একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 29
২৯.
_____________________________________
ঠাসসস করে মারা চড়টা যেন গালে লেগে আছে সাফার।সাফা স্তব্ধিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির মূল ফটকে।বাড়িতে উপস্থিত সবাই তাকিয়ে আছে।কারো মাথায় কিছু ডুকছে না।রাফার তো মেজাজ খিঁচে গেছে।রাগী চোখে তাকিয়ে আছে সে।তারও এখন সামনের ব্যক্তিকে একটা কশিয়ে চড় দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু সে দিবে না।নিভ্র ফোনে কথা বলতে বলতে ঘরে ডুকে।এত গভীর রাতে একজন রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়াই তাকে কল করা হয়েছে।নিভ্র নানা ইনফরমেশন দিচ্ছে আর বাড়ির মূল ফটকে দাঁড়ায়। বাড়ির মানুষ গুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিভ্র থমকায়।ফোন পকেটে ডুকাতে ডুকাতে একবার চারপাশে তাকায়। সবার থমথমে ভাব দেখে সে একটু অবাক হয়।চারপাশের পরিবেশ বুঝার চেষ্টায় আছে সে।নিভ্র চোখ ছোট করে সাফার দিকে তাকায়।গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিভ্র।তাকে বিচলিত দেখাচ্ছে।মুহূর্তে তার মুখের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়।রাফা নিভ্রর মুখের অবস্থা দেখে মনে মনে বেশ খুশি হয়।তার ভাবতে ভালো লাগছে সামনের ব্যক্তির অবস্থা এখন কেমন হবে??রাফা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সামনের ব্যক্তি রাগে ফঁসফঁস করতে করতে আবার হাত তুলে থাপ্পড় মারার জন্য কিন্তু আগেরটা দিতে পারলেও এবার ভুল মানুষের সামনে একুই সাহস দেখাতে গিয়ে তার নিজের গালেই হাত চলে গেছে।সাফা দু’হাতে মুখ ডেকে রাফার দিকে মুখ ঘুড়িয়ে নেয়।রাফা দু’হাতে সাফাকে জড়িয়ে নেয়।নিভ্রর যেনো হঠাৎ করেই রাগ হু হু করে বেড়ে গেছে।সামনের ব্যক্তির হাত পিছনে নিয়ে ঠাটিয়ে একটা গাল লাল করা চড় বসিয়ে দেয় গালে।রাফা না চাইতেও একটু শব্দ করে হেঁসে নিজেকে দমিয়ে নেয়।সাফা ভীতু চোখে হাতের মাঝ থেকে তাকায়।সে বুঝতেই পারছে না এখানে কি হচ্ছে। তবে তার মনে হচ্ছে চড় কম্পিডিসান হচ্ছে। মনে মনে বলে তাকে দিয়েই কেনো শুরু হল??থাপ্পড় জিনিসটা তার মোটেও পছন্দ না।এর চাইতে কয়েকবার মাথা ফাটালেও তার এত খারাপ লাগে না যতটা থাপ্পড়ে লাগে।সাফার মুখশ্রী লাল হয়ে উঠে।চোখে জমে অসংখ্য কান্না।নিভ্র হাত ছেড়ে নিজের পকেটে গুঁজে সটাং হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।গার্ডসদের ব্যাগ নিতে ইশারা করে।তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি।অভ্র দরজার দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে হাত গুঁজে সব দেখছে।তার মুখ দেখে মনে হবে মজা লুফে নিচ্ছ।অভ্র বিড়বিড় করে বলে……..
—- “বেশ হয়েছে।আর একটা দিলে ভালো হবে।অসভ্য মেয়ে একটা।
অভ্র মনে মনে খুশি হয়। নিভ্র তার চেয়ে বেশি ক্যায়ারি।হয়তো নিভ্রর মত সে পারতো না।
—- “তুমি আমাকে মারলে নিভ্রজান??”
সামনের ব্যক্তির কথায় সাফা চট করে তাকায়।এই মেয়ে বলে কি??জান মানে কি??সাফার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে।সবার মুখের দিকে তাকিয়ে চাওয়া চায়ি করে।নিভ্র স্বাভাবিক গলায় বলে…….
—– “তুমি সাফাকে মেরেছ কেনো মাহি??”
মাহি এবার রাগ দেখিয়ে বললো……..
—– “দেখো এত রাতে আমার টমি খেতে চেয়েছে আর এই মেয়ে তার খাবারে পা দিয়ে দিয়েছে।থাপ্পড় তো কম হয়েছে আরো কয়েকটা দিতে ইচ্ছে করছে।অসভ্য মেয়ে।
নিভ্রর সারা শরীর যেনো রাগে রি রি করে উঠে।কুকুরের খাবারের জন্য সাফার গায়ে হাত দিবে??আর দরজার সামনে খাবার দিবে এটা কেমন কথা??নিভ্র আর একটা চড় মারতে যাবে আগেই অভ্র হাত ধরে নেয়।বড় মাকে নিভ্র প্রচণ্ড সম্মান এবং ভালোবাসে তা না হলে এই মেয়ের কি যে হাল করতো বলার বাহিরে।নিভ্র রাগে ফঁসফঁস করে এবার বললো……
—— “তাই নাকি তবে আমাকেও দেও থাপ্পড়!! ”
বলেই নিচের প্লেটে পা দিয়ে দেয়।সাফা হতবম্ভ। কি হচ্ছে কিছুই তার মাথায় ডুকছে না।আর এই মেয়ে কি পাগল না কি??কুকুরের খাবারের জন্য মানুষকে মারবে??সাফা বিস্ময়ের সাথে রাফার দিকে তাকায়।রাফা কানের কাছে ফিসফিসে বলে…….
—— “কি বলেছিলাম??একটা নেকড়ে আছে বলেছিলাম না!!এটাই সেই নেকড়ে।পরে পরে দেখো আর কি করে।শয়তান একটা।
সাফা চোখ বড় বড় করে তাকায়।এটা হল নেকড়ের রহস্য। এই মেয়েকে সাফার নেকড়ের চাইতেও ডেঞ্জারাস মনে হচ্ছে। মাহি এবার নিভে যায়।গাল থেকে হাত নামিয়ে বলে…………….
——- “তুমি আর ও কি এক না কি??”
—– “আলাদাও না।ওর সাথে লাগতে যাবে না।দুরে থাকবে।ও তোমার ধাজের মেয়ে না।আলাদা।তাই ওর সাথে তোমার এসব বাজে ব্যবহার দেখাবে না।তাহলে ভালো হবে না।
নিভ্রর দাঁতে দাতঁ চেপে কথা বলার ধরন দেখে মাহি অবাক।এতটা কিসের দরদ।মাহি এবার নেকামি শুরু করে।নিভ্র যেনো জানতো।এমনটাই করবে।তাই চোখ বাঁকিয়ে সাফার গাল পর্যবেক্ষণ করছে।মাহি নেকা সুরে বললো………
—— “আরে নিভ্রজান আমি ওকে মারতে চেয়েছি নাকি।তুমি তো যানো আমার টমি কতটা প্রিয়।তাই এমনটা রাগে করেছি।তুমি রাগ করলে??আচ্ছা যাও সরি মেয়ে।
সাফার দিকে তাকিয়ে বলে মাহি।নিভ্র মাহির দিকে ঘুরে তাকায়।সহজ গলায় বলে……..
——- “ওর নাম সাফা।সাফ্রিনা সাফা।নাম ধরে ডাকতে পারো।তোমার ছোট।মেয়ে এটা কেমন কথা??
মাহি এবার বিস্ময়ের সাথে সাফাকে দেখে।যেনো সে সাফাকে চিনে।আর নিভ্রর এমন প্রতি কথায় প্রতিবাদ দেখে সে ভারী অবাক।মাহি এবার নিজেকে সামলে বলে………….
—— ” ও এই সে আ….মানে সাফা যে তোমাদের বাসায় থাকে??”
মাহি বুঝতে পেরেছে উল্টাপাল্টা কিছু বললেই নিভ্র কিছু একটা করবে।তাই দমে গেছে।নিভ্র জবাব দিলো না।সাফার সামনে দাঁড়িয়ে গাল থেকে হাত সরিয়ে নেয়।মাহবুব মাহিকে নানা কথা শুনিয়ে দেয়।শুধু মাহবুব না মোহনা, ইফতেখারও ছাড়ে নি।মাহির বাবা মিনার এগিয়ে এসে সরি বলে।নিভ্র সাফার গালের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।রাগ যেনো তার মাথায় চরে বসে।হাত ঘুড়িয়ে আবার একটা চড় বসিয়ে দেয় মাহির গালে।উল্টা হাতের চড় খেয়ে মাহি হু হু করে কেঁদে দেয়।নিভ্রর যেনো পাত্তাই নেই।সবাই এবার অবাক।এই চড়টা দিবে কেউ ভাবতে পারেনি।কিন্তু নিভ্র যেনো কন্ট্রোল লেস হয়ে গেছে।নিজের রাগ নিয়ন্ত্রনে আনতে পারছে না।অভ্র এবার হাত চেঁপে ধরে কানের কাছে বললো……….
—– “ভাই আর দিস না।শত হক আমার মামার মেয়ে।বাদ দে।একটা দিলি হল তো আবার কেনো দিতে গেলি?? আর সরিও বলেছে।এখন ছাড় ভাই।সাফার গাল লাল হয়ে ফুলে গেছে বরফ দিতে হবে। চল এখন।রাফাকে বলে দিচ্ছি দিয়ে দিবে।
নিভ্র চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস নেয়।রাগ নামতে চাচ্ছে সে।মাহির অবস্থা খারাপ।রাগ জেদ আর জেলাসি তার মাথায় ভর করছে।নিভ্র এই মেয়ের জন্য তাকে মারলো??নিভ্রনীল কবে থেকে মেয়েদের প্রতি এতটা ডেস্পারেট হয়ে গেছে??সে তো মেয়েদের পাশ ঘেঁষে তো দূর দূরে থেকেও হাঁটতো না।তবে এই মেয়ের জন্য এত কিসের রাগ।মনে হচ্ছে মেয়েটাকে না তাকেই চড় মারা হয়েছে।নিভ্র এবার রাগী চোখে তাকায়।মাহি ভয় পেয়ে দুপা পিছিয়ে যায়।সবুজ চোখে লাল লাল অভা মনে হয় তাকে ভস্ম করে দিবে।সাফা কিছু বললোই না।সে প্রতিবাদ করতে চায় কিন্তু এখানে তার আগেই বিচার সভা শেষ।নিভ্র রাগে হন হন করে উপড়ে উঠে যায়।রাফা কাজের মেয়েকে বরফ নিয়ে উপরে তার রুমে নিয়ে যেতে বলে।মাহিকে তার মা বাবা বরফ লাগাতে শুরু করে।মেয়েটা তাদের বড় যত্নের। কখনো গায়ে হাত তো দুর বকাও দেয় না।আর নিভ্র ঠাটিয়ে দুইটা চড় দিয়ে গেলো!!চাইলেও নিভ্রনীলকে কিছু বলতে পারবে না তারা।এটা সাধারন কেউ না নিভ্রনীল।অভ্র,নিভ্রর সাথে তারা কখনোই লাগতে চায় না।অন্য কেউ হলে খবর ছিল আজ।এই দুইছেলেই আল্লাহ বাদে আর কিছুরে ভয় পায় না।
.
রাফা সাফাকে নিজের রুমে নিয়ে যায়।গাল ব্যাথা করছে সাফার।তার ধারনা ছিলো না একটা ছেলের চাইতেও এই মেয়ের হাত বেশি শক্ত হবে।সাফার বড্ড খারাপ লাগছে।চোখ বার বার ভিজে উঠছে।আর সে বাম হাতের তালু দিয়ে বার বার সে পানি মুছে যাচ্ছে। ঠোঁটের সাথে গলাও কাপঁছে। এখানে না আসলেই বোধ হয় ভালো হতো।রাফা সাফার লাল হয়ে যাওয়া গালে বরফ ঘঁষে।জায়গাটা জ্বলে উঠে।রাফা কড়কশ গলায় বলে উঠে……….
