অন্তরালে তুমি আমি

অন্তরালে তুমি আমি !! Part- 11

অহনার কস্টে বুকটা ভার হয়ে আছে।চাইলেও আবিরের কাছে যেতে পারছে না।জানালার গিরিল ছুয়ে দূর থেকে শুধু আবিরকে দেখছে আর কাঁদছে।”

“আবির জলির থেকে অনেকটা দূরে বসে আছে।জলির বাবা-মা জলিকে ডাকছে।”
—দেখ মা কাকে এনেছি।চোখ খোল না প্লিজ।

“জলি বিরবির করে বলছে পা..নি পানি।”
—পানি খাবি মা?
“জলির মা গ্লাসে পানি ঢালতে গিয়ে দেখে জগটা খালি।অহনা নিজের চোখ মুখ মুছে পাশের কলসি থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে নিয়ে উরনাটা টেনে নিজের মুখটা ঢেকে পানি হাতে জলির রুমে আসে।গ্লাসটা জলির মায়ের হাতে দিয়েই অহনা চলে যায়।”

“আবিরের কেমন যেন ঘোমটার আলাড়ে থাকা মেয়েটাকে খুব আপন মনে হয়।মেয়েটার চলন একদম অহনার মতোন।আবির উঠে মেয়েটাকে ডাকতে ডাকতে তার পিছনে যাবে এমন সময় জলির বাবা আবিরের হাত ধরে বসিয়ে দেয়।”
—যেও না বাবা! আমার মেয়েটার পাশে একটু বসো। ওকে ডাকো।

“আবির আর যায় না ওখানেই বসে থাকে। কিন্তু জলিকে ডাকে না।আবির এখানে এসেছে শুধুমাত্র বন্ধুত্বের খাতিরে জলিকে বাঁচাতে। আবির জানে জলি তাকে অনেকবার ভালোবাসার কথা বলেছে।হয়তো অনেক ভালোও বাসে। কিন্তু আবির শুধু অহনাকে ভালোবেসেছে।অহনাকে ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছে।তাদের বিয়ের পরও জলি অনেকবার আবিরকে বলেছে অহনাকে ছেড়ে দিতে অহনা ভালো মেয়ে নয়।কিন্তু আবির জলির কথা বিশ্বাস করে নি।তবে আজ যখন প্রমান হয়ে গেছে অহনা দুশ্চরিত্রা তখন আর অহনার সাথে থাকবে না।আর জলিকেও নিজের জীবনে জড়াবে না।জলি সুস্থ হলেই আবির চলে যাবে।আবির ভাবে অহনা তাকে ঠকালেও অহনার মতো এতো ভালো আর কাউকে সে বাসতে পারবে না।”

“জলির মুখে পানির ছিটা পরলে আস্তে আস্তে চোখ খোলে।তাকিয়ে দেখে বাবা-মা তার সামনে। জলি আস্তে করে উঠে বসে। দেখে কিছুটা দূরে আবির বসে আছে।জলি উঠে বসতেই আবির জলির দিকে ঘুরে তাকায়।জলি পাশ ফিরে রুমের দরজাটা খোলা দেখে খুশি হয়।”

“জলি বিছানা থেকে নামে যায়।সবাই ভাবে জলি আবিরের কাছে যাচ্ছে। বাইরে থেকে অহনা আবিরকে জলির কাছে আসতে দেখে ঘুরে নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়। জলির বাবা-মাও বিছানার উপরে বসে আছে।তারা ভাবে জলি আবিরের কাছেই যাচ্ছে। জলির ঢুলে পরে যাওয়ার আগেই আবির ধরে নেবে।একি জলি আবিরের পাশ কেটে কোথায় চলে গেলো?”

“জলি রুম থেকে বেড়িয়ে দরজাটা বাইরে থেকে লক করে দেয়।আর মনে মনে বলে এখন আর কেউ আমাকে আদির কাছে যেতে বাঁধা দিতে পারবে না।আমি আসছি আদি, তোর কাছে।আর কক্ষনো তোকে ছেড়ে আসবো না।”

“জলি ঢুলতে ঢুলতে গিয়ে গাড়িতে বসে পরে। আর জলির বাবা-মা এসে ভেতর থেকে দরজা টাকাতে থাকে। অহনা তাদেরকে চিৎকার করে জলিকে ডাকতে শুনে চোখ খোলে।জানালা দিয়ে দেখে জলি তার রুমে নেয়।অহনা আবার মাথায় ঘোমটা দিয়ে এসে দরজাটা বাইরে থেকে খুলে দেয়। দরজা খুলতেই জলির বাবা-মা ছুটে আসে। দেখে জলি গাড়িতে স্ট্রাট দিচ্ছে। তারা জলিকে ডাকতে যাবে এর মধ্যে জলি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়।জলির মা কান্না করতে থাকে।”
—কোথায় গেলো আমার মেয়েটা? যদি নিজের কোনো ক্ষতি করে বসে?

“জলি নিজের চোখ মুছতে মুছতে ঝাপসা চোখে গাড়ি ড্রাইভ করে।অবশেষে জলি এসে আদির বাড়ির সামনে গাড়িটা থামাই।গাড়ি থেকে নেমে ঢুলতে ঢুলতে মেইন গেটে টাকাতে থাকে আর আস্তে করে বলে,”
—আদি! এই আদি!

