেবিনের দরজাটা ভেতর থেকে টাকাচ্ছি।খোলার চেস্টা করছি।উনাকে ডেকে চলেছি।উনি শুনলেন না।বাইরে থেকে একসাথে অনেকগুলোর কন্ঠ শুনতে পেলাম।একে একে সকলে বললেন উনাকে, বলুন আহান অভিনেত্রী স্নিগ্ধার গর্ভে কি আপনার সন্তান? আজ সকালে অভিনেত্রী স্নিগ্ধা আপনার আর তার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু পিক যে সোস্যাল মিডিয়াতে আপলোড করেছে ওগুলো নিয়ে আপনার মতামত কি?
পাশ থেকে একটা মেয়ের কন্ঠ ভেসে আসলো।মেয়েটা বললেন,
-কি করছেন কি আপনারা? যেই পিক আপনারা দেখেছেন ওগুলো সব সত্যি। আমরা বিবাহিত তাই আমাদের মধ্যে এসব হতেই পারে।আপনারা এখন জান এখান থেকে।
মিডিয়া আর কিছু বলার আগে স্নিগ্ধার গার্ডরা তাদের ঠেলে হসপিটাল থেকে বের করে দেয়। সবাই চলে গেলে স্নিগ্ধা উনাকে বললেন,
-আমি তোমাকে চাই না আহান।আমি শুধু আমার সন্তানের পিতৃ পরিচয় চায়। কেন আমার সাথে কথা বলছো না তুমি? আমি শুধু এসব করছি আমাদের সন্তানের কথা ভেবে।তুমি আমায় তোমার জীবনে না ঠাই দাও।আমাদের সন্তানের কথা ভেবে অন্তত তোমার ঘড়ে একটু ঠাই দেও।ওতো তোমারই রক্ত।দেবে আহান এইটুকু নিষ্পাপ শিশুটার কথা ভেবে?
উনি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললেন।কেবিনের দরজাটা খুলে দিলেন। স্নিগ্ধা কেবিনের মধ্যে ঢুকে সোজা গিয়ে আমার শ্বাশুড়ি মায়ের সামনে দাড়ালেন।তার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলেন।তাকে মা বলে ডাকলেন।শ্বাশুড়ি মা কড়া গলায় বললেন,
-কে তুমি? আমাকে কেন মা বলছো?
-আমার তো কেউ নেই। তাই আপনাকে মা বলছি।আপনার বংশের প্রদীপ আমার গর্ভে মা।
কথাটা শুনতেই শ্বাশুড়ি মা স্নিগ্ধাকে দূরে ঠেলে দিলেন।স্নিগ্ধা কেঁদে উঠে বললেন,
-আপনার ছেলেকে আরিশার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন।ও কখনো আরিশার থেকে ভালোবাসা পাই নি।শুধু ভালোবেসেছে। আরিশা যেদিন আহানের কাছে ডিভোর্স চায় আহান আসে আমার কাছে।ওই দিন মদ খেয়ে আহান জোড় করে আমাকে..
আর কিছু না বলে স্নিগ্ধা কেঁদে ওঠে।শ্বাশুড়ি মা স্নিগ্ধার মাথায় হাত রাখেন।আমি স্নিগ্ধার কথা শুনে দু’পা পিছিয়ে যায়। উনি আমার কাছে এগিয়ে আসেন আমি উনাকে বাঁধা দিয়ে কেবিনের মধ্যে যা যা পাই ছুড়তে থাকি।ক্লান্ত আমি নিচে বসে পরে চিৎকার করে কেঁদে উঠে বললাম,
-ঠকিয়েছেন আমাকে আপনি!
উনি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।আমি উনার শার্টের কলারটা হাতের আঙুলে পেঁচিয়ে টেনে ধরে বললাম,
-কেন করেছেন এমনটা? আপনি না শুধু আমার? কিভাবে অন্য কাউকে…
শ্বাশুড়ি মা এসে আমার হাত উনার শার্টের কলার থেকে সরিয়ে দিলেন।উনাকে উঠিয়ে দাড় করিয়ে বললেন,
-তোমার জন্য আজ আমার ছেলে এতোগুলো বছর অপেক্ষা করেছে।কাউকে বিয়ে করে নি।সেদিন ওর হার্ট অ্যাটাকের কারণটাও তাহলে তুমি ছিলে বৌমা।ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলে আমার ছেলেকে? ওর ভালোবাসার এক বিন্দুও কি দিতে পেরেছো তুমি? হসপিটালের তোমার চিন্তায় এই কয়দিন পানি ছাড়া মুখে কিছু দেই নি ও সেই খেয়াল রেখেছো? অপারেশনে তোমার মাথায় চুল নেই বলে নিজের মাথার চুল কেটে ফেলেছে যেন তুমি নিজেকে ছোট করে না দেখতে পারো তাই।আবার বলছো তোমাকে ঠকিয়েছে আমার আহান? তোমার ভুলের জন্য আজ এমন হয়েছে।কখনো মদ খাই নি আমার আহান।তোমার দেওয়া যন্ত্রণা ওকে বাধ্য করেছে মদ খেতে।
-বলুন মা।যা খুশি বলুন কিন্তু আমি কিছুতেই উনার ভাগ কাউকে দেবো না।কিছুতেই না।উনি আমার স্বামী।শুধু আমার।
উনার কাছে এগিয়ে এসে বললাম,
-বলুন না আর কখনো ওই মেয়েটার কাছে জাবেন না আপনি?
উনি আমার গালে হাত রেখে মাথাটা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বললেন।স্নিগ্ধা চুপ হয়ে রইলেন।আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-দেখেছো উনি আমাকে ভালোবাসে।
শ্বাশুড়ি মা আমাকে টেনে ধরে বললেন,
-এভাবে ঠ্যাস দিয়ে কথা বলার কি আছে? মেয়েটা এমনিতে কস্টে আছে তার উপর এভাবে কেন কথা বলছো ওর সাথে?
আমি স্নিগ্ধার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে স্নিগ্ধাকে টেনে ধরে বললাম,
-আমাকে ক্ষমা করবেন বোন।কিন্তু আমি পারবো না উনাকে ছাড়া বাঁচতে।
স্নিগ্ধা আমার হাত শক্ত করে ধরে বললেন,
-তোমার আহান তোমারই থাকবে।আমি শুধু সন্তানের পিতৃ পরিচয় চায়।
🍁
সেদিন চলে এলেন স্নিগ্ধা এবাড়িতে। আমি হসপিটাল থেকে বাড়িতে আসলে দেখি পুরো বাড়িটাই বদলে গেছে। স্নিগ্ধার পছন্দের প্রেইন্ট করা হয়েছে গোটা বাড়িতে।আসবাবপত্রের অদলবদলও করা হয়েছে।স্নিগ্ধার পছন্দের সব কিছু রান্না হয়।উনি আমার খেয়াল রাখলেও শ্বাশুড়ি মা স্নিগ্ধার যত্ন নেয়। স্নিগ্ধাকে নিজের হাতে খাইয়ে পর্যন্ত দেয়।
🍁
উঁচু হিল পরে হাটার অভ্যাস নেয় মাইশার।তবুও চেস্টা করছে সে।চুমপুয়িং অনেক ধরণে হিল এনে পরিয়ে হাঁটতে শিখাচ্ছেন মাইশাকে।বিছানার উপর এক ডজন ড্রেস পরে আছে।চুমপুয়িং কে বলে দিয়েছে সে মর্ডাণ ড্রেস কখনোই পরবে না।মাইশা জানে রুহান আর যায় হোক এসব ড্রেস কখনোই পছন্দ করতেন না।বিকালের দিকে মাইশাকে ট্রেনিং দিতে চারটা মেয়ে আসে।একজন মাইশার হেয়ার স্ট্রাইলের দায়িত্ব নেয়, একজন ড্রেসের, একজন লেখাপড়ার আর অন্য জন মাইশাকে গান শেখানোর দায়িত্ব নেয়। চুমপুয়িং অনেক বড় গানের প্রতিযোগীতায় নাম লিখিয়ে আসে মাইশার।মাইশা আপন মনে গান গায়।ওর গানে কস্ট বেশি থাকে।যে কেউ শুনলেই চোখে পানি চলে আসবে।
চলবে,,,