—— “কি বলেছিলাম??একদম নেকড়ের মতো।মামা মামির অধিক ভালোবাসা নামের নটাংকি এরে বিগড়ে দিছে বুঝলা।ছোট থেকে একদম শাসন করে না।যা খুশি করে।নিজের বয়সে বড় তাদেরও চড় থাপ্পড় মারে।আর কাজের লোকগুলোর কথা তো বাদ দিলাম।তাদের সাথে প্রচণ্ড বাজে বিহেভ করে।এমন কি আমার সাথেও।তবে ছোটবেলায় মারলে ভাইয়াদের কাছে চলে যেতাম।আমার ভাইয়েদের এই নেকড়ে জমের মত ভয় পায়।ভাইয়ারা প্রায় রেগে যায় তাই।বেয়াদপ আর বেপরোয়া একটা মেয়ে।ছোট ছোট জামা পড়ে ঘুড়ে বেড়ায়।আর আমার ভাইদের কাধে ঝুলে পড়ে মাঝে মাঝে।পাত্তা দেয় না দেখে এমন করে, দিলে না জানি কি করতো।আল্লাহ মালুম। নিভ্র ভাইয়ার প্রতি দুর্বল বেশি।এতে কি কত মেয়েইত ভাইয়ার প্রতি দুর্বল তাই বলে কি ভাইয়া সবাইকে পাত্তা দিবে এমন কোথাও লেখা আছে নাকি??তবে এর থেকে সাবধান। কখন আবার তোমাকে বাড়ির পিছনের বাগানে নিয়ে চড় মারে আল্লাহ জানে।তুমি আমার সাথে সাথে থাকবে।আমার মিষ্টির দোকান নিয়ে আমি রিক্স নিতে চাই না।ইশশ্ আমার প্রিয় গাল গুলো কেমন লাল লাল করে দিয়েছে।অসভ্য নেকড়ে।
সাফা হা হা করে হেঁসে উঠে।রাফা যে ওই মেয়েকে বিন্দু মাত্র সোজ্জ করতে পারে না।এটা তার বুঝা হয়েগেছে। সাথে মেয়েটা যে আসলেই অসভ্য তাও বুঝতে পেরেছে সে।দুজনে ফ্রেশ হয়ে নেয় ৮-৯ঘন্টা জার্নি করে সবাই ক্লান্ত। এখনো গভীর রাত।রাফা সাফার জন্য খাবার আনে তাকে খাইয়ে দেয়।নিজেও খায়।তারপর দুজনে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পরে।নিভ্র সাফার রুমে এসে দাঁড়িয়ে দরজাটা হালকা টেনে দেখে দুজনে ঘুমিয়ে গেছে।নিভ্র আর যায় না।চলে আসে নিজের রুমে।
_________________________________
সাফা বিছানার নিচে বসে আছে।সকাল সকাল তার মাথায় তেল দেওয়া হচ্ছে। ইফতেখার নিজেই তেল লাগিয়ে দিচ্ছে। সাফা নিজে নিজে তেল দিতে পারে না।তাকে কেউ লাগিয়ে দিতে হয়।ইফতেখার ঝাঁঝালো গলায় মাহির নামে বকবক করছে।ইফতেখার রেগে মেগে বলে……..
—— “মেয়েটা তেমন ভালো না বুঝলে।সবার সাথেই এমন করে।নেকড়ের মত হামলে পড়ে।
সাখাওত সোফায় বসে কাজ করছিলেন।ইফতেখারের কথা শুনে তিনি হা হা করে হেঁসে উঠে।ইফতেখার ভ্রুকুচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে বললেন…….
—— “তুমি এভাবে হাসছ কেনো???”
সাখাওত জবাব দিলেন না।সাফার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দেয়।সাফাও হাসে মিটমিটিয়ে। সাখাওতের ভালো লাগে ইফতেখারকে খুশি দেখলে। অনেক বছর পর প্রিয়তমাকে খুশি দেখছেন তিনি।একটা মেয়ের সখ মেয়ে হারানোর পর থেকেই।মেয়ে ছাড়া মায়েদের শূন্য শূন্য লাগে।সাফাকে পেয়ে যেনো ইফতেখারের মনের শূন্যস্থানটা নাড়া দিয়ে উঠে।সব সময় দু’হাতে আগলে রাখতে চায়।মেয়েটা এসে তাদের বাড়িময় আনন্দ নিয়ে এসেছে।সাফা চঞ্চল সভাব তাদের বাড়িকে রাঙিয়ে দেয়।বাড়ির সবাই এক প্রকার শান্ত তাই সাফা যখন লাফালাফি ঝাপাঝাপি করি ভালোই লাগে তাদের সবার।ইফতেখারকে আর সাফাকে দেখে এখন কেউ বলতেই পারবে না এদের মধ্যে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই।একদম মা মেয়ের মতো।আর রাফা তো আদরে ভরিয়ে রাখে বোনের মতো।সবার চোখের মনি এখন সাফারানী।
নিভ্র বাবার পাশে এসে বসে।সাখাওত যেনো ভূত দেখলো এভাবে চমকে উঠে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ছেলের দিকে।তারপর প্রশ্ন করে………..
