অন্তরালে তুমি আমি

অন্তরালে তুমি আমি !! Part- 09

“জলির বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে আদি।আজ আদির স্পর্শে জলি একটুও অস্বস্তিবোধ করে না।আদির চুলে বিলি কাটতে থাকে আর ভাবে আদি কি সত্যি আমাকে ভালোবাসতে চাই? কিন্তু আদিতো এমন না।আবার পরক্ষণে মনে হয়, এ আমি কি ভাবছি আবিরই বেস্ট।ভুলে গেলে চলবে না অহনা আর আবিরের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি তৈরি করতে আমাকে অনেক কিছু করতে হয়েছে।এখন যখন সফল হয়েছি তখন আবির আমার।এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে জলি।”

“সকালে ঘুম ভাঙলে জলি উঠে দেখে আদি এখনো ঘুমাচ্ছে। আদিকে না ডেকেই জলি চলে যেতে লাগে হঠাৎ খেয়াল করে তার হাতটা পেছনের থেকে আদি টেনে ধরেছে।জলি পেছনে ঘুরে দেখে আদি এখনো ঘুম।অনেক টানাপোড়েনের মধ্যে পরে যায় জলি ভাবে যাবে নাকি যাবে না।”

“জলির মন বলছে আদির কাছে থেকে যায়।আর মস্তিষ্ক বলছে নাহ! অহনার কাছে হেরে যাওয়া চলবে না।জলি আস্তে করে নিজের হাতটা আবিরের হাতের মুঠোর থেকে বেরিয়ে আনে।তারপর আদির গালে একটা কিস করে বলে,”
—এই আদি আমি চলে যাচ্ছি রে।তুই ভালো থাকিস।আমি আর কখনো তোর কাছে আসবো না।আমাদের আর দেখা হবে না।আর তোর এই শার্টটা আমি নিয়ে যাচ্ছি।

“জলি একটা চিরকুট লিখে আদির মাথার কাছে রেখে বেরিয়ে যায়। গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আদির কথা ভাবছে। জলির মন থেকে যেন আদি সরছেই না।”
—উফফ কি হয়েছে আমার? আমি আদির কথা কেন ভাবছি।
“গাড়ি থেকে এক বোতল পানি নিয়ে বাইরে এসে বারবার মুখে ছিটাচ্ছে জলি।চোখ বন্ধ করলেই জলির সামনে আদির মুখটা ভেসে উঠছে।আদির ছোঁয়া, কথা, কান্না সব বারবার উপলব্ধি করছে জলি।জলি কিছু না ভেবে সোজা বাড়িতে চলে যায়।”

“সারারাত বাড়িতে না ফেরায় জলির বাবা-মা দুশ্চিন্তায় ঘুমায় না।সকালে আদির শার্ট পরা অবস্থায় জলি বাড়িতে ঢোকে।জলির পড়নে ছেলে মানুষের শার্ট দেখে জলির বাবা-মা নানান প্রশ্ন করে।যার উত্তর জলি দিতে পারে না।তারা জলির কাছে এটাও জিজ্ঞাসা করে রাতে কল করলে ধরে নি কেন।জলি বলে তার ফোনটা সাইলেন্ট করা ছিলো তাই বুঝতে পারে নি।”

“জলির বাবা-মা জলিকে অনেক মারে।তারা বুঝতে পারে জলি নিশ্চয় বেপথে চলে গেছে।”

“জলিকে মেরে তার বাবা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। আর যাওয়ার সময় বলে যায় আজ থেকে বাড়ির বাইরে যাওয়া ওর জন্য বন্ধ।জলির ফোনটাও কেড়ে নেয় তার বাবা।”

“জলি মার খেয়ে রুমে গিয়ে কাঁদছে আর আদির কথা ভাবছে।আদির শার্টটা নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুঁকছে।”
—আমি ভুল করে ফেলেছি রে আদি।এই মুহূর্তে তোকে আমার বড্ড প্রয়োজন।যদি আর একবার বাড়ি থেকে বের হতে পারি আমি ছুটে তোর কাছেই যাবো।

“জলি দরজা টাকাতে থাকে আর চিৎকার করে তার মাকে বলে দরজা খুলে দিতে।”
—দরজা খোলো মা! আর একটাবার আমাকে বাইরে যেতে দাও একটাবার।

“জলি দরজা টাকাতে টাকাতে নিচে বসে পরে আর আদির কথা ভাবে।”

“ওদিকে আদি ঘুম থেকে উঠে জলিকে আর দেখতে পাই না।আদি সব জায়গাতে খোঁজে। ওয়াশরুমেও জলি নেই।”
—জলি আমাকে এভাবে না বলে চলে গেলো কেন?
“আদি বারবার জলিকে ফোন করে কিন্তু জলির ফোনটা বন্ধ।পাশ ফিরে বিছানার বালিশের উপরে একটা চিরকুট দেখতে পাই। আদি চিরকুট’টা হাতে নেয়।”
তাতে লেখা আছে,
—আমি চলে যাচ্ছি আদি।আর কখনো আমি তোর সাথে দেখা করতে চায় না।আমি আবিরকে ভালোবাসি। অনেক চেস্টা করে অহনা আর আবিরের সম্পর্কের মধ্যে ভাঙন ধরিয়েছি।এখন আর আবিরকে পেতে কোনো বাঁধা নেয়। তাই আমি ঠিক করেছি খুব শিঘ্রই অহনাকে তারিয়ে আবিরকে বিয়ে করবো।তুই ভালো থাকিস।তোকে বলে আসতে পারলাম না তার জন্য ছরি।আশা করছি আমার লেখাটা পরার পর তুই আর আমার জীবনে আসতে চাইবি না যদি তুই আমায় সত্যিকারে ভালোবেসে থাকিস।—–জলি।

“চিরকুট’টা পরার পর আদির দুচোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পরতে থাকে।”
—ভাগ্যের এ কি নির্মম পরিহাস। জীবনে প্রথমবার কাউকে ভালোবেসেছি।ঝলসানো অতীত ভুলে যাকে নিয়ে একটু সুখী হতে চেয়েছি।আর সেই এমন করলো আমার সাথে?

“আদি চিৎকার দিয়ে ওঠে,”
—হে আল্লাহ! জীবনটা কেন এতো কস্টের?

“আদি মদের বোতলে চুমুক দিয়ে বারবার খাচ্ছে। আর বলছে, আমি চাইলেও জীবন আমাকে আরেকটা সুযোগ দেবে না ভালো হবার।”




“ওদিকে আবির ঘুম ভাংলে উঠে দরজার কাছে অহনাকে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে।অহনার মুখের দিকে তাকাতেই আবিরের সেই ছবিগুলোর কথা মনে পরে যায়। আবির অহনাকে আর সহ্য করতে পারে না।উঠে এসেই অহনাকে একটা লাথি মারে।অহনা ছিটকে পড়ে গিয়ে কপালটা একটু কেটে যায়।”

“অহনা উঠে দাড়ায় আর বলে,”
—মদের নেশা কি এখনো কাটে নি তোমার?

—কি বললি তুই?
“আবির অহনার গালে একটা থাপ্পড় মারে।”

“অহনা ঘুরে রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে আবিরকে বলে,”
—অনেক সহ্য করেছি আবির আর নয়।তুমি যদি আর একটা বার আমার গায়ে হাত তোলো তাহলে আমি এই বাড়ি ছেড়ে, তোমার সংসার ছেড়ে, এই মুহূর্তে চলে যাবো।

“আবির অহনার গালটা চেপে ধরে,”
—ভালো বুদ্ধি এটেছিস দেখছি! নতুন প্রেমিক জুটিয়েছিস বলে এখন মুখে বলি ফুটেছে? যা না যা তোর প্রেমিকের কাছেই যা। থাকতে হবে না তোর আমার সাথে।

“আবির অহনাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দরজার কাছে নিয়ে আসে।তারপর বাইরের দিকে ইশারা করে বলে,”
—দরজা খোলা আছে যা চলে যা।

“অহনা না গেলে আবির দরজার বাইরে বের করে দিয়ে দরজাটা ভেতর থেকে আটকে দেয়।”
—দুশ্চরিত্রা, কলঙ্কিনী তুই মরে যা তবুও আমার কাছে আর আসিস না।

“অহনা আর এক মুহূর্তও দাড়ায় না।এতো অপমান বিনা দোষে নেওয়া যায় না।তাই অহনা চলে আসে।রাস্তায় নেমে অহনা অনমনা হয়ে হাঁটতে থাকে আর কালকের রাতের ঘটনাগুলো ভাবে,”
—আমি সত্যিই মরে যাবো তবুও তোমার কাছে আর কখনো আসবো না আবির।তুমি থাকো তোমার জলিকে নিয়ে।

“হঠাৎ অহনার সামনে একটা গাড়ি আসে আর সেই গাড়িটার সাথে অহনা ধাক্কা খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।”

“জলির বাবার গাড়িতে ধাক্কা খায় অহনা।তিনি অহনাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে আসে।ডাক্তার দেখে বলে, তেমন আঘাত লাগে নি।তবে কিছুদিন রেস্ট নিলে সুস্থ হয়ে উঠবে।”

“জলির বাবা-মা অহনার কাছে বাড়ির ঠিকানা জানতে চায়। অহনা বলে তার যাওয়ার কোনো জায়গা নেয়। ভালোবেসে যাকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলো সে চোখের সামনে অন্য মেয়ের সাথে রাত কাটায় আর সকাল হলে মেরে তারিয়ে দেয়।”

“অহনার সব কথা শুনে জলির বাবা-মায়ের মায়া হয় আর তারা অহনাকে তাদের সাথে থাকতে বলে। তারা অহনাকে মেয়ের মতো রাখতে চায়। আর অহনাও কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় রাজি হয়ে যায়।”




“তিন দিন পর,,, অহনা এখন অনেকটা সুস্থ।”

“জলি এখনো তার রুমেই বন্দি।বাবা-মা এসে জানালার ফাঁক দিয়ে জলিকে খাবার দিয়ে যায়।জলি কিচ্ছু খাই না সব খাবার রুমের মধ্যেই ফেলে রেখে প্লেট’টা আবার জানালার কাছে রেখে দেয়।চোখের কোণের কালো দাগ জলির স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। না ঘুমাই আর না নিজের যত্ন নেয়।সারাক্ষণ মুখে একটাই নাম বিরবির করে বলে, আদি”

“ওদিকে আবির তখন রাগের বসে অহনাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে এখন অনুশোচনা করছে।না পারছে খেতে।আর না পারছে ঘুমাতে।আবিরের সবটা জুড়ে শুধু অহনা বিরাজ করছে।”

“আদি আর এখন কোনো মেয়ের কাছে যায় না।সারাদিন মদের বোতল হাতে বিছানার কোণে পরে থাকে।আদির কাছে এখন জলির মতো পৃথিবীর কোনো মেয়ে না।আদি শুধু নিজের শরীর না মনটাকেও জলির করে দিয়েছে।কিছুতেই জলিকে ভুলতে পারছে না।”

চলবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *