ঝগড়া

ঝগড়া !! Part- 03

দাঁড়া আজ শুধু বাসায় নিয়ে নেই,
তারপর দেখিস,তোর একদিন কি আমার একদিন।

আমিও ওয়াক ওয়াক করতে করতে বললাম,আমিও দেখাবোনে তোর একদিন আর আমার কত দিন।

এই বলে আমি অনেকটা বেহুঁশ টাইপই হয়ে গেলাম বমি করতে করতে।কারণ জার্নি আমি একদমই করতে পারিনা।

রণর কাঁধে মাথা রেখে সেন্সলেসের মত পড়ে আছি।

আর একটু পর পরই বলছি,পলিথিন ধররর,
আমি বমি করবো।

আবার যখন বমি থামে আমি চিল্লায় বলি,
আমি বাস থেকে নামবো বাস থামা।

বেচারা সারা রাস্তা আমার এসব সহ্য করেছে।

কেউ কেউ পাশ থেকে বলছে,

_ভাই নতুন বউ এত বমি করে কেন?

আবার অন্য জন উত্তর দিচ্ছে,

আরে নতুন বউ না মনে হয়,

পুরাতন বউ ই,

বোধয় সাত মাস পড়েছে।তাই বউ এর মত সাজিয়ে সাতসা দিয়েছে।

তো ভাই ছেলের বাবা হচ্ছেন নাকি মেয়ের বাবা?

রণ চুপচাপ হাসছে।
আর উত্তর দিচ্ছে,
ভাই,
বউ আমার বাস জার্নি করতে পারেনা।
তাই এমন বমি করছে।
হানিমুনে যাচ্ছিলাম আরকি।নতুন বউ নতুন বর ফিলিংস হতে হবেনা?
তাই এমন সাজ।

-তো ভাই কোথায় যাচ্ছেন হানিমুনে?
লাভ ম্যারেজ মনে হচ্ছে।

_জ্বী ভাই লাভ ম্যারেজই।
হানি মুনে বাসায় যাচ্ছি।

_কি?বাসায় হানিমুন।

_আরে না ভাই,
চেয়েছিলাম তো দূরে কোথাও যেতে।
কিন্তু তিনি নাকি আর জার্নি করতে পারবেন না।
তাই বাসায় ব্যাক করছি।

_আচ্ছা ভাই আচ্ছা।
আপনাদের জন্য শুভ কামনা।

_ধন্যবাদ ভাই।

কিছু ক্ষণ পর হঠাৎ রণ আমাকে ডাকা শুরু করলো,

_ওই বিন্দু ওই।
ওঠো ওঠো।

বাসার কাছাকাছি এসে গেছি।
বাস থেমেছে।

আমি মাথা তুলতেও পারছিনা।এত টা অবস্থা খারাপ আমার।

তবুও খুব কষ্ট করে উঠে দাঁড়ালাম।

কোন রকম রণর হাত ধরে নামলাম বাস থেকে।

নেমেই চিল্লাচিল্লি শুরু করলাম,

_ওই কু* ওই,তুই আমাকে নিয়ে এসেছিস কেন হ্যাঁ?
আমাকে কেন আনলি তুই?কিভাবে আনলি?

আমায় এই মুহূর্তে বাসায় দিয়ে আসবি তুই।
কিন্তু বাসে করে না।
অন্য যেভাবে পারিস দিয়ে আসবি।

নইলে এখন আমি চিৎকার করে লোক জড় করবো।

_করো,
_মানে?
_মানে হচ্ছে,চিল্লাও।
_তুমি ভয় পাওনা?

_ভয়?তাও আবার নিজের এলাকায়?

_তুমি চিল্লাও,
মানুষ চলে এলে বলবো,মেয়েটা বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছে আমার কাছে।

এখন যখন বলেছি,আমি তোমায় ১০ ভরি সোনা দিতে পারবোনা।

তাই এখন বলছে,আমি তোমার সাথে থাকবোনা।

বাসায় দিয়ে আসো।আমার গল্ড চাই গল্ড।

বলুন আপনারা,এমন লোভী মেয়ে নিয়ে কি আর জীবন কাটানো যায়?

_কিইই?এত্ত বড় মিথ্যা বলবি তুই আমার নামে?

আমি তোর কাছে কোন দিন কিছু চাইছি?
না চাইতেও এত বড় কথা।
আর চাইলে না জানি কি কি বলতি।

_এখন কি যাবেন আপনি আমার সাথে?
নাকি আপনার তেজ নিয়ে আপনি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন?

আমি বাধ্য হয়ে চুপচাপ রণর সাথেই ওর বাসায় চলে গেলাম।
কি আর করবো এখন,

চিল্লালে নিজেরই মান সম্মান যাবে।
আর বাসায় গিয়েও দেখবো ছেলে পক্ষ চলে গেছে।

চিন্তা হচ্ছে আম্মুর জন্য।আম্মু না জানি কেমন করছে।

একে তো বেচারি একা এত ধকল সামলালো,তার উপর এত যন্ত্রণা।

আব্বুউউ,আপনি দেশে না কেন?
আপনি দেশে থাকলে কি আর ও এইভাবে আমাকে তুলে আনার সাহস পেতো?

রণর সাথে বাসায় ঢুকতেই রণর মা সামনে এসে দাঁড়ালো।

রণ,তুই এটা কাকে নিয়ে আসছিস?

_মা তুমি দেখোনা বউ নিয়ে আসছি?
কার বউ এটা?

_আরে মা আমার বউ, আমার।
আর তোমার পুত্রবধূ।কিন্তু কাজী ডেকে এখনো বিয়ে হয়নি।

একটু পরেই হয়ে যাবে।
তুমি ওকে ভেতরে নিয়ে যাও।

_রণ আমি কিন্তু তোকে বিয়ে করবোনা।
তুই কিন্তু কাজী আনতে যাবিনা।

_শোনো কন্যা,
যা রটার রটে গেছে।
এখন বাসায় ফিরে গিয়েও লাভ নেই।
সবাই বলবে,একটা ছেলের সাথে বিন্দু চলে গিয়েছিলো।

তারপর ছেলেটা আবার ছেড়ে দিছে।
তাই বাসায় চলে এসেছে।
বুঝোই তো মানুষ কি সব কথা বলতে পারে।

এর চেয়ে বরং চুপচাপ থাকো।আর আমাকে আবার কবুল করে নাও।

কথা দিলাম।সুখেই রাখবো।

_তুই রাখবি সুখে?হাহ!

রণর মা-মা তোমার বাসার সবাই ভালো আছেন?

_জ্বী ভালো।
_তো তোমরা এভাবে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলে কেন?

আমাদের জানালে আমরা ধুমধাম করে তোমাদের বিয়ে দিতাম।
কত স্বপ্ন আমার।
রণর বিয়েটা অনেক বড় আয়োজন করে করাবো।গায়ে হলুদ দিবো।

আর তোমরা কিনা এইভাবে করার সিদ্ধান্ত নিলা।

মনে মনে বুদ্ধি খাটালাম।

_তাহলে এক কাজ করি না মা,বিয়েটা কয়টা দিন পরে করি।

যেমন পরশু দিন গায়ে হলুদ,তারপর দিন বিয়ে।

আপনার ইচ্ছেও পূরণ হলো।আর সময়ও পাওয়া গেলো।

মনে মনে বললাম,
মা একবার রাজি হলেই হয়।

বিয়ের দিন আমি পালাবো।
আর তখন তুই বুঝবি কত ধানে কত চাল।
আমাকে আই হেইট ইউ বলে ব্রেকাপ করছিলিনা?

এত সহজেই আমি সব ভুলে যাবো?

মা আমাকে চমকে দিয়ে বললেন,

_কথা টা তুমি মন্দ বলোনি মা।

আগামী পরশুই তোমাদের গায়ে হলুদ হবে।
তার পরের দিন বিয়ে।

আমি রণকে এখনই না করছি কাজী আনতে।

যাহ কাজ হয়ে গেছে,এখন শুধু মজা দেখানোর পালা।

মা সাথে সাথে গিয়ে রণকে ডেকে আনলেন।

আর বললেন,
বিয়ে টা আজ হবেনা।
বিয়েটা হবে পরশু দিনের পরের দিন।
তার আগে আমি তোদের হলুদ দিবো।

রণ ঠিক বুঝতে পেরেছে,

এটা আমারই কোন প্ল্যানের অংশ।

তাই রণ বল্লো,

না মা বিয়ে আমি আজই করবো।
আর এখনই করবো।

আর আমার কাছে এসে বল্লো,

_বিয়েটা শুধু করে নেই,
তারপর বোঝাবো,
কত ধানে কত চাল।

আর আমি বললাম,

_সেই সুযোগ তুই পাবিনা চান্দু,
তার আগেই আমি দেখিয়ে দেবো কত গমে কত আটা।

_তাহলে দেখা যাক কি দেখা হয়,
চাল নাকি আটা…

চলবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *