সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 24
মাথাটা এক হাতে চেপে ধরে আস্তে করে চোখ খুললাম আমি।উনি আমার পাশে অন্য হাতটি ধরে বসে আছেন।উনার চোখ দুটো ছলছল করছে।আমি হাতটা টেনে নিয়ে মাথাটা দু’হাতে ভালো করে চেপে ধরলাম।আর উঠে বসার চেস্টা করলাম।উনি আমাকে ধরে উঠিয়ে বসালেন।খেয়াল করলাম আমার পড়নে হসপিটালের প্রেশেন্টদের পোশাক। কপালে তীব্র ব্যাথা হতে লাগলো।হাত দিয়ে দেখলাম কপালটাই ব্যান্ডেজ করা।মনে পরলো আমার তখন পরে গিয়ে হয়তো কপালটা কেটে গিয়েছিলো।এই মুহূর্তে উনার সাথে কথা বলব সেই সাহসটা আমার হচ্ছে না।তবুও ভয়ে ভয়ে কম্পিত ঠোঁটে আস্তে করে বললাম,
-আপনি কি আমার উপরে এখনো রেগে আছেন আহান?
মুহূর্তে এক টানে আমাকে নিজের বাহু ডোরে আবদ্ধ করে নিলেন উনি।আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ধুকড়ে কেঁদে উঠলেন।আমি উনার পিঠে আলতো হাত রাখলাম।উনার কাছে জানতে চাইলাম,
-কি হলো আহান কাঁদছেন কেন আপনি? আপনার দেরি হয়ে যাবে তো যাবেন না? আমি ঠিক ভালো থাকবো।আর আমাদের সন্তানেরও যত্ন নিবো।
উনি আমাকে টেনে নিজের মুখের সামনে আনলেন।একটা ঢোক গিলে ভাঙা গলায় কান্না জড়িত কন্ঠস্বরে বললেন,
-চুপপপ! আর একটাও কথা বলবে না। কোথাও যাবো না আমি।
-যাবেন না মানে? আমার জন্য? আমি একদম ভালো থাকবো বিশ্বাস করুন।আমাদের সন্তানেরও খুব যত্ন নিবো।তিনটা মাসেরই তো ব্যাপার।
উনি আমাকে কিছু বলতে যাবেন এমন সময়ে একজন নার্স এসে বললেন ডাক্তার উনাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।উনি চোখ মুছে উঠে ডাক্তারের চেম্বারের দিকে যেতে লাগলেন।আমি উনার পিছু নিলাম।আমারও তো জানা দরকার! কি হয়েছে আমার?
🍁
ডাক্তেরের চেম্বারের সামনে নিজেকে আড়াল করে দাড়িয়ে আছি আমি।উনি বসে আছেন ডাক্তারের সামনের চেয়ারটাতে।ডাক্তার উনার সামনে আমার রিপোর্টের ফাইলটা রেখে বললেন,
-যা ভেবেছিলাম তাই!
-কি বলছেন ডাক্তার?
-ঠিকই বলছি।আপনার স্ত্রী আর বাঁচবে না।
কথাটা শুনে মাথাটা নিচু করে স্তব্ধ হয়ে আছেন উনি।
আমি সঙ্গে সঙ্গে চেম্বারের মধ্যে ঢুকে পরলাম।উনার কাঁধে হাত রাখলে উনি মাথা উঠিয়ে ঘুরে তাকিয়ে আমাকে দেখতে পেলেন। নিজেকে সংযত রেখে চোখের পানি আড়াল করতে চাইলেন।রুমালে চোখ মুখ মুছে উঠে দাড়ালেন উনি।আমার দুই কাঁধে হাত রেখে আস্তে করে বললেন,
-একি তুমি এখানে কি করছো?
আমি একটা শুকনো হাসি দিয়ে আমার কাঁধ থেকে উনার হাত সরিয়ে দিলাম।উনার কাছে জানতে চাইলাম,
-আমার কি হয়েছে আহান?
উনি নিরব।
-আমি আর বাঁচবো না তাই না?
আমার মুখে কথাটা শুনে উনি কেঁপে উঠলেন।আমাকে ঝাকিয়ে বললেন,
-কে বলেছে তুমি বাঁচবে না? কিচ্ছু হয় নি তোমার।
আমি উনার কলারটা টেনে ধরে বললাম,
-মিথ্যা শান্তনা কেন দিচ্ছেন? একটু আগে ডাক্তার আন্টি বললো তো।আমি নিজের কানে শুনেছি কথাটা।আমি আর বাঁচবো না আহান।উনাকে ছেড়ে ডাক্তার আন্টির দিকে তাকিয়ে বললাম, আচ্ছা ডাক্তার আন্টি আমি আর কতোদিন বাঁচবো? মানে আমার ভেতরে যে আরেকটা প্রাণ বেড়ে উঠছে।তাকে তো আসতে হবে।আমি পারবো ততোদিন বাঁচতে?
উনি আমাকে টেনে ধরে রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে খিটখিটে মেজাজে বললেন,
-পাগল হয়ে গেছো? কিসব উল্টো পাল্টা বলছো? কিচ্ছু হয় নি তোমার। একদম ভালো হয়ে যাবে।
-ও তাই? ভালো হয়ে যাবো আমি? ডাক্তার আন্টি আপনাকে বললো আপনার স্ত্রীর আর বাঁচবে না।আমি স্পষ্ট শুনেছি কথাটা।মিথ্যা শুনেছি?
🍁
লন্ডন থেকে রুহানের ফুপ্পি আর তার মেয়ে সেনডি এসেছেন।রুহানের বাবা মারা যাবার পর তারা আর এদেশে আসেন নি।তবে আজ রুহানের জন্য এসেছেন।রুহানের মা বলেছে তাদের আসতে।রুহানের সাথে বিয়ে দেবে সেনডির। সারা রাত দিন চিন্তায় থাকেন ছেলেকে নিয়ে রুহানের মা।ছেলে ঠিক মতো খাই না।ঘুমায় না।নিজের যত্ন পর্যন্ত নেয় না।এমনকি নিজের মা বোনের সাথেও কথা বলে না।মাইশা যে বেঁচে আছে না মরে গেছে সেটাও তার যানা নেয়। ছেলেকে একটু হাসিখুশি জীবন দিতে তার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া।
অন্ধকার রুমে জানালার কোণ ঘেঁষে আসা আবছা আলোয় মাইশার ছবিটার দিকে তাকিয়ে গিটার বাজাচ্ছে রুহান।গিটারের তার ছিঁড়ে হাতের আঙুল কেটে রক্ত গড়িয়ে পরছে সেদিকে খেয়াল নেই তার।আচমকা কারও স্পর্শ নিজের হাতে পরতে গিটারটা ছেড়ে দিয়ে তাকে হেচকা টানে নিজের বুকে টেনে নিলো রুহান।কেন যেন মনে হলো এটাই তার সহজ সরল বউটা।আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলে উঠলো তাকে,
-যাবে না! যাবে না আর কখনো আমায় ছেড়ে বলো না? বলো সবসময় আমার সাথে থাকবে? বল?
অপর পাশের মানুষটা আস্তে করে নিজেকে রুহানের বুক থেকে সরিয়ে নিয়ে আসলো।রুমের আলো জ্বলে উঠলে রুহান চোখ তুলে মুখটা দেখলো।এটা তার মাইশা নয় অন্য কেউ।ভ্রু কুচকে ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে রুহানের দিকে তাকালো সে।পাশ থেকে এগিয়ে এসে রিমি রুহানকে বলল,
-সেনডি এসেছে রুমের মধ্যে এতো অন্ধকার তাই আলোটা জ্বালিয়ে দিলাম ভাইয়া।
রিমিকে দেখে রুহানের রাগটা চরম আকার ধারণ করলো।এসির রিমোর্টা বিছানার উপর থেকে তুলে ডেসিন টেবিলের কাচের উপরে ছুড়ে মারলো।শব্দ হয়ে কাচ ভেঙে টুকরোগুলো ফ্লোরে এসে পরলো।উত্তেজিত হয়ে উঠলো রুহান।কিছু ভাঙার আওয়াজ পেতে ছুটে এলো রুহানের মা আর ফুপ্পি।রুহান তার মা বোনকে দেখতে পারছে না দু’চোখে।চিৎকার করে বলছে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে।সেনডির চোখ রুহানের হাতের দিকে পরলে দেখতে পাই হাতের ক্ষত।রুহানকে শান্ত হতে বলে সেনডি বিছানায় বসালো।হাতে ওষুধ লাগিয়ে দিলো।আর সেটা দেখে দূর থেকে রুহানের মা একটা তৃপ্তির নিশ্বাস ফেললো।চোখে পানি মুখে হাসি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে সে।সবাই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলে সেনডি রুহানকে বলল,
-কি হয়েছে রুহান? তুমি তো আগে এমনটা ছিলে না।তাহলে এতো কি কস্ট তোমার মধ্যে? যার জন্য নিজের মা বোনকে দেখতে পারছো না?
-সেনডি তুমি কিছুই জানো না।ওরা! ওরা আমার মাইশাকে এবাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে বাধ্য করেছে।
-কি বলছো রুহান? আমি যতটুকু জানি! মামি মণির কাছে শুনেছি! তারা সামান্য রেগে ছিলো তোমাদের বিয়েটা নিয়ে। তাই বলে তোমার বউ চলে যাবে? এতে রিমি, মামি মণি এদের কি দোষ? বিয়ে করে যে মেয়ে এগুলো শুনতে না পারে।ধৈর্য ধরতে পারে না তার সাথে সংসার করা যায়? তুমি শুধু শুধু এমন একটা মেয়ের জন্য আপনজনদের সাথে খারাপ আচারণ করছো। না জানি সেই মেয়ে কোথায় কার সাথে ভেগেছে!
কথাটা শেষ হতেই সেনডির গালে পরলো এক চড়! সেনডি অসহায় দৃষ্টিতে গালে হাত রেখে রুহানের দিকে তাকালো।রুহান সেনডির দিকে রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে বলল,
সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজে আসবেন।
-অন্য মেয়েদের মতোন না আমার বউটা।তুমি চেনো না তাই এসব কথা বললে।তোমার মুখে আর কিছু আমি শুনতে চাই না। বেড়িয়ে যাও আমার রুম থেকে।
যাও বলে একটা ধমক দিয়ে উঠলো সেনডিকে রুহান।সেনডি উঠে দাড়িয়ে রুমের দরজা পর্যন্ত গিয়ে কিছু একটা ভেবে আবার ফিরে আসলো।রুহানের পাশে বসে হেসে উঠে বলল,
-যাবো না আমি কোথাও।
রুহান নিশ্চুপ হয়ে আছে।কোনো কথায় বলছে না।সেনডি এবার কান ধরে রুহানের সামনে এসে হাটু গেড়ে বসে পরলো।চোখ দুটো ছোট করে ঠোঁট ভাজ করে আস্তে করে বলল,
-ছরি। আর বলবো না কখনো। ভুল হয়ে গেছে আমার।
রুহান হেসে উঠলো সেনডির দিকে তাকিয়ে। যেই হাসির শব্দ বাইরে ভেসে আসলো। রুহানের মা শুনতে পেয়ে স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেললো।ভাবলো সেনডির সাথে তার ছেলে সত্যি খুব ভালো থাকবে।
🍁
ডিসুজার এসিস্টেন্ট চুমপুয়িং। আজ তাকে মেয়েটা শাড়ি পড়া শেখাচ্ছে।বাঙালি মেয়েদের সবচেয়ে জনপ্রিয় পোশাক শাড়ি।এজন্য তাকে শুদ্ধ বাংলার পাশাপাশি শাড়ি পরাও শিখতে হবে।মেয়েটা যেমন যেমন ভাবে শাড়ি পরছে তার দেখাদেখি চুমপুয়িংও তেমন তেমন চেস্টা করছে কিন্তু কুচি ঠিকভাবে করতে পারছে না।মেয়েটা তার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
-আপু থেমে থাকলে হবে না চেস্টা করতে হবে।এই দেখুন আমার কুচি গোজা শেষ।আর আপনি এখনো কুচি হাতে দাড়িয়ে আছেন?
চুমপুয়িং মুখটা ফ্যাকাসে করে বলল,
-হচ্ছে না থো খি ভাবে খরবো?
মেয়েটা কোমড়ে এক হাত গুজে চুমপুয়িং এর দিকে তাকালো।ভ্রু কুচকে এক কান চুলকাতে চুলকাতে বলল,
-আপনার এখনো শব্দের উচ্চারণ ঠিক হলো না? থো হবে না তো হবে।আর খোরবো হবে না করবো হবে।কবে যে ঠিক ভাবে উচ্চরণ করবেন? বাংলা ভাষার ঐতিহ্য সুন্দর ভাবে উচ্চারণ করা।
-আমি চেসতা খো র র করবো।
-আবার? চেসতা না আপু চেস্টা! চেস্টা।
হুট করে চুমপুয়িং কে ডাকতে ডাকতে ডিসুজা রুমের মধ্যে ঢুকে পরলেন।তার চোখ যেয়ে মেয়েটার দিকে পরতেই আটকে পরলো সে। স্তব্ধ সে নিশ্চুয় হয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার ভালো করে দেখে নিলেন মেয়েটাকে।সবুজ রংয়ের বাদামি কাজ করা পাঁড়ে জামদানী শাড়িতে খুব সুন্দর দেখতে লাগছে মেয়েটাকে।কিছুক্ষণ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে চুমপুয়িং এর দিকে রাখলেন।চুমপুয়িং এর কুচি খোলা শাড়ির ভাজ গোজ মুঠো বন্দী করে পেটের সাথে চেপে রাখতে দেখে না হেসে পারলেন না ডিসুজা।তার হাসিতে চুমপুয়িং এর মুখটা ভার হয়ে গেলো।মনে মনে এক রাস অভিমান জমা হলো।কেন তার সাথেই এমনটা হয় সবসময়? কেন এতো হাসেন ডিসুজা তার সবকিছুতে? ডিসুজা কি বোঝেন না তার পাগল করা অট্টহাসি চুমপুয়িং এর মনটা খারাপ করে দেয়?
চলবে,,,,,