একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 30
৩০.
___________________________________
রাতের খাবার শেষে গল্পের আসরজমেছে।সব গল্প আরিফ একাই করছে। বাকিরা মনোযোগী হয়ে শুনছে আর মাঝে মাঝে হেঁসে কুটিকুটি হচ্ছে। সাফা রাফার পাশে বসেছে।নিশান আর অভ্র একসাথে বসেছে।মাহির আগ্রহ সাফাতে।মেয়েটার সৌন্দর্যের চাইতে কিউট নেস বেশি।মাহি কথা বলছে না।সবাই মোটামুটি কথা বলছে।নিভ্র এগিয়ে আসে রুমে।চারপাশে একবার চোখবুলিয়ে সাফাকে খুঁজে।সাফা একটু দূরে সোফায় বসা।সবাই একবেলা অবাক হয়।নিভ্র আর আড্ডা!!বড্ড বেমানান।নিভ্র কখনোই আড্ডা দেয় না।বন্ধুবান্ধবদের সাথেও না।সব সময় গোমড়া মুখ করে রাখে।অভ্রর তো সন্দেহ ছিলো নিভ্রর বন্ধুবান্ধব আছে কি না?ছোটবেলায় তেমন বিশ্বাসই হত না।এখন তো দেখছে তার গ্যাগ আছে।নিশানের বন্ধ মহল মানেই নিভ্রর বন্ধ মহল।নিভ্র সবার সাথেই মাঝে মাঝে বসত হোস্টেলে থাকা কালিন।তবে তেমন গল্প করত না।তাই সবার ধারনা নিভ্র আড্ডা পছন্দ করে না।মাহি উঠে এসে নিজের পাশে বসার জন্য নিভ্রকে উদ্যেশ করে বলে…………
—– “নিভ্রজান এখানে বসো তুমি।”
সাফা চট করে তাকায়।মনে মনে রাগ হয় খুব এই মেয়ের কি আর কাজ নেই শুধু তার ডাক্তার সাহেবের পিছনে কেনো পরেছে কে জানে।সাফা মনে মনে ঠিক করে নিভ্র যদি আজ মাহির পাশে বসে তবে সে আর নিভ্রর সাথে কথা বলবে না।সাফা চোখ নামিয়ে নেয়।নিভ্রর কেনো যেনো সাফাকে জ্বালাতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু মাহিকে ব্যবহার করে এই কাজটা সে করবে না।মেয়েটা গায়ে পড়া সভাবের তাই সে দুরেই থাকতে চায়।নিভ্র অভ্রর পাশে বসে পরে।মাহির খুব গায়ে লাগে। অপমানিত হয় সে।এটাই তার মনে হয়।সাফার মুখে হাসি ফুটে উঠে।মেয়েরা কখনই প্রিয় মানুষকে আর একজনের সাথে দেখতে পছন্দ করে না।এটাকে ছেলেরা জেলাসি বললেও এটা আসলে অধিকার বোধ।সে শুধু আমার।এই কথাটা দাবি করাই এর মূল কারন।নিভ্র সবার সাথে গল্পে মেতেছে।মনে হচ্ছে কত বছরের গল্প একসাথে করছে।নিশান তো হতবাক। তারা যখন আড্ডা দিতো নিভ্র পাশে থাকলেও তাদের মনে হত সে কিছুই শুনছে না।আসলে নিভ্র যে কতটা মনোযোগী তা এখন বুঝা যাচ্ছে। কে কি করতো সব নিভ্রর পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মনে আছে।আশ্চর্য লাগছে তার।যে কিনা কোনো কথারই জবাব দিত না সে এত কিছু যানতো। ডেঞ্জারাস ব্যাপার।অভ্র নিভ্রর পিঠ চাপড়ায়।নিভ্র ঘুড়ে তাকায়।অভ্র কিছুই বললো না।তার ভালো লাগছে ভাইয়ের মুখের হাসি।একটা ত্যাগে যদি হাসি ফুটে তবে ত্যাগটাই ভালো।অভ্র মুচকি হেঁসে “কিছুনা “বলে।নিভ্র আড্ডার ফাঁকে মাঝে মাঝে সাফার দিকে তাকায়।সাফাও তাকায়।হুট করে চোখাচোখি হয়।
সাফা লজ্জা মিশ্রীত হাসি দেয়।নিভ্র এই হাসির কারন খুঁজে। কিন্তু পায় না।সাফার খুশি লাগছে। এটা এক অদ্ভুত আনন্দ। শত হোক নিভ্র ওই মেয়ের সাথে বসেনি।এতেই সাফা খুশি।সাফা কিছুক্ষণ পর পর নিভ্রর দিকে তাকিয়ে থাকে।হাসলে কত সুন্দর লাগে তার ডাক্তার সাহেবকে।ইশশশ্ মনে হয় জীবন্ত হাসি।হাসিরও প্রান হয় নিভ্রর হাসি না দেখলে সাফা বুঝতে পারতো না।সাফা হা করে তাকিয়ে সে হাসি দেখে।নিভ্র কথার মাঝে আবার তাকায়।সাফার গভীর চাহনি।দুজনের চোখ এক হয়।সাফা এখনো তাকিয়ে আছে।হুট করেই তার হুশ হয়।সাফা চমকায় সেই সাথে নিজের কাজে লজ্জিত হয়।লজ্জায় লাল হয় তার দু- গাল।চোখ সরিয়ে নেয় নিচের দিকে।নিভ্র বাকা হাঁসে। মেয়েটা লজ্জা পেলেই বেশি সুন্দর লাগে।সে না হয় সারা দিন লজ্জা দিবে আর সাফা মুখ লুকাবে।হাঁসফাঁস করবে।কি সুন্দর দৃশ্য হবে।নিভ্র এবার শব্দ করেই হাঁসে। সবাই অবাক।নিভ্রর এহেন হাসি যেনো সবাইকে বিস্মের মাঝে ফেলে।সাফা বুঝতে পারে তার কাজেই নিভ্র হাসছে।সাফা চোখমুখ খিঁচে। লজ্জায় তার মাটিতে লুটিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে।নিভ্র আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে সাফাকে দেখে।সেই টোলপড়া গাল।ইশশ্ ছুঁয়ে দি টাইপের ফিলিংস। সবাই নিভ্রর দিক থেকে চোখ সরিয়ে সাফাকে দেখে এবার সবাই খুক খুক করে কেশে উঠে।রাফা বাহু দিয়ে সাফাকে ধাক্কা দেয়।সাফা হতভম্ভ হয়ে সবার দিকে তাকায়।ছুটে পালাতে ইচ্ছে করে তার।নিভ্রর চোখের দিকে রাগী চোখে তাকায়।নিভ্র পাত্তাই দিলো না।ডান বাম তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে।নিশান চিমটি কাঁটে। মুখে বলে…………
——- “ভাই তুই তো বিশাল প্রেমিক।তা না হলে আড্ডার মহলেও প্রেমিকারে দেখা বুলিস না।ভাবা যায়, নিভ্রনীল একদিন কঠিন প্রেমিকের লিস্টে সবাইকে ছাড়িয়ে এগিয়ে যাবে??ভয়াবহ ব্যাপার।আমার নিজের হবু বউয়ের সাথে ৫বছর প্রেম করেও এই কঠিন প্রেমিক হতে পারলাম না।”
আরিফ আর একটু এগিয়ে এসে নিভ্রর কানের কাছে এসে ফিঁসফিসিয়ে বললো………..
—- “স্যার একটা বারি খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন প্লিজজ??”
নিভ্র বিস্মের সাথে তাকায়।ভারী গলায় বলে……….
—— “মানে!!”
—–“আরে স্যার আপনি বুঝেন না কা বারিতে যে জোড় আছে তা আর কিছুতে নাই।দেখন আপনি মাশহুর স্টার, ডাক্তার নিভ্রনীল পর্যন্ত হকিস্টিকের বারি খেয়ে কঠিন প্রেমিক হয়ে গেলেন আর আমি!!স্যার একটা ব্যবস্থা যদি করতেন??
নিভ্র রাগি চোখে তাকিয়ে বলে……..
—– “আরিফ তোমাকে দেখে আমার মনেই হয় না তুমি আ……..
আর বলতে না দিয়ে আরিফ দুখী দুখী ভাব নিয়ে বলে……
—–“দেখলেন স্যার আপনারও মনে হয় না আমি সিঙ্গেল থাকতে পারি।সেটাই বুঝলেন কেউ বিশ্বাসই করবে না আমি সিঙ্গেল।সবাই মনে করবে আমার মত এত সুন্দর, হেন্ডস্যাম, সুদর্শন ছেলের কম করে হলেও দশ বিশটা গার্লফ্রেন্ড আছে।ইশশশ্ কত মেয়েকে না এই ছেলে ছ্যাঁকা দিয়েছে।এসব ভেবেই কেউ আসে না বুঝলেন স্যার।তারা তো জানে না আরিফ বেচারা সিঙেল হয়ে ঘুড়ছে।আহ আরিফ আহ……”
আরিফের কথা শুনে সবাই হু হা করে হেঁসে উঠে।আরিফ মুখ গোমড়া করে।বেচারার প্রেম করার বড্ড সখ।আহ আরিফ আহ।
______________________________
সকাল থেকে নিভ্রর খোঁজ নেই।সকাল সকাল সে হসপিটালে গেছে।রাফা নিশানের সাথে কিছু শপিং করতে গেছে।তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাকি ছিলো কিনার।তাই গেছে।সাফা বাড়িটা একটু ঘুরে ঘুরে দেখছে।মন ভালো নেই।একাএকা কারোরই ভালো লাগে না।কেমন যেন শূন্য তা কাজ করে।একা থাকার ব্যাপারটা ভয়ংকর। নানা চিন্তা মাথায় ঘুরে।কিছু কামেল চিন্তা কিছু ফালতু চিন্তা।ইদানীং নিভ্রকে চোখের সামনে দেখতে দেখতে কেমন যেনো অভ্যাস হয়েগেছে।নিভ্রকে চোখের পলকের বাহিরে করলেই ভয় ভয় লাগে।মাহিকে তার মোটেও ভালো লাগেনা।তার দিকে কেমন করে যেনো তাকিয়ে থাকে।নিভ্র পাশে থাকলে তার ভালো লাগে।প্রিয় মানুষকে সবাই পাশে পেতে চায়।সাফার সাথে হঠাৎ ধাক্কা লাগে কারো।সাফা ঘুড়ে তাকানোর আগে চিৎকার করে সে বলে…….
—–“অন্ধ নাকি??চোখে দেখো না??
সাফা তাকায়!দেখে মাহি!এড়িয়ে চলতে চায় সে।তবুও বিনয়ের সাথে বলে……..
—–“স্যরি আপু।
—–“তুমি ওই আশ্রিতা না??
সাফা চমকায়।কথার ভঙি দেখে! তার মেজাজ বিগড়ে যায়।কি ভাষা??সাফা নিজেকে সামলায়।সবার নিষেধ যাতে এর সাথে কথা না বলে সে।তাই সাফা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চায়।মাহি দমে না।মুখ বাঁকিয়ে বলে…….
——“নিভ্রনীলকে হাত করা সহজ কাজ না।তোমাদের মত মেয়েদের আমার চিনা আছে।বড় লোক ছেলে দেখলেই গায়ে পরো।ঘাড়ে ঝুলে পড়ার জন্য।নিভ্রনীলের বেলায় এটা করতে পারবে না।হু….
সাফা ঘুড়ে দাঁড়ায়। সহজ গলায় স্বাভাবিক ভাবে বলে…….
——“আপনি কি আমাকে ঝুলতে দেখেছেন??কই আমার তো মনে হয় না।জান জান বলে আমি কারো গায়ে পরেছি??না তো!! তাই সত্য দেখে কথা বলুন আপুমনি। তা না হলে লোকে মিথ্যাবাদী বলবে তো!!ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে না??দেখে শুনে কথা না বললে লোকে আপনাকে অন্ধ ও বলতে পারে।তাই বলিকি আপু দেখে কথা বলুন।আসি।
সাফা মিষ্টি গলায় কথা গুলো বলে একটা মিষ্টি ক্লোজআপ হাসি দিয়ে সাই সাই করে হেঁটে চলে আসে।কিছু দুর এসে সাফা বুকে হাত দিয়ে নিঃশ্বাস নেয়।তার তো জান যায় যায় অবস্থা।এই মেয়েকে তার ভিষন ভয় লাগে।যদি আবার থাপ্পড় দেয়??তখন তো তার গাল আর গালের জায়গায় থাকবে না।সাফা এক ছুট লাগায়।এখানে দাঁড়ানো বিপদ জনক।মাহি অবাক হয়ে ভাবছে মেয়েটা মিষ্টি করে তাকে সাবধান করলো নাকি তাকে অপমান করলো।আচ্ছা অপমান কি মিষ্টি ভাষায় করা যায়??মাহি ভাবতে থাকে। ভাবতে ভাবতেই সামনে হেঁটে যায়।তার মনে হচ্ছে সাবধান করেছে আবার মনে হচ্ছে অপমান করেছে কিন্তু এত সুন্দর করে ভদ্র ভাষায় কেউ অপমান কিভাবে করতে পারে??আশ্রিতা বলার পরেও রাগলো না।আশ্চর্য!!
