পেইন !! লেখাঃ এপিস ইন্ডিকা !! Part- 05
স্কুল ছুটি হয়েছে ৫টায়।।
এখন বাজতেসে রাত ৭ টা।।মারিয়া এখনো ঘরে ফিরে নি।।মারিয়ার মা চিন্তিত হয়ে বাড়ির উঠোনে পায়চারী করছে।।মারিয়ার বাবা গিয়েছে মারিয়ার বন্ধু বান্ধবীদের বাসায় খুঁজতে।।শিশির পাশে বসে তার মার পায়চারী দেখে যাচ্ছে।।ছোট শিশির কি করবে বুঝতে পারছেনা।।ভাবছে,,
—-আজ বড় হলে ওকে ঠিক খুঁজে বের করতাম।।
চোখের সামনে ভেসে উঠছে সকালে বোনের সাথে কাটানো শেষ স্মৃতি টুকু,,।
সকাল সকাল বোনের হাত ধরে বের হয়ে যায় স্কুলে শিশির।।ছোট হলে শিশির বড়দের মতো আচরণ করতো সব সময়।।বড় ভাইয়ের মতো দায়িত্ব পালন করতো সে।।মারিয়াও তার নাক চেপে বলতো,
—–” ওলে আমার বড় ভাইটারে”।।তারপর দুজনে ফিক করে হেসে দিতো।।
আজও তার ব্যতিক্রম না।।
যথারীতি স্কুলে এসে ক্লাস করতে চলে যায় তার।।শিশির ছোট ক্লাসে থাকায় শিশিরে আগে ছুটি হয়ে যায়।।শিশির স্কুলে দেরিতে ভর্তি হওয়াতে সে ছোটদের সাথে ক্লাস করে।।এখানে তার কিছু বন্ধু বান্ধবীও তৈরি হয়।।কিন্তু তার সবাই ছোট।। তাদের মধ্য সবচেয়ে ছোট ছিল বিন্দু।।আর বিন্দুকে শিশির ছোট থেকেই পছন্দ করতো।।বিন্দুও করতো।।কারণ মেয়েরা বেশীর ভাগ বাবা-ভাইয়ের থেকে আবদার করতো বায়না ধরতো কিন্তু বিন্দু তা পারে না।।তাই তার সব আবদার থাকতো শিশিরকে জুড়ে।।শিশিরও তার প্যাকট মানি দিয়ে তাকে এটা ওটা কিনে দিত।।সেদিন স্কুল ছুটির পর বিন্দু আর শিশির তার বোনের কাছে যায়,,।।মারিয়া তাদের দেখে ক্লাস থেকে বের হয়ে আদর করে বলতে লাগে,,
—-ওমা আমার রোমিও তার জুলিয়েটকে নিয়ে এসেছে দেখছি।।
শিশির রাগী সুরে বলতে লাগে,,
—–আপি,,,,!
মারিয়া হাসতে হাসতে বলতে লাগে,,
—-আচ্ছা বাবা সরি।।এখন বাসায় যা।।বিন্দুকে ওর বাসায় পৌছে দিস কিন্তু।।
বিন্দু সাথে সাথে মারিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
—-তুমি অনেক কিউট আপি।।আসি।।
বলে চুমু এঁকে দেয় মারিয়ার গালে।।মারিয়াও তাকে চুমু খেয়ে বলে তুমি কিউট বাবু।।
চলে আসে তার।।বিন্দুকে বাসায় দিয়ে শিশির চলে যায় তার বাসায়।।এভাবেই দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়।।মারিয়ার জন্য ভাত বেরে জুড়াতে থাকে মারিয়ার মা।।শিশির মাঠে খেলতে গেছে।।
এভাবে বসে ৃথাকতে থাকতে সন্ধ্যা হতে থাকে।।শিশিরও চলে আসে।।এসে দেখে তার মা পায়চারী করছে।।সঙ্গে সঙ্গে তার বাবাকে কল করে।। বাবা এসে খুজঁতে যায় এদিক ওদিক পায় না সে।।শেষে ঘরে ফিড়ে আসে মারিয়ার বাবা।।
এভাবে কেটে যায় ৭ দিন।।
শিশিরদের বাড়ি যেন শুনশানে পরিণত হয়েছে।।
মারিয়াকে না পেয়ে বেহাল অবস্থা তাদের।।পুলিশে রিপোর্ট করেন তারা।।পুলিশ ও কিছু জানাতে পারে না।।সত্য বলতে জানাতে চায় না।।কেউ তো আর সেধে সেধে তার জান খোয়াতে যাবে না।।শিশিরের পরিবার পুরোপুরি ভেঙ্গে পরে।। তারা জানা শর্তেও কারা এমন করছে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না।।কারণ তাদের কাছে প্রমান নেই।।এর মাঝে শিশিরের বাবা বার কয়েক রাহিন সরকারের বাড়িতে গিয়ে হাত -পা ধরেছে।। কিন্তু তারা তাকে অপমান করে বের করে দিসে।।যা শিশিরের খুব গায় লেগেছিল।।
সেদিন বিকেলে শিশির পুকুর ধারে বসে রাগে ইট ছুড়ছিল।।তখনি ছোট পায়ে হেটে হেটে বিন্দু এসে তার পাশে বসে।।বিন্দুকে দেখে রাগ যেন আরও বের গেল।।তবু চুপ করে বসে রইল।।তখনি পাশ দিয়ে একটা বেলুন ওয়ালা যাচ্ছিলো।।ছোট বিন্দুর ঠোঁটের কোনে হাসি উকি দিল।।সে সাথে সাথে শিশিরকে ঝাঁকি দিতে লাগলো।।তখন আর শিশির তার রাগ ধরে রাখতে পারলো না।। বিন্দুকে ধাক্কা মারলো জোরে।। আর সে পায়ে অনেক ব্যথা পায়।।আর জোরে কাঁদতে লাগে।।শিশিরের যখন হুম হয় তখন দেখে বিন্দুর পা থেকে রক্ত পড়তেসে।।শিশির বিন্দুর কাছে ধরতে গেলে বিন্দু বলে উঠে,,
—-ভাইয়া তুমি খুব পঁচা আমাকে মারলে,, দেখ রক্ত পরছে।।আমি আর কথা বলব না তোমার সাথে।।চলে যায় বিন্দু সেখান থেকে।। সেদিন ছিল শিশিরের সাথে বিন্দুর শেষ দেখা।।
৮ দিনের মাথায় শিশিরের দের বাসায় একটি কল আসে হাসপাতাল থেকে,,
কলটি রিসিভ করতেই থমকে যায় শিশিরের বাবা।।
চোখ দিয়ে গড় গড় করে পানি পড়তে লাগে তার।।
দৌড়ে হাসপাতালে ছুটে চলেন তিনি।।তার পিছন যায় শিশিরের মা আর শিশির।।সরকারী হাসপাতালের একটু নুংরা বেডে শুয়ে আছে বিন্দু।। তাকে দেখে শিশিরের বাবা-মা দুজনেই স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে।।তাদের সুন্দর মেয়েটার চেহারা বিধ্বস্ত হয়ে আছে।।
তখনি পাশের ডাক্তার এসে বলতে লাগে,,
—-কি হয় আপনাদের?
শিশিরের বাবা কোনো রকম নিজেকে সামলিয়ে বলে উঠে,,
—-আমার মেয়ে।।
—-ওহো আচ্ছা আপনি একটু আসুন আমার সাথে বাহিরে।।
ডাক্তারের পিছনে গেলেন শিশিরের বাবা তার চেম্বারে।।
।
।
ডাক্তারের কথা শুনে কান গরম হয়ে গেল শিশিরের বাবার।।নীজের মেয়ের এই অবস্থা কেউ মানতে পারে না।।তিনিও পাড়তেসেন না।।তখন ডাক্তারের চেম্বারে যেতেই ডাক্তার বলে লাগে,,
—-আপনার মেয়েকে রেপ করা হয়েছে।।শুধু রেপ না নানা ভাবে শারীরিক টর্চারও করা হয়েছে।। তার শরীরে সিগারেট দিয়ে পুরানোর দাগ আছে।।তার সাথে মম গেলে ফালানো হয়েছে আপনার মেয়ের শরীরে।।ওর অবস্থা বেশী ভাল না।। সে বাঁচবে কি না আমরা বলতে পারছি না।।সে তার মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরেছে।।
সেখানেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠে শিশিরের বাবা।।কোনো বাবা মা চায় না তার মেয়ের এমন অবস্থা হোক।।
সেদিন তিনি মেয়েকে ঘরে নিয়ে আসেন।।হাসপাতালের চিকিৎসা শেষ।। তাকে এখন ভাল পরিবেশ দরকার সেরে উঠার জন্য।।কিন্তু মারিয়ার অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে।।
এর মাঝে থানায় রাহিন সরকার আর তার বাবার নামে জিটি করতে গেছে কয়েক বার কিন্তু জিটি তারা লিখছে না।।কারণ জিগাসা করলে বলছে প্রুব দিতে।।যা তাদের কাছে নেই।।হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরত আসেন তিনি।।
সব রাস্তা যখন ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল,, তখনি একটি আশার আলো দেখতে পায় তারা।।
সেদিন,,
চলবে,