পেইন !! লেখাঃ এপিস ইন্ডিকা !! Part- 04
তখনি,,
পায়ের কিছুটা উপর একটা শুকনো ক্ষত দেখে থেমে যায় শিশির।।বুঝাই যাচ্ছে ক্ষতটা অনেক পুরনো।। কিছু স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো শিশিরের।।সাথে সাথে চোখ ঝাপসা হয়ে যেতে লাগলো তার।।
এদিকে হটাৎ শিশির থেমে যাওয়ায় নআল্লাহর কাছে শুকরিয়া করে যাচ্ছে বার বার।।তারপরও ভয় করছে কারণ সে বুঝতে পারছে না এ লোকের মতি গতি।।
তখনি শিশির নিজেকে সামলিয়ে বলে উঠে,,
—-এটা কিসের চোট??
সামনের ব্যক্তির এত ঠান্ডা কন্ঠ শুনে অবাক বিন্দু।।সনে কাঁদ কাঁদ কন্ঠে বলে উঠে,,
—-কিছু আপন মানুষের দেয়া শেষ চিন্হ।।আবার কেঁদে উঠে বিন্দু।।কিন্তু এবারের কান্নাটা ভিন্ন।।
বিন্দুর কথাটা শিশিরে মনে লাগে সে সাথে সাথে উঠে বিন্দুর দু হাত পায়ের বাঁদন খুলে চলে যায়।।
বিন্দু সেখানেই শুয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগে,,
কিন্তু এ কান্না যেন শিশিরের করে যাওয়া টর্চারের না।।হারিয়ে ফেলা কোনো অতীতের।।
দুজন দু দিক কাঁদছে।।
দুজনের দুঃখ যেন এক।।
মনে পরে যাচ্ছে সেই ছোট বেলার কথা গুলো।।হাসি খুশি ভরা জীবনের কাহিনী গুলো।।
💥অতীত💥
মুখপুড়ী মেয়ে আর কত কষ্ট সহ্য করতে হবে আমাদের তোর জন্য বল।।গ্রামের আনাচে কানাচে সবাই তোর কুকর্মে কথা সমালোচনা করেছে।।কেন যে তোকে জম্ম দিলাম।।জম্মের সময় কেন যে ২ টাকা দিয়ে ব্লেট এনে তোর গলায় বসাই নি।। আসলেই সব দোষ আমার।।আজ আর তোকে বাচিঁয়ে রাখবো না।।জোড়ে চিল্লিয়ে কথা গুলো বলেই বিন্দুর মা বিন্দুকে তাদের রান্নার জলন্ত চুলা থেকে খড়ি বের করে লাগিয়ে দেয় মারিয়ার হাতে,,,,।।
—ওমাগো।।বলে জোড়ে আর্তনাদ করে উঠে মারিয়া।।
তখনি পাশের বাড়ির কিছু মহিলার দৌড়ে আসে বিন্দুদের বাড়িতে।।
কিছু মহিলা মারিয়ার হাতে পানি দিচ্ছে।।আর কিছু মহিলা মারিয়ার মাকে আটকিয়ে রেখেছে।।
নিজেকে ছাড়া বার চেষ্টা করতে করতে মারিয়ার মা বলে উঠে,,,
—ছাড়েন আপা,,, আজ এই মুখপুড়ীরে আমি মাইড়া ফেলমু।।নয় তো আমি মরমু।।
এদিকে ১৭ বছরের মারিয়া থরথর করে কাঁপছে তার মার এই অবস্থা দেখে।।আর তার ঝলসে যাওয়া হাত আরেক হাতে ধরে মাটিতে বসে কান্না করে যাচ্ছে সে।।
মারিয়ার মাথায় কিছু ঢুকছে না।।সেই তো সকালে ধোয়া উঠানো গরম ভাত ফু দিতে দিতে খাইয়ে আদরের শোহিত স্কুলে পাঠালো।।স্কুল থেকে আস্তে না আস্তেই এসব শুরু হয়ে গেছে।।আজ তার মার এমন ভয়ানক রূপ দেখে যেন শকে চলে গেছে সে।।তার পাশেই তার ৭/৮ বছরের ছোট ভাই জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছে।।
।
।
—আপা মাথা ঠান্ডা করেন।।বলে পাশের চাপ কল থেকে চেপে এক জগ ঠান্ডা পানি এনে মারিয়ার মার মাথা ঢাললো আর একটু খাওয়ালো।।
।
।
।
তারপর যে যার বাসায় চলে গেল।।রয়ে গেল মারিয়ার মা আর মারিয়া ও তার ভাই শিশির।।ফ্যালফ্যাল চোখে একবার মায়ের দিক তো এক বার বোনের দিক তাকাচ্ছে ছোট শিশির।।
।
।
।
সেদিনটি কোনো রকম পার হয়ে যায়।।মারিয়া নিজের ভাইকে নিয়ে ঘরে এসে হাত মুখ ধুয়ে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।।তখনি মারিয়ার মা ঘরে আসে,,মারিয়াকে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে দেয়।।পুঁড়া হাতটায় চুমু একে দেয় তিনি।।আর বলতে লাগে,,
—-মারে মাফ করে দিস আমায়।।আমি কেমনে পাড়লাম আমার বাচ্চা মেয়েটারে মারতে।।বলেই কাঁদতে লাগেন।।
তখন শিশির ঘুমায় নি।।চোখ খুলে মা আর বোন এভাবে দেখে খুশি হয় অনেক।।এবং জড়িয়ে ধরে তাদের।।তখনি শিশিরের বাবা আসে আর বলতে লাগে,,
—-আমাকে বাদ দিয়া গ্রুপ হাগ হচ্ছে।। বলে তিনিও যোগ দিলেন।।
চার মিলে গ্রুপ হাগ করতে লাগলেন।।
একটি হাসি খুশি পরিবার তাদের।।
যেখানে ভালবাসার শেষ নেই।।
।
।
তখন মারিয়া স্কুলে যাওয়ার পর কিছু আল্লাহওয়ালা মানুষ আসেন।।এসেই নানা কথা শুনিয়ে যায় মারিয়ার মাকে।।যা দূর থেকে শুনেতে পায় শিশির।।
তখন লোক গুলো বলে গেছে,,মারিয়া অনেক খারাপ হয়ে গেছে,,মারিয়া ছেলেদের সাথে ওলা মেলা করে বাকি মেয়েদের খারাপ করে দিচ্ছে।।
তিনি ভাল করে যানেন এরা দেখাক ভিতরে তারা হচ্ছে একটি নিকৃষ্ট পিশাচ।। তার ছেলে ২ বার খুন করে জেল খেটেছে।।আর সেই ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় তারা।।মানা করার পর থেকেই,,মারিয়াকে খারাপ বলে যায় প্রতিনিয়ত।।
এই নিয়ে অনেক বিরোধিতা করেন মারিয়ার বাবা।।কিন্তু খারাপ মানুষদের সাথে কেউ কি পেরে উঠেছে কখনো!!!তার উপর তারা ওই গ্রামের সব থেকে ধনী।।যার জন্য মুখ খুলতে ভয় পায় সবাই।।
আমাদের সমাজে এমন অনেক নিকৃষ্ট প্রানী আছে যারা মুখস পরে থাকে আল্লাহওয়ালা হওয়ার।।আর সেই মুখসের পিছনে তারা নানান রকম হট্টগোল করে যায় প্রতিনিয়ত।।
।
।
পরের দিন রীতিমত স্কুলের জন্য হাসি খুশি পা বারায় মারিয়া।।কিন্তু সেই হাসিটা যে তার শেষ হাসি ছিল জানাছিল না মারিয়ার মার।।
।
।
চলবে,,