___________________________________
সাফা দোতালার রেলিংয়ে হাত রেখে আপেল খাচ্ছে। আপেলে একটা কামড় দিচ্ছে আর দেখছে ডেকোরেশনের কাজ।আজ থেকেই কাজ শুরু হয়েগেছে।ছেলেরাও এই বাড়িতেই থাকবে বিয়ের দিন আলাদা বাসায় যাবে বলে ঠিক করেছে।নিশানদের সিলেটে বাড়ি নেই।হোটেলে মাহবুব চৌধুরী থাকতে দিবেন না।তাই এখানে থাকা।সাফা মনোযোগ দিয়ে সব দেখছে।সে মনে মনে ভাবছে সেও ওয়েডিংপ্লানিংয়ে কাজ করা শুরু করবে। বেশ ভালোই হবে।কাজটা তার খুব পছন্দ হয়েছে।সাফা আপেল খেতে খেতে দরজার দিকে তাকিয়েই তার মুখ হা হয়ে গেছে।আপেলের কিছু চিবানো অংশ আপনা আপনি মুখ থেকে বেড়িয়ে আসেছে।আর সে অংশ গুলো নিচে থাকা একটা লোকের টাকলা মাথায় পড়তেই সে উপড়ে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে কিছু বলতে চেয়েই আবার সাফার চোখ অনুসরণ করে সামনে তাকিয়ে সে ও হা করে থাকে।
.
নিভ্র হসপিটাল থেকে এসে দরজা দিয়ে ডুকছে ঠিক সেই সময় একটা ছেলের সাথে বেসামাল ভাবে ধাক্কা লাগে। নিভ্র নিজেকে সামলিয়ে সামনের পাতলা গঠনের ছেলেটাকে ডান হাত দিয়ে তার কোমড় জড়িয়ে ধরে ফেলে।সাফা এখনো চোখ ফাটা ফাটা করে তাকিয়ে আছে।সে তো আজীবন মুভিতে দেখেছে নায়করা এভাবে এন্ট্রি নেয় আর নায়িকারা স্লিপ খেয়ে এভাবে পড়লে নায়করা তাদের কোমড় এভাবে ধরে। কিন্তু জীবনে প্রথম তার নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে।নিভ্র প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ছেলেটাকে ধরে রেখেছে।সে যত বার তাকে উঠাতে চাচ্ছে ছেলেটা তত তাকে আরো জড়িয়ে নিচ্ছে। তার কাছে এটা প্রচন্ড অসজ্জ কর কাজ মনে হচ্ছে তাই ফেলে দিবে ভেবে হাতটা টেনে সরিয়ে আনতেই ছেলেটা সটাং হয়ে দাড়িয়ে বলে উঠে…..
—ওয়াওওওও হাউ কিউট বয়..জাস্ট ফিদা….
.
নিভ্র ভেবাচেকা খেয়ে দাড়িয়ে পড়ে।কি বলছে এই ছেলে??ছেলেটা হাত নাচিয়ে নাচিয়ে আবার বলে উঠে…..
—আমি নিজেও অনেক সুন্দর কিন্তু তোমার মত না।তুমি যে কি বিউটিফুল আমি বলে বুঝাতে পারব না।কি সুন্দর গাল কি সুন্দর ঠোঁট জোড়া যেন পাকা টমেটো ইশশশশ্।আর চোখ গুলো কি অদ্ভুত সবুজ রং এর আর আর চুলগুলোত তুর্কি স্টাইলে পিছনের দিকে সেট করা হায় মে মার জাবা।ওয়াওওওও।
.
বলেই ছেলেটা হাত গুটিয়ে দাতঁ কেলিয়ে হেঁসে উঠে।নিভ্রর রাগ যেন শরীর বেয়ে মাথায় উঠছে।সাফার তো হাসিরা পেটে জমা হচ্ছে। যে কোন সময় নোটিশ ছাড়াই আগমন করবে।ছেলেটা এবার নিভ্রর গালে হাত দিয়ে বলে উঠে….
—ওও মা কি সুন্দর দাড়ি গো তোমার।খোঁচা খোঁচ দাড়ি গুলো তোমার সাদা গালে কি জে মানিয়েছে।হায়্ আর নাক টা মন চাচ্ছে টেনে দি।কিন্তু তুমি ব্যাথা পাবে তো।আর তোমার ঠোঁট জোড়া।হায় মে মার জাবা।
.
নিভ্রর মাথা ঘুড়ছে। কি কি বলছে ছেলেটা।নিভ্র হাত ঝাড়ি দিয়ে ফেলে দেয়।ছেলেটা এবার নিভ্রর কোমড়ে হাত দিতেই সে দু কদম লাফিয়ে উঠে।ছেলেটা বলে উঠে….
—ওয়াওও কি কোমড় তোমার।
.
বলেই হাত ধরতে আসতেই সাফা উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠে।হাসতে হাসতে সে ফ্লোরে বসে পড়ে।নিভ্র কপাট রাগ নিয়ে উপড়ের দিকে তাকাতেই সাফাকে দেখতে পায়।সাথে সাথে সে চোখ গরম করে তাকায়।সাফার তো সেদিকে পাত্তাই নেই সে নিজের মত হেঁসে চলেছে।শুধু সে না প্রায় অনেকেই হাসছে। ছেলেটা এবার আরো একটু এগিয়ে এসে নিভ্রর হাত ধরতেই।ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিল নিভ্র।তার চড়ের ধ্বনি সারা বাড়ি কাঁপিয়ে দিল।সাথে সবার হাঁসাও বন্ধ। সাফাও একটু ভয় পেয়ে গেছে তাই মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে হাঁসি থামাতে চাচ্ছে। ছেলেটা একটু নেকা নেকা করে গালে হাত দিয়ে বলে উঠে….
—খুব পঁচা ছেলেত তুমি।এভাবে কেউ মারে।ইশশ্ আমার কত কিউট নরম গাল তুমি লাল করে দিলে।ব্যাড বয়।এবার একটু হাত বুলিয়ে আদর করে দিবে??না থাক কিভাবে তাকাচ্ছ। আমার তো লজ্জা করছে।হায়….
.
নিভ্র চরম রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠে….
—আর একটা খেতে না চাইলে সামনে থেকে সর।আর নিশান কই??
.
সাথে সাথে নিশান উপস্থিত হয়ে বলে উঠে…..
—সরি রে। ও একটু এমনই।চল তুই রাগ করিস না।মামা তো ভাই আমার।
.
সাফার মনে হচ্ছে সব মামাতেই গাফলা।মাহির সাথে এই ছেলেটার বিয়ে হলে ভালো হবে!!সাফা মুখ চেঁপে হাঁসে। নিভ্র প্রচণ্ড রাগ নিয়ে উপড়ে চলে গেল।তার সাথে তার সকল বন্ধুরাও গেছে।আরিফ নিভ্রর ব্যাগ নিয়ে উপরে উঠছে।সাফাকে বসে বসে হাঁসতে দেখে সেও হেসেঁ দেয়।নিভ্র রাগি চোখে তাকায় দুজনের দিকে।দুজনেই চুপ হয়ে যায়।সাফা উঠে দাঁড়িয়ে হাঁসতে হাঁসতে সে নিজের রুমের দিকে যায়।হাঁসিতে তার পেট ফেঁটে যাচ্ছে।
.
—নিশান তুই আমাকে আগে কেন বলিস নি তোর বিয়েতে গে আছে??বোনের বিয়ে আমার সার্কাস না!জাস্ট ডিজগাস্টিং।
.
কথাটা শুনেই আকাশ হাত পা ছড়িয়ে হাসা শুরু করে।আকাশ, নিশান, নিভ্র,রোহিত, নিলা,রোজা এরা সবাই ভালো বন্ধু। ছোটবেলায় একই স্কুল কলেজ পরেছে।প্রিয় বন্ধু সবাই।ভার্সিটিতে আলাদা হয়ে যায় অনেকে তবুও যোগাযোগ থাকে।এদের মাঝে নিভ্রই একটু গম্ভীর আর সাবাই মোটামুটি ঠিক আছে।আকাশের হাসি দেখে নিভ্র বিরক্ত নিয়ে তাকাল।তার এখন এক ঘুষিতে দাঁত ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে। আকাশ হাসতে হাঁসতে বলে উঠে…..
