অন্তরালে তুমি আমি

অন্তরালে তুমি আমি !! Part- 10

“জলির শরীরটা আর চলছে না।মাথাটা ঘুরাচ্ছে।চার দেয়ালের মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসছে।চোখের সামনে যা কিছু দেখছে সব ঝাপসা।এই বুঝি জলি মাথা ঘুরে পরে যাবে! আদির শার্ট’টা বুকে জড়িয়ে রেখেছে।কান্না করার শক্তিটুকুও নেয়। আর কিভাবেই বা হবে আজ তিনদিন যে একফোঁটা পানিও মুখে তোলে নি।”

“জলির মা আজও খাবার নিয়ে এসে জানালার কাছে রাখে।ঘন্টা দুই পর প্লেট নিতে এসে দেখে খাবার এখনো সেখানেই পরে আছে।জানালার গিরিল ছুয়ে তাকিয়ে দেখে জলি মেঝেতে।জলির নাম ধরে কয়েকবার ডাক দেয়। কোনো সাড়া নেই।তারপর ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে।”
—জলি? কি হয়েছে মা তোর? ওঠ বলছি?
ওগো কোথায় তুমি তারাতাড়ি আসো।আমার জলির কি হলো?

“তার চিৎকার শুনে জলির বাবা আর অহনা ছুটে আসে।জানালার গিরিল দিয়ে দেখে জলি মেঝেতে পরে আছে।অহনা বাইরে থেকে জলির মুখটা ভালো করে দেখতে পারে না।জলির বাবা দিয়ে রুমের দরজাটা খুলে দিলে সবাই রুমের ভেতরে আসে।এসে দেখে জানালার সামনে দেয়ালের সাথে ভাত, রুটি, ডিম, এমন অনেক খাবার যা এতোদিন ধরে জলিকে খেতে দেওয়া হতো।সব পঁচে গন্ধ হয়ে আছে রুমের মধ্যে।তাহলে কি জলি কিছুই খেতো না?সব রুমের মধ্যেই ফেলে রাখতো? ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে জলির বাবা গিয়ে জলিকে ধরে বিছানায় উঠাই।অহনা এগিয়ে গিয়ে জলির মুখটা দেখেই অবাক।”
—একি জলি তুমি?
“জলির বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলে,”
—তুমি চেনো আমার জলিকে?
“অহনা কিছু বলতে যাবে তার আগেই জলি বিরবির করে বলে উঠলো,”
—ভালোবাসি তোকে।একবার বলার সুযোগ কি পাবো না।নাকি তার আগেই মরে যাবো।

“জলির বাবা-মায়ের খেয়াল এবার জলির দিকে গেল।তারা জলির কাছে জানতে চাই,”
—কাকে ভালোবাসিস তুই মা?

“অহনা ভাবে জলি আবিরের কথা বলছে।তাই মুহূর্তেই ছুটে জলির রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় পরে কাঁদে। আর সেদিন রাতের কথাগুলো ভাবে।”

“এদিকে ডাক্তার এসে জলিকে দেখে যায়। আর বলে খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতোন না করাই জলির এমন দশা হয়েছে।তার উপর শরীরেরও যত্ন নেয় না।এই মুহূর্তে মানসিক অশান্তিটা আর দুশ্চিন্তা ওর মন থেকে দূর করতে হবে।”

“অহনা কিছুক্ষণ পর আবার জলির রুমে আসে আর ডাক্তারের বলা কথাগুলো শুনে নেই।ডাক্তার চলে গেলে জলির বাবা-মা জলির কাছে আসে আর বলে,”
—কাকে ভালোবাসিস তুই মা? একবার আমাদেরকে বল। আমরা তাকে তোর কাছে এনে দেবো।
—জলির যে হুস নেয়।অসুস্থ অবস্থায় ওই একই কথা বলে যাচ্ছে।
“অহনা জলির অবস্থা খারাপ দিকে যাচ্ছে দেখে বলে,”
—জলি আমার স্বামীকে ভালোবাসে আঙ্কেল।

“জলির বাবা ঘুরে তাকায়”,
—এটা তুমি কি বলছো মা?
—ঠিকই বলছি।জলি সেই মেয়ে যার জন্য ও আমাকে এতো মেরেছে।যার সাথে আমার চোখের সামনে…

“অহনা আর কিছু বলতে পারে না কেঁদে দেয়।কিছুক্ষণ পর চোখ মুছে বলে,”
—আর দেরি করবেন না আঙ্কেল আবিরকে জলির কাছে আনার ব্যবস্থা করুন।
—অসম্ভব! যেই ছেলে নিজের বউ থাকতে অন্য মেয়ের সাথে মিশতে পারে।সেই ছেলেকে আমি আমার মেয়ের কাছে আসতে দেবো না।
—প্লিজ আঙ্কেল।বোঝার চেস্টা করুন।জলিকে বাঁচানোর জন্য এই একটাই উপায় আছে।

“জলির মাও জলির মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক জোড় করে জলির বাবাকে।তারপর সে রাজি হয়ে যায়। অহনা এবাড়িতে আছে সেটা আবিরকে বলতে বারন করে তাই বলে না।শুধু হাত জোড় করে জলির জীবন বাঁচানোর জন্য আবিরের কাছে ভিক্ষা চাই একবার জলির কাছে আসার জন্য। আবির প্রথমে রাজি না হলেও বন্ধুত্বের কথা ভেবে জলির বাড়িতে আসে।”

“আবির আসতেই অহনা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পর জলির রুমের সামনে এসে আবিরকে দেখে।কিন্তু রুমে ঢোকে না।জানালার গিরিল ছুয়ে দাড়িয়ে দূর থেকে আবিরকে দেখতে থাকে।আর মুখ টিপে কাঁদতে থাকে। যেন সেই কান্নার আওয়াজ আবিরের কানে না পৌঁছায়।”

“ওদিকে ফ্লাইটের টিকিট কাটা শেষ।আজ আদি চলে যাচ্ছে আমেরিকায় আর আসার ইচ্ছা নেই এই দেশে।জলির ছবিটা বুকে চেপে রেখে বলে,”
—ছলনা করলি আমার সাথে? চলে যাচ্ছি রে আমি।তুই তোর আবিরকে বিয়ে করে সুখি হোস।কিন্তু তোর সে সুখ দেখার শক্তিটুকু আমার নেয়।তোকে জোড় করে বেঁধে রাখতে পারবো না।তাই চলে যাচ্ছি এই দেশ ছেড়ে।যাতে আর কখনো তোকে দেখতে না হয়।
“কাঁদতে কাঁদতে কথাটা বলে আদি।তারপর উঠে লাগেজটা নিয়ে বাড়ির চাবিটা দারোয়ানের কাছে দিয়ে এয়ারপোর্ট চলে যায়।”

চলবে,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *