সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী !! Part 22

খাবার মুখে দিতেই মুখটা আমার মলিন হয়ে ওঠলো।শরীরের দূর্বলতায় যেন পারছি না আমি নড়েচড়ে বসতে।চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসছে।মাথাটা ব্যাথায় চিঁড়ে যাচ্ছে।ঝিনঝিন শব্দ হচ্ছে কানের মাঝে।আশপাশের কারও কথায় আমার কানে পৌঁছাচ্ছে না।আমার মাথাটা ঘুরে উঠতেই একজন সার্ভেন্ট আমাকে ধরে বসলেন।আমি চোখদুটো খোলার চেস্টা করে হাতের ইশারায় বালিশটা চাইলাম।বালিশ এগিয়ে দিতেই বালিশে হেলান দিয়ে পিঠ ঠেকিয়ে আস্তে করে বসলাম আমি।কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বিরবির করে বললাম, উনাকে একটু ফোন দাও কেউ। আমার পাশ থেকে ফোনটা ঠেলে দিয়ে সার্ভেন্টদের ইশারায় বোঝালাম, ফোন দাও।
🍁
উনি রুমের দরজার কাছে এসে দাড়িয়ে এক পলক আমাকে দেখে ছুটে এসে বসলেন আমার পাশে।সার্ভেন্টদের চোখের ইশারায় বেড়িয়ে যেতে বললেন।সবাই বেড়িয়ে গেলে আমার হাতটা উঠিয়ে নিজের হাতের মুঠোয় রেখে বললেন,
-কি হয়েছে আরু? এইভাবে আমাকে ডেকে পাঠালে কেন?
আমি কান্না জড়িত কন্ঠস্বরে কম্পিত ঠোঁটে আস্তে করে বললাম,
-আমার খুব কস্ট হচ্ছে আহান।মাথার মধ্যে প্রচন্ড আকারে ব্যাথা করছে।সহ্য হচ্ছে না এ ব্যাথা।এর চেয়ে মৃত্যু ভালো।
উনি হাত দিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরলেন।টলমল চোখে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-কি বলছো এসব তুমি? আমি এক্ষুনি মাথা ব্যাথার ওষুধ আনাচ্ছি।ওষুধ খেলে একটু পরে সব ঠিক হয়ে যাবে দেখবে।
-হবে না আহান।প্রায় এমন ব্যাথা করে আমার মাথায়।মাঝে মাঝে তো মাথা ঘুরে পরে যায়। ব্যাথার ওষুধে কোনো কাজ হয় না।মাকে অনেক বলেছিলাম কিন্তু মা পাত্তা দেয় নি।মাথা ব্যাথার কথা শুনলেই রেগে যেতো। তাই অশান্তির ভয়ে ব্যাপারটা নিয়ে কাউকে বলি নি আর।আমার খুব ভয় করছে আহান।আমি..আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি। আমি চাই না আপনাকে হারাতে।বাঁচতে চায় আমি আপনার সাথে থেকে।
-কিসব আবল তাবল বকছো আরু? কিচ্ছু হবে না তোমার। আসলে তুমি নিজেকে খুব একা ফিল করো তাই অমন ভাবো।আমি আছি না তোমার সাথে? কিচ্ছুটি হতে দেবো না তোমার!
-সত্যি বলছেন আপনি?
-হুমমম।সত্যি।ধূর বোকা! সামান্য মাথা ব্যাথা নিয়ে কেউ এমন বলে? কোথায় ভাবলাম তোমাকে খুশির খবর দেবো।তা-না তুমি আমাকে কাঁদিয়ে দিচ্ছো।চোখে পানি চলে আসছে তোমার কথা শুনে।
-খুশির খবর? আমার বোনের খোঁজ পেয়েছেন? তার মানে আমার বোনকে পেয়েছেন আহান? কিন্তু কোথায় ও? মাইশা কি আপনার সাথে এসেছে নাকি রুহানের সাথে ওর বাড়িতে আছে?
উনি চুপপ করে আছেন।আমি উনার হাতটা চেপে ধরে বললাম,
-বলুন না আহান কোথায় আমার বোন?
উনি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে আমার পেটে নিজের মুখ গুজলেন।ভালোবাসার পরস ছুঁইয়ে উঠে বসে আমার মুখের দিকে তাকালেন।আমার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে পেটের কাছে এনে ছেড়ে দিয়ে আমার হাতের উপরে নিজের হাত রেখে বললেন,
-তোমার আমার সন্তান আসতে চলেছে পৃথিবীতে।
উনার কথা শুনে আমার চোখের কোণে পানি চলে আসলো।উনি এক হাতে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে চোখেমুখে ভালোবাসার পরস ছুঁইয়ে দিলেন।আমাকে বললেন,
-হসপিটালে যখন তুমি মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিলে তখন ডাক্তার তোমাকে দেখে বলেছিলো একথা।কিন্তু পরিস্থিতির চাপে বলার সুযোগটা পাই নি।
-আপনি সত্যি বলছেন আহান আমি মা হবো?
উনি আমার নাক টেনে বললেন,
-হুমমম।সত্যি ম্যাডাম।
🍁
সকাল থেকে কিছু খাইনি আমি।রাতে একটু লুরুস খেয়েছিলাম।এখন এসব কি খাবার দিচ্ছেন খেতে? আমি তো ভাত ছাড়া কিছু খেতে পারি না।মেয়েটার কথা শুনে খাওয়া থামিয়ে ঘুরে তাকালেন ডিসুজা।মেয়েটার বাংলা কথার মানে যেন বুঝে উঠতে পারছে না সে।তার এসিস্টেন্ট প্রায় সাতটা দেশের ভাষাতে অভিজ্ঞ। বিজনেসের ডিল সামলাতে বিভিন্ন দেশে তাদের যাওয়া লাগে।সব দেশের সবগুলো মিটিংয়ে ডিসুজার এসিস্টেন্ট ভাষার অর্থ ইংরেজিতে করে শোনায় তাকে।
ডিসুজা তার এসিস্টেন্টের দিকে তাকিয়ে শুদ্ধ ইংরেজি ভাষায় বললেন,
-কি বলছেন এই মেয়েটা?
তার এসিস্টেন্ট মুচকি হেসে মেয়েটার কথার ইংরেজি অর্থ করে ডিসুজাকে শোনালেন।ডিসুজা পুনরায় বললেন,
-জিজ্ঞেসা করো কি খেতে চায় মেয়েটা?
এসিস্টেন্ট মেয়েটাকে জিজ্ঞেসা করলেন,
-খি খেতে ছান আপনি?
মেয়েটা চোখদুটো বড় বড় করে এসিস্টেন্টের দিকে তাকায়। থুতনিতে আঙুল দিয়ে কিছু একটা ভেবে বলেন,
-ভাইয়া আপনার বাসা কোন অঞ্চলে?
-মাহনে?
-ওই যে ক কে খ উচ্চারণ করেন।চ কে ছ।জানেন আমাদের বস্তিতে একটা বাবলু ভাই আছে সে কখনো ত উচ্চারণ করতে পারে না।ত কে থ বানিয়ে দেয়। কিন্তু আপনার তো অনেকগুলো শব্দের সমস্যা। যেটাকে খ বলেছেন ওটা ক হবে।আর যেটাকে ছ বলেছেন সেটা চ হবে।
মেয়েটার কথা শুনে এসিস্টেন্ট চুপপ হয়ে থাকে।ডিসুজা তার এসিস্টেন্টকে আবার জিজ্ঞাসা করেন,
-এবার কি বলল?
এসিস্টেন্ট মুখটা কাল করে ইংরেজি অর্থ বের করে শোনালো।যেটা শুনে ডিসুজা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতোন অবস্থা। মেয়েটা মুখ তুলে বলল,
-এতো হাসছেন কেন আপনি? আর কি তখন থেকে ইংজেরিতে পটর পটর করছেন আপনারা।বাংলায় কথা বলুন।আমি মোটেও ইংজেরি পারি না।
এসিস্টেন্ট এবার এই কথাটা ইংরেজি অর্থ করে শোনালে ডিসুজা হাসি থামিয়ে একদম চুপ করে থাকে।
ডিসুজা এসিস্টেন্টকে দিয়ে রাধূনীকে ডেকে পাঠাতে বললেন মেয়েটা কি খেতে চায় তাই যেন তাকে খেতে দেওয়া হয়।খাওয়া শেষে মুখ মুছে ডিসুজা তার রুমে চলে গেলেন।সবার আগে আমার গল্প পেতে নীল ক্যাফের ভালোবাসা পেজে আসবেন।
মেয়েটা খেতে খেতে রাধূনীকে বললেন,
-এই লোক দুইটার গায়ের চামড়া এমন সাদা কেন? নাকটাও কেমন বোছা।আচ্ছা এরা কি বিদেশি?
রাধূনী চেয়ার টেনে মেয়েটার পাশে বসলেন।মেয়েটাকে বললেন,
-ওইযে যেই সাহেবটাকে বসে খেতে দেখেছিলে তার নাম ডিসুজা।ডিসুজার বাবা চিনের একজন অনেক বড় বিজনেসম্যান।বাবা বিজনেসম্যান হলেও তার মা একজন খাঁটি বাঙালি মেয়ে ছিলেন।যার কারণে বাবা-মা মারা যাবার পর বাবার বিজনেস সামলানোর পাশাপাশি মায়ের দেশে মাতৃত্বের টানে তার মাঝে মাঝে আসা যাওয়া।বিজনেসের বেশির ভাগ ডিলই তার এদেশে করতে আসা হয়।কারণ অন্য দেশের চেয়ে এদেশের প্রতি তার একটু বেশি টান।
-আচ্ছা আপা বিজনেস কি?
-বিজনেস অর্থ হলো ব্যাবসায়।
-ওহহ।জানেন এই লোকদুটো খুব ভালো।কাল রাতে আমি দৌড়াতে দৌড়াতে একটা গাড়ির সামনে চলে এসেছিলাম।ওইযে ডিসুজা নামের লোকটা।সে আমাকে টেনে না সরিয়ে আনলে মরেই যেতাম। একবার ভেবেছিলাম বাড়িতে যাবো।কিন্তু আমার স্বামীটা! সে যদি আমার বাড়িতে যায় ঠিকই আমাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যাবে।আমি চাই না আমার জন্য তার মা বোনের সাথে সম্পর্কটা নস্ট হোক।আমি তো খারাপ বউ না তাই না? যাওয়ারও জায়গা ছিলো না তাই এই ভালো দুইজন মানুষের গাড়ির পিছনের সিটে উঠে পড়ি।যখন এরা গাড়িটা বাড়ির সামনে এনে আমাকে দেখে অবাক হয়।তখন আমি এদেরকে বলি আপনারা তো খুব ভালো।আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই একটু থাকতে দেবেন আমারে? এরা কিসব ইংজেরিতে পটর পটর করছিলো বুঝতে পারছিলাম না।তাই এদের উত্তর হ্যাঁ ধরে নিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ি।
-সত্যিই ডিসুজা আর তার এসিস্টেন্ট খুব ভালো।তোমার এবাড়িতে জোড় খাটিয়ে থাকা আর জেদ তাদের মন জয় করে নিয়েছে।এজন্য আর বলছে না এখান থেকে চলে যেতে।
চলবে,,,