—ভাই আজ আমি যা হেসেঁছি জীবনেও এত এত হাসিনি।জাস্ট মাইন্ডব্লোয়িং। শালা ওই হিরন কিভাবে হাত দিয়ে বলেছে ওয়াওও তুমি কি সুন্দর। হাহাহা আর আর কোমড়ে হাত দিতে গিয়ে।আল্লাহ হাসিতে আমার পেট ফেঁটে যাচ্ছে।
.
নিলা এবার একটু নড়ে বলে উঠে….
—নিভ্র তুই সব বাদ দে আমার সাথে কিছু ছবি তুল
।অনেকগুলো সেল্ফি তুলে নিব। ইনস্ট্রাতে আপ দিব। আহ আমার কাজিনরাত এমনেই মরে যায় এটা ভেবে তুই আমার ফ্রেন্ড এবার ছবি দেখলেত সেই জ্বলা জ্বলবে।
.
রোহিত বলে উঠে….
—তোদের আর কোন কাজ নাই না।দেখ ভাই এবং বোনেরা এখানে আসার মূল কারন কি তোরা ভুলে গেলি??
সবাই আগ্রহের সাথে তাকায় রোহিতের দিকে।রোহিত বলে………..
—–“আরে নিভ্রনীলের প্রেম কাহিনিটা শুনা লাগবে না!!”
সবাই চেঁচিয়ে উঠে।নিভ্রর মাথা আগেই গরম ছিলো এগুলো শুনে আরো হয়ে যায় তাই সে ধমকের সাথে বলে………
—–“এই একদম শুরু করবি না। ফালতু কথার মুড নেই এখন।”
কথাটা বলেই নিভ্র হনহনিয়ে হেঁটে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।সাফার প্রতি তার রাগ হচ্ছে মেয়েটা এভাবে হাসলো কেনো??সাফার হিসাব পরে নিবে। সাফা রাফাকে সব বলছে আর হাঁসতে হাঁসতে এদিকে এগিয়ে আসে।নিভ্র রাগি চোখে শার্টের হাতা ভাঁজ করছে।রাফা পাশ কাটিয়ে কেটেঁ পড়ে।সাফা ঢোগ গিলে।তবুও হেসেঁ বলে…………..
——“আপনার না আমাদেরকে ঘুড়তে নেওয়ার কথা ছিলো??নিলেন না কেনো??”
নিভ্র থামে।রাগ কমে আসে তার।হাত একটু এদিন ওদিন দুলায়।তারপর বলে……….
—–“হুম নিয়ে যাবো কাল।আজ একটা কাজ ছিলো।
সাফা পাশ ফিরে চলে যেতে চায়।নিভ্র হাত ধরে বসে।ভয়ে সাফার হাত কাপঁছে। হাসির জন্য না জানি কি শাস্তি দেয়।সাফা নিভ্রর দিকে তাকায়।কিছু বলতে যাবে তার আগেই।হিরন এসে হাসির।সাফার হাত ধরতে দেখে হিরন বলে……..
——“তুমি ওর হাত কেনো ধরেছ??
নিভ্র হিরনকে দেখেই রেগে যায়।সাফার হাত ছেড়ে হিরনের কলার ধরে তাকে টেনে রেলিংয়ের অপর পান্তে ঝুলিয়ে দেয়।হিরন চেঁচিয়ে উঠে।সাফাও ভয় পায় খুব।নিভ্র রাগী গলায় ঝাঁঝালো ভাবে বলে………
—–“আর একবার নেকামি করবি তো নিচে ফেলে দিবো।আর আমার কাছ থেকে দুরে থাকবি।বল থাকবি তো??
হিরন ভয়ের চোটে চেঁচিয়ে বলে…….
—–“থাকবো থাকবো।এবারের মত মাফ করো কিউট বয়!!
—-“আবার??”
——“স্যরি আর বলবোনা।নামাও প্লিজজ।
নিভ্র হিরনকে তুলে নেয়।হিরন বুকে হাত দিয়ে দৌড়ে পালায়।সাফা ভয়ে শেষ।এই ছেলেকে এভাবে ঝুলিয়েছে তাকেও যদি ঝুলায়।তখন কি হবে??সাফা পালানোর রাস্তা খোজে।নিভ্র পকেটে হাত গুজেঁ সাফার দিকে তাকায়।এই হিরনের জন্য সাফাকে এখন বিপদে পরতে হচ্ছে। কি দরকার ছিলো হাসার??নিভ্র এখনো তাকিয়ে আছে??
.
.