——- “তুমি এখানে???”
নিভ্র স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয়…..
—— “কেনো আসতে পারি না বুঝি??”
—– “না আসতে পারো না।এটা স্বাভাবিক ব্যাপার না।তুমি তো এমন না। তাই তোমার এমন কাজ আমাদের হার্ট অ্যাটাকের কারন হতে পারে।কারন বাবার সাথে এককাপ কফি আর তুমি এক সাথে যায় না।তা কেনো হঠাৎ নিজের ফর্ম থেকে সরে এলে শুনি??”
বাবার এমন কথায় ভড়কে যায় নিভ্র।বাবার দিকে আড়াআড়ি ভাবে তাকায়।সাখাওত চেঁচিয়ে বলে……
—– “এভাবে তাকাবে না।একদম না।এখনো আমাকে দিয়ে তোমার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি। আগে তো আমি বসে থাকতাম তুমি ভাব নিয়ে থাকতে এবার থেকে তুমি বসে থাকবে আমি ভাব নিবো।
নিভ্র থেমে থেমে বলে……
—— “তা কি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি আমার শুনি??যা তোমাকেই করতে হবে??”
সাখাওত ল্যাপটপে কাজ করতে করতে বললো……
—— “বিয়ে।”
নিভ্র কেশে উঠে।হঠাৎ করেই তার গলায় শুকনো কাশি ভর করে।খুক খুক করে কেশে উঠে সে।সাখাওত পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।ইফতেখার সাফা উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকে।নিভ্র চোখ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে সবাইকে দেখে।আর পানি খায়।ইফতেখার রাগী গলায় সাখাওতকে উদ্যেশ করে বলে…….
——” কি এমন বলেছ ছেলেটাকে বলো তো??কাশি কেনো হচ্ছে?? ”
——-“তোমাকে জানতে হবে না।এটা বাবা ছেলের ব্যাপার।মেয়ের মাথায় তেল দেও মনোযোগী হয়ে।”
নিভ্র বাবার দিকে তাকায়।প্রেমে পড়ে একদম বেহায়া হয়ে গেছে সে।এটা বুঝতে তার বাবারও বাকি নেই।
.
.
সাফা ছাদে উঠেছে সাথে রাফাও আছে।ছাদটা আগের বাড়ির মত না।এটাতে সুইমিংপুল বা বাড়ির উপর বাড়ি নেই।ছাদ জুড়ে অনেক গাছ আছে।নানা রকমের ফুলের গাছে।রাফা ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে সাফাকে সব দেখাচ্ছে। নিভ্র সাফার রুমে একবার উঁকি দেয়।তাকে না দেখে এদিক সেদিক খুঁজতে থাকে।কাজের মেয়ের কাছে যানতে পারে সাফা ছাদে।নিভ্র দ্রুত বড় বড় পা ফেলে ছাদে যায়।ছাদে এক পাশে দাঁড়িয়ে সাফাকে দেখে।রাফা ভাইকে দেখে ধীরে ধীরে কেটেঁ পড়ে।যাওয়ার আগে ভাইকে একটা চিমটি কাঁটে সাথে চোখ টিপ দেয়।নিভ্র বোনের এহেন কান্ডে বিস্ময়ে হতভম্ভ। তার শান্তশিষ্ট বোনটাও দিন দিন চাঞ্চল্যতায় ভরে যাচ্ছে।তার সামনে কথা বলতে যে ভয়ে কাঁপত সে এখন তাকে নিয়ে টিটকারি করে।নিভ্র চোখ তুলে আকাশের পানে তাকায়।নিজে নিজে হাসে।সাফা ছাদ দেখতে ব্যস্ত। ছাদে অসংখ্য গাছ পালা।রেলিং ঘেঁষে ঝুলন্ত লতা-পাতা যুক্ত টব।ছাদের একপাশে একটা লম্বাটে বেতের সোফা।মাঝে সেন্টার টেবিল।তাও বেতের।দুই কাপ কফি খেতে খেতে গল্প করলে দাড়ুন হবে।বিকেলের স্নিগ্ধ বাতাস সাঁ সাঁ করে এসে গাছ, লতা,পাতা গুলোকে নাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। সাথে সাফার সামনে আশা ছোট ছোট চুল।নিভ্র একপা একপা করে সাফার কাছ ঘেঁষে দাঁড়ায়। সাফা মনের খুশিতে দুলে দুলে একবার এ পাশ তো একবার ও পাশ দেখছে।নিভ্র হাত বারিয়ে দেয়।কাঠি টেনে খুলে দিতেই সাফার লম্বা চুল পিঠ জড়িয়ে দুলতে দুলতে নিচে নেমে যায়।সাফা আৎকিত হয়ে পিছনে ঘুড়ে তাকায়।নিভ্র কাঠি হাতে দাঁড়িয়ে হাঁসে। সাফা বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন ছুঁড়ে………
—— “আপ-মনে আপনি এখানে??”
নিভ্র হাঁসে। চোখ তুলে সাফার মুখের দিকে তাকায়।তারপর সাফার মত বলে……
——“ইয়ে মানে ছাদে তো সবাই আসতে পারে তাই না??”
——“তা ঠিক।কিন্তু কাঠি কেনো খুললেন??আমার চুল উড়ছে।
নিভ্র ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে সামনের চুলগুলো সরিয়ে দেয়।ঠোঁট কামড়ে হাঁসে কিছুসময়। সাফা ভয়াত্নক চোখে সে হাসি দেখে।তার মনে হচ্ছে এই হাসির চাইতে মারাত্মক কিছু নেই।এমন কি নিভ্রর ভয়ংকর সবুজ চোখও এত মারাত্মক না।নিভ্র সাফার হাত ধরে রেলিংয়ে হাত রাখে।সামনে তাকিয়ে থেকে এবার বলে………….
——-“খোলা চুলে দক্ষিণা বাতাস,মৃদুল মনের সমাপ্তির পরিহাস।
সাফা কথাটার মানে বুঝে না।বোকার মত তাকিয়ে থাকে অনেক সময়।নিভ্র সাফার দিকে তাকিয়ে সাফার চুল সরিয়ে দেয় গাল, ঠোঁট, নাকের উপর থেকে।মুহূর্তে সাফার লজ্জা পায় খুব।সাফার গালের দু’পাশ লাল টুকটুকে হয়ে আসে।কান দিয়ে যেন ধোয়াঁ বেড় হচ্ছে। কান লাল হয়ে গেছে।শরীরে শিরশির অনুভুতি হয়।লজ্জায় অবশ হয়ে আসে সব।নিভ্র সাফার গালে হাত দেয়।লাল লাল আঙ্গুলের দাগ দেখে নিভ্রর চোখে মুখে আহত ভাব ফুটে উঠে।মনে হয় খুব কষ্ট পাচ্ছে।নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে কিছুক্ষণ মুছে দেয় গাল।সাফার চোখে চোখ রাখে। নীল সবুজের এক অপূর্ব মিলন মেলা যেন।দুজনে হারায় কিছুসময়। চোখের ভাষায় কথা হয়।যা বুঝা মনের ব্যাপার।সবাই বুঝবে না।শুধু মন ছাড়া।নিভ্র নিঃশ্বাস নেয় কয়েকটা।তারপর বললো……..
——“ব্যাথা আছে??”
সাফার হুশ আসে।নিভ্রর কথায় তার লজ্জা যেনো বাড়ে।নিভ্রর মনে হয় চঞ্চল মেয়েদের লজ্জা পেলে আরো বেশি সুন্দর লাগে।ইশশ্ মনে হয় লজ্জায় ডুবে আছে তারা।সাফা উত্তরে বলে…….
——“না”
—-“আমার মনে হয় কিন্তু এখনো ব্যাথা আছে।শত হক আমি কিন্তু ডাক্তার সাহেব।
সাফা চোখ তুলে চট করে তাকায় নিভ্রর দিকে। কিছুক্ষণ ঠোঁট চেঁপে হাসে।বাতাস বহে আপন গতিতে।নিজের বহমান স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায় দুটি মনকে।বাতাসের ঝংকারে সাফার চুল দোল খায়।সাফা হেসেঁ বলে…….
——“তো ঠিক আপনি ডাক্তার।”
—–“তবে আমার চাইতেও বড় ডাক্তার তুমি।তা না হলে সব রোগের ঔষুধ প্যারাসিটেমল দুইবেলা যানতে না।”
সাফা চোখ রাঙিয়ে বলে……
—–“আবার শুরু করলেন??আপনি শুধু আমার আগের কথা নিয়ে খোঁচা মারেন।
—–“আমার তো মনে হয় না।আমি তো তোমার বুদ্ধির তারিফ করছি মাত্র। রাগছ কেনো??”
—-“লাগবে না আমার তারিফ।
সাফা চলে যেতে চায়।নিভ্র আঁটকায়।হাত ধরে সামনে ঘুড়িয়ে দাড় করায়।দূরে দুরে পাহাড় দেখা যাচ্ছে। নীল আকাশ আকাশিতে পরিণত হয়েছে।বাতাসে এক মন কাড়া ঘ্রাণ। নিভ্র দুঃখীত সুরে বলে……
—–“স্যরি মজা করার জন্য।”
সাফা ঠোঁট প্রশারিত করে হাঁসে। নিভ্রর কাছে বায়নার শুরে বলে………
—–“সিলেট ঘুড়াবেন??”
—–“অবশ্যই। বলো কোথায় কোথায় যাবে??
সাফা খুশি হয়।এক হাত দিয়ে সামনের চুল পিছনে গুঁজে বলে…………
——“চা বাগান…”
নিভ্র ভারী অবাক হওয়া গলায় বললো………..
—–“শুধু চা বাগান??
—–“আরো কিছু আছে নাকি??”
—–“অনেক কিছুই আছে।নিয়ে যাবো তোমাকে। তবে একটা কথা আছে!!
সাফা ভ্রু তুলে তাকায়।তারপর বলে…….
—–“কি??”
—–“আরিফরাও ঘুড়তে যাবে মানে রাফা, নিশান অভ্র সাথে আমার আরো কিছু ফ্রেন্ড তুমি তাদের সাথে যাবে নাকি আমার সাথে???”
—–“আরে একা গিয়ে মজা নেই সবার সাথেই যাবো।আপনিও আমাদের সাথে চলেন। ঠিক আছে??ওয়াও কবে যাবো??
নিভ্রর হাসি হাসি মুখ চুপসে যায়।মনে মনে বলে আনরোমান্টিক বউ হবে আমার।হানিমুনেও সবাইকে নিয়ে যাবে মনে হয়।বলবে তা না হলে মজা লাগবে না।স্টুপিড গার্ল।
সাফা ভ্রুকুঁচকে প্রশ্ন করে……
—–“কি বিড়বিড় করছেন??”
—–“কিছু না।কালকে যেতে পারে সবাই।কয়েক দিন পরেই বিয়ে তাই তেমন ঘুড়ার সময় নাই।অল্প সময়।
—–“ও আচ্ছা। সিলেটের চা বাগানটা কত দুর??
—–“একটা না অনেক চা বাগান আছে।তবে তুমি তো চা খাও না এত আগ্রহ কেনো চা বাগানের প্রতি??
—–“সিলেট তো চা বাগানের জন্যই বিখ্যাত তাই আর কি।কফি বাগান তো বাংলাদেশে নাই।তা না হলে আমি কফি বাগানের প্রতি বেশি আগ্রহী হতাম।”
নিভ্র হাঁসে। মনে মনে ঠিক করে।দেখা যাক তুমি কার সাথে যাওও??
.
মাহির সম্পূর্ন ব্যাপার এবার মাথায় এসেছে।তার বুঝতে বাকি নেই নিভ্র সাফাকে পছন্দ করে।শুধু পছন্দ না ভয়ংকর রকমের পছন্দ। মাহির মেজাজ গরম হয়।যেখানে এত বছরে সে একটু জায়গা করতে পারলো না।সেখানে এই মেয়ে আসতে না আসতেই নিভ্রকে নিজের মাঝে আঁটকে দিয়েছে।এটা মাহি হতে দিবে না।কিছু একটা করতে হবে।মাহি ভাবনায় পরে।
.
নিভ্র সাফার চুল বেধে দেয়।একদিনে এতটা শিখে যাবে সাফা ভাবতে পারেনি।হাত ঘুড়িয়ে খুব সুন্দর করে কাঠি দিয়ে চুল আঁটকে দিয়েছে নিভ্র।সামনের চুলগুলো কানে গুঁজে দিয়েছে।দু গাল নিজের হাতে নিয়ে হালকা মুছে দিয়েছে।সাফা শুধু লাজুক হেঁসে নিভ্রর কান্ড দেখছে।
.
.