The Mysterious Man- Mafia Boss- Season-3 (Part-2)

The Mysterious Man- Mafia Boss- Season-3 (Part-2) Part- 66

আরাভের দিকে অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে থাকে ইয়ারাবী।লোকটাকে ওকে এভাবে ধমক দিতে পারলো?রোয়েন রাগ নিয়ে আরাভের দিকে তাকিয়ে আছে।কিছু বলতে যেয়ে ও বলেনি।ইয়ারাবীকে এভাবে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরাভ আবার ও ধমক দিয়ে বলল,
-কি হলো কথা বলছোনা কেন?
সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যেতে নিলেই রুপন্তী ওর হাত ধরে বসায়।রেহান ক্ষুদ্ধ হয়ে আরাভের দিকে চেয়ে আছে।আরাভ আবার ও কিছু বলতে নিবে তখনই রোয়েন রাগী গলায় ডেকে উঠে,
-আরাভ চুপ কর।
আরাভ থেমে গেলো।ইয়ারাবী এবার আরাভ থেকে চোখ সরিয়ে নিচে তাকায়।সবাই ইয়ারাবীকে দেখছে।কি করতে চাইছে এই মেয়ে?ইয়ারাবী কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেছে।আরাভের দিকে আড়চোখে তাকায় ও।আরাভ ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে আছে তবে সেই চোখে রাগ নেই শুধু রয়েছে শুধু আকুতি।ইয়ারাবী এবার সামনে তাকিয়ে নিজের বাবা মাকে দেখলো।রেহান রুপন্তী মেয়ের দিকে চেয়ে আছে।আবার আরাভের দিকে তাকায় ইয়ারাবী।আরাভ ইশারা করলো যাও। সকল রাগ অভিমান ভুলে মা বাবাকে তাদের সন্তান ফিরিয়ে দাও।ইয়ারাবী রুহী রোয়েনের দিকে তাকায়।সবাই ওর দিকে চেয়ে আছে বাবা মায়ের সাথে ওর আবেগঘন মুহূর্তটি দেখার অপেক্ষায়।ইয়ারাবী ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে রুপন্তী রেহানের সামনে এসে দাঁড়ায়।
ওর চোখে পানি। কান্না উথঁলে উঠছে।একেবারে কেঁদেই দিলো ইয়ারাবী।তারপর ক্রন্দনরত অবস্থায় বলল,
-আমাকে মাফ করে দাও মাম্মা পাপা আ’ম সরি।
-নারে আম্মু এভাবে বলিসনা।আমাদের মাফ করে দে প্লিজ।মেয়েকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে দিলো দুজনে।
রুহীর চোখে পানি তবে সেটা খুশির।বোনটা নিজের মেয়েকে ফিরে পেয়েছে।রোয়েনের মুখে হাসি আজ ভীষন খুশি সবাই।আরাভের চোখের কোনে পানি।সেটা লুকাতে চাইছে ও।ইয়ারাবী বাবা মায়ের বাহুডোরে থেকে আরাভের দিকে তাকায়।আরাভ ওর দিকে চেয়ে একটু হাসলো।ইয়ারাবী ইশারা করে জানালো থ্যাংক ইউ।ইয়ারাবী এবার সরে এলো বাবা মায়ের থেকে।রুপন্তী মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে আবার জড়িয়ে নিলো।খুব কাঁদছে ও।রেহান চোখ মুছে আরাভের দিকে তাকায়।তবে কিছু বলেনি।আরাভ রেহানের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।লজ্জা লাগছে ওর।
রেহান এবার উঠে আরাভের সামনে এসে দাঁড়ালো।আরাভ চোখ মেলাতে পারছেনা চাচার সাথে।আরাভের কাঁধে হাতে রাখে রেহান
– এই বেটা তাকা আমার দিকে।
-চাচ্চু আ’ম সরি।কাঁপা গলায় বলল আরাভ।
-তাকা বললাম।
-চাচ্চু আমি পারবোনা আপনার সাথে চোখ মেলাতে।
-রেহানের চোখে পানি আবার এসে গেছে।আরে বেটা তুই আমার ছেলে।মেয়েকে আপন করে নিয়েছি ছেলেটাকে কেন মাফ করতে পারবোনা?আয় আব্বু আমার কাছে আয়।আরাভ কে বুকে জড়িয়ে নেয় রেহান।আরাভ এবার কেঁদে দিলো চাচাকে জড়িয়ে
-এতো বছর দূরে ছিলি আমাদের ছাড়া।
-আর কখনো যাবোনা চাচ্চু।
ইয়ারাবী মাকে জড়িয়ে হাসছে।রেহান সরে এলো অনেক্ষন পর।রুপন্তী এসে আরাভের সামনে দাঁড়ায়।ওর মুখে হাসি।
-খালামনি!!!
-চুপ একদম চুপ।
-প্লিজ আমার কথা,,,,,,,
-বললাম না চুপ।আমার ছেলেটাকে দেখবো একটু।কান্না জড়িত কন্ঠে বলল রুপন্তী।
রুপন্তী আবার বলল সেদিন প্রথম তোকে দেখেই কেন জানি মনে হচ্ছিলো তুই আমাদের আরাভ।আমার ভাবনা ঠিকই ছিলো।আরাভ নিশ্চুপ।রুপন্তী এবার হাত উঠিয়ে আরাভের কান টেনে বলল,
-এখন তো মেয়ের জামাই আবার আমার ছেলে ও।তাহলে কান টানতেই পারি।
-আহ আহ খালামনি লাগছে প্লিজ।
-রুপন্তী আরো জোরে টান বাঁদরটার কান।বলে উঠে রুহী।
-না আপি।আমার ছেলেটাকে একটু বুকে জড়াবো আমি।রুপন্তী আরাভকে বুকে জড়িয়ে নিলো।
ইয়ারাবীর আজ খুশির শেষ নেই।এখন মারা গেলে ও দুঃখ থাকবেনা।সকল দুরুত্ব মুছে গেছে।আজ ওরা সবাই এক হয়ে গেছে।রোয়েন বাবুর্চি ডাকিয়ে রান্না শুরু করেছে।সবাই একসাথে রাতের খাবার খাবে বলে।ইয়ারাবীকে রুপন্তী পাশে বসিয়ে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে।ওর কি খেতে ইচ্ছে হয় কিছু লাগবে কিনা সব জেনে নিচ্ছে।আবার নির্দেশনা ও দিচ্ছে।ইয়ারাবী মাথা নাড়ছে।ওর চোখ রেহানের সাথে গল্পে নিমজ্জিত আরাভের দিকে।আরাভ ও একসময় কথা বলতে বলতে ইয়ারাবীর দিকে তাকায়।চোখাচোখি হলো দুজনের।আরাভ একটু হেসে রেহানের সাথে গল্পে মন দেয়।তবে আড় চোখে স্ত্রীকে দেখার সুযোগটা ছাড়ছে না ও।ইয়ারাবী ও স্বামীকে দেখে মিটিমিটি হেসে যাচ্ছে।রুপন্তী বুঝতে পেরে মুচকি হাসে।ওর ছোট্ট মেয়েটা ও ভালবাসতে শিখেছে।আর ভালোবাসার মানুষটার কাছে শান্তিতে আছে জেনে আরো ভালো লাগছে ওর।কিছুক্ষন রোয়েন আরাভ আর রেহানের সাথে যোগ দেয়ায় আরাভ আর ইয়ারাবীর দিকে তাকাতে পারেনা।কারন চাচ্চুর চোখকে ফাঁকি দিতে পারলে ও আরাভের চোখকে ফাঁকি দেয়া পসিবল না।কিছু সময় পর রুহী রুপন্তী আর ইয়ারাবীর সামনে এসে বসতেই দুবোনে গল্প শুরু করলো।ওদের হয়ত মনে ও নেই ইয়ারাবী ওদের সামনে।
-আপি প্ল্যান কি এবার?
-কোন প্ল্যান নেই।
-এতো স্পেশাল দিনে প্ল্যান নাই?
-হুম।
-জিজু নিশ্চয়ই তোর জন্য কিছু প্ল্যান করে রেখেছে।
-হয়তোবা।রোয়েনের দিকে তাকায় রুহী।
দুবোনের গল্প শুনে শুনে ইয়ারাবীর কান ঝালাপালা।তারপর ও কৌতুহল না সামলাতে পেরে বলল
– কি স্পেশাল?
-বড়দের কথা জেনে কাজ নেই তোর।এখন আমাদের কথা বলতে দে।বলে উঠে রুপন্তী।
ইয়ারাবী চুপচাপ সিড়ির দিকে পা বাঁড়ায়।ইয়ারাবী যাওয়ার সময় আরাভ ওকে দেখে।
-বাবাই চাচ্চু আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কল করতে হবে।আই উইল বি হিয়ার ফাইভ মিনিটস।
-যাও।বলে উঠে রোয়েন।
আরাভ উপরে চলে এলো।ইয়ারাবী বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।কোমড় টা বড় লাগছে।আরাভের কেমন যেন খারাপ লাগতে শুরু করে।ওর পিছনে গিয়ে কোমড় জড়িয়ে ইয়ারাবীর কাঁধে মুখ ডুবায় আরাভ।
-থ্যাংকস।
-আরাভ ইয়ারাবীর চুমু দিতে দিতে নেশা লাগানো কন্ঠে বলল কেন?
-আজ ধমক টা না দিলে হয়ত এ দিন টা দেখতে পেতাম না।
-শশশশ আরাভ ইয়ারাবীর কাঁধের চুল সরিয়ে ওর গলায় চুমু দিতেই ইয়ারাবী কেঁপে উঠে আরাভের শার্টের কোনা চেঁপে ধরলো।
আরাভ ওকে সামনে ফিরিয়ে নিলো।ইয়ারাবী আরাভের বুকে মাথা রাখে।আরাভ ও স্ত্রীকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো।
.
.
.
.
ভালবাসায় বেশ কিছুটা সময় কাঁটিয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসে আরাবী।আর্ভিন এখনো ঘুমে বিভোর।আরাবী কালো সাদা মিশ্রিত একটি শার্ট আর ব্লাক জিন্সপ্যান্ট পরে নিজের চুল গুলো কে আঁচড়াতে শুরু করে।এর মাঝেই আর্ভিন উঠে আরাবীর দিকে তাকিয়ে থাকে।হঠাৎ ওর হার্ট যেন ভিতর থেকে বলল,
-কিরে লুচু এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?এই প্রথম দেখছিস নাকি?
-যতোবার এ রুপ দেখি নতুনই মনে হয়।বলে উঠে আর্ভিন।
-জি কিছু বললে?আর্ভিনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে আরাবী।
-নাহ।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।খেয়ে বের হবো নে।
আর্ভিন ফ্রেশ হতে চলে যায়।দুজনে রেডি হয়ে নিচে নেমে খেয়ে নিলো।ওদের বাঙ্গালী ড্রাইভার কে জিজ্ঞেস করে আর্ভিন।
-আশেপাশে কি আছে দেখার মতো?
-স্যার আধঘন্টা দুরত্বে আছে পিটাকী স্ট্রীট।এখানে মেলা বসেছে।তারপাশে আছে সাইরি কার্নিভাল।ঐখানে নাচ লাইভ গান হয়।যেতে পারেন খুব সুন্দর।
-আর্ভিন আগে পিটাকী স্ট্রীটে চলো।বলে উঠে আরাবী।
-সাইরী কার্নিভাল কতো দূর পিটাকী স্ট্রীট থেকে?জিজ্ঞেস করে আর্ভিন।
-দশমিনিট স্যার।
-তাহলে আগে পিটাকী স্ট্রীটে চলো।
-জি স্যার।
গাড়ি চলতে আরম্ভ করে।আর্ভিন জানালা একটু খুলে আশেপাশে ভিডিও করছে।কখনো বা ক্যামেরাটা আরাবীর দিকে ঘুরিয়ে ওকে ভিডিও করছে আর আরাবী নিজের মুখ ঢেকে নিচ্ছে আবার কখনো হাস্যকর মুখভঙ্গি করছে।কিছুসময়ের মাঝে ওরা পৌছে গেলো পিটাকী স্ট্রীটে।পুরো রাস্তার ওপর বিভিন্ন রং এর ছাতা ঝুলানো। বেশ সুন্দর মেলা বসেছে এখানে।ড্রাইভার ওদের গাইড হয়ে এসেছে।আর্ভিন আশেপাশে ছবি তুলছে আবার কখনো আরাবীর ছবি তুলছে।কিছু অর্নামেন্টস শপ দেখতে পায় আরাবী।সেখানে গেলো ওরা।মেটাল অলঙ্কার আছে এখানে।ইয়ারাবী আর ওর নিজের জন্য কিছু অর্নামেন্টস কিনে নেয় আরাবী।আইসক্রীম খেলো ওরা।
এখানে বেশ কিছুসময় কাঁটিয়ে সাইরি কার্নিভালের উদ্দেশ্যে রওনা হয় ওরা।
লাইভ গান চলছে।সবাই ভিডি ও করছে।আরাবী আর্ভিন কোন অর্থ বুঝতে পারেনা গানের।
ওরা সরে গিয়ে হাঁটতে থাকে।হঠাৎ দেখলো ৫ জন মেয়ে ওদের ন্যাটিভ ড্রেস পরে নাচছে।আর্ভিন কে একজন টেনে নিয়ে গেলো।আর্ভিন ও নাচতে লেগে যায় ওদের সাথে।
আরাবী রাগে ফুঁসছে আর্ভিনের দিকে চেয়ে।
এদিকে ডিনার সেড়ে রেহান রুপন্তী যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
-আপি বেশি জ্বালায় না তো তোর বৌ মা?দুষ্টু হেসে জিজ্ঞেস করে রুপন্তী।
-নারে মেয়েটা আমার খুব লক্ষী।
রুপন্তী এবার আরাভের কাছে এলো।আমাদের ছেলে তুমি।আর এখন মেয়ের জামাই।অনেক আদরের জামাই।আমাদের থেকে যতোটুকু আদর পাওয়ার কথা ছিলো তা আমরা দিতে পারিনি তোমাকে বাবা।বলে উঠে রুপন্তী।
-খালামনি কি বলছো এসব?দোষ করেছি শাস্তি তো পাওয়ারই ছিলো।আর বিয়ের পর থেকে শুরু করে বিয়ের আগের সব আদর পাওনা আছে।উষুল করে নিবো।
-আরাভের গালে আলতো করে চাপড় মারে রুপন্তী।বড্ড দুষ্টু হয়েছিস আরাভ।আদর অবশ্যই পাবি তাও আবার দু ভাগের।জামাই আর ছেলের আদর।
-অবশ্যই। খালামনি চাচ্চু তোমরা এসো আবার।
-অবশ্যই। তোকে এভাবে যেতে বলবো না।একদম দাওয়াত করে নিয়ে যাবো বাসায়।ইয়ারাবী আসি আমরা।বলে উঠে রুপন্তী।
ইয়ারাবী মা বাবা কে আবার জড়িয়ে ধরে।আরাভ ওদের দুজনের পা ধরে সালাম করলো।
চলবে