“বাড়ির দারোয়ান জলিকে দেখে এগিয়ে আসে,”
—একি জলি ম্যাডাম আপনি? এখানে? এই অবস্থায়? আপনার শরীর ঠিক আছে ম্যাডাম?
“জলি আস্তে করে বলে,”
—আদিকে একটু ডেকে দিবেন চাচা?
—আদি স্যার তো আমেরিকায় চলে গেছে।ফ্লাইটের টিকিটে সময় তিনটা ছিলো আর এখন বাজে সাড়ে তিনটা এতোক্ষণে তো…

“জলি এটুকু শুনেই নাহহহহ বলে জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।চোখ মেলে দেখে জলি তার বাড়িতে।নিজের রুমে শুয়ে আছে।”

“জলির বাবা-মা জলির মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেসা করে,”
—কোথায় যাচ্ছিলি তুই মা? রাস্তার উপর পরে ছিলি।ভাগ্যিস আমি তোর পিছু নিয়েছিলাম।যেই বাড়িটার সামনে পরেছিলি সে বাড়ির দারোয়ান তোকে আমার গাড়িতে উঠাতে সাহায্য করেছে।যদি এমন তেমন কিছু হয়ে যেতো তখন আমাদের কি হতো?

“জলি ধুকড়ে কেঁদে ওঠে।আদির কথা মনে পরতেই জলির বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।জলি তার বাবা-মাকে কিছু বলে না।সামনে তাকিয়ে দেখে আবির দাড়ানো।জলি মনে মনে ভাবে সত্যিকারের ভালোবাসা সত্যিই খুব কস্টের।আমি যেমন আদিকে ভালোবাসি আবিরও ঠিক তেমনই অহনাকে ভালোবাসে।ওদের ভুল বুঝাবুঝিগুলো মিটিয়ে দিতে হবে।জলি তার বাবা-মাকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলে।জলির বাবা-মা রুমের বেড়িয়ে গেলে জলি আবিরকে সব খুলে বলে অহনার কোনো দোষ নেয়।সবকিছু জলির প্লান ওদেরকে আলাদা করবার।আবির সবটা শুনে জলির উপর রেগে যায়। কিন্তু জলি আদিকে হারিয়েছে ভেবে আর কিছু বলে না।জলির উপরের রাগ ধরে রেখে বাড়িতে চলে আসে।আর সজোরে নিজের হাতে আঘাত করতে থাকে দেয়ালের সাথে। কস্টে আবিরের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আবিরের হাত থেকে রক্ত ঝরছে।আবির অহনার নাম ধরে চিৎকার দিয়ে মেঝেতে বসে পরে।”
—এ আমি কি করলাম অহনা? কেন তোমায় ভুল বুঝে তারিয়ে দিলাম? এখন তোমায় আমি কোথায় খুঁজবো?

“আবির চলে গেছে সেদিকে কারও খেয়াল নেয়। অহনা রুমে কাঁদছে আর জলির বাবা-মা অহনাকে শান্তনা দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর অহনাকে ঘুম পারিয়ে তারা জলির রুমে যায়। দেখে আবির নেয়।তারা জলির কাছে আবিরের কথা জিজ্ঞাসা করলে জলি বলে,”
—আবির তার ভালোবাসার মানুষের কাছে গেছে।

“কথাটা শুনে জলির বাবা-মা অবাক।তারা ভাবে আবিরের জীবনে আরও কত মেয়ে আছে।আমাদের দুটো মেয়ের জীবন নস্ট করেও কি ওর হয় নি?”

“আবিরের জীবনে অন্য মেয়ে আছে সেটা জলির বাবা-মা অহনাকে বলে নি অহনা কস্ট পাবে বলে।অহনা নিজের রুম থেকে বের হয় না।সারাদিন কাঁদে আর ভাবে জলির সাথেই হয়তো আবির সুখে আছে।এদিকে জলিও নিজের রুম থেকে বের হয় না।সারাদিন আদির শার্টটা জড়িয়ে ধরে কাঁদে আর একা একা কথা বলে।ওদিকে আবির খাওয়া-দাওয়া, ঘুম কোনো কিছুতে নিজের যত্ন নেয় না।সারাদিন অহনার কথা ভাবতে থাকে আর নিজেকে আঘাত করে করে শাস্তি দেয়।”

“এভাবে তিনমাস কেটে গেছে আদির কোনো খোঁজ নেয়। জলি মাঝে মাঝে আদির বাড়ির দারোয়ানকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করে কিন্তু সেও আদির কোনো খবর জলিকে দিতে পারে না।আজ সকাল থেকে জলির মাথাটা ভারি ভারি লাগছে।কিছু খেলেই বমি পাচ্ছে। জোড় করে জলির মা জলিকে খাইয়ে দেবার পর জলি দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করে।রুমে আসার আগে মাথা ঘুরে পরে যায়। জলির বাবা-মা অনেক চিন্তায় পরে যায়। ভাবে জলির আবার কি হলো? ডাক্তার আসে জলিকে চেকাপ করে বলে, জলি প্রেগনেন্ট।”

চলবে,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *