সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 23

দু’দিন ধরে উনি অনেক ছোটাছুটি করেছেন।বস্তির এই ঘড়টাকে উনি রাজপ্রাসাদ করে তুলেছেন।আমার খাওয়া, দাওয়া সময় মতোন হচ্ছে কিনা।সেবা যত্ন ঠিক মতোন হচ্ছে কিনা সব দিকে নজর রেখেছেন উনি।সার্ভেন্টদের সরিয়ে দিয়ে উনিই সবকিছু করেন নিজ হাতে।সুটিং শেষ হলে ক্লান্ত শরীরে ফিরলেন উনি আজ।গায়ের শার্টটা পর্যন্ত চেঞ্জ করেন নি।শুয়ে পরেছেন নিষ্পাপ শিশুদের মতোন ঘাপটি মেরে।লোডশেডিং এ উনার শরীরের ঘামে পড়নের শার্টটা পর্যন্ত ভিজে যাচ্ছে।আমি হাত পাখার বাতাস করছি উনাকে পাশে বসে।হঠাৎ আমার হাত ধরে হেচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে এলেন উনি।আমাকে বললেন,
-আরু কাল চলে যাচ্ছি আমি।
-চলে যাচ্ছেন মানে?
-শুটিং এর জন্য বাইরের দেশে যাওয়ার কথা ছিলো না? কন্টাক পেপারে সাইন করা আছে।তখন তো যাওয়া হলো না।এইজন্য..
আমি উনার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে দূরে সরে এসে বসলাম।কিছু না বলেই চলে যেতে লাগলাম উনি আমার শাড়ির আঁচলটা পিছনের থেকে টেনে ধরলেন।আমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে বসালেন।আমার কাঁধে থুতনিটা রেখে বললেন,
-রাগ করছো? তুমি চাইলে তোমাকেও নিয়ে যেতে পারি। কিন্তু তোমার মায়ের মনের অবস্থা এখন ভালো না।সারাদিন মাইশাকে নিয়ে ভাবে।এই সময় তোমার মায়ের সাথে থাকা দরকার।
আমি উনার হাতটা উঠিয়ে নিজের পেটে রাখলাম।ঘাড় ঘুরিয়ে উনার চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-আর আমাদের সন্তানটা? ওর কথা ভাবছেন না আপনি? উনার গালে দু’হাত রেখে টলমল চোখে বললাম আমি, এসময় আমাদের দুজনের আপনাকে খুব প্রয়োজন আহান।যাওয়াটা কি খুব জরুরি? উনার কাধে মাথা ঠেকিয়ে বললাম, আমাকে ছেড়ে যাবেন না আহান।আমার খুব ভয় করে।আমি যদি মারা যায় আর আপনি দূরে থাকেন।আমাকে দেখার সময়টুকুও না পান?
কথাটা বলাতে আমার গালে পরলো এক চড়! আমি নিজের গালে হাত দিয়ে মুখ উঠিয়ে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।চোখ দুটো উনার রাগে গজগজ করছে।উনি আমার দু’বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বললেন,
-মরবার খুব সখ তোর তাই না? দু’দিন ধরে এসব ফালতু কথা শোনাচ্ছিস।কিচ্ছু বলি নি।কিন্তু আর না।আদর দিয়ে অনেক মাথায় তুলে ফেলেছি তোকে।যার জন্য এতো সাহস পেয়েছিস। একটা কথা শুনে রাখ, এসব ন্যাকামো কথাবার্তা নিয়ে আমার কাছে আর আসলে আমার আগের রূপ আবার দেখবি।
আমাকে ধাক্কা দিয়ে দরজায় শব্দ করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন উনি।ভেবেছিলাম উনি রাগ কমলে চলে আসবে কিন্তু আসে নি।সারারাত উনার জন্য রুমের দরজাটা খুলে রেখে অপেক্ষা করেছি।সকালে একজন সার্ভেন্ট এসে বলল, উনি নাকি রাতেই বাড়িতে চলে গেছেন।আর সন্ধ্যার ফ্লাইটে দেশ ছাড়বেন।ফিরবে তিনমাস পর।কথাটা শোনা মাত্র আমি উনাকে অনেকবার ফোন দিলাম।উনার ফোনটা বন্ধ।শ্বাশুড়ি মাকে ফোন দিলাম।সে বলল উনি ওয়াশরুমে আছে।আমি আর দেরি না করে ছুটে চলে এলাম বাড়িতে। রুমের মধ্যে বসে আছি আর অঝোরে কেঁদে চলেছি।উনি শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলেন।হঠাৎই রুমের মধ্যে আমাকে দেখে চমকে ওঠলেন উনি।কিন্তু কথা বললেন না।মুখটা ভারী করে আয়নার সামনে দাড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল ঝারছেন নিজের।আমি উঠে গিয়ে পিছনের থেকে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।উনাকে শক্ত করে ধরে কাঁদতে লাগলাম।কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
-এতো রাগ কেন আপনার? জানেন কাল সারা রাত আমি ঘুমাই নি? আপনার জন্য অপেক্ষা করেছি।
সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজে আসবেন।
উনি আমার হাত ছাড়িয়ে নিজেকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেলেন।মুহূর্তে আমার মাথাটা ঘুরে উঠলো। উনার দিকে তাকালাম মাথার ভেতরটা আমার ব্যাথায় চিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে।দু চোখেও ঝাপসা দেখছি সবকিছু।উনি উল্টো দিকে মুখ করে কিছু এটা বললেন যা অস্পষ্ট শুনলাম।তারপর আর দু’পায়ের ভর সামলাতে পারলাম না আমি।ঢলে পরলাম ফ্লোরে।মাথাটা দু’হাত দিয়ে চেপে ধরে ডাকলাম উনাকে।আস্তে করে উনার নামটা মুখে নিতে মাথাটা আমার ফ্লোরে পরে বারি খেয়ে শব্দ হয়ে উঠলো।
🍁
রুহান সারাদিন শুধু মাইশার কথা ভেবে চলেছে।পাগলের মতোন খুঁজে চলেছে মাইশাকে।নিজের যত্ন নেওয়া হয় না।ঠিক মতোন খাওয়া হয় না।সারাদিন শুধু মাইশার কথা ভেবে যায়। মা, বোনের সাথে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছে।তাদেরকে দেখলে অপরাধী মনে হয় রুহানের এখন।রুমের মধ্যে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে সারাদিন রুহান।চোখটা বন্ধ করে গিটার হাতে রক গান গায়।রুহানের চোখের সামনে শুধু একটাই মুখ ভেসে ওঠে।যে মুখের পাগল করা হাসি, কথা বলা সবকিছু রুহানকে প্রতিনিয়ত কাঁদায়।
-বড্ড ভালোবাসিরে তোকে।জানি না তোর মধ্যে কি দেখেছি আমি।তোর মতোন সহজ সরল মেয়েকে কিভাবে ভালোবেসেছি।কেন এতো বোকা তুই? আমাকে একটু সময় দিলি না? কিছু না বুঝেই চলে গেলি আমাকে ছেড়ে।আমি এখন কিভাবে বাঁচবো তোকে ছাড়া? কিভাবে? কেন এমন করলি আমার সাথে বল? উত্তর দে?
মাইশার ছবির ফ্রেমে হাত বুলিয়ে ফ্রেমটা হালকা ঝাকিয়ে বুকে জড়িয়ে কান্না জড়িত কন্ঠস্বরে কথাগুলো বলছে রুহান।
🍁
খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে মেয়েটা।আজ তার সব পছন্দের খাবার সামনে দেওয়া হয়েছে।ডিসুজার এসিস্টেন্ট নিজের হাতে তাকে খাবার বেরে দিচ্ছে।মেয়েটা ভ্রু কুচকে এটা ওটা হাতের ইশারায় দেখাচ্ছে আর সে সামনে এগিয়ে দিচ্ছে।কারণ মেয়েটা তাকে শর্ত দিয়েছে বাংলা শব্দের সঠিক উচ্চারণ শেখাবে যদি সে ঠিক ভাবে বাঙালির ঐতিহ্য শিখতে পারে। যেমন নিজের ঘড়ের কাজ নিজে করা।
দূর থেকে নিউজ পেপারে মুখ গুজে আড় চোখে মেয়েটার কান্ড দেখছে ডিসুজা।মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে সে।কেন জানি ভালো লাগছে মেয়েটার কথা শুনতে। যদিও সেই কথার বাংলা অর্থ ডিসুজার জানা নেই। তবুও অপূর্ব দেখতে লাগছে মেয়েটার কথা বলার ভঙ্গি।মেয়েটাকে বাঁকা চোখে তার দিকে তাকাতে দেখলে পেপার টেনে নিজের মুখটা ঢাকলেন ডিসুজা। মেয়েটা তার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো এবার। উঠে দাড়িয়ে পরলো বসা ছেড়ে। যা দেখে উত্তেজনায় ডিসুজার মনের মধ্যে ঘন্টি বেজে ওঠেছে।হাত পা কাঁপছে থর থর।ভাবছে, মেয়েটা তো তার দিকেই এগিয়ে আসছে এখন কি হবে? ডিসুজার কাছে এসে দাড়িয়ে হাত থেকে পেপারটা একটানে কেড়ে নিলো মেয়েটা।ডিসুজা কেবলার মতোন মুখ করে মেয়েটার দিকে তাকায়। মেয়েটা হেসে উঠে বলে,
-পেপারের এই ছবিগুলো উল্টো দেখা যাচ্ছে। আপনি মনে হয় পেপারটা উল্টো ধরেছেন।নিন ঠিক করে নিন।
কথাটা বলে সোজা করে পেপারটা এগিয়ে দিলো ডিসুজার সামনে মেয়েটা।ডিসুজা মেয়েটার কথার বাংলা কোনো অর্থ বুঝে উঠতে পারলো না।তারাহুরো করে পেপারটা হাতে নিতে নিতে বললো,
-হবে হবে হবে!
ডিসুজার মুখে বাংলা কথা শুনে মেয়েটা অবাক।মুখে হাত দিয়ে চেয়ার টেনে ডিসুজার পাশে বসে পরল। অনেক আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলো,
-আপনি বাংলা বলতে পারেন? কিন্তু হবে হবে হবে এটা কেমন কথা?
ডিসুজা ঠোঁট কুড়িয়ে অনেক সময় টেনে বলল,
-হয় হুমমমমম না?
মেয়েটা ভ্রু কুচকে ডিসুজার দিকে তাকালো।ডিসুজার চশমাটা টেনে চোখ থেকে খুলে ফেললো।ডিসুজার চোখের দিকে চোখদুটো ছোট করে তাকিয়ে বলল,
-আপনাকেও শেখাবো বাংলা ভাষা।এক সাথে থাকছি একজন আরেকজনের মুখের ভাষা বুঝছি না কেমন একটা হয়ে গেলো না? তবে আপনার শর্ত হলো আপনি আমাকে ইংজেরি শেখাবেন। আর আমি বাংলা। বেশি কঠিন হবে না।আপনি সারাদিন আমার সাথে ইংজেরিতে কথা বলবেন আর আমি সারাদিন আপনাকে বাংলায় কথা শুনাবো।একটা সময় পর দেখবেন আমার ভাষা আপনি।আর আপনার ভাষা আমি শিখে গেছি।
চলবে